Home ফিকহ ও মাসায়েল রোযা অবস্থায় ইনহেলার ব্যবহারের শরয়ী বিধান

রোযা অবস্থায় ইনহেলার ব্যবহারের শরয়ী বিধান

আল্লামা মুফতি জসিমুদ্দীন। ছবি- উম্মাহ।

।। আল্লামা মুফতি জসিমুদ্দীন ।।

হাঁপানী বা শ্বাসকষ্ট অত্যন্ত কষ্টদায়ক একটি রোগ। এই রোগের চিকিৎসা হিসেবে গ্যাসজাতীয় অতি সূক্ষ্ণ একটি ঔষধি পদার্থ আবিষ্কার করা হয়েছে। ব্যবহারের সুবিধার্থে কোম্পানী অষুধটিকে স্প্রে যন্ত্রের ভেতর রাখে, যাকে ইনহেলারও বলা হয়।

ব্যবহার পদ্ধতি: হাঁপানী রোগী যন্ত্রের সামনের দিকটি মুখের ভেতরে রেখে যথাসম্ভব মুখ বন্ধ করে, অত:পর স্প্রে করে ঢোক গিলতে থাকেন। ফলে শ্বাসরুদ্ধকর স্থানটি প্রশস্ত হয়ে শ্বাস চলাচল স্বাভাকি হয়ে যায় এবং শ্বাসজণিত কষ্টও লাঘব হয়।

বলাবাহুল্য, অষুধটি স্প্রে করার সময় যদিও তা গ্যাসের মত মনে হয়, প্রকৃতপক্ষে তা হলো- অবয়ব বিশিষ্ট তরল পদার্থ। আর এই তরল পদার্থ যখন মুখ দিয়ে প্রবেশ করে, তখন তা পেটে পৌঁছে যায়। তাই রোযা অবস্থায় ইনহেলার ব্যবহার করলে রোযা ভেঙ্গে যাবে।

আল্লামা ইবনে আবেদীন শামী (রাহ.) বলেন- “যদি কেউ কণ্ঠনালীতে ধোঁয়া প্রবেশ করায়, তাহলে রোযা ভেঙ্গে যাবে। তাই যদি ধুপ দ্বারা সুবাসিত হয় এবং সেই ধুপ পেটের দিকে টেনে আনে এবং রোযা স্মরণ থাকা সত্ত্বেও ঘ্রাণ নেয়, তাহলে রোযা ভেঙ্গে যাবে। কারণ, তা থেকে বেঁচে থাকা সম্ভব”। (ফাতাওয়ায়ে শামী- ৩/৩৬৬ পৃষ্ঠা, মাকতাবায়ে যাকারিয়া, দেওবন্দ)।

ফাতাওয়ায়ে হক্কানিয়াতে উল্লেখ আছে- “ইনহেলার ব্যবহার করলে রোযা ভেঙ্গে যাবে। আর যদি রোযা অবস্থায় একান্ত অপারগতায় তা ব্যবহার করতে হয়, তাহলে রমযানের পরে শুধু ওই দিনের রোযা কাযা করলেই হবে। কাফফারা দিতে হবে না। আর যদি রোগীর অবস্থা এমন মারাত্মক হয় যে, ইনহেলার ব্যবহার ছাড়া থাকতে পারে না, তাহলে কাযা করারও প্রয়োজন নেই, বরং রোযার ফিদিয়া দিবে”। (ফাতাওয়ায়ে হক্কানিয়া- ৪/১৭০ পৃষ্ঠা, জামিয়া দারুল উলূম হক্কানিয়্যাহ, পাকিস্তান; জামেউল ফাতাওয়া- ৩/৩১৯ পৃষ্ঠা)।

আরও পড়তে পারেন-

মোট কথা, কোনো পদার্থ, তরল হোক বা ধোঁয়া জাতীয় হোক, পেটে পৌঁছলেই রোযা ভেঙ্গে যাবে।

ডাক্তারি পরামর্শ

বিজ্ঞ চিকিৎসকগণ হাঁপানী রোগীকে সাধারণত দিনে দুইবার ইনহেলার ব্যবহারের পরামর্শ দিয়ে থাকেন। তাই রোগী যদি সাহরীতে একবার ও ইফতারের পর একবার ইনহেলার ব্যবহার করেন এবং এতে শ্বাসজণিত কোন সমস্যা না হয়, বিশেষত: ছোট দিনগুলোতে, তাহলে এই পদ্ধতিতে ইনহেলার গ্রহণ করে রোযা রাখবে।

অপারগদের করণীয়

যদি রোগ মারাত্ম ক আকার ধারণ করে এবং ইফতার পর্যন্ত অপেক্ষা করা সম্ভব না হয়, তাহলে শরীয়ত তাকে রোযা রাখতে বাধ্য করেনি। যেমনটি পূর্বে ফাতাওয়ায়ে হক্কানিয়ার উদ্ধৃতিতে উল্লেখ করা হয়েছে।

আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন, “রোগীর জন্যে কোন দোষ নেই”। (সূরা নূর- ৬১ আয়াত)।

অন্য এক স্থানে ইরশাদ করেছেন- “আল্লাহ তাআলা কাউকে তার সাধ্যাতীত মকোনো কাজের ভার দেন না, সে তাই পায় যা সে উপার্জন করে এবং তাই তার ওপর বর্তায় যা সে করে। (সূরা বাক্বারাহ- ২৮৬ আয়াত)।

পরে যদি রোগী সুস্থ হয় বা ছোট দিনগুলোতে তার জন্যে রোযা রাখা সম্ভব হয়, তাহলে শুধু ক্বাযা করে নিবে, কাফফারা দিতে হবে না। আর যদি রোগীর অবস্থা এতটা নাজুক হয়ে যায় যে, ভাল হওয়ার সম্ভাবনা নেই এবং ইনহেলার ব্যবহার করা ছাড়া সে খেতে পারে না, তাহলে শরীয়ত তাকে রোযা না রেখে ফিদিয়া দেয়ার সুযোগ দিয়েছে। যেমন আল্লাহ তাআলা পবিত্র কুরআনে ইরশাদ করেন-

“গণনার কয়েকটি দিনের জন্যে। অত:পর তোমাদের মধ্যে যে অসুস্থ থাকবে অথবা সফরে থাকবে, তার পক্ষে অন্য সময়ে সে রোযা পূরণ করে নিতে হবে। আর এটি যাদের জন্যে অত্যনস্ত কষ্টদায়ক হয়, তারা এর পরিবর্তে একজন মিসকিনকে খানা দিয়ে ফিদিয়া আদায় করবে। যে ব্যক্তি খুশির সাথে সৎকর্ম করে, তা তার জন্যে কল্যাণকর হয়। আর যদি রোযা রাখো, তবে তা তোমাদের জন্যে বিশেষ কল্যাণকর, যদি তোমরা তা বুঝতে পারে”। (সূরা বাক্বারাহ- ১৮৪ আয়াত)।

হ্যাঁ, যদি মৃত্যুর পূর্বে কখনো সুস্থ হয় এবং রোযা রাখতে সক্ষম হয়, তাহলে রোযা রাখবে।

– মুফতি জসীমুদ্দীন, মুফতি, মুহাদ্দিস ও মুফাসসির ও সহকারী পরিচালক- আল-জামিয়াতুল আহলিয়া দারুল উলূম মুঈনুল ইসলাম, হাটহাজারী, চট্টগ্রাম।

উম্মাহ২৪ডটকম: এমএ

উম্মাহ পড়তে ক্লিক করুন-
https://www.ummah24.com

দেশি-বিদেশি খবরসহ ইসলামী ভাবধারার গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে ‘উম্মাহ’র ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।