Home ইসলাম ‘মু’মিন জীবনে আত্মশুদ্ধি ও সঠিক পন্থায় ইবাদাতের গুরুত্ব অপরিসীম’

‘মু’মিন জীবনে আত্মশুদ্ধি ও সঠিক পন্থায় ইবাদাতের গুরুত্ব অপরিসীম’

গত শুক্রবার (১১ জুন) দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার অন্যতম বৃহৎ ইসলামী শিক্ষাকেন্দ্র আল জামিয়াতুল আহলিয়া দারুল উলূম মুঈনুল ইসলাম হাটহাজারী’র প্রধান মসজিদ জামে বায়তুল কারীমে জুমা পূর্ব বয়ানে মুমিন জীবনে আত্মশুদ্ধি ও সঠিক পন্থায় ইবাদাত-বন্দেগীর গুরুত্ব ও প্রয়োজনীয়তার উপর গুরুত্বপূর্ণ বয়ান করেন প্রতিষ্ঠানটির সিনিয়র উস্তাদ মুফতি হুমায়ুন কবীর।

বয়ানে তিনি বলেন, আল্লাহ তাআ’লা মানব জাতির ইহকালীন শান্তি ও পরকালীন মুক্তির লক্ষে হিদায়াতের বাণী দিয়ে সৃষ্টির আদি থেকেই যুগে যুগে নবী-রাসূল’গণ (আ:) ও আল্লাহর বাণী তথা কিতাব নাযিল করেছেন। সর্বশেষ ও সর্বশ্রেষ্ঠ নবী হিসাবে প্রেরণ করেছেন আমাদের নবী মহানবী হযরত মুহাম্মদ (সা.) কে। যাঁকে বিশ্ব জগতের জন্য রহমত বলা হয়েছে। তাঁর উপর অবতীর্ণ করেছেন- সর্বশ্রেষ্ঠ ও সর্বশেষ মহাগ্রন্থ আল-কুরআনুল করীম। এতে মানব জাতীর সমস্ত প্রয়োজনীয় বিষয় নানাভাবে আল্লাহ তাআ’লা বর্ণনা করেছেন।

তিনি বলেন, বিষয়বস্তুর গুরুত্ব থেকে পবিত্র কুরআন মাজীদে অনেক বিষয় বার বার উল্লেখ করেছেন। যার মধ্যে একটি হচ্ছে- মানব জাতির অন্তর শুদ্ধি করণের বিষয়। এমনি এক আয়াতে মহান আল্লাহ ইরশাদ করেন- { قَدْ أَفْلَحَ مَنْ تَزَكَّى } “অবশ্যই কামিয়াব সফলকাম ওই ব্যক্তি, যিনি অন্তর শুদ্ধি করেছেন। নিজ আত্মা বা অন্তরকে পাক-পবিত্র করেন।” (সূরা আ’লা- ১৪ আয়াত)।

এ পর্যায়ে তিনি বলেন, এখানে تَزَكَّى শব্দটি زکٰوۃ থেকে নির্গত, যার অর্থ পবিত্র ও শুদ্ধিকরণ। সম্পদের যাকাতকেও যাকাত এই জন্য বলা হয়, কারণ তার দ্বারা সম্পদ তার মালিকের জন্য পবিত্র হয়ে যায়। فلاح বা সফলতার মর্ম কি, তা একটু পরে আলোচনা করব ইনশাআল্লাহ। অতএব, আলোচ্য সফলতার লক্ষে প্রত্যেক মানব সন্তানের জন্য অন্তরের পাক-পবিত্রতা, আত্মশুদ্ধি অর্জন করা, তার জন্যে মেহনত-মুজাহাদা করা অপরিহার্য।

অন্তরের পবিত্রতা কি- এ প্রসঙ্গে মুফতি হুমায়ুন কবীর বলেন, অন্তরাত্মা কে বাতিল ও ভ্রান্ত আক্বীদামুক্ত করা এবং হক ও বিশুদ্ধ অক্বীদা-বিশ্বাস দিয়ে পরিপূর্ণ করা। স্বীয় জীবন বিশুদ্ধ আমল, আখলাক, সুন্নাতে রাসূল দিয়ে সাজানো। অশুদ্ধ আমল-আখলাক ও বিদআ’ত-রাসূমাত, অপসাংস্কৃতি থেকে বিরত থাকা। অন্তর্নিহিত অনেক রোগ রয়েছে তা থেকে মুক্তি লাভ করা। যেমন- লৌকিকতা, অহংকারী, হিংসা-বিদ্বেশ ইত্যাদি বের করে অন্তরে এখলাছ লিল্লাহিয়্যাত, নিষ্ঠা, ধৈর্য্য, কৃতজ্ঞতা, নম্রতা-ভদ্রতা, ক্ষমা, দয়া ইত্যাদি দ্বারা পরিপূর্ণতা অর্জন করা। কুফর, শিরক, নিফাক, শোবা ইত্যাদি সম্পূর্ণরূপে ত্যাগ করা। কিন্তু এ আত্মশুদ্ধি এত সহজে অর্জন হয় না। এর জন্য লাগাতার দীর্ঘস্থায়ী মেহনত করতে হয়। শরীয়তের পদাংক অনুসরণ করতে হবে। সাথে নফল ইবাদত ও যিকর-আযকার অতি যত্ন সহকারে আদায় করতে হবে।

আরও পড়তে পারেন-

কারণ, এর দ্বারা অন্তরের ঈমানী শক্তি প্রবল হারে বৃদ্ধি পায়। তাই আল্লাহ তাআ’লা কুরআনুল কারীমে এবং নবী (সা.) হাদীস শরীফে বার বার নানাভাবে বেশী ও অধীক মাত্রায় যিকর আদয় করবার জন্য উৎসাহ প্রদান করেছেন। মনে রাখা চাই, সব ইবাদতের লিমিট আছে, কিন্তু আল্লাহ যিকর এর কোন লিমিট বা সীমাবদ্ধতা নেই। আল্লাহ তাআ’লা ইরশাদ করেন- يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا اذْكُرُوا اللَّهَ ذِكْرًا كَثِيرًا وَسَبِّحُوهُ بُكْرَةً وَأَصِيلً

অর্থাৎ- “হে ঈমানদারগণ! তোমরা খুব বেশি বেশি আল্লাহকে স্বরণ কর, এবং সকাল-সন্ধ্যা তাঁর পবিত্রতা বয়ান কর।” (সূরা আহযাব- ৪১ আয়াত)।

এ পর্যায়ে হাদীসের উদ্ধৃতি দিয়ে মুফতি হুমায়ুন কবীর বলেন, হযরত আম্মাজান আয়েশা ছিদ্দীকা (রাযি.) বলেন, আল্লাহর নবী (সা.) সব সময় যিকর করতেন।” (বুখারী- ১/৪৪)।

তিনি বলেন, যিকর অনেক প্রকারের আছে, যার আলোচনা আগামীতে করব ইনশাআল্লাহ। তবে যিকরের এ ফযীলত অর্জন হবে তখন, যখন শিরক-বিদআত ও হারাম থেকে মুক্ত থেকে যিকর করা হয়। অন্যথায় এ যিকর না আল্লাহর নিকট গ্রহণযোগ্য হবে, না সফলতার জন্য কার্যকর হবে।

তিনি বলেন, মূল থাকলে মুলা পায়। এক ব্যক্তির সামান্য মসলার প্রয়োজন। তাই দোকানদারকে এক টাকার মসলা দিতে বললেন। দোকানদার এক টাকার মসলা দিয়ে সামান্য থুলা বা বেশি দিয়েছে। তখন ক্রেতা ব্যক্তি বললেন, আমার শুধু বেশিটার প্রয়োজন। কারণ, এটুকুতেই আমার প্রয়োজন পুরণ হয়ে যাবে। এক টাকার ক্রয় করার আর জরুরত নেই। দোকানদার বললেন, আরে বোকা, এক টাকার কিনলেই তো থুলা বা অতিরিক্তটা পাবে, না হয় তোমাকে বেশিটা কে দিবে? তদ্রুপভাবে, যাদের মূল আক্বীদা-বিশ্বাস, আমল-আখলাক, হারাম-হালাল ঠিক আছে, তাদেরকেই নফল ইবাদাত ও নফল যিকর-আযকার ফল দিবে। অন্যথায় ওই সদাই-ক্রেতার মতো অবস্থা হবে।

বয়ানের শেষ পর্যায়ে মুফতি হুমায়ুন কবীর বলেন, বর্তমানে অনেক দরবারে দেখা যায়, শিরক-বিদআতের আড্ডা, নাম দিয়েছে- যাকেরীন, তারফতের কাণ্ডারী, এগুলো সব ভন্ডামি, নকল মারিফাত। আর আমাদের এ মাদ্রাসাসমূহ হচ্ছে- সহীহ শরীয়ত ও তরীক্বত শিক্ষা-দিক্ষার বিশুদ্ধকেন্দ্র। আল্লাহ তাআলা সকলকে সহীহ বুঝার সঠিকটি মানার ও গ্রহণ করার তাওফীক দান করুন। আমিন।

উম্মাহ২৪ডটকম: এমএ

উম্মাহ পড়তে ক্লিক করুন-
https://www.ummah24.com

দেশি-বিদেশি খবরসহ ইসলামী ভাবধারার গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে ‘উম্মাহ’র ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।