Home ধর্মতত্ত্ব ও দর্শন হযরত আবু বকর (রাযি.)এর যুগে যেভাবে কুরআন সংকলন হয়েছে

হযরত আবু বকর (রাযি.)এর যুগে যেভাবে কুরআন সংকলন হয়েছে

।। মুফতি আবু সাঈদ ।।

প্রিয় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের ইন্তেকালের পর মুসলিম উম্মাহ যখন কঠিন সময় অতিক্রম করছিল, তখনকার যুগটি ইসলামি সমাজকে ভিন্ন কিছুর পয়গাম দিয়ে যাচ্ছিল। আড়াল থেকে ইসলামকে সুদৃঢ়করণের লক্ষ্যে বহু বিষয়ের অবশ্যপ্রয়োজনীয়তা বারবার তাড়া দিচ্ছিল। সেগুলোর মধ্যে কুরআন একত্রীকরণের বিষয়টি ছিল অন্যতম।

মহাগ্রন্থ’ আল কুরআন শুরুর দিকে বিক্ষিপ্তাকারে পাতা, পাথর, চামড়া ও কাষ্ঠখ- ইত্যাদিতে লিখিত ছিল। কিন্তু আরব-মানবের পবিত্র অন্তরগুলোই ছিল তা সংরক্ষণের প্রধান কেন্দ্র ভূমি। তবে এর বাইরেও কারো নিকট লিখিত ছিল একটি সূরা, কারো নিকট পাঁচ-দশটি সূরা, আবার কারো নিকট শুধু কয়েকটি আয়াত। এছাড়াও অনেক সাহাবার নিকট কুরআনের আয়াতের সাথে তার তাফসীর অর্থাৎ ব্যাখ্যাও লেখা থাকত।

তখনকার সময়ে ইসলামের প্রথম খলিফা হযরত আবু বকর সিদ্দীক রাযি. কুরআন একত্রীকরণের তীব্র প্রয়োজনীয়তা অনুভব করলেন এবং অত্যন্ত গুরুত্বের সাথে কুরআনের বিক্ষিপ্ত অংশগুলো এক সাথে করার পদক্ষেপ গ্রহণ করলেন।

হযরত যায়েদ ইবনে সাবেত রাযি. বর্ণনা করেন- ‘ইয়ামামা’র যুদ্ধ’ শেষ হতে না হতেই হযরত আবু বকর রাযি. আমাকে ডেকে পাঠালেন। আমি উপস্থিত হলাম। সেখানে হযরত উমরকে আগে থেকেই উপস্থিত দেখতে পেলাম।

হযরত আবু বকর রাযি. বললেন- যায়েদ! আমাকে উমর বলল, ‘ইয়ামামা’র যুদ্ধে হাফেজদের এক বড় দল শাহাদাত বরণ করেছেন। এখন কথা হল- এভাবে বিভিন্ন স্থানে হাফেজগণ শহীদ হতে থাকলে আমার ভয় হয় যে, কুরআনের একটি বড় অংশ বিলুপ্ত হয়ে যায় কি না! এখন আমার ‘রায়’ হল, আপনি কুরআন একত্রীকরণের কাজ হাতে নিন।

আমি উমরকে বললাম- উমর! যে কাজ রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম করেননি সেটি আমি কীভাবে করব? তিনি বলল- এই কাজ উত্তমই উত্তম হবে।

উমর এ বিষয়ে আমাকে পীড়াপীড়ি করছিল। এক পর্যায়ে আল্লাহ তা‘আলা আমার অন্তরকে খুলে দিলেন। আমার ‘রায়’ উমরের মতই হয়ে গেলো।

আরও পড়তে পারেন-

হযরত আবু বকর আমাকে বললেন, তুমি একজন বুঝমান ব্যক্তি। তোমার ওপর আমাদের যথেষ্ট আস্থা রয়েছে। তুমি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সামনেই ওহী লিখার কাজ করতে। তাই বলছি, কুরআনের আয়াতগুলোকে বিভিন্ন স্থান থেকে তালাশ করে একত্র করো।

হযরত যায়েদ বলেন- শপথ আল্লাহর! এই হযরতদ্বয় যদি আমাকে কোন পাহাড় সরানোর আদেশ দিতেন, সেই কাজটা আমার নিকট কুরআন একত্র করার চেয়ে অধিক সহজ হতো! আমি তাঁদেরকে বললামÑ আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যে কাজ করে দেখাননি সেটা আপনারা কীভাবে করবেন?

হযতর আবু বকর বললেন- আল্লাহর কসম! এটা এক উত্তম কাজ। এরপর হযরত আবু বকর আমাকে বারবার সে কথাই বলতে থাকলেন। পরিশেষে আল্লাহ তা‘আলা আমার হৃদয় খুলে দিলেন। আমার নিকটও এ বিষয়টি আবু বকর ও উমরের ন্যায় স্পষ্ট হয়ে গেল।

আমি বিভিন্ন স্থানে বিভিন্ন জনের নিকট গিয়ে কুরআনের আয়াতসমূহ সংগ্রহ করতে আরম্ভ করলাম। খেজুরের ডাল, পাথর ও হাফেজদের মুখস্থ থেকে কুরআনকে একত্র করলাম।

– মুফতি আবু সাঈদ, সিনিয়র শিক্ষক- আল জামিয়াতুল আহলিয়া দারুল উলূম মুঈনুল ইসলাম, হাটহাজারী, চট্টগ্রাম। খতীব- বারীয়া জামে মসজিদ, চট্টগ্রাম।

উম্মাহ২৪ডটকম: এমএ

উম্মাহ পড়তে ক্লিক করুন-
https://www.ummah24.com

দেশি-বিদেশি খবরসহ ইসলামী ভাবধারার গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে ‘উম্মাহ’র ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।