Home ইসলাম সবর ও শোকর: বুদ্ধিমান মুসলিমের বৈশিষ্ট্য

সবর ও শোকর: বুদ্ধিমান মুসলিমের বৈশিষ্ট্য

সবর অর্থ ধৈর্যধারণ করা, আর শোকর অর্থ কৃতজ্ঞ হওয়া। সবর ও শোকর এ দুটি এমন মহৎ গুণ যা একজন মুসলিমকে সরাসরি জান্নাতে পৌঁছে দেয়।

সবর ও শোকর-এর হাকিকত

সবরের দ্বারা আল্লাহর কাছে পূর্ণ আত্মসমর্পণ করা হয়। যে কোনো বিপদআপদে ধৈর্য্যধারণ করা মূলত আল্লাহ তা’আলার কাছে নিজেকে তার বান্দা হিসেবে সোপর্দ করার নির্দেশ করে। তাই সবরের সওয়াব অনেক বেশি। হাদিস শরিফে এসেছে, সবরের প্রতিদান হলো জান্নাত।

বুদ্ধিমান মুসলিমের আরেকটি গুণ হল শোকর। শোকর আদায় করলে আল্লাহ তা’আলা নি’আমত আরও বৃদ্ধি করে দেন। শোকর আদায় যে কেবলই একটি কাঙ্ক্ষিত বিষয় এমন নয়, বরং এর ব্যতিক্রমে কৃতঘ্ন হলেও পবিত্র কুরআনে উচ্চারিত হয়েছে কঠোর হুঁশিয়ারি। আল্লাহ বলেন, “যদি তোমরা আমার নি’আমত পেয়ে কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করো তাহলে আমি নি’আমত বৃদ্ধি করে দেব। আর যদি অকৃতজ্ঞ হও তবে জেনে রেখো আল্লাহর আযাব অনেক কঠিন।” (আল কুরআন-১৪: ৭)। সুতরাং, শোকর আদায় করলে আল্লাহ বান্দার নি’আমত আরও বাড়িয়ে দেন। আর না-শোকরী করলে তার নি’আমতকে ছিনিয়ে নেন।

নি’আমত বৃদ্ধির প্রক্রিয়া বিভিন্ন রূপ হতে পারে। কখনও নি’আমতের পরিমাণ বাড়িয়ে দেন। কখনও নি’আমতে বরকত দান করেন। যেমন সম্পদের পরিমাণ না বাড়িয়ে তাতে বরকত দান করে দেন। এ জন্যই অনেক দ্বীনদার মানুষকে দেখা যায়, অল্প রুজির মধ্যেও সুখ-শান্তি ও তৃপ্তির সঙ্গে জীবনযাপন করছেন। এর অর্থ আল্লাহ তাদের অল্প সম্পদের মধ্যেই বরকত দান করেছেন। আবার অনেককে দেখা যায়, সম্পদের পাহাড় গড়ে তুললেও সুখ নেই। আজ এই বিপদ, কাল ঐ বিপদ। এগুলি অনেকাংশেই না-শোকরীর ফল।

সবর ও শোকর: রাসূল (সাঃ) ও সাহাবীদের আদর্শ

অভাব-অনটনে ধৈর্য্যধারণ করা ও নি’আমত পেলে শোকর আদায় করা রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লামের আদর্শ। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লাম অনেক বেশি অভাব-অনটনের মধ্যে দিন কাটাতেন। মাসের পর মাস তাঁর চুলায় আগুন জ্বলত না। দাওয়াতি কাজে তিনি দূর-দূরান্তে সফর করতেন। আর অভাব-অনটন তার সফরসঙ্গী হতো।

রাসুল সাল্লাল্লাহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লাম কখনও হয়ত একটি খেজুর খেয়েই দিনাতিপাত করতেন। কখনও না খেয়েও থাকতেন। কখনও হয়ত ঘরে রুটি তৈরি হয়েছে কিন্তু কোনো তরকারি নেই। এই ছিল দোজাহানের বাদশাহর জীবনযাত্রার মান। তারপরও তিনি সবর ও শোকর আদায় করেছেন। কখনও অধৈর্য্য হয়ে না-শোকরী করেননি। সাহাবায়ে কেরামের মধ্যে বেশিরভাগের অবস্থাই এরূপ ছিল। যখন তাদের কাছে সম্পদ আসত, তখন তারা পেরেশান হয়ে যেতেন। তাঁদের ভয় হয় না জানি ঈমানের জন্য কষ্টের বদলা দুনিয়ায় পেয়ে গেলাম কিনা?

আরও পড়তে পারেন-

এ জন্যই যখন আয়েশা রাযিঃ-এর জন্য উমর রাযিঃ রাষ্ট্রীয় ভাতা চালু করে দেন, তখন তিনি বলে আফসোস প্রকাশ করেন যে, “হে আল্লাহ! আমার কাছে দুনিয়া আসা শুরু করেছে। সুতরাং তুমি আমাকে তোমার কাছে উঠিয়ে নাও।”

আল্লাহর উপর ঈমান রাখে এমন প্রতিটি ঈমানদার ব্যক্তিই মনে করে, ভালো-মন্দ, আনন্দ-বেদনা, সচ্ছলতা-অসচ্ছলতা সবকিছুর মালিক একমাত্র আল্লাহ তা’আলা। তার ইচ্ছাতেই হতদরিদ্র ব্যক্তি কখনো সুরম্য অট্টালিকার মালিক হয়ে যায়, আবার কাঁড়ি কাঁড়ি সম্পদের মালিকও সবকিছু হারিয়ে পথে নেমে আসে। মুমিনমাত্রই এ বিশ্বাস দৃঢ়তা ও আস্থার সঙ্গে হৃদয়ে লালন করে। এ বিশ্বাসে ভর করেই বিপদাক্রান্ত মুমিন ‘আল্লাহর ইচ্ছা’ বলে সান্তনা পায়। আবার কোনো নি’আমত পেলে এ বিশ্বাসেই সে উচ্চারণ করে- ‘আলহামদুলিল্লাহ’ কিংবা এসবই আল্লাহর দান।

সবর ও শোকর: উম্মতে মুহাম্মদির মুমিনদের বৈশিষ্ট্য

ঈসা আলাইহিস সালামকে আল্লাহ তা’আলা বলেছিলেন, তোমার পরবর্তীতে আমি এমন এক উম্মত পাঠাব, কাঙ্ক্ষিত কোনো বিষয় যদি তাদের হাসিল হয় তাহলে তারা আল্লাহর প্রশংসা করবে। অর্থাৎ, শুকরিয়া আদায় করবে। আর যদি অনাকাঙ্ক্ষিত কোনো কিছু তাদের পেয়ে বসে তাহলে তারা সওয়াবের আশায় ধৈর্য্যধারণ করবে। (মুসনাদে আহমাদ)

উম্মতে মুহাম্মদির এ চরিত্র এভাবেই আল্লাহ তা’আলা প্রকাশ করেছেন ঈসা আলাইহিস সালামের কাছে। আরেক হাদিসে বিষয়টি আরও পরিষ্কার প্রতিভাত হয়েছে। রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, “মুমিনের বিষয় কত আশ্চর্যের! সকল অবস্থাই তাঁর জন্য কল্যাণকর। আর এটি তো কেবল মুমিনেরই বৈশিষ্ট্য। সচ্ছলতায় সে আল্লাহর শোকর আদায় করে, আর এ শোকর আদায় করা তার জন্য কল্যাণকর হয়। আর যদি তার ওপর কোনো বিপদ নেমে আসে তাহলে সে সবর করে। আর এ সবর করাও তার জন্য কল্যাণকর হয়ে যায়।” (সহিহ মুসলিম)

সুতরাং অভাব-অনটনে ধৈর্য্যধারণ করা ও সচ্ছলতায় শোকর আদায় করা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লামের সুন্নত এবং সকল বুদ্ধিমান মুসলমানেরও বৈশিষ্ট্য। আল্লাহ আমাদের প্রত্যেককে দুটি বৈশিষ্ট্য অর্জনের তাওফিক দান করুন। আমীন।

উম্মাহ২৪ডটকম: এসএএ

উম্মাহ পড়তে ক্লিক করুন-
https://www.ummah24.com

দেশি-বিদেশি খবরসহ ইসলামী ভাবধারার গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে ‘উম্মাহ’র ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।