সুইডিশ নাগরিক হেলেনার জন্ম ও বেড়ে ওঠা রাজধানী শহর স্কটহোমে। একটি ধর্মবিমুখ পরিবারে জন্ম নিলেও কলেজজীবনে পা দেওয়ার পর জীবনের অর্থ খুঁজতে শুরু করেন হেলেনা। ইসলামসহ অন্যান্য ধর্ম নিয়ে দীর্ঘ পাঠের পর তাঁর মনে হয় ইসলামই মানুষকে সবচেয়ে ভারসাম্যপূর্ণ, আধুনিক ও স্থিতিশীল জীবনের সন্ধান দিয়েছে। নিজের ইসলাম গ্রহণ নিয়ে তিনি বলেন—
পার্থিব বিশ্বাস নিয়ে বেড়ে ওঠা : একটি প্রথাগত খ্রিস্টান পরিবারে আমার জন্ম। আমি পরিবারে কখনো স্রষ্টার নাম উচ্চারণ করতে শুনিনি, কাউকে কখনো প্রার্থনা করতে দেখিনি। আমাকে শুধু তাই শেখানো হয়েছে, যা আমার পার্থিব জীবনে সাফল্য বয়ে আনবে। তবে আমরা ক্রিসমাস, স্টার সানডে, মিড-সামারসহ সব ধর্মীয় দিবস উদযাপন করতাম। আমরা ধর্মীয় দিবসগুলো উদযাপন করতাম সুইডিশসমাজের রীতি অনুসারে।
ধর্মহীন মনোভাব লালন : একটি ফুরফুরে ভাব নিয়ে আমি হাই স্কুলে ভর্তি হই। আমি ভাবতাম, কোনো কিছু আমাকে থামাতে পারবে না। আমার গ্রেড যথাসম্ভব ভালো ছিল এবং আত্মবিশ্বাস ছিল অত্যন্ত উঁচু। ধর্ম কখনো আমার মনে স্থান পায়নি। অন্যদিকে আমি যাদের ধার্মিক হিসেবে জানতাম—যারা ধর্মের আলো খুঁজে পেয়েছে, তারা ছিল তুলনামূলক বেশি হতাশ ও অসুস্থ। তারা প্রত্যাশা করে, যিশু তাদের জীবন চলার শক্তি দান করবেন।
আরও পড়তে পারেন-
- প্রাপ্তবয়স্ক নারী-পুরুষের বিবাহ্ সম্পর্কে শরয়ী বিধান
- ইসলামের আলোকে নারীর কর্মপরিধি
- সালাম: উম্মাহর ঐক্য ও সংহতি রক্ষার অন্যতম বাহন
- বৈশ্বিক সন্ত্রাসবাদ: বাস্তবতা ও অপপ্রচার
- সকালের ঘুম যেভাবে জীবনের বরকত নষ্ট করে
জীবনের প্রকৃত অর্থের সন্ধানে : কলেজজীবনে পা রেখে আমি জীবনের অর্থ খুঁজতে থাকি। তবে আমার জন্য কোনো ধর্মকে বেছে নেওয়া কঠিন ছিল। কেননা আমার দৃষ্টিতে সব যুদ্ধ ও সমস্যার পেছনে ধর্মই দায়ী ছিল। ফলে আমি আমার একটি নিজস্ব দর্শন দাঁড় করালাম। আমি নিশ্চিত ছিলাম, সব কিছু কোনো এক শক্তি সৃষ্টি করেছেন। কিন্তু তাঁকে ঈশ্বর বলতে আমি প্রস্তুত ছিলাম না। কেননা একজন খ্রিস্টান হিসেবে মনের ক্যানভাসে লম্বা দাড়িবিশিষ্ট একজন বৃদ্ধের ছবি আঁকা ছিল স্রষ্টারূপে। আর একজন বৃদ্ধ কিভাবে মহাবিশ্ব সৃষ্টি করবেন! তবে আমি যত বেশি জীবনের অর্থ খুঁজছিলাম তত বেশি হতাশ হয়ে যাচ্ছিলাম। জীবনকে একটা কারাগার বলেই মনে হচ্ছিল আমার কাছে।
ইসলাম সম্পর্কে ভুল জ্ঞান : এ সময় আমি বৌদ্ধ ও হিন্দু ধর্ম নিয়ে বিশদ অধ্যয়নের সুযোগ পাই। তাদের বিশ্বাস ও ইবাদতের পদ্ধতিগুলো বিস্তারিতভাবে জেনেছিলাম। কিন্তু ইসলাম সম্পর্কে কিছুই জানতাম না। যদিও আমি হাই স্কুলের পাঠ্য বইয়ে মুসলিম উপাসনারীতি সম্পর্কে জেনেছিলাম। অন্যদিকে মিডিয়া সূত্রে আমার বিশ্বাস ছিল মুসলিমরা তাদের স্ত্রী ও সন্তানদের অত্যাচার করে। তারা সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে লিপ্ত এবং মানুষ হত্যায় দ্বিধা করে না।
বিজ্ঞান পাঠ ও মুসলিম বন্ধুদের সাহচর্য : কলেজের শেষ বছরে বিজ্ঞানের প্রতি আমার ঝোঁক বাড়ে। বিজ্ঞান নিয়ে কাজ করতে নিজেকে প্রস্তুত করছিলাম। তখন স্টকহোমে চারজন মুসলিমের সঙ্গে পরিচয় হয়। আমি তাদের প্রশ্ন করতে এবং বই পড়তে শুরু করি। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো, আমি মুসলিমদের সঙ্গে মিশতে শুরু করি। যেসব মুসলিমের সঙ্গে আমি মিশেছিলাম তারা সবাই চমৎকার মানুষ ছিল। তারা কখনো আমার ওপর কোনো কিছু চাপিয়ে দেয়নি। আমার কাছে ইসলামকে একটি চমৎকার জীবনপদ্ধতি বলেই মনে হয়। তবে আমার একটি ব্যক্তিগত সমস্যা ছিল। তা হলো- ধর্ম ও বিজ্ঞানের সংঘাত। কিন্তু মরিস বুকাইলির ‘দ্য বাইবেল, দ্য কোরআন অ্যান্ড সায়েন্স’ গ্রন্থে আমার সব প্রশ্নের উত্তর পেয়ে যাই। বুঝতে পারি ইসলাম আধুনিক বিজ্ঞানের সঙ্গে সংগতিপূর্ণ ধর্ম।
নতুন জীবন শুরু : বইটি পাঠের পর আমি উত্তেজিত ছিলাম; কিন্তু তখনো তা আমার হৃদয় স্পর্শ করেনি। মন নরম করে মুসলিম হিসেবে আমার জীবনচিত্র ভেবে দেখার চেষ্টা করছিলাম। দেখতে পেলাম, সততা, উদারতা, স্থিতিশীল, শান্তি, শ্রদ্ধা ও সহমর্মিতায় পূর্ণ একটি বিনম্র জীবন। আমি নিশ্চিত হলাম- জীবনের এই অর্থই আমি খুঁজছি। আমি নিজেকে প্রশ্ন করলাম, তোমার মুসলিম হওয়ার পথে বাধা কী? আসলে কোনো কারণ ছিল না। ফলে আমি কলেমা পাঠ করলাম। আল-হামদুলিল্লাহ!
ইসলামিক ওয়েব অবলম্বনেআবরার আবদুল্লাহ
উম্মাহ২৪ডটকম: আইএএ