Home ইতিহাস ও জীবনী হামাম: মধ্যপ্রাচ্যের প্রাচীন স্নানের রেওয়াজ

হামাম: মধ্যপ্রাচ্যের প্রাচীন স্নানের রেওয়াজ

আধুনিক মানুষের কাছে স্নান একটি অত্যন্ত ব্যক্তিগত বিষয়। কিন্তু যদি ইতিহাসের সরণী বেয়ে হেঁটে যাওয়া যায়, তাহলে দেখব জনসাধারণের স্নানাগার বা হামাম মধ্য প্রাচ্যের শহরগুলিতে অত্যন্ত জনপ্রিয় ছিল। আধুনিক প্লাম্বিং আবিষ্কারের আগে অবধি এই হামামগুলি জনসাধারণের স্বাস্থ্য ও পরিচ্ছন্নতার জন্য ছিল ভীষণ গুরুত্বপূর্ণ। তাছাড়াও, এগুলো ছিল মানুষের দেখা করে গল্পগুজব করার স্থানও।

হামামের ইতিহাসঃ

হামামের ইতিহাসের সূচনা ভূমধ্যসাগরীয় অঞ্চলে, যার শিকড় খুঁজে পাওয়া যায় রোমান স্নানাগারের ধারণার মধ্য থেকে। রোমান সাম্রাজ্যে এই ধরনের স্নানাগার ছিল অত্যন্ত সাধারণ একটি বিষয়। ইউরোপ, উত্তর আফ্রিকা ও পূর্ব ভূমধ্যসাগরীয় অঞ্চল, যেখানে যেখানে রোমান সাম্রাজ্য পা রেখেছে, হামামের ধারণা দিয়ে গিয়েছে।

যদিও ইউরোপে ক্রমশ এই হামাম জাতীয় স্নানাগারের প্রচলন কমে যায়। কিন্তু ভূমধ্যসাগরের আশপাশ ও সেখান থেকে মধ্যপ্রাচ্য পর্যন্ত রমরম করে বৃদ্ধি পায় এই প্রথা। আবহাওয়া ছিল মূল কারণ। গ্রীষ্মকালীন স্নানের আরাম কে না জানেন।

আরও পড়তে পারেন-

বাইজান্টিয়াম সম্রাটরা রোমান আদলেই তৈরি করতেন তাঁদের হামামগুলি। এতে প্রথমে একটি অভ্যর্থনা কক্ষ থাকত। তারপর স্টিম বাথ নেওয়ার একটি ঘর, তারপর সাধারণ জলে স্নান করার ঘর ও সবচেয়ে শেষে শীতল জলের স্নানকক্ষ। মোজাইক দিয়ে গাঁথা থাকত হামামের মেঝে ও চৌবাচ্চা।

উম্মাইয়া খলিফাদের শাসনকালে এই হামাম হয়ে উঠেছিল বিলাসের অন্যতম স্থান। তবে, এই খালিফারা নিজেদের প্রাসাদের বাগানে তৈরি করতেন ব্যক্তিগত হামাম… তাকে বলা হয় কুসুর বা কসর। জর্ডনের অষ্টম শতকের কসর’আময়রা হামাম এর অন্যতম উদাহরণ।

এই বিলাসী স্নানাগারের দেওয়ালে টাঙানো থাকত সুন্দর সুন্দর চিত্র। তবে, উম্মাইয়া খলিফারা শীতল কক্ষটি রাখেননি। বরং, তাঁদের হামামের নকশা হয়ে উঠেছিল আরও নিখুঁত। অনেকসময় খলিফারা সেখানে জলকেলিও করতেন।

আব্বাসীয় খলিফাদের শাসনকালে বাগদাদ শহরে নাকি প্রায় ৬০০০ হামাম ছিল। ততদিনে একটি শহরের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ অংশ হিসেবে হামাম পরিচিত হয়ে গিয়েছে। মসজিদ, মাদ্রাসা, ইসলামী বাগানের গা লাগোয়া হামামে সাধারণ মানুষ দিনের শেষে পরিস্রুত হতে আসতেন।

হামামে স্নানের রীতি রেওয়াজঃ

হামামের স্থাপত্য ও সৌন্দর্য যেমন অনুপম ছিল, সেরকমই শালীন ছিল এখানে স্নানের রীতি রেওয়াজ।

নারী ও পুরুষের আলাদা স্নানাগার বা স্নানের সময় বরাদ্দ ছিল। নারীরা নিজেদের সঙ্গে একটি বেতের ঝাঁপি নিয়ে স্নানে ঢুকতেন, তাতে থাকত পোশাক ও প্রসাধনের জিনিস। নারীরা পাতলা একটি কাপড়ের আবরণ গায়ে জড়িয়ে স্নান সারতেন। পুরুষ নারী সকলকে হামামের বাইরের বাগানে পোশাক পরে থাকতে হত।

অটোমান তূর্কীদের শাসনকালে হামামে হাভলি বা তোয়ালে ও পেস্তামেল বা বাথরোবের প্রচলন ছিল।সেগুলোতে সুতোর সুন্দর কারুকাজ করা থাকত। সেই সময় আরেকটি জিনিস অবশ্যপ্রইয়োজনীয় ছিল, কাঠের তৈরি হামাম-পাদুকা।

বর্তমানে আমরা অনেকেই রিল্যাক্স করার জন্য স্পা তে যাই। পয়সা খরচ করে আরাম কিনি। কিন্তু প্রাচীনকালে সরকারি ভাবেই মানুষকে শান্তি দেওয়ার উপায় ছিল এই হামাম নামক স্নানাগার।

উম্মাহ২৪ডটকম: এসএএ

উম্মাহ পড়তে ক্লিক করুন-
https://www.ummah24.com

দেশি-বিদেশি খবরসহ ইসলামী ভাবধারার গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে ‘উম্মাহ’র ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।