Home প্রবন্ধ-নিবন্ধ কার লেখা ‘ইসলামী বই’ পড়ব

কার লেখা ‘ইসলামী বই’ পড়ব

- মাওলানা মুহাম্মদ যাইনুল আবেদীন।

।। মাওলানা মুহাম্মদ যাইনুল আবিদীন ।।

আমাদের আল্লাহ আমাদেরকে আদেশ দিয়ে বলেছেন-

{يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا ادْخُلُوا فِي السِّلْمِ كَافَّةً وَلَا تَتَّبِعُوا خُطُوَاتِ الشَّيْطَانِ إِنَّهُ لَكُمْ عَدُوٌّ مُبِينٌ [البقرة: 208]

অর্থ- হে ঈমানদারগণ! তােমরা পরিপূর্ণরূপে ইসলামে প্রবেশ করাে এবং শয়তানের পদাঙ্ক অনুসরণ করাে না। নিশ্চয় শয়তান। তােমাদের সুস্পষ্ট শত্রু। (বাকারা- ২০৮)।

পূর্ণরূপে ইসলামে প্রবেশ করার অর্থ হলাে, জীবনের সকল ক্ষেত্রে ইসলামকে মেনে চলা। সেই সঙ্গে স্মরণ করিয়ে দিয়েছেন, শয়তানের পদাঙ্ক অনুসরণ করাে না। বুঝতে অসুবিধা হয় না—পথ দুটি। আল্লাহ ও তাঁর নবীর পথ। আরেকটি হলাে শয়তানের পথ। শয়তান আমাদের শক্র। কোনাে বােকাও শক্রর পথে পা দেয় না। কথা হলাে, আল্লাহর পথ এবং শয়তানের পথের এই পার্থক্য কীভাবে বুঝব! মানতে হলে তাে অবশ্যই জানতে হবে। পূর্ণরূপে ইসলামকে না জেনে পূর্ণরূপে ইসলামকে মানা কোনােভাবেই সম্ভব নয়। এখানে এসেই উদ্ভাসিত হয়ে ওঠে জানার গুরুত্ব।

নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এ কারণেই আদেশ করে বলেছেন-

اغد عالما أو متعلما أو مستمعا أو محبا ولا تكن الخامس فتهلك

আলেম হও, শিক্ষার্থী হও, আলেমের বাণী শ্রবণকারী হও অথবা আলেম প্রেমিক হও। (এই চারের বাইরে) পঞ্চম নম্বর হয়াে না, তাহলে ধ্বংস হয়ে যাবে। (মুসনাদে বাযযার, হাদিস নং ৩৬২৬)।

জানতে হলে আলেম হতে হবে। এই আলেম হওয়ার মর্যাদা আমাদের ধর্মে অসামান্য। নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন- ان العلماء ورثة الأنبياء

অর্থ- আলেমগণ হলেন নবীগণের ওয়ারিশ। (সুনানে আবু দাউদ, হাদিস- ৩৬৪৩)।

যারা আলেম হননি, তাদের জন্যে মরণ পর্যন্ত এ পথ উন্মুক্ত। বয়সের কোনাে সীমানা নেই এখানে। এই ওয়ারিশ কাফেলায় যারা সর্বশ্রেষ্ঠ এবং প্রথম—সাহাবায়ে কেরাম রাদিয়াল্লাহু আনহুম—তারা তাে পরিণত বয়সেই অর্জন করেছেন এই উত্তরাধিকার। সুতরাং আহরিত এ পাঠশালায় সাদরে আমন্ত্রিত সকল বয়সের সকল মুসলমান। নারী-পুরুষের ভাগাভাগিও নেই এখানে। নেই খান্দান ও জাতপাতের ভেদাভেদ। কোনাে কারণে যদি কোরআন ও হাদীসের মূল উৎস থেকে ইলম আহরণের সৌভাগ্য না হয় তাহলে তাদের জন্যে বলেছেন আলেমগণের সঙ্গে বসাে, তাদের কথা শােনাে।

একথা স্বয়ং আল্লাহ তায়ালা বলেছেন পবিত্র কোরআনে-

{ فَاسْأَلُوا أَهْلَ الذِّكْرِ إِنْ كُنْتُمْ لَا تَعْلَمُونَ} [النحل: 43]

অর্থ- তােমরা যদি না জান তাহলে আলেমগণকে জিজ্ঞেস করাে। (সূরা নাহল- ৪৩)।

এটা আমাদের সৌভাগ্য, আল্লাহ দয়াময়ের এই আদেশ অসামান্য আবেগ আস্থা ও উষ্ণতাসহ লালিত হয়ে এসেছে মুসলিম উম্মাহর জীবনে, যুগের পর যুগ ধরে। দেড় হাজার বছর ধরে চলমান এই মুসলিম পরিবার, বিশ্বব্যাপী এই মুহাম্মদি সংসার, এর শেকড় সদা সজীব ছিল এবং আছে ওলামা-ঘনিষ্ঠতার এই নুরময় পরশে। দীনি চেতনা, আমলি ধারাবাহিকতা ও আবেগময় উষ্ণতা চারিত্রিক শক্তি ও চর্চা এবং বিশ্বাসের দৃঢ়তায় প্রতিষ্ঠিত এই যে আমাদের অবাককরা ঐতিহ্য, এটা আলেম সমাজের সঙ্গে মিলেমিশে থাকার এবং পরস্পর হৃদ্যতাপূর্ণ দীর্ঘ ঐতিহ্যের ফসল! ব্যক্তি পরিবার সমাজ উম্মাহ যখন যেকোনাে ক্ষেত্রে নতুন কোনাে জিজ্ঞাসার মুখােমুখি হয়েছে আলেমগণ তাদের চলার পথ বলে দিয়েছেন। ব্যক্তিগত প্রশ্ন, মসজিদ ও খানকাকেন্দ্রিক ধর্মীয় আলােচনা, নানা উদ্যোগে আয়ােজিত দীনি মাহফিল—এসবই উম্মাহর ধর্মজ্ঞান আহরণের অবারিত পাঠশালা এবং নবীজির আদেশ পালনের ফসল।

বলতে দ্বিধা নেই, পত্রপত্রিকা এবং দীনি বইপত্র এই পাঠশালারই এক টেকসই শাখা। যুগ যুগ ধরে মানুষ উম্মাহর বরিত আলেমগণের লেখা বইপত্র পড়ে দীন শিখেছে, দীন মেনেছে। অতীব পুরনাে না হলেও বাংলা ভাষায়ও রয়েছে এই উম্মাহর একটি শক্ত অবস্থান। সবিশেষ ভারত স্বাধীনতার পর থেকে অন্যান্য শাখার মতাে এ ক্ষেত্রেও চর্চার নতুন গিন্ত উন্মােচিত হয়েছে। সাধারণ সাহিত্যের পাশাপাশি দীনি বইপত্র রচনারও একটা শক্তিমান ধারা গড়ে উঠেছে। ফলে ফুলে এখন তা নজরে পড়ার মতাে।

[ দুই ]

এখন কথা উঠেছে, যারা আলেম নন, ছাত্রের খাতায় নাম লেখাবারও অবসর নেই। ইসলামকে পূর্ণরূপে, অন্তত নিজের প্রয়ােজন পরিসরে জানতে হলে তাে বই পড়তেই হয়। কিন্তু যে কেউ কি যে কারও লেখা পড়তে পারবে? প্রশ্নটা বেশ গুরুত্বপূর্ণ। কারণ ভুল চিকিৎসা যেমন অনেক ক্ষেত্রে চিকিৎসা না করার চেয়ে ভয়াবহ ক্ষতি ডেকে আনে, তেমনি দীনের ক্ষেত্রে ভুল নির্দেশনা ডেকে আনতে পারে দীন-ধর্মের ভয়াবহ ক্ষতি। শরীরের চিকিৎসকের চেয়ে ধর্মীয় নির্দেশক অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ এবং নির্বাচনে সতর্কতাও চাই অনেক বেশি। সহজ করে বললে উল্লিখিত প্রশ্নটির উত্তর হবে- না। দীন ও ধর্মকে জানার জন্যে যে কোনাে লেখকের বই আমরা পড়তে পারি না।

এটা আমার কথা নয়। ইমাম মুহাম্মদ ইবনে সিরীন (১১০ হি.) এর কথা। তিনি হযরত উসমান রা. এর খেলাফতের শেষ দিকে জন্মগ্রহণ করেছেন। হাদীস পড়েছেন প্রখ্যাত সাহাবী হযরত আবু হুরায়রা, হযরত ইমরান ইবনে হুসাইন, হযরত ইবনে আব্বাস ও হজরত ইবনে উমর দিয়াল্লাহু আনহুমের কাছে। গভীর পাণ্ডিত্যের অধিকারী এই মহান তাবেঈ একই সঙ্গে হাদীস ও ফেকাহ উভয় শাস্ত্রে বরিত ইমাম ছিলেন। ছিলেন স্বপ্নব্যাখ্যার পৃথিবীখ্যাত পথিকৃত। (ড. খালেদ মাহমুদ, আসারু হাদীস, খ.২, পৃষ্ঠা. ২৫৯)।

মহান এই পথিকৃত মনীষী বলেছেন-

إ هذا العلم دين فانظروا عمن تأخذون دينگم.

এই ইলমই দীন। সুতরাং তােমরা কার কাছ থেকে তা গ্রহণ করছ ভালােভাবে দেখে নাও।(সহীহ মুসলিম, পৃ.১১)।

অর্থাৎ দীন ও ইসলাম যেমন সবার কাছ থেকে গ্রহণ করা যায় না, তেমনি দীনের ইলমও সকলের কাছ থেকে গ্রহণ করা যায় না। কোনো ব্যক্তি থেকে, তার আলােচনা হােক বা রচনা, দীন ও ইসলাম গ্রহণ করতে হলে সর্বপ্রথম দেখতে হবে—সে যথার্থ আলেম কিনা। এর জন্যে কয়েকটি বিষয় লক্ষণীয়। যথা— এক. দীনের গভীর এবং পরিচ্ছন্ন ইলম তার আছে কিনা। যদি কোরআনের ভাষায় বলি তাহলে বলব, আল্লাহ তায়ালা বলেছেন-

{وَمَا كَانَ الْمُؤْمِنُونَ لِيَنْفِرُوا كَافَّةً فَلَوْلَا نَفَرَ مِنْ كُلِّ فِرْقَةٍ مِنْهُمْ طَائِفَةٌ لِيَتَفَقَّهُوا فِي الدِّينِ وَلِيُنْذِرُوا قَوْمَهُمْ إِذَا رَجَعُوا إِلَيْهِمْ لَعَلَّهُمْ يَحْذَرُونَ} [التوبة: 122]

অর্থাৎ- মুমিনদের সকলে একসঙ্গে জিহাদে যাওয়া সঙ্গত নয়। তাদের প্রত্যেক দলের একটি অংশ কেন জিহাদে বের হয় না যেন অবশিষ্টরা দীন সম্পর্কে তাফাককুহ ও গভীর জ্ঞান অর্জন করতে পারে এবং যখন তাদের সম্প্রদায়ের লােকেরা ফিরে আসবে তখন যেন তাদেরকে সতর্ক করতে পারে, যাতে তারা সতর্ক হয়। (তাওবা- ১২২)।

দুই. তার মধ্যে থাকতে হবে আল্লাহর ভয়। কারণ আল্লাহ তায়ালা বলেছেন-

{ إِنَّمَا يَخْشَى اللَّهَ مِنْ عِبَادِهِ الْعُلَمَاءُ} [فاطر: 28]

আল্লাহর বান্দাদের মধ্যে যারা আলেম তারাই তাঁকে ভয় করে। (ফাতির- ২৮)।

এই তাকওয়া ও আল্লাহভীতি ইলমের যথার্থতার লক্ষণ। তাছাড়া কোনাে ব্যক্তির মধ্যে যদি তাকওয়া ও আল্লাহর ভয় না থাকে তাহলে তার প্রতি আস্থা রাখব কোন ভরসায়!

তিন. দেখতে হবে সাহাবায়ে কেরাম রা. যেভাবে নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে ইলম শিখেছেন, তাবেঈন শিখেছেন। সাহাবায়ে কেরামের কাছে, তাবে তাবেঈন শিখেছেন তাবেঈনের কাছে, অনুরূপ এই লেখক তার কালের মানিত-বরিত উলামায়ে কেরামের কাছে ইলম শিখেছেন কিনা।

চার. দীন, দীনের ব্যাখ্যা ও আমলের রূপ আমরা যে সালাফে সালেহীনের সূত্রে লাভ করেছি দেখতে হবে, এই লেখক সেই সূত্র ও পূর্বসূরিগণের প্রতি শ্রদ্ধাশীল কিনা, শ্রদ্ধাশীল কিনা তাদের সাধনা ও অবদানের প্রতি। কারণ এটা সাহাবায়ে কেরাম থেকে শুরু করে সর্বযুগের পথিকৃত আলেমগণের চরিত্র।

পাঁচ, তার ব্যক্তিজীবনে আল্লাহর দীন নিরাপদ কিনা। অর্থাৎ সে ব্যক্তি জীবনে আল্লাহর দীনকে মেনে চলে কিনা। অন্যথায়: যে নিজেই দীন মানে না, অন্যের দীনদারি রক্ষা ও প্রতিষ্ঠায় তার ওপর কীভাবে ভরসা করব? কেন আমরা লেখাপড়ার জন্যে লেখককে জানার প্রতি এতটা জোর দিচ্ছি তার একটা ঘটনা বলি।

মাওলানা সায়্যিদ আবুল হাসান আলী নদভী রহ.। পৃথিবীখ্যাত সাহিত্যিক লেখক ও দাঈ। ঘটনাটা তার। নিজেই লিখেছেন : ১৯৩৯ সালে মিশরের মর্যাদাশীল লেখক আহমদ আমীনের ‘ফাজরুল ইসলাম (এক খণ্ড) ও ‘দুহাল ইসলাম’ (তিন খণ্ড) পড়ার সুযােগ হয়। নববী কাল এবং উমারী ও আব্বাসী শাসনামলের চিন্তা দর্শন সাহিত্য চরিত্র রাজনীতি ও গবেষণাবিষয়ক ইতিহাস তার রচনার প্রতিপাদ্য।

ঘটনাবলি সূত্রে ফলাফল বের করে এনেছেন। ছােট ছােট ঘটনা থেকে মৌলিক দর্শন দাঁড় করিয়েছেন। প্রতিটি কাল এবং সমকালীন জীবনব্যবস্থার নানা শাখার প্রতি সাম্প্রতিক দৃষ্টিপাত করেছেন। লেখকের শক্তিমান পর্যবেক্ষণ ও বিচারক্ষমতার একটি সুন্দর নমুনা এই গ্রন্থ। যদিও তা বর্তমান আধুনিক ও পশ্চিমা প্রচার থেকে পুরােপুরি মুক্ত নয় এবং লেখকের এই বইগুলাে পড়লে আমাদের হাদীস ভাণ্ডারের প্রতি আস্থা একরকমের নড়বড়ে হয়ে পড়ে। তাছাড়া হাদীসশাস্ত্রের কেন্দ্রীয় অনেক ব্যক্তির প্রতি যে আস্থা ও শ্রদ্ধা একজন মুসলমানের অন্তরে থাকা দরকার তা থাকে না।

কিন্তু আমার মনের সরলতাই বলুন কিংবা সমালােচক ও পর্যবেক্ষক দৃষ্টির দুর্বলতাই বলুন, লেখকের এই দুর্বলতা আমি পুরােপুরি উপলব্ধি করেছি এবং এটা জেনে ও বুঝে আন্তরিক ব্যথিত হয়েছি, ড. শায়খ মুসতফা সিবাঈ’র ‘আসসুন্নাতু ওয়ামাকানাতুহা’ পড়বার পর।(খুতুবাতে আলী মিয়া, খ. ৬, পৃ. ৩৯)।

আরও পড়তে পারেন-

দেখুন, মাওলানা নদভীর মতাে মানুষও একজন বিখ্যাত আরব লেখককে পরিপূর্ণরূপে তার আকিদা-বিশ্বাস জানা না থাকায় তার গ্রন্থ পড়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন বলে অকপটে স্বীকার করেছেন। স্মরণ করিয়ে দিই, এই ড. আহমদ আমীন মিশরের প্রখ্যাত সাহিত্যিক ও বরিত চিন্তাবিদ। আবুল হাসান আলী নদভীর মতাে প্রবাদপ্রতীম সাহিত্যিক যার লেখায় মুগ্ধ প্রীত, তার রচনাশক্তি নিয়ে কিছু বলতে হয় না। অথচ তিনি একজন। কট্টর রাফেজি এবং যিনি ছিলেন শিয়াবাদ রক্ষা ও প্রতিষ্ঠার জন্যে একনিষ্ঠ সৈনিক। (বিস্তারিত জানার জন্যে দেখুন- ড. ইউসুফ নাগরামী, হাকীকতে রাফিযিয়্যাত, পৃ- ৩, ড. মুহাম্মদ হুসাইন যাহাবী, আততাফসীর ওয়াল মুফাসসিরুন, খ. ১, পৃ- ৬৭)।

তিন, এখন কথা হলাে, এই বিপদ থেকে বাঁচার জন্যে আমরা কী পড়তে পারি। আমরা মনে করি, আমাদের শিক্ষিত দীনদার ভাইগণ এক্ষেত্রে তিনটি উপায় অবলম্বন করতে পারেন। যথা-

১. ডায়াবেটিস জাতীয় রােগের বন্ধু যারা তারা যেভাবে সদাসর্বদা কোনো একজন চিকিৎসকের তত্ত্বাবধান মেনে চলেন ঠিক তেমনি পরিচ্ছন্ন জ্ঞানের অধিকারী ইবাদত-বন্দেগি হালাল-হারাম ও পর্দাপুশিদায় যত্নবান এবং অতীত বুজুর্গ মনীষীদের প্রতি শ্রদ্ধাশীল কোনাে আলেমের তত্ত্বাবধানে পড়াশােনা করা।

২. আসলে দীন মানার ক্ষেত্রে সবচেয়ে নিরাপদ পন্থা হলাে আলেম হওয়া। যারা এই ধন অর্জন করতে পারেননি, তাদের সবচেয়ে বড় কর্তব্য ও টার্গেট হতে হবে নিজের সন্তানকে আলেম হিসেবে গড়ে তােলা। মনে রাখতে হবে, আলেম সন্তানের বাবা ও মা হওয়ার চেয়ে জগতে আর বড় কিছু নেই। নবীর ওয়ারিশের বাবা-মা। ভাবা যায়— কত বড় মর্যাদা!

৩. সঠিক আকিদা-বিশ্বাস নিয়ে বাঁচা এবং ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে বিশুদ্ধ দীনি চিন্তা শিক্ষা ও আদর্শে গড়ে তােলবার জন্যে আরেকটি সহজ পথ হলাে, আলেমগণের সঙ্গে আত্মীয়তা করা। অবশ্য আত্মীয়তার জন্যে আলেম নির্বাচনের সময়ও অভিভাবকদের আলেমের পরামর্শ নিতে হবে।

তারপর আমাদের বাঙলা ভাষায় ইসলাম সম্পর্কে যারা লিখেছেন এবং লিখে যাচ্ছেন তাদের অনেকের সম্পর্কেই আমরা জানি—বই পড়ার মাধ্যমে তাদেরকে আমরা শিক্ষক বানাতে পারি। যদি নাম নিই এবং বিশেষ করে তাদের নাম নিই, বাঙলা ভাষা যাদের বিপুলা কলমের চর্চায় ধন্য-সমৃদ্ধ তাহলে প্রথমেই বলব মুজাহিদে আজম হযরত মাওলানা শামছুল হক ফরিদপুরী রহ.এর কথা। তার রচনাবলি যেমন জীবনঘনিষ্ঠ তেমনি ইখলাসের বিরল নুরে উজ্জ্বল। তার প্রতিটি রচনাই আমাদের প্রতিটি মুসলিম ঘরে সযতনে সশ্রদ্ধায় রাখবার এবং পড়বার মতাে। তারপর যাদের রচনা আমাদের চলার পথ সহজ করে গেছে তাদের মধ্যে দুইজনের নাম খুবই উজ্জ্বল।

শাইখুল হাদীস হযরত মাওলানা আজিজুল হক রহ. এবং আমাদের বটবৃক্ষ হযরত মাওলানা মুহিউদ্দীন খান রহ.। তাছাড়া প্রবীণ ও নবীন আরও যাদের রচনা আমরা নির্দ্বিধায় পড়তে পারি তাদের মধ্যে চিন্তাবিদ ও সৃজনশীল লেখক মাওলানা ফরীদ উদ্দীন মাসউদ, শাইখুল হাদীস মাওলানা মাহমুদুল হাসান, মাওলানা মুফতী মুহাম্মদ উবাইদুল্লাহ, মাওলানা আবু তাহের মেসবাহ, মাওলানা ইসহাক ফরিদী রহ., মাওলানা আবুল ফাতাহ মুহাম্মদ ইয়াহইয়া রহ., মাওলানা আবদুল মতিন, উবায়দুর রহমান খান নদভী, মাওলানা মুফতী হিফজুর রহমান, মাওলানা হেমায়েত উদ্দীন, মাওলানা আ ব ম সাইফুল ইসলাম, মাওলানা নােমান আহমদ রহ. এবং আমাদের গর্ব ও গৌরবের বন্ধুদের মধ্যে মাওলানা নাসীম আরাফাত, মাওলানা শরীফ মুহাম্মদ, মাওলানা যুবায়ের আহমদ আশরাফ ও মাওলানা ইয়াহইয়া ইউসুফ নদভীর নাম বিশেষ উল্লেখ করতে পারি।

হ্যাঁ, আমাদের দীনি গ্রন্থাবলির প্রাণ আমাদের পূর্বসূরি মনীষীদের অনূদিত বইপত্র। এক্ষেত্রে যাদের রচনা আমাদের গর্ব ও আবশ্যকীয় পাঠ্য তাদের মধ্যে হাকীমুল উম্মত হযরত থানভী, হাকীমুল ইসলাম কারী মুহাম্মদ তায়্যিব, শাইখুল হাদীস মাওলানা যাকারিয়া, মুফতী মুহাম্মদ শফী, মুফতী মাহমুদ হাসান গাঙ্গুহী, মাওলানা মনজুর নুমানী, মাওলানা হাকীম মুহাম্মদ আখতার, মাওলানা ইউসুফ লুধিয়ানবী, মাওলানা আবুল হাসান আলী নদভী রাহিমাহুমুল্লাহু তায়ালা এবং মাওলানা মুফতী তকী উসমানী ও মাওলানা মুফতী খালেদ সাইফুল্লাহ রাহমানীর নাম সবিশেষ উল্লেখযােগ্য। এদের বাণী ও রচনা আমরা চোখ বন্ধ করে কবুল করতে পারি।

প্রিয় পাঠকগণকে বলে রাখি—এটা কোনাে তালিকা নয়। উপমা হিসেবে কতিপয় নাম উল্লেখ করে আমাদের রচনাকে সম্মানিত করার চেষ্টা করলাম মাত্র।

কথা কি, আমরা জানি, আমাদের গর্বের ধর্ম ইসলামের সূচনাটাই “ইকরা’—পড়াে এর মধ্য দিয়ে। ইসলাম পৃথিবীর যেখানেই গেছে এই ইকরার চেতনা ও বৈশিষ্ট্যকে সঙ্গে করেই গেছে। আমরা যতদিন এই চেতনা ও বৈশিষ্ট্যকে লালন করব ইসলামের প্রথম কালের আবেগ ও উষ্ণতায় ততদিন আমরাও থাকব উষ্ণ সবুজ ও প্রাণবন্ত এবং অগ্রসরমান। আল্লাহ দয়াময় আমাদের শক্তি দিন! কবুল করুন! আমীন।

[লেখকের “আমার ধর্ম আমার গর্ব” গ্রন্থ থেকে নেয়া]

উম্মাহ পড়তে ক্লিক করুন-
https://www.ummah24.com

দেশি-বিদেশি খবরসহ ইসলামী ভাবধারার গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে ‘উম্মাহ’র ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।