Home ইসলাম হিজাব পরায় বিধি-নিষেধ, ফ্রান্সে মুসলিম নারীদের দুঃখ-কষ্ট

হিজাব পরায় বিধি-নিষেধ, ফ্রান্সে মুসলিম নারীদের দুঃখ-কষ্ট

মুসলিমদের ওপর নানা ধরনের বিধি-নিষেধ আরোপ করে বিতর্কিত আইন পাস করে ফরাসি সরকার। ইসলামী বিচ্ছিন্নতাবাদ প্রতিরোধ আইনের মাধ্যমে দেশটির ৬০ লাখের বেশি সংখ্যালঘু মুসলিমের জীবনযাত্রা অনিশ্চিত হয়ে পড়ে। এ আইনের মাধ্যমে মসজিদ নির্মাণ প্রকল্প মারাত্মকভাবে বাধাগ্রস্ত হবে বলে অনেকে মনে করছেন। তাছাড়া হিজাব ও বোরকা পরা নিষিদ্ধ হওয়ায় চরম সংকটের মুখে পড়ে সেখানকার মুসলিম নারীরা। ফরাসি প্রজাতন্ত্রের মূল্যবোধ ও নীতিমালার সুরক্ষায় এসব আইন করা হয়েছে বলে জানিয়েছে দেশটির বিভিন্ন ব্যক্তিবর্গ। 

গত ১৫ জুলাই ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের কোম্পানিগুলো প্রয়োজনের সাপেক্ষে কর্মীদের হিজাব পরা নিষিদ্ধ করতে পারবে বলে জানিয়েছে ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের আদালত। এর আগে গত ৩০ মার্চ ফ্রান্সের সংসদে প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাখোঁর একজন মন্ত্রী বিতর্কিত আইন প্রস্তাব করে।

এই আইনে ১৮ বছরের কম বয়সী ফরাসি মুসলিম কিশোরীদের জনসম্মুখে হিজাব পরা নিষিদ্ধ করা হয়। প্রকাশ্যে মুসলিম শিক্ষার্থীদের হিজাব নিষেধের পাশাপাশি পাবলিক সুইমিং পুলে বুরকিনি পরা এবং স্কুলে আনা-নেওয়ায় শিশুদের সঙ্গে থাকা নারীদের হিজাব পরায় নিষেধ করা হয়। 

গত শুক্রবার (২৩ জুলাই) ফরাসি সংসদের নিম্নকক্ষে তা পাস হয়। সেখানকার সংখ্যালঘু সম্প্রদায় তাদের অস্তিত্বকে হুমকি হিসেবে মনে করছেন। এরমধ্যে ফ্রান্সের ডানপন্থী দল দেশটির প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের প্রস্তুতি নিতে শুরু করেছে। 

আরও পড়তে পারেন-

ফরাসি আইন বিশেষজ্ঞ রিম সারা আলাউনি বলেন, ‘আমরা ধর্মনিরপেক্ষতার একটি অস্ত্র ব্যবহার করে সুরক্ষার নামে স্বাধীনতা ও মৌলিক অধিকার লঙ্ঘনের বৈধতা দেখতে পাচ্ছি। এটি বিকৃত আইনী দানবের মতো, যার মাধ্যমে কেবল মুসলমানকে সংকুচিত করা হবে না, বরং জনপরিসর থেকে তাদের মুছে ফেলাই এর প্রধান লক্ষ্য।’ 

হিজাব পরায় শৈশবে স্কুলে নানা রকম বৈষম্যের শিকার ফরাসি নারী আয়েশা বলেন, ‘নতুন আইনের মাধ্যমে ১৮ বছরের কম বয়সী মেয়েদের হিজাব পরা বন্ধ করা হচ্ছে। তবে নিশ্চিতভাবে আমি বলতে পারি, এ আইন মেয়েদের আরো বেশি হিজাব পরতে আগ্রহী করবে। দেশটিতে সবার স্বাধীনভাবে বসবাস অনেকটা অনিশ্চিত হয়ে পড়বে।’ 

প্যারিসে বসবাসরত বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষক ফরাসি তরুণী নুরা বলেন, ‘নতুন আইনের কারণে আমি এই দেশের ব্যাপারে চরম হতাশাগ্রস্ত। আমি এখানে আমার মতো অনেকের ভবিষ্যত নিয়ে অত্যন্ত শঙ্কিত। আমরা এখানে অপ্রত্যাশিত ও অনাহুত। আমরা এখানে প্রতিনিয়ত প্রতীকী সহিংসতার শিকার হই, যা আমাদের মন-মানসিকতায় চরমভাবে আঘাত করে। আমরা শুনে থাকি যে ফ্রান্সে মিলামেশা ও একীকরণের সমস্যা আছে। বস্তুত এখানে চরম বর্ণবাদের সমস্যাই মূল।’

নিজেদের হিজাব পরার অধিকার রক্ষায় অনেক তরুণী সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ইভেন্ট চালু করে। ফেসবুক, টুইটার ও ইনস্টাগ্রামে বিশ্বের নানা দেশের ছেলে-মেয়েরা হিজাব পরার পক্ষে প্রচারণায় অংশ নেয়। 

টুইটারে মানার নামে একজন লিখেছেন, ‘ফ্রান্সে ১৫ বছর বয়সীদের যৌনতায় সম্মতি আছে। আর ১৮ বছরের কম বয়সীদের হিজাব পরার অনুমতি নেই। এটি হিজাববিরোধী কোনো আইন নয়। এটি ইসলামবিরোধী আইন। #হ্যান্ডসঅফমাইহিজাব, #ফ্রান্সহিজাবব্যান’।

নাজওয়া জেবিয়ান নামে একজন লিখেছেন, ‘জোর করে কাউকে হিজাব পরানো যেমন অন্যায়, তেমনি জোর করে কাউকে হিজাব খুলতে বাধ্য করাও অন্যায়। এটি একান্তই তার ব্যক্তিগত ব্যাপার।’ 

আন্তর্জাতিক মানবাধিক সংস্থা অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল এক বিবৃতিতে জানায়, ফ্রান্সের নতুন আইন দেশটির মুসলিমদের বিরুদ্ধে সুস্পষ্ট বৈষম্যের পথকে আরো বিস্তৃত করবে।

অনেক বিখ্যাত ব্যক্তিও এই বিলের বিরোধিতা করেছেন। অলিম্পিক অ্যাথলেট ইবতিহাজ মুহাম্মাদ ইনস্টাগ্রামে একটি পোস্ট শেয়ার করেছেন। তিনি বলেছেন, ‘সিনেটে অনুমোদন দেওয়া বিলটি ফ্রান্সে ইসলামোফোবিয়ার বিষয়টি যে আরো তীব্র হচ্ছে তারই ইঙ্গিত দেয়’।

মুসলিম উইমেনস যে এবং মুসলিম গার্ল ওয়েবসাইটের প্রতিষ্ঠাতা আমানি আল খাতাহবেহ বলেন, ‘একজন নারী কোন পোশাক পরবে বা কোন পোশাক পরবে না, তা কোনো সরকারই নির্ধারণ করতে পারে না’।

ইউরোপের মধ্যে ফ্রান্সে সবচেয়ে বেশি মুসলিম বসবাস করে। কট্টর ধর্মনিরপেক্ষ এই দেশে প্রকাশ্যে ধর্মীয় পোশাক পরিধান দীর্ঘকালের বিতর্কিত একটি ইস্যু। দেশটির সরকারি স্কুলগুলোতে ২০০৪ সালে সর্বপ্রথম মুসলিম নারীদের স্কাফ পরা নিষিদ্ধ করা হয়। ২০১০ সালে দেশটির প্রকাশ্যে যেমন রাস্তা, পার্ক, গণপরিবহন ও সরকারি অফিসগুলোতে নিকাব পরিধান নিষিদ্ধ করা হয়। সূত্র: ওয়াশিংটন পোস্ট।

উম্মাহ২৪ডটকম: আইএএ

উম্মাহ পড়তে ক্লিক করুন-
https://www.ummah24.com

দেশি-বিদেশি খবরসহ ইসলামী ভাবধারার গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে ‘উম্মাহ’র ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।