Home শিক্ষা ও সাহিত্য বাঙালি মুসলমানের সংস্কৃতি

বাঙালি মুসলমানের সংস্কৃতি

।। মজিবুর রহমান মঞ্জু ।।

: হ্যালো ভাই আসস্সালামুয়ালাইকুম।
: ওয়ালাইকুমুস্সালাম ওয়ারাহমাতুল্লাহ।
: কেমন আছেন?
: আলহামদুলিল্লাহ! চইলা যাচ্ছে কোন রকম।
: আচ্ছা ভাই একটা প্রশ্ন করি?
: জ্বি করেন।
: এই যে লোকেরা ফেসবুকে কুরবাণীর গরু, খাসী এগুলার ছবি পোস্ট দিচ্ছে। এইটা কী জায়েয?
: ভাই আপনি জায়েয, না-জায়েয ফতোয়া জানতে চান তো কোন মুফতী শায়খের কাছে ফোন করেন। আমারে ফোন করলেন ক্যান?
: না মানে আপনার মতামতটা জানতে চাচ্ছিলাম।
: ও আচ্ছা! আমার মত জানতে চান? তো সেইটা বলেন। আমার মত হইলো, এটা খুব ভালো কাজ।
: মানে?
: মানে এই ছবি দেয়া, কুরবানির পশুর ভিডিও শেয়ার করাকে আমি খুব পছন্দ করি।
: তাই নাকি! আচ্ছা ভাই কেন করেন সেইটা কী একটু ব্যখ্যা কইরা বলা যায়?
: যাইব না কেন? আল্লাহ তায়ালার হুকুম অনুযায়ী তাঁকে খুশী করার জন্য পশু কুরবানী করা ইবাদাত। আবার এইটা বাংলাদেশী মুসলমানদের সংস্কৃতিও। কুরবানীর মওসুমে যখন রাস্তায় রাস্তায় পশুর হাট বসে। সবাই হাসি মুখে গরু টাইনা টাইনা নিয়ে যায়। বাড়ীর সামনে সারি বাঁইধা গরু-খাসী রাখে তখন মুসলমানদের সংস্কৃতির একটা ব্যাপক ডেমোনেস্ট্রশন হয়। আমার খুব আনন্দ লাগে।
: কিন্তু এর মাধ্যমে কী এক ধরনের প্রদর্শনেচ্ছা বা রিয়া’র বিস্তার ঘটে না?
: ঘটতে পারে। সেইটা তো যার যার মনের ব্যপার। যে মুসলমান এটা দেখানোর জন্য করে সে গুনাহগার হইতে পারে, কিন্তু যে সারা বছর নামায রোযা করে না তার কাছে রিয়া বা প্রদর্শনেচ্ছার কী গুরুত্ব আছে? তাঁর প্রদর্শনেচ্ছাটা বরং আমার কাছে পজিটিভ। তার এই প্রদর্শন অন্তত: বাংগালি মুসলিম সংস্কৃতির একটা শো-অফ হইতেছে।
: তাইলে কী আপনি মনে করেন কুরবানীর পশুর ছবি ফেসবুকে আপলোড করা। কুরবানীর পশুর সাথে সেলফি তোলায় দোষের কিছু নাই? এইটা ভাল?
: ভাই আপনি খেয়াল কইরেন, আমি কিন্তু ফতোয়া দেই নাই। আমার নিজস্ব দৃষ্টিভঙ্গি ও মতামত জানাইলাম।
: না না বুঝছি সেইটা আমার কাছে ক্লিয়ার।
: শোনেন পহেলা বৈশাখের সময় যখন নানা রকম-সকমের ছবিতে ফেসবুক সয়লাব হয়, তখন কী মনে হয়? মনে হয় দেশের মানুষ সব সেক্যুলার হইয়া গেছে, অপসংস্কৃতিতে গা ভাসাইয়া দিসে। আর এখন কুরবানীর মওসুমে যখন ফেসবুকে যার যার পছন্দসই কুরবানীর পশুর ছবি আর গোস্ত বিতরণের ছবিতে ভরপুর হইয়া যাইবো, তখন কী মনে হইবো? মনে হইবো বাংলাদেশে মুসলিম সংস্কৃতি অনেক গভীরে প্রোথিত। তাই আমার ইচ্ছা গরু বা খাসী যবাইয়ের ছবি ছাড়া কুরবানী সংশ্লিষ্ট পশুর নানা পোজের ছবি, ঈদের নামাযে
র ছবি, কোলাকুলির ছবি, গোস্ত বিতরণের ছবি ইত্যাদি আনুসাঙ্গিক সব ছবিতে ফেসবুকটা ঝলমলাইয়া উঠুক। প্রতিভাত হোক বাংলার মুসলমানের সংস্কৃতি শুধু তারা যেটা জোর কইরা স্টাবলিস্ট করতে চায় সেইটা না। ঈদ, কুরবানী, ধনী-গরীবের মেলবন্ধনও আমাদের মূলধারার সার্বজনীন সংস্কৃতি।

লেখক: সাংবাদিক ও মানবাধিকারকর্মী।