Home ওপিনিয়ন ইসরায়েল-ফিলিস্তিন: সাত দশকের লড়াইয়ের শেষ কোথায়?

ইসরায়েল-ফিলিস্তিন: সাত দশকের লড়াইয়ের শেষ কোথায়?

।। জান্নাতুল তাজরী তৃষা ।।

বিশ্বব্যাপী করোনা মহামারির মধ্যেই সম্প্রতি ইসরায়েল ও ফিলিস্তিনের মাঝে আবারও বেজে উঠেছে সংঘাতের ডামাডোল। জাতিসংঘ ইতোমধ্যেই সতর্ক করেছে এই সংঘাত সহসা না থামলে এটা সর্বাত্মক যুদ্ধে রূপ নিতে পারে। তবে করোনা মহামারির বয়স বছর দেড়েক হলেও ইসরায়েল-ফিলিস্তিন অঞ্চলে “যুদ্ধ” নামক মহামারির বয়স অন্তত সাত দশক। বছরের পর বছর ধরে থেমে থেমে চলা এই দ্বন্দ্ব সংঘাতে প্রাণ দিয়েছে হাজার হাজার ফিলিস্তিনি। উদ্বাস্তু হয়েছে এই জনগোষ্ঠীর প্রায় সাড়ে সাত লক্ষ মানুষ।

সম্প্রতি সময়ে পূর্ব জেরুজালেমের কয়েকটি ফিলিস্তিনি পরিবারকে তাদের ভূমি থেকে উচ্ছেদের হুমকি এবং রমজান মাসে আল-আকসা মসজিদে প্রবেশ ও প্রার্থনার ক্ষেত্রে কঠোর বিধি নিষেধ নতুন করে সশস্ত্র সংঘাতের সৃষ্টি করেছে। যে সংঘাতের প্রেক্ষিতে এখন পর্যন্ত নিহত হয়েছেন অন্তত ১৯৮ জন ফিলিস্তিনি, যাদের মধ্যে রয়েছে ৫৫ জন শিশু। অন্যদিকে, ইসরায়েলের হামলার জবাবে ফিলিস্তিনের পাল্টা আক্রমণে ১০ জন ইসরায়েলি নাগরিক মারা গেছেন। ৭৩ বছর ধরে দফায় দফায় চলছে এই অসম সংঘাত। যার ফলে ফিলিস্তিনিরা আজ তাদের নিজেদের ভূমিতেই ভুগছে অস্তিত্ব সংকটে।

প্রাচীনকাল থেকেই ফিলিস্তিন  ভূমি নিয়ে সংঘাত চলছে। আসিরিয়ান, ব্যাবিলোনিয়ান, পার্সিয়ান, ম্যাসিডোনিয়ান এবং রোমানরা সেখানে অভিযান চালিয়েছে, সংঘাতে লিপ্ত হয়েছে। তবে আজকের আধুনিক ইসরায়েল-ফিলিস্তিন সংঘাতকে বুঝতে হলে আমাদের ফিরে যেতে হবে অন্তত একশত বছর আগে, যেখান থেকে এই রাজনৈতিক দ্বন্দ্ব ও সশস্ত্র সংঘাতের সূচনা। ধর্মীয় বিশ্বাসের ভিত্তিতে ঐতিহাসিককাল থেকেই পবিত্র নগরী জেরুজালেম মুসলিম, ইহুদি এবং খ্রিস্টান ধর্মাবলম্বীদের কাছে গুরুত্বপূর্ণ একটি স্থান। তবে এই ধর্মীয় বিশ্বাসের সাথে আধুনিক রাজনীতির মিশেল ঘটে বিংশ শতকে এসে, যখন প্রথম বিশ্বযুদ্ধে অটোমান সম্রাজ্যের পরাজয় ঘটে। অটোমানদের পরাজয়ের পর ইউরোপ, আফ্রিকা ও এশিয়ার বেশ কিছু অঞ্চল স্বাধীনতার স্বাদ পেলেও ভাগ্যের পরিহাসে ফিলিস্তিনিদের কপালে জুটেছে নিজেদের পরিচয় ও অস্তিত্ব হারানোর সংশয়। প্রথম বিশ্বযুদ্ধে পরাজয়ের পর উসমানীয় সম্রাজ্যের শাসনে থাকা মধ্যপ্রাচ্যের ভূখণ্ড ফিলিস্তিন চলে যায় ব্রিটিশদের শাসনে। এসময় থেকেই মূলত ইউরোপের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে নির্যাতিত ইহুদিরা ফিলিস্তিনে একটি স্বাধীন ইহুদি রাষ্ট্র গঠনের স্বপ্ন নিয়ে পাড়ি জমাতে থাকে।

ইহুদি ধর্মগ্রন্থের প্রথম খন্ড “ওল্ড টেস্টামেন্ট” (তানাখ) অনুসারে, বর্তমান ইসরায়েল-ফিলিস্তিন ভূখণ্ড হলো ইহুদিদের “প্রমিজড ল্যান্ড”, যেটা ঈশ্বর নবী আব্রাহাম ও তার বংশধর, অর্থ্যাৎ ইহুদি সম্প্রদায়কে দেয়ার জন্য প্রতিজ্ঞা করেছিলেন। মূলত ঈশ্বর প্রতিশ্রুত সেই “প্রমিজড ল্যান্ড” উদ্ধারের নামেই ইসরায়েলিরা বছরের পর বছর ধরে আন্তর্জাতিক আইন অমান্য করে অবৈধভাবে ফিলিস্তিনিদের উপর নির্যাতন চালিয়ে, করে চলেছে একের পর এক ভূমি দখল।

অন্যদিকে, ইসলাম আনুসারে, পবিত্র ভূমি জেরুজালেম মুসলিমদের প্রথম ক্বাবা, যেখান থেকে শেষ নবী মুহাম্মাদ (সা.) মিরাজ গমন করেছিলেন, আল্লাহর সাথে দেখা করেছিলেন এবং আল-আকসায় বসে ইবাদত করেছিলেন। ফলে ফিলিস্তিনীয় মুসলিমদের কাছে এই স্থানের গুরুত্ব তাদের জীবনের চেয়েও বেশি। এছাড়া শত শত বছর ধরে ফিলিস্তিনিরা এই ভূখণ্ডকেই তাদের দেশ, নিজস্ব ভূমি হিসেবে জেনে আসছে। ফলে উড়ে এসে জুড়ে বসা ইহুদিদের কাছে কোনোভাবেই তারা হেরে যেতে চায়না।

এই হলো ফিলিস্তিন ভূখন্ডকে কেন্দ্র করে উভয় ধর্মের বিশ্বাস। এখন আবারও ফেরা যাক  এই ভূমিকে কেন্দ্র করে চলমান রাজনৈতিক উন্মাদনায়।

১৯১৭ সালের বেলফোর ঘোষণার ভিত্তিতে ১৯৪৮ সালে মধ্যপ্রাচ্যের ফিলিস্তিন ভূমিতে প্রতিষ্ঠিত হয় ইসরায়েল নামক ইহুদি রাষ্ট্র। অথচ বেলফোর ঘোষণার সময় ফিলিস্তিনে ৯৩ শতাংশ আরব মুসলিমদের বিপরীতে মাত্র ৭ শতাংশ ছিল ইহুদি জনগোষ্ঠী। ফলে দলে দলে ইউরোপীয় ইহুদিরা পাড়ি জমাতে থাকে ফিলিস্তিনে। এর দশক দুয়েক পরে শুরু হয় দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ।

যুদ্ধ শেষে ব্রিটিশরা ফিলিস্তিন ছেড়ে যাওয়ার আগে জাতিসংঘের প্রস্তাবে সম্পূর্ণ ভূখণ্ডকে ভাগ করে ৫৬ শতাংশে ইহুদিদের জন্য এবং ৪৪ শতাংশে মুসলিমদের জন্য আলাদা দুটি স্বাধীন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার প্রস্তাব দেয়। এবং জেরুজালেমকে যেহেতু উভয় জনগোষ্ঠী তাদের রাজধানী দাবি করে তাই এই নগরীকে একটি “আন্তর্জাতিক শহর” এর মর্যাদা দেয়ার প্রস্তাব রাখা হয়। কিন্তু এই অসম প্রস্তাবে ইহুদিরা রাজি হলেও মুসলিমরা প্রতিবাদ শুরু করে।

এরপর ১৯৪৮ সালে কোনো রকম সমাধান ছাড়াই যখন ব্রিটিশরা ফিলিস্তিন ত্যাগ করেছিলো, তখন ইসরায়েল স্বাধীনতা ঘোষণা করে বসে। এর প্রেক্ষিতে পার্শ্ববর্তী আরব দেশ মিশর, সিরিয়া, জর্ডান, ইরাক ইসরায়েলে হামলা চালায়। শুরু হয় প্রথম আরব-ইসরায়েল যুদ্ধ। এই যুদ্ধে ইসরায়েল ফিলিস্তিনের অধিকাংশ ভূমি,  দুই তৃতীয়াংশের বেশি (৭৭ শতাংশ) দখল করে নেয়। আয়তনে ফিলিস্তিনিরা হয়ে পড়ে কোণঠাসা। তারপরেও যেটুকু ভূমি ছিলো সেখানে স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার বদলে মিসর ও জর্ডান তা নিজেদের মধ্যে ভাগাভাগি করে নেয়। পশ্চিম তীর ও পূর্ব জেরুজালেমে শাসন কায়েম করে জর্ডান এবং গাজা চলে যায় মিশরের নিয়ন্ত্রণে।

এরপর ফিলিস্তিনিদের জীবনে ঘটে গেছে বহু দ্বন্দ্ব-সংঘাত, যুদ্ধ, রোনাজানি। ১৯৬৭ সালের যুদ্ধে ইসরায়েল পূর্ব জেরুজালেম এবং পশ্চিম তীর, সিরিয়ার গোলান মালভূমি, গাজা, এবং মিশরের সিনাই অঞ্চল দখল করে নেয়। পশ্চিমাদের মদদে দিনে দিনে ইসরায়েলিরা হয়ে ওঠে আরও শক্তিশালী। সেই সাথে শরণার্থী শিবিরে বাড়তে থাকে উদ্বাস্তু ফিলিস্তিনিদের সংখ্যা।

তবে, ১৯৯৩ সালে যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যস্থতায় সম্পাদিত ইসরায়েল ও ফিলিস্তিনি মুক্তি সংস্থার (পিএলও) মধ্যে অসলো শান্তি চুক্তির ভিত্তিতে ১৯৯৬ সালে ইসরায়েল পশ্চিম তীর ও গাজা ফিলিস্তিনিদের কাছে হস্তান্তর করে এবং সেখানে স্বায়ত্তশাসনের সুযোগ দেয়। কিন্তু সেই স্বায়ত্তশাসন পুরোটাই লোক দেখানো। ততদিনে এসব অঞ্চলে অবৈধ ইহুদি বসতি স্থাপনের মাধ্যমে দলে ভারী হয়েছে তারা। চারিদিকে দেয়াল তুলে সীমানা নির্ধারণ, চলাফেরায় নানা ধরণের অপমানজনক বিধি নিষেধ, বিদ্বেষ, বৈষম্য এই সবকিছু মিলিয়ে বছরের পর বছর ধরে এক দুর্বিষহ জীবন যাপন করছে ফিলিস্তিনিরা।

এখন প্রশ্ন হলো, দশকের পর দশক ধরে চলা এই অসম সংঘাতের সমাধানে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় কোনো পদক্ষেপ নিচ্ছে না কেনো?

বিগত সাত দশকে ইসরায়েল-ফিলিস্তিন সমস্যা সমাধানে বহু পরিকল্পনা, চুক্তির নকশা বানানো হয়েছে। কিন্তু কোনো পরিকল্পনাই ফিলিস্তিনিদের জীবনে শান্তি এনে দিতে পারেনি। ইসরায়েল ও ফিলিস্তিনিদের মধ্যকার পারস্পারিক অনাস্থা এবং ইসরায়েলের দখলদারি মনোভাবই মূলত এই আন্তর্জাতিক সমস্যা সমাধানের পথে প্রধান অন্তরায়। এছাড়া অন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের যথাযথ গুরুত্ব দানের অভাবও রয়েছে এখানে।

সমস্যার শুরুতে পুরো মুসলিম বিশ্ব ছিলো ফিলিস্তিনিদের পক্ষে এবং পশ্চিমারা ইসরায়েলের পক্ষে থাকলেও ধীরে ধীরে এই পক্ষ বিপক্ষের দিক বদল ঘটছে। ১৯৭৮ সালে ক্যাম্প ডেভিড চুক্তির মাধ্যমে প্রথম কোনো মুসলিম দেশ হিসেবে ইরায়েলকে স্বীকৃতি দেয় মিশর এবং কূটনৈতিক সম্পর্কও গড়ে তোলে। পরবর্তীতে সেই পথে হেঁটেছিলো জর্ডানও। সম্প্রতি সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের মধ্যস্থতায় সংযুক্ত আরব আমিরাত, বাহরাইন এবং সুদানও ইসরায়েলের সাথে সুসম্পর্কের চুক্তিবদ্ধ হয়েছে, যা ফিলিস্তিনিদের মারাত্মকভাবে মনঃক্ষুণ্ণ করেছে।

বর্তমানে ফিলিস্তিনের শক্তিশালী দুটি দলের একটি হামাস, যা গাজা দখল করে সেখানে শাসন কায়েম করেছে এবং অপর দল মাহমুদ আব্বাস নেতৃত্বাধীন ফাতাহ। তবে হামাসকে আমেরিকা ও অধিকাংশ ইউরোপীয় দেশ সন্ত্রাসী গোষ্ঠী মনে করে এবং ফাতাহকেই ফিলিস্তিনের কাঠামোগত সরকারের মর্যাদা দিয়েছে। তবে গাজা অঞ্চল ফিলিস্তিনের শক্তিশালী দল হামাস শাসন করলেও এই অঞ্চলের সীমান্ত নিয়ন্ত্রণ করে ইসরায়েল ও মিশর। সীমানায় এই দুই দেশের কঠোর নজরদারির উদ্দেশ্য হলো গাজায় যেনো কোনোভাবেই অস্ত্র বা অস্ত্র সরঞ্জাম প্রবেশ করতে না পারে। অর্থ্যাৎ, নামমাত্র স্বায়ত্তশাসন দিয়ে কার্যত ফিলিস্তিনের পুরোটাই দখলে রেখে ধীরে ধীরে কালের বিবর্তনে ফিলিস্তিনিদের নিশ্চিহ্ন করে দেয়াই হয়ত ইসরায়েলের উদ্দেশ্য।

২০১৩ সালে বিবিসি’র এক জরিপে দেখা যায়, পুরো পশ্চিমা বিশ্বে যুক্তরাষ্ট্র হচ্ছে একমাত্র দেশ, যেখানে জনমত ইসরায়েলের পক্ষে সহানুভূতিশীল। এই সহানুভূতিশীলতা শুধু মুখেই নয় বরং, সামরিক ক্ষেত্র পর্যন্ত বিস্তৃত। যুক্তরাষ্ট্রের সবচেয়ে বেশি আন্তর্জাতিক সাহায্য পায় ইসরায়েল। আর এই সাহায্যের একটি বড় অংশই খরচ হয় ইসরায়েলের সামরিক খাতে।

এছাড়া আনুষ্ঠানিকভাবে ঘোষণা না দিলেও অনেক বিশ্লেষকই মনে করেন, ইসরায়েল পারমাণবিক শক্তিধর একটি দেশ। ধারণা করা হয়, এই পারমাণবিক শক্তি পশ্চিমাদের সহায়তায়ই অর্জন করেছে ইসরায়েল। কেনোনা, ইসরায়েলে জাতিসংঘ হতে কখনো পারমাণবিক পরিদর্শনে যাওয়া হয়নি। কিন্তু ইরানের দিকে তাকালে সেখানে দেখা যায় ঠিক বিপরীত চিত্র। আর এক্ষেত্রে ইসরায়েলের শক্তির উৎস কী, সেটা বলার বোধহয় প্রয়োজন নেই। সুতরাং, পশ্চিমা পরাশক্তিদের মদদপুষ্ট ইসরায়েলের বিপক্ষে দাঁড়ানো মানে পশ্চিমা পারমাণবিক শক্তির বিপক্ষে দাঁড়ানো। সেখানে একক কোনো দেশের পক্ষে ইসরায়েলকে পরাজিত করা প্রায় অসম্ভবেরই নামান্তর।

আরও পড়তে পারেন-

তাছাড়া ইসরায়েলের পিছনে যেমন পশ্চিমাদের বিশেষত যুক্তরাষ্ট্রের একচ্ছত্র সমর্থন রয়েছে, তেমনি বিশ্বের অধিকাংশ দেশের ফিলিস্তিনিদের উপর সহানুভূতিশীলতা থাকলেও তাদের পিছনে যুক্তরাষ্ট্রের মত বড় কোনো শক্তি নেই। এদিক দিয়ে ফিলিস্তিনিদের জন্য বিশ্ববাসীর সহানুভূশীলতা অনেকটা মুখে মুখেই। তাই ইসরায়েলের অস্ত্র, গোলাবারুদের জবাব ফিলিস্তিনিদের দিতে হয় কিছু খেলনা রকেট বা ইট, পাথরের ঢিল ছুঁড়ে।

এখন প্রধান উদ্বেগের বিষয় হলো এই সমস্যার সমাধান কী হতে পারে? একদিকে ফিলিস্তিনের দাবি ১৯৬৭ সালের যুদ্ধের পূর্বের সীমানা অনুযায়ী স্বাধীন সার্বভৌম ফিলিস্তিন রাষ্ট্র কায়েম করা, যার রাজধানী হবে পূর্ব জেরুজালেম। অপরদিকে, বিভিন্ন স্থানে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা প্রায় এক কোটি ছয় লাখ বাস্তুচ্যুত ফিলিস্তিনিদের কোনোভাবেই নিজেদের ভূমিতে প্রবেশ করতে দিবে না ইসরায়েল। কেনোনা এত বড় জনগোষ্ঠীকে পুনরায় নিজ ভূমি, ইসরায়েলে প্রবেশ করতে দিলে ইহুদিবাদ হুমকির মুখে পড়বে বলে বিশ্বাস করে ইহুদিরা। এছাড়া জেরুজালেম নগরী নিয়ে যে দ্বন্দ্ব, তার সমাধান অত্যন্ত জটিল বলে অনেকেই মনে করেন। সেই সাথে বছরের পর বছর ধরে চলতে থাকা আবর-ইসরায়েল দ্বন্দ্বের কয়েক দফা যুদ্ধে ফিলিস্তিনের মানচিত্রে এসেছে বড় ধরণের পরিবর্তন। যদিও জাতিসংঘ বলছে, দফায় দফায় হওয়া যুদ্ধে ইসরায়েল যেসব ভূমি দখল করেছে তা অবৈধ এবং আন্তর্জাতিক আইনের বিপরীত। কিন্তু ইসরায়েলের এতে কোনো মাথা ব্যাথা নেই। অবৈধভাবে দখলকৃত অঞ্চলগুলোয় তারা ইহুদি বসতি স্থাপন করেছে। এসব অঞ্চলে এখন প্রায় ৭ লক্ষ ইহুদি বসবাস করছে।

এসব কারণে ইসরায়েল-ফিলিস্তিন সমস্যার সমীকরণ জটিল থেকে জটিলতর রূপ ধারণ করেছে। চল্লিশের দশকে এই সমস্যা যতটুকু ছিলো একাবিংশ শতকে এসে সেই সমস্যা সুদে আসলে বৃদ্ধি পেয়ে হয়েছে কয়েকগুণ। আর যত সময় গড়িয়েছে এই দুই জনগোষ্ঠীর মধ্যে অবিশ্বাসের মাত্রা তত বেড়েছে, সহিংসতা হয়েছে তত হিংস্র এবং সমাধানের পথও হয়েছে ততটাই দুরূহ।

তবে এ সমস্যা সমাধানের প্রথম ধাপ হতে পারে বিশ্ব শক্তিদের আগে একমত হওয়া। কোনো একপক্ষের দিকে অধিক সমর্থন দেয়া থেকে বিরত থাকা। কেনোনা, সাধারণ পরিষদের ১৯২ টি দেশের মধ্যে ১৩৪ টি দেশ ফিলিস্তিনকে স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দিলেও নিরাপত্তা পরিষদের আপত্তির কারণে এখনো ফিলিস্তিন সার্বজনীনভাবে স্বাধীন সার্বভৌম রাষ্ট্র হতে পারেনি। তাই এই সমস্যা সমাধানের একমাত্র পথ হতে পারে বিশ্বনেতাদের ফিলিস্তিন বিষয়ে পূর্বেই একমত হওয়ার চেষ্টা করা, তারপর দুই পক্ষের মাঝে বিশ্বাস স্থাপনের মাধ্যমে নিরপেক্ষ দৃষ্টিতে সমস্যা অবলোকন করা এবং সেই ভিত্তিতে সমাধানের পথে এগিয়ে যাওয়া।

তবে এই পুরো প্রক্রিয়ায় সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কাজ হলো, ইসরায়েল-ফিলিস্তিনের মাঝে পারস্পারিক আস্থা তৈরি করা। কিন্তু এত বছরে পানি যতদূর গড়িয়েছে, তাতে করে পারস্পারিক আস্থা ও বিশ্বাস ততদূর যাত্রা করতে পারবে কিনা এ এক বড় বিস্ময়ের ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে বিশ্ববাসীর সামনে। এই বিস্ময় নিয়ে সমাধানের পথে হাঁটতে হাঁটতে হয়ত আরো বহু বছর কেটে যাবে, সেই সাথে আরো রক্তও ঝরবে ফিলিস্তিন ভূমিতে।

লেখক: সাবেক শিক্ষার্থী, আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগ, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়। ইমেইল: trisha.jannat1112@gmail.com

উম্মাহ২৪ডটকম: এমএ

উম্মাহ পড়তে ক্লিক করুন-
https://www.ummah24.com

দেশি-বিদেশি খবরসহ ইসলামী ভাবধারার গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে ‘উম্মাহ’র ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।