Home সোশ্যাল মিডিয়া নারীদের উপর গুপ্তচরবৃত্তি করেছিলেন ফেসবুকের ইঞ্জিনিয়াররা!

নারীদের উপর গুপ্তচরবৃত্তি করেছিলেন ফেসবুকের ইঞ্জিনিয়াররা!

-সংগৃহিত ‍ছবি।

গভীর রাতে মেনলো পার্কের অফিস থেকে যখন সব সহকর্মীরা বিদায় নিলেন, তখন জনৈক ফেসবুক ইঞ্জিনিয়ারের ইচ্ছা হলো আবার ল্যাপটপটা খুলে বসতে। এর কারণ, তার মনের অবদমিত ইচ্ছে; তিনি জানতেন যে মাত্র কয়েকটি ক্লিকের মাধ্যমেই তিনি একজন নারীর ফেসবুক প্রোফাইলে ঢুকে সব তথ্য নিতে পারবেন। 

এই নারীর সঙ্গে কদিন আগেই তিনি ডেটে গিয়েছিলেন। কিন্তু বিগত ২৪ ঘন্টায় সেই নারী তার কোনো ক্ষুদেবার্তার উত্তর দেননি। প্রথম সাক্ষাতটি ভালোয় ভালোয় গেলেও, সেই নারী কেন দ্বিতীয়বার সাক্ষাতে আগ্রহ দেখাচ্ছেন না-তা জানার জন্য তর সইছিলো না ইঞ্জিনিয়ারের। নিজের কৌতূহল মেটানোর জন্যই তিনি দেখতে চেয়েছিলেন যে ওই নারী কি এখন অসুস্থ নাকি কোথাও ছুটি কাটাতে গিয়েছেন কিংবা অন্য কারো সঙ্গে ব্যস্ত আছেন।   

তাই ল্যাপটপে লগইন করে ফেসবুকের সকল ব্যবহারকারীদের ডেটার উপর তার যে নিয়ন্ত্রণ আছে, সেই সুযোগ কাজে লাগিয়ে কাঙ্ক্ষিত নারীর আইডি খুঁজে বের করলেন। নাম-ঠিকানা, জন্ম তারিখ, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ইত্যাদি জানতে তার কয়েক মিনিট মাত্র লাগলো। 

ফেসবুকের অভ্যন্তরীণ সিস্টেমে রয়েছে তথ্যের বিশাল ভান্ডার; যেখানে ব্যবহারকারীর বছরের পর বছর ধরে করা ব্যক্তিগত কথপোকথন, কোন কোন ইভেন্টে যোগ দিয়েছেন, কোন কোন পোস্টে মন্তব্য করেছেন সবকিছুই জমা আছে। জনৈক ইঞ্জিনিয়ারও তাই খুব সহজেই জানতে পারলেন ওই নারীর ব্যক্তিগত লাইফস্টাইল কেমন ছিল, রাজনৈতিকভাবে তিনি কোন পন্থী, কুকুর ভালোবাসেন কিংবা দক্ষিণপূর্ব এশিয়ায় ছুটি কাটাতে ভালোবাসেন ইত্যাদি বহু বিষয়। ডজনখানেক ডিনার বা ডেটের পরে যেসব তথ্য তার পক্ষে জানা সম্ভব হতো; তা তিনি কয়েক মিনিটে ফেসবুক থেকে জেনে নিলেন।

ফেসবুকের ব্যবস্থাপকেরা জানিয়ে দিয়েছিলেন যে তাদের কর্মীরা ফেসবুকের সুবিধাকে কাজে লাগিয়ে কারো ব্যক্তিগত তথ্য নেয়ার বা অনুপ্রবেশের চেষ্টা করছেন জানা গেলে ওই কর্মীকে বরখাস্ত করা হবে। কিন্তু ব্যবস্থাপকেরা এটাও জানতেন যে, এই অপরাধ থামানোর জন্য কোনো নিরাপত্তা বলয় ফেসবুকের নেই। তাদের সিস্টেম এমনভাবে তৈরি যেখানে কর্মীরা সব জায়গায় খোলামেলা প্রবেশাধিকার পায়। কর্মীরা যাতে স্বাধীনভাবে, দ্রুত কাজ করতে পারে এবং আরও কর্মদক্ষতা দেখাতে পারে, সেই লক্ষ্যে জাকারবার্গ এই পদক্ষেপ নিয়েছিলেন। এই নিয়ম করা হয়েছিল, যখন ফেসবুকের কর্মী সংখ্যা ছিল মাত্র কয়েক শত। কিন্তু এরপর হাজারো ইঞ্জিনিয়ার সেখানে কাজ করছেন, তাই একমাত্র কর্মীদের সদিচ্ছাই পারবে তাদেরকে কোন ব্যবহারকারীর গোপন তথ্য নেয়া থেকে বিরত রাখতে। 

জানুয়ারি, ২০১৪ থেকে আগস্ট, ২০১৫ পর্যন্ত এই অপরাধে যে ৫২ জন কর্মীকে ফেসবুক চাকরিচ্যুত করে, এই ইঞ্জিনিয়ার ছিলেন তাদেরই একজন।  এদের মধ্যে অনেকেই শুধু অন্যের গোপন তথ্যে একবার চোখ বুলিয়ে গেছেন অথবা কেউ সামান্য কিছু বেশি দেখেছেন। কিন্তু কেউ কেউ এটিকে চরম পর্যায়ে নিয়ে গেছেন। 

এক ইঞ্জিনিয়ার এমন একজন নারীকে তার সাথে দেখা করতে বাধ্য করেছেন, যার সাথে তিনি একবার ইউরোপে ছুটি কাটাতে গিয়েছিলেন, কিন্তু ভ্রমণে তাদের দুজনের ঝগড়া হয় এবং ঐ নারী হোটেল ত্যাগ করে নতুন হোটেলে উঠেন। ইঞ্জিনিয়ার ওই নারীকে ট্র্যাক করে নতুন হোটেলের ঠিকানাও খুঁজে বের করেন। আরেক ইঞ্জিনিয়ার ডেটে যাওয়ার আগেই জনৈক নারীর ফেসবুক পেজে প্রবেশ করেন। জানতে পারেন যে ঐ নারী প্রতিনিয়ত ডলোরেস পার্কে যান এবং ইঞ্জিনিয়ার একদিন সেখানে গিয়ে হাজির হন।

আরও পড়তে পারেন-

চাকরিচ্যুত হওয়া ইঞ্জিনিয়াররা নির্দিষ্ট আইডি দেখতে তাদের কর্মস্থলের ল্যাপটপ ব্যবহার করেন। এই অস্বাভাবিক কার্যক্রমের ফলে সেসব ইঞ্জিনিয়ারদের ম্যানেজাররা টের পেয়ে যান যে তারা সীমা লঙ্ঘন করছেন। তবে বাকি আরও কিছু অপরাধীকে কেন ধরা যায়নি তা এখনো অজানা।

২০১৫ সালের সেপ্টেম্বরে প্রথম মার্ক জাকারবার্গ এই সমস্যার কথা জানতে পারেন। ফেসবুকের তৎকালীন প্রধান নিরাপত্তা কর্মকর্তা, অ্যালেক্স স্ট্যামোস আসার তিন মাস পরে এটি জাকারবার্গের কানে তোলা হয়। নিজের উচ্চ দক্ষতা ও বক্তৃতার জন্য স্ট্যামোসের খ্যাতি ছিল। তাই জাকারবার্গের শীর্ষ কার্যনির্বাহীদের সামনে স্ট্যামোস প্রথম যে ঘোষণা দিলেন, তা হলো- ফেসবুকের তৎকালীন নিরাপত্তা পরিস্থিতির একটি সার্বিক মূল্যায়ন করা। বাইরের কারো দ্বারা এটাই ছিল প্রথম মূল্যায়ন।

এই ঘোষণার পরপরই ফেসবুকে শীর্ষ কার্যনির্বাহীদের মধ্যে কানাকানি শুরু হয়ে গেল। তারা ভাবলেন এত অল্প সময়ের মধ্যে পূর্ণাঙ্গ মূল্যায়ন করাটা অসম্ভব হবে এবং স্ট্যামোস যেই রিপোর্টই দিক না কেন তাতে কিছু ভাসা ভাসা সমস্যা থাকবেই। ফেসবুক তখন সাফল্যের শিখরে, ইনস্টাগ্রামও ততদিনে যুক্ত হয়েছে এ কোম্পানির সাথে এবং এক বিলিয়ন ব্যবহারকারীও জুটে গেছে।  

রিপোর্টের বদলে স্ট্যামোস ফেসবুকের মূল পণ্যসমূহ, কাজের গতি ও কোম্পানির কাঠামোর নানা সমস্যা নিয়ে বিস্তারিত এক প্রেজেন্টেশন দিয়ে দিলেন। তিনি জানালেন, কোম্পানি তাদের ওয়েবসাইটের নিরাপত্তা নিয়ে এত ব্যস্ত যে হোয়াটস অ্যাপ ও ইনস্টাগ্রামের মত অ্যাপগুলোর নিরাপত্তার বিষয়টি এড়িয়ে যাওয়া হচ্ছে। স্ট্যামোসের মতে, ফেসবুকের নিরাপত্তার বিষয়টি পুরো কোম্পানি জুড়ে ছড়িয়ে ছিটিয়ে দেখাশোনা করা হচ্ছে। তিনি আরও মনে করেন যে, ফেসবুক তার প্রতিদ্বন্দ্বীদের সাথে টেক্কা দিতে প্রযুক্তিগত বা সাংস্কৃতিকভাবে প্রস্তুত নয়।

স্ট্যামোস এও জানান যে, ডজনখানেক কর্মীকে চাকরিচ্যুত করার পরেও ফেসবুক আসলে একটা সিস্টেমেটিক সমস্যা সমাধানের কোনো চেষ্টাই করছে না। ইঞ্জিনিয়াররা কিভাবে নতুন পণ্য তৈরির জন্য তাদেরকে দেয়া ডেটার অপব্যবহার করছেন অন্য ব্যবহারকারীর ব্যক্তিগত তথ্য নেয়ার মাধ্যমে, সেটিও স্ট্যামোস দেখান। স্বভাবতই, এই বিষয়গুলো সাধারণ মানুষের কানে গেলে তারা ক্ষুব্ধ হবে।

জাকারবার্গ স্ট্যামোসের প্রতিবেদন দেখে যারপরনাই হতাশ ও স্তম্ভিত হয়েছিলেন। তিনি জানতে চেয়েছিলেন, কেন ইঞ্জিনিয়ারিং ব্যবস্থাপনার লোকেরা এসব সমস্যা জানার পরেও তাকে জানাননি এতদিন, কেন কেউ কাজের প্রক্রিয়া পুনঃমূল্যায়নের চেষ্টাও করেননি যাতে এই অপরাধ থামানো যায়।

নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা ফেসবুকের প্রধান কার্যনির্বাহী শেরিল স্যান্ডবার্গ তার স্বামীর মৃত্যুর পর থেকে চার মাস ধরে ছুটিতে ছিলেন এবং সেদিনের সভায় অনুপস্থিত ছিলেন। নিরাপত্তা সিস্টেমের আসন্ন পরিবর্তনের কথা কেউ তাকে জানায়নি, তার সাথে পরামর্শও করেনি। ফলে, স্ট্যামোস সেদিন জয়ী হয়েছিলেন ঠিকই; কিন্তু তার একাধিক শত্রুও জুটে গিয়েছিল। সূত্র- দ্য টেলিগ্রাফ।

উম্মাহ২৪ডটকম: এমএ

উম্মাহ পড়তে ক্লিক করুন-
https://www.ummah24.com

দেশি-বিদেশি খবরসহ ইসলামী ভাবধারার গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে ‘উম্মাহ’র ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।