Home ইতিহাস ও জীবনী ইসফাহান যুদ্ধে মুসলিমদের গর্বের বিজয় এবং সমগ্র পারস্য দখল

ইসফাহান যুদ্ধে মুসলিমদের গর্বের বিজয় এবং সমগ্র পারস্য দখল

ইয়াজদিগার্দ (পারস্যের শেষ সম্রাট) মুসলিমদের কাছে হারের পুরোনো প্রতিশোধ নিতে প্রতি বছর মুসলিমদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করছিলেন। যার ফলে ইসফাহান যুদ্ধে তিনি মুসলিমদের আহ্বান জানিয়েছিলেন।

উমর ইবনে আল খাত্তাব (রাঃ) ২১ হিজরিতে (৬৪১ সালে) ইরাকের সেনাবাহিনীকে নির্দেশ দিয়েছিলেন, পৃথিবীর প্রতিটি প্রান্ত থেকে পার্সীদের খুঁজে বার করার জন্য। উমরকে উপদেশ দেওয়া হয়, যতদিন পর্যন্ত ইয়াজদিগার্দকে তাঁর আসন থেকে উৎখাত করা না যাবে, ততদিন তিনি যুদ্ধ করতেই থাকবেন। তাই উমর তাঁর সেনাকে পারস্য আক্রমণ করার নির্দেশ দেন।

ইসফাহান যুদ্ধে-র নেপথ্যকাহিনী 

পারস্যের সেনাপ্রধান আল-হুরমুযান (যিনি ইসলাম কবুল করেছিলেন)-এর সাথে উমর আলোচনা করেন যে, তাঁর অভিযান কোথা থেকে শুরু করা উচিত – ফারস এবং আজেরবাইজান থেকে, নাকি ইসফাহান থেকে। এর উত্তরে আল-হুরমুযান বলেছিলেন যে, ফারস এবং আজেরবাইজান হল ডানা, একটা কেটে ফেললেও আর একটা কাজ করবে। কিন্তু ইসফাহান হল মাথা, কাজেই মাথা কেটে দিলে বাকি শরীরের পতন অনিবার্য।

আরও পড়তে পারেন-

ফারসের অবস্থান দক্ষিণে, আর আজারবাইজান উত্তরে। কিন্তু ইসফাহান হল পারস্য সাম্রাজ্যের একদম কেন্দ্রে অবস্থিত এবং এই এলাকাই হল সমগ্র সাম্রাজ্যে পণ্য সরবরাহ ও যোগাযোগের প্রধান মাধ্যম।

ইসফাহানে বিজয় লাভ করলেই পারস্য সাম্রাজ্যের শক্তিশালী কেন্দ্র খোরাসান অন্যান্য অঞ্চল থেকে আলাদা হয়ে যাবে, এবং পারস্যের শেষ ঘাঁটি হিসেবে এর পতনই সম্পূর্ণ জয় এনে দেবে – এমনটা ভেবেই সমগ্র যুদ্ধের পরিকল্পনা করা হয়েছিল।

আল নুমানের ইসলাম গ্রহণ 

মহানবী হযরত মুহাম্মদ (সাঃ)-এর অন্যতম সঙ্গী ছিলেন আল নুমান। তিনি মুযাহনাহ উপজাতির প্রধান ছিলেন এবং তাঁরা মদিনার বাইরে মক্কা যাওয়ার রাস্তায় থাকতেন।

যখন নবী মদিনায় গিয়েছিলেন, তখন তিনি, তাঁর পরিবার এবং গোটা উপজাতি ইসলাম গ্রহণ করেন। তাঁদের দশ ভাই এবং ৪০০ জন ঘোড়সওয়ারের মদিনায় গিয়ে ইসলাম গ্রহণ করলে সেই আনন্দে গোটা মদিনা মেতে উঠেছিল।

উমর মসজিদে গিয়ে আল নুমান-এর সাথে দেখা করেছিলেন। তাঁর নামাজ পড়া শেষ হলে তাঁর পাশে বসে উমর বলেন যে, তাঁর একটা কাজ আছে আল নুমানকে করে দিতে হবে। আল নুমান উত্তরে বলেছিলেন, যদি কোনও সামরিক কাজ হয়, তা-হলে উনি অবশ্যই করবেন। কিন্তু শুল্ক আদায়ের কাজ হলে তিনি কোনও সাহায্য করতে পারবেন না। এরপরে উমর তাঁকে সমস্ত পরিকল্পনার কথা জানিয়ে ইসফাহানে পাঠান এবং আল-কুফাহের লোকেদের সৈন্য দিয়ে সাহায্য করতে বলেন।

আল নুমান ইসফাহান পৌঁছে দেখেন যে, তাঁদের আর শত্রুর মাঝে একটি বিশাল নদী রয়েছে। তাই তিনি আল-মুঘিরাহ বি. সুবাহকে ইসফাহানের শাসক ধু আল হাজিবায়েনের কাছে দূত হিসেবে প্রেরণ করেন। তখন ইসফাহানের শাসক বুঝতে পারেন যে, আরবের সেনাবাহিনী তাঁর দরজায় এসে দাঁড়িয়েছে।

ইসফাহান যুদ্ধে পারস্য সম্রাট 

রাজা তাঁর রাজকীয় ঐশ্বর্য প্রদর্শন করতে চেয়েছিলেন। তিনি তাঁর সিংহাসনে রাজমুকুট পরে বসেছিলেন, এবং রাজপুত্ররা দুল, সোনার ব্রেসলেট এবং সিল্কের উপর জড়ির কাজ করা পোশাক পরেছিলেন।

আল-মুঘিরাহ তাঁর ঢাল এবং বল্লম হাতে প্রবেশ করেন এবং ক্রমাগত তাঁদের কার্পেটে খোঁচাতে  থাকেন, যাতে তাঁদের মনোবল ভেঙে যায়। দুই জন সৈনিক তাঁকে জোর করে রাজার সামনে এনে দাঁড় করালে রাজা বলেন, আরবরা সন্ধি স্থাপন করলে তাহলে তিনি তাঁদের ফিরে যাওয়ার সুযোগ দেবেন।

আল-মুঘিরাহ এর জবাবে আল্লাহের গুণগান করে বলেন যে, আরবরা এক সময় উচ্ছিষ্টভোজী ছিল। উঁচু তলার মানুষরা তাঁদের পায়ের তলায় চাপা দিয়ে চলে যেত। তারপর আল্লাহ তাঁর নবীকে পাঠান যিনি সর্বোৎকৃষ্ট এবং সব থেকে সত্যবাদী।

তিনি উল্লেখ করেন, নবীজি ভবিষ্যদ্বাণী করেছিলেন যে, মুসলিমরা একদিন পারস্য দখল করবে। এরপর তিনি রাজার পাশের গদিতে গিয়ে বসেন, এতে রাজা ও সভায় উপস্থিত প্রত্যেকে অত্যন্ত ক্ষুব্ধ হন। এর ফলে তাঁরা আল-মুঘিরাহকে ধরে প্রহার করতে শুরু করে। তখন তিনি তাঁদের স্মরণ করিয়ে বলেন যে, তিনি দূত মাত্র। এর উত্তরে ত্রুদ্ধ রাজা বলেন যে, আরবদের সাহস থাকলে তারা সীমানা লঙ্ঘন করে আসতে পারে।

ইসফাহান যুদ্ধ জয় 

এই প্রসঙ্গে উল্লেখ্য, আল নুমান এই ঘটনার ৬ বছর আগে পারস্যের সম্রাটের সাথে দেখা করে তাঁকে ইসলামে গ্রহণ করার আর্জি জানিয়েছিলেন, বা তার পরিবর্তে জিজিয়া কর দিতে কিংবা লড়াই করার পথ বেছে নিতে বলেন। উদ্ধত রাজা রেগে যুদ্ধের পথই বেছে নিয়েছিলেন, যার জেরে কাদিসিয়াহের যুদ্ধ হয়। এবং এই যুদ্ধে মুসলিমরা জয়লাভ করে।

অন্যদিকে সেনাপতি আল নুমান আরব সেনাবাহিনীর প্রত্যককে বলেন, তিনি একটি দোয়া করবেন এবং তার জন্য যেন সকলে ‘আমীন’ বলেন। এরপরে তিনি দোয়া করে আল্লাহের কাছে বলেন, তাঁকে মুসলিমদের জন্য শাহাদাত দেওয়া হোক এবং ইসফাহানের বিরুদ্ধে যুদ্ধে জয় প্রদান করা হোক। এরপরে তিনি আক্রমণ শুরু করেন।

মুসলিমরা এই যুদ্ধে জয়লাভ করেন এবং ইসফাহানের সম্রাট মারা যান। আল নুমান আহত অবস্থায় জয়ের খবর পান এবং উমরকে এই সংবাদ দ্রুত জানানোর কথা বলে তিনি প্রাণত্যাগ করেন।

এভাবেই ইসফাহান জয়ের মাধ্যমে সমগ্র পারস্যে মুসলিমদের দখলে চলে এসেছিল।

উম্মাহ২৪ডটকম: এসএএ

উম্মাহ পড়তে ক্লিক করুন-
https://www.ummah24.com

দেশি-বিদেশি খবরসহ ইসলামী ভাবধারার গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে ‘উম্মাহ’র ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।