Home লাইফ স্টাইল ভালো ঘুমের অভ্যাস গড়ে তোলার ৫ উপায়

ভালো ঘুমের অভ্যাস গড়ে তোলার ৫ উপায়

ভার্জিন গ্রুপের প্রতিষ্ঠাতা রিচার্ড ব্র্যানসন একবার স্পেস-এক্সের প্রধান ও প্রযুক্তি উদ্যোক্তা ইলন মাস্কের গভীর রাতে টুইট করার প্রসঙ্গে বলেছিলেন, ‘সে একজন চমৎকার সৃজনশীল ব্যক্তি, কিন্তু তার এত কম সময় ঘুমানো উচিত না।’

এ ব্যাপারে শুধু যে ব্র্যানসনই এমনটা মনে করেন, তা নয়; আরও অনেকেই হয়তো মাস্ককে একই উপদেশ দিতেন।

‘সুপারস্ল্যাপেন’ বইয়ের লেখক ফ্লোরিস উটারসন বলেছিলেন, “উদ্যোক্তা, খেলোয়াড় ও অন্যান্য ভালো পারফর্মারদের ভালো ঘুম অত্যন্ত প্রয়োজন।”  ঘুমকে তিনি খাওয়া কিংবা শরীরচর্চার চাইতেও গুরুত্বপূর্ণ বলে দাবি করেছেন।

উটারসন ইউরোপের একমাত্র স্বঘোষিত ‘স্লিপ পারফর্মেন্স কোচ’।

উটারসন জানান, সুন্দর ও সন্তোষজনক ঘুম নিয়ে যতকিছু আছে; সবকিছু নিয়েই তিনি বছরের পর বছর ধরে গবেষণা করেছেন।

এরপরেই তিনি কোচিং শুরু করেন এবং ইতিমধ্যে একাধিক অ্যাথলেট ও শীর্ষস্থানীয় ম্যানেজাররা তার সেবা নিয়ে উপকৃত হয়েছেন বলেও জানা গেছে। উদ্যোক্তা পরিবারের সন্তান উটারসন কাজ করেন বেলজিয়ামের ফ্ল্যান্ডারস এ। ২০০২ সাল থেকে তার স্ত্রীও একাধিক ‘স্লিপিং কমফোর্ট স্টোর’ স্থাপন করেছেন।

বিগত ১৬ বছরে উটারসন হাজার হাজার ক্রেতার সঙ্গে কথা বলেছেন এবং ‘ঘুম’ বিষয়টি নিয়ে আরও বেশি কৌতূহলী হয়েছেন। কারণ উটারসন নিজেও একসময় কম ঘুম হওয়ার সমস্যায় ভুগেছেন।

উটারসনের মতে, ঘুম কম হওয়ার ফলে শ্রান্তি-অবসাদ, খিটখিটে স্বভাব, অমনোযোগ, ভুলে যাওয়া রোগ ইত্যাদি সমস্যা তৈরি হয়। আর এগুলো একজন ব্যক্তির কর্মক্ষেত্রে ও সম্পর্কের ক্ষেত্রে সমস্যা সৃষ্টি করে। তার চেয়ে বড় কথা হলো, কম ঘুমের ফলে দুর্ঘটনায় পড়া বা আহত হওয়ার ঝুঁকি ৪০ শতাংশ বেড়ে যায়।

দীর্ঘদিন ধরে ঘুম কম হতে থাকলে, ব্যক্তি একসময় মারাত্মক ডিপ্রেশনে পড়ে যেতে পারে। এসকল সমস্যার মুখোমুখী যেন না হন এবং একজন সুপার-স্লিপার হওয়ার জন্য উটারসনের পক্ষ থেকে আপনার জন্য থাকছে ৫ টি টিপস-

১। ‘আট ঘণ্টা ঘুমে’র মিথ ভুলে যান

উটারসনের মতে, দৈনিক আট ঘণ্টা ঘুমাতেই হবে- এই প্রথাগত ধারণা আসলে উলটো এক ধরনের দুশ্চিন্তামূলক ভার চাপিয়ে দেয় একজন ব্যক্তির মনে।

আট ঘণ্টা ঘুমাতে হবে বলেই শুধু জেগে জেগে বিছানায় শুয়ে থাকাটাকে অযৌক্তিক মনে করেন এই বিশেষজ্ঞ। বরং এই মিথ কারও ক্ষেত্রে উলটো কাজ করতেও পারে।

উটারসন জানান, একজন মানুষকে অবশ্যই তার ঘুমের নিজস্ব ছন্দ খুঁজে নিতে হবে। একটি নির্দিষ্ট সময়ে ঘুমাতে যাওয়া ও জেগে ওঠার অভ্যাস তৈরি করতে হবে। ‘ঘুম না আসলে শুধু শুয়ে থাকবে, তাহলে আপনা আপনিই ঘুম চলে আসবে- এটা একটা ভুল ধারণা’, বললেন উটারসন। 

২। ‘খুব কম ঘুমালেও চলে’র গল্প বিশ্বাস করবেন না

কোনো খ্যাতিমান সিইও বা রাজনীতিবিদ দৈনিক মাত্র কয়েক ঘণ্টা ঘুমান, তাতে তারা খুব বিজ্ঞ হয়ে ওঠেন- এমন গল্পে ভরসা না করারই পরামর্শ দিয়েছেন উটারসন। তার মতে, খুব কম সংখ্যক মানুষই অল্প ঘুমের সাথে মানিয়ে নিতে পারেন।

সাময়িকভাবে কম ঘুমের একটা রুটিন তৈরি করা যায়, যা উটারসন হট-এয়ার বেলুনে চড়ার প্রতিযোগিতায় অংশ নেয়া এক পাইলট, সান হারহুইসকে অভ্যাস করিয়েছিলেন।

কিন্তু উটারসন এও জানাতে ভোলেননি যে, একটু ঘুমের ফলে কিভাবে অ্যাথলেটরা আবার সজীব হয়ে ওঠেন, “১২ মিনিটের ঘুমের ফলে আপনি দুই ঘণ্টার জন্য নিজেকে সতেজ রাখতে পারবেন।” তবে গভীর ঘুমে তলিয়ে যাওয়ার আগেই আবার সজাগ হতে হবে আপনাকে।  

আরও পড়তে পারেন-

এর জন্য একটি সহজ উপায়ও বাতলে দিয়েছেন উটারসন। স্বল্প সময়ের ঘুমের সময় তিনি হাতে একগোছা চাবি রাখতে বলেন। গভীর ঘুমে চলে যাওয়ার সময় মানুষের হাত ছেড়ে দেয়, ফলে চাবির গোছা নিচে পড়ে যাবে এবং এর শব্দে আপনি জেগে উঠবেন।

৩। ছোট ছোট পদক্ষেপ থেকেই বড় পরিবর্তন

উটারসন বিশ্বাস করেন যে, এক লাফেই ঘুমের অভ্যাস বদলে দেয়ার মত কোনো দ্রুততর উপায় নেই। তার জন্য আপনাকে একাধিক বিষয়ের প্রতি নজর দিতে হবে।  

“ডায়েট, ব্যায়াম, ঘুমের রুটিন ইত্যাদি পরিবর্তন করতে থাকার মাধ্যমে আপনি আস্তে আস্তে সঠিক ঘুমের অভ্যাস অর্জন করবেন”, জানালেন উটারসন। কিন্তু নিজেকে যাচাই করা, নিজের আচরণ লক্ষ্য করার মাধ্যমে অভ্যাস ঠিক করাই উটারসনের কাছে সবচেয়ে ভালো অপশন।

৪। ভালো খাবার খান এবং ফোনকে সাময়িক বিদায় জানান

রাতে ভাল ঘুম নিশ্চিত করতে হলে খাওয়া এবং হাতকে বিশ্রাম দেয়া প্রয়োজন।

চিনি, শর্করা, অ্যালকোহল জাতীয় খাবারের সঠিক সমন্বয় করতে হবে বলে জানিয়ে উটারসন বলেন, ‘রাতে ভালো ঘুমের প্রক্রিয়া আসলে কি খাচ্ছেন, তা থেকেই শুরু হয়।’

গণমাধ্যম প্রচার করে যে, বাইরের জগতের নানা ঘটনা দ্বারা একজন মানুষের মন আলোড়িত হয়। কিন্তু উটারসন পরামর্শ দিয়েছেন, নিজস্ব গন্ডির উপর মূল মনোযোগ রাখতে। আপনাকে চিন্তা করতে হবে নিজের জীবনে কি কি চ্যালেঞ্জ আছে কিংবা কোনটি আপনাকে প্রভাবিত করছে, সেসব বিষয় নিয়ে। সমস্যা নিয়ে খুব বেশি দুশ্চিন্তা করলেই সমস্যার সমাধান হবে না, বরং তা আরও জটিল হবে।

‘মিডিয়া ডায়েট’ শব্দদ্বয়ের কথা হয়তোবা আপনি আগে কখনো শোনেননি; কিন্তু উটারসন সেটিরই পরামর্শ দিয়েছেন। সন্ধ্যায় এবং ঘুমানোর কয়েক ঘণ্টা আগে আপনার স্মার্টফোন ব্যবহার করাটা বন্ধ রাখুন।

৫। ঘুমকে ‘বিনিয়োগ’ হিসেবে দেখুন

কাজ চালিয়ে যেতে থাকো, দুপুরে খেতে খেতেও কাজ করো, অতিরিক্ত সময় কাজ করো- এ ধরনের আচরণ আসলে কর্মীর কাছ থেকে যতটা সম্ভব কাজ আদায়ের প্রচেষ্টা। কিন্তু উটারসনের মতে তা আসলে হিতে বিপরীত হতে পারে।

এ ধরনের আচরণের ফলে ব্যবসায়ে বেশ উন্নতি হলেও, ঘুম বেশি হলে কর্মীদের কাজের পারফরমেন্স আরও বেশি ভালো হবে। তখন তাদের কাজে কম ভুল হবে এবং আরও ভালো সিদ্ধান্ত নিতে পারবে।

উটারসন নিয়োগকর্তাদের উদ্দেশ্যে বলেন, তারা চাইলে কর্মীদের জন্য ঘুমের প্রশিক্ষণ বা ঘুমানোর ব্যবস্থা রাখতেই পারেন।

স্লিপ পারফর্মেন্স কোচ উটারসনের ভাষ্যে, জাপানে এটি ইতিমধ্যেই একটি পরিচিত ব্যবস্থা।

সূত্র: বিজনেস ইনসাইডার ।

উম্মাহ২৪ডটকম: এমএ

উম্মাহ পড়তে ক্লিক করুন-
https://www.ummah24.com

দেশি-বিদেশি খবরসহ ইসলামী ভাবধারার গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে ‘উম্মাহ’র ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।