Home ইসলাম শীয়া মতবাদ কেন বিভ্রান্তিকর ও পরিত্যাজ্য

শীয়া মতবাদ কেন বিভ্রান্তিকর ও পরিত্যাজ্য

।। মাওলানা মুহাম্মদ ওমর কাসেমী ।।

শীয়া মতবাদ মানুষের মনগড়া একটি সম্পূর্ণ ভ্রান্ত মতবাদ, তাওহীদের বিপরীত যেমন শিরক, ঈমানের বিপরীত যেমন কুফর, সুন্নাতের বিপরীত যেমন বিদ্আত তেমনি ইসলামের সম্পূর্ণ বিপরীত মতবাদ হচ্ছে শীয়া মতবাদ। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কর্তৃক আনীত, সাহাবায়ে কেরামের (রাযি.) দ্বারা প্রচারিত দ্বীনের সাথে এ ভ্রান্ত মতবাদের দরতম সম্পর্কও নেই। বরং শীয়া মতবাদ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ও তাঁর সাহাবীগণকে অস্বীকার কারী এবং কাল্পনিক ও ভিত্তিহীন উপাখ্যানে ভরপুর এক জঘন্য  মতবাদ।

বস্তুতঃ শীয়া মতবাদ হচ্ছে ইয়াহুদ, নাসারা ও মুনাফিক চক্রের বিশ্বাসঘাতকতা ও গভীর চক্রান্তের ফসল, যা মুসলমানদের মধ্যে বিভক্তি সৃষ্টি করার লক্ষ্যে ও সমাজে অনৈক্যের বিভ্রান্ত বা®ž ছড়িয়ে দেয়ার উদ্দেশ্যে শীয়ানে আলী বা আলী (রাযি.)এর সমর্থক নামে প্রথমে আত্মপ্রকাশ লাভ করে এবং মুসলিম সমাজে প্রচলিত অগণিত কুফরী ও গোমরাহী কর্মকান্ডকে ইসলামের লেবেলে প্রচার করতে থাকে।

আর এ ভ্রান্ত মতাদর্শ প্রচারের পেছনে প্রত্যক্ষ সাহায্য যোগিয়েছিল ইহুদী সন্তান মুনাফিক আব্দুল্লাহ ইবনে সাবা। কুখ্যাত আবদুল্লাহ ইবনে সাবা প্রথম দিকে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সাথে হযরত আলী (রাযি.)এর বিশেষতঃ আত্মীয়তার ভিত্তিতে তাঁর প্রতি অসাধারণ ভক্তি ও মুহাব্বত প্রকাশ করে তাঁর শানে নানারূপ বাড়াবাড়িপর্ণ কথাবার্তা শুরু করে দিল। অতঃপর এক পর্যায়ে সে তার ভক্তদের মধ্যে এই মানসিকতা সৃষ্টি করল যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের পরে খলীফা হওয়ার অধিকার প্রকৃত পক্ষে আলীরই (রাযি.) ছিল।

কিন্তু রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের ওফাতের পর সাহাবায়ে কেরাম চক্রান্ত করে আবু বকর ও উমর (রাযি.)কে খলীফা মনোনীত করেছে। এমন কি খিলাফতের কোন যোগ্যতা ছিল না এমন উসমানকেও খলীফা নিয়োগ করা হয়েছে। ক্রমে ক্রমে এ মনুষ্য রূপী শয়তান এ কথা বলতেও দ্বিধা করল না যে, হযরত আলীকেই (রাযি.) আল্লাহ নবুওয়্যাতের জন্য মনোনীত করেছিলেন, কিন্তু জিব্রাইল (আ.) ভুল করে হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে ওহী নিয়ে পৌঁছে গেছেন। (নাউযুবিল্লাহ্)।

শুধু তাই নয় এই দুরাচার হযরত আলী (রাযি.)কে খোদায়ী প্রতিরূপ ও খোদায়ী আত্মা বিরাজমান বলে তাঁকে উপাস্যের তরে পৌঁছিয়ে মানুষকে শিরক কুফরীতে নিমজ্জিত করে। বন্ধুগণ! কথা এখানেই শেষ নয়, শীয়ারা তাদের ইমামগণকে নবীর সমতুল্য মর্যাদা দিয়ে তাদের নবী আলাদা বানিয়েছে, আলাদাভাবে তাদের মনগড়া মত ব্যাখ্যা করে কুরআনের চর্চা করেছে, তারা আলাদা উম্মত বানিয়েছে, শরীয়ত আলাদা করেছে, কালিমা আলাদা করেছে এবং তাদের ধর্মের নাম প্রকৃত ইসলাম রেখেছে। এর চেয়ে বড় ধৃষ্টতা আর কি হতে পারে? কারণ, কুখ্যাত শীয়া গোষ্ঠীরা দু’টি বড় জুলুম করেছে (এক) কাল্পনিক ও ভিত্তিহীন উপস্থাপনে ভরপুর এক নতুন ভ্রান্ত দ্বীনের প্রবর্তন করেছে এবং এর নাম দিয়েছে শীয়া-সুন্নী ইসলাম। (দুই) তারা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের আনীত দ্বীনকে কুফর বলেছে।

শীয়াদের বিভক্তি

প্রথম দিকে শীয়ারা একটি পথ ও মতের অধিকারী হলেও পরবর্তীতে তারা  বহু দল ও উপদলে বিভক্ত হয়ে পড়ে। ঐতিহাসিকদের মতে এদের সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়ে শেষ পর্যন্ত সত্তর ছাড়িয়ে যায়। (আল-মিলাল ওয়ান্ নিহাল) এদের প্রধান দলটিকে শীয়া ইমামিয়্যাহ বা শীয়া ইসনা আশারিয়্যাহ বলা হয়। এদের অন্যতম ইমাম আয়াতুল্লাহ খোমেনী। আর এরাই ইরানে বর্তমান বিপ্লবের ধারক ও বাহক। এ ক্ষুদ্র পরিসরে সুচিšিত পাঠকদের সামনে খোমেনী পন্থী শীয়া ইস্না আশারিয়্যাদের কতিপয় কুফরী আক্বীদা ও নষ্টাদর্শনের কিছু চিত্র তুলে ধরা হচ্ছে। এতেই সুপ্রিয় পাঠক সমাজ ও বিদগ্ধ মুসলিম জনগণ অনুমান করতে পারবেন যে, এদের কুফরী কত জঘন্য এরাই দুনিয়ার নিকৃষ্টতম কাফির, যিন্দিক।

কুরআন বিকৃতি সম্বন্ধে আক্বীদা

শীয়াদের আক্বীদা সমূহের মধ্যে এ আক্বীদাটি অধিক জঘন্য ও অত্যন্ত মারাত্মক। শীয়াদের ধারণা ও আক্বীদা মতে বর্তমান কুরআন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের উপর অবতীর্ণ কুরআন নয়। এটা হল হযরত উসমান (রাযি.)এর সাজানো কুরআন। এতে ব্যাপক পরিবর্তন, পরিবর্ধন সাধন হয়েছে এবং মূল কুরআন হতে একটি গুরুত্বপর্ণ সূরা সূরাতুল বেলায়েত বাদ দেয়া হয়েছে।

কালিমা বিকৃতি সম্বন্ধে আক্বীদা

ইসলাম ধর্মের কালিমা হচ্ছে, লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহু মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ অর্থাৎ আল্লাহ ব্যতীত কোন মাবুদ নেই এবং মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আল্লাহর প্রেরিত রাসূল। পক্ষান্তরে শীয়াদের কালিমা হচ্ছে, “লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহু মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ আলা ওলী উল্লাহ ওসী রাসূলুল্লাহ ওয়া খলীফাতুল্লাহি বিলা-ফাসলিন”। অর্থাৎ আল্লাহ ব্যতীত কোন মা’বুদ নেই, মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আল্লাহর রাসূল, আলী হলেন আল্লাহর দোস্ত এবং রাসূল কর্তৃক ওসী ও বিভেদহীন ভাবে আল্লাহর খলীফা। (সূত্রঃ আল হুকুমাতুল ইসলামিয়া)।

সাহাবা বিদ্বেষ

বিদ্বেষ ও শত্রুতার কারণে ইসলামের প্রথম তিন খলীফা এবং রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের প্রধান প্রধান সাহাবীগণকে পর্যন্ত মুরতাদ, জাহান্নামী ও অভিশপ্ত মনে করা শীয়াদের ধর্মীয় বিশ্বাসের অবিচ্ছেদ্য অংশ। মূলতঃ কুরআনের যে সব আয়াত কাফির, মুনাফিক ও মুশরিকদের শানে নাযিল হয়েছে, তারা তা সাহাবীদের সাথে সম্বন্ধ যুক্ত করে সীমাহীন ধৃষ্টতা দেখিয়েছে।

আরও পড়তে পারেন-

হযরত আবু বকর (রাযি.) সম্বন্ধে তাদের আক্বীদা হল যে, তিনি কুরআনের মধ্যে বিকৃতি করেছেন এবং ফাতিমা (রাযি.)কে পৈত্রিক সম্পত্তি হতে বঞ্চিত করেছেন। (নাউযুবিল্লাহ)।

উসূলে কাফী’র মধ্যে ইমাম জাফর সাদিক লেখেন, উমুক উমুক উমুক। অর্থাৎ আবু বকর, উমর, উসমান; এ তিনজন হযরত আলী (রাযি.)কে অবজ্ঞা করার কারণে ইসলাম ও ঈমান থেকে বহিস্কার ও ধর্মত্যাগী হয়েছেন। (নাউযুবিল্লাহ্)। (সূত্রঃ কাশফুল আছরার-১২১পৃষ্ঠা)।

বিজ্ঞ পাঠক সামাজ! চিন্তা করুন, কত বড় ধৃষ্টতা, কত জঘন্য তাদের কুফরী! আসলেই কি এরা মুসলমান? আসুন!  এবার এ বিষয়ে আমরা কুরআন ও সুন্নাহ ভিত্তিক প্রমাণ ও সূত্র ধরে তাদের মুখোশ  উম্মোচনে সচেষ্ট হই।

শিয়া ধর্ম মূলত

অনেক ভ্রান্ত ধর্মের সমষ্টির নাম

শীয়া ও ইহুদীঃ শীয়াদের মূল হচ্ছে ইহুদী থেকে। ইমাম শাবী (রাহ.) বলেছেন যে, শীয়া হচ্ছে বর্তমান উম্মতে মুসলিমার জন্যে ইহুদী তুল্য। হযরত আবু যাহরা মিসরী তাঁর লিখিত “আল মাযাহেবুল ইসলামিয়্যাহ” গ্রন্থের মধ্যে ইমাম ইব্নে হজম এর কিতাব “আল ফাসলের” উদ্ধৃতি দিয়ে প্রমাণসহ লিখেছেন যে, শীয়া সম্প্রদায় ইহুদীদের পথ অবলম্বন করেছে। কেননা, তারা ইয়াহুদ বংশদ্ভুত ইবনে সাবার বপনকৃত নাপাক বৃক্ষেরই ফল।

শীয়া ও খ্রীস্টানঃ শীয়া ধর্মে বিশেষ করে খ্রীষ্টানদের দর্শন ও কৃষ্টি কালচার মওজুদ রয়েছে বিস্তর। প্রমাণ হিসেবে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের একটি হাদীস পেশ করছি। হযরত আলী (রাযি.) হতে বর্ণিত আছে যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একবার হযরত আলী (রাযি.)কে সম্বোধন করে বললেনঃ তোমার মধ্যে ঈসা (আ.) এর সাদৃশ্যতা রয়েছে, ইহুদীরা তাঁর সাথে হিংসা ও শত্রুতা মূলক আচরণ করে। এমনকি তার জননী মারইয়াম এর প্রতি (ব্যাভিচারের)অপবাদ আরোপ করে। আর খ্রীস্টানরা তাকে এমন মুহাব্বত করে যে, তাকে সেই স্তরে পৌঁছে দেয়, যা তার জন্য শোভনীয় নয়। (রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের এই উক্তি বর্ণনা করার পর) হযরত আলী (রাযি.) বললেনঃ দু’প্রকার মানুষ আমার ব্যাপারে ধ্বংস প্রাপ্ত হবে। এক. যারা মুহাব্বতে বাড়াবাড়ি করবে, তারা আমার এমন মাহাত্ম্য বর্ণনা করবে, যা আমার মধ্যে নেই। দুই. যারা হিংসা ও শত্রুতায় সীমা ছাড়িয়ে যাবে এবং আমার বিরুদ্ধে মিথ্যা অপবাদ রটাবে।

পাঠক! একথা কারো অজানা নয় যে, শীয়া ধর্মের প্রতিষ্ঠতা ইব্নে সাবা ও তার অনুসারীগণ হযরত আলী (রাযি.)কে খোদার আসনে সমাসীন করে থাকে। যেমনটি খ্রীস্টানরা হযরত ঈসা (আ.)এর ব্যাপারে খোদার পুত্র বলে আক্বীদা পোষণ করে থাকে। এতেই প্রমাণিত হয় যে, শীয়া ধর্ম ও খ্রীস্টান ধর্ম এক ও অভিন্ন। (সূত্র- ইরানী ইনকিলাব-৪৩ এবং আল-মিলাল ওয়ান্ নিহাল-২৩ পৃষ্ঠা)।

শীয়া ও হিন্দু সম্প্রদায়ঃ শীয়া ধর্ম মতে হিন্দুদের সভ্যতাও পরিলক্ষিত হয়। হিন্দুরা যেমন তাদের দেবতার ব্যাপারে এ আক্বীদা পোষণ করে যে, পৃথিবীর সকল পাপ-তাপ মোচন করার লক্ষ্যে যুগে যুগে স্বয়ং ভগবান মনুষ্য রূপ ধারণ করে ভূ-পৃষ্ঠে অবতরণ করেন এবং দুনিয়ার যাবতীয় পাপরাশি বিনাশ করে তিরোহিত হন। ঠিক তদ্রুপ ভন্ড শীয়ারাও তাদের মহামান্য ইমামদের ব্যাপারে উপরোক্ত আক্বীদা পোষন করে থাকে।

অতএব, এ দৃষ্টিকোণ থেকে প্রমাণিত হয় যে, শীয়া ধর্ম ও হিন্দু ধর্ম একাকার। দু’টোর মধ্যে ব্যবধানের কিছু নেই, এজন্য বিজ্ঞ ওলামাগণ বলেছেন, শীয়া ধর্ম মূলতঃ চার ভ্রান্ত ধর্মের সমষ্টির নাম। যার সংক্ষেপ সংস্করণ হলো শীয়া শব্দটি চারটি অক্ষর দ্বারা গঠিত [‘শীন, ইয়া, আইন, হা’] শীন দ্বারা শয়তান, ইয়া দ্বারা ইয়াহুদ, আইন দ্বারা ঈসায়ী বা খ্রীস্টান এবং হা দ্বারা হিন্দু সম্প্রদায়ের দিকে ইঙ্গিত দেয়া হয়েছে। (ভ্রান্ত মতবাদ- ২৭ পৃষ্ঠা)।

আল্লাহ তাআলা আমাদেরকে এবং বিশ্বের সকল মুসলমানকে শীয়া ও তার দোসরদের যাবতীয় জুলুম ও গোমরাহী হতে হিফাযত করুন। আমীন।

  • মাওলানা মুহাম্মদ ওমর কাসেমী, উস্তাদুল হাদীস ও ওয়াল ফিক্বহ- আল জামিয়াতুল আহলিয়া দারুল উলূম মুঈনুল ইসলাম, হাটহাজারী, চট্টগ্রাম।

উম্মাহ২৪ডটকম: এমএ

উম্মাহ পড়তে ক্লিক করুন-
https://www.ummah24.com

দেশি-বিদেশি খবরসহ ইসলামী ভাবধারার গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে ‘উম্মাহ’র ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।