Home লাইফ স্টাইল বিশ্বের ভয়াবহ ৬ মহামারী

বিশ্বের ভয়াবহ ৬ মহামারী

স্মরণকালে বিশ্বে যত মহামারী হয়েছে তার মধ্যে হালের কভিড-১৯, সোয়াইন ফ্লু, কলেরা, গুটিবসন্ত, স্প্যানিশ ফ্লু, যক্ষ্মা অন্যতম। বহুবার বিপুলসংখ্যক মৃত্যুর মধ্য দিয়ে পৃথিবীতে টিকে থাকার ইতিহাস রচনা করেছে মানুষ। ইতিহাসের ৬ মহামারী নিয়ে লিখেছেন মুমিতুল মিম্মা

মারী ও মহামারী 

২০১৯ সালে শুরু হওয়া কোভিড-১৯ বিশ্বকে নতুন করে মহামারী চিনিয়েছে। এর আগেও বহু মহামারী হাজার হাজার মানুষের মৃত্যুর কারণ হয়েছে। বলা যায়, মানুষের টিকে থাকার ইতিহাসে মারী ও মহামারীর ভূমিকা রয়েছে। মারী ও মহামারীর মধ্যে রয়েছে বিস্তর পার্থক্য। যুক্তরাষ্ট্রের সরকারি স্বাস্থ্য সংস্থা, সেন্টার ফর ডিজিজ কন্ট্রোল অ্যান্ড প্রিভেনশনের (সিডিসি) মতে, নির্দিষ্ট ভৌগোলিক এলাকায় একটি রোগীর প্রাদুর্ভাব হলে সেটি মারী (Epidemic)। অন্যদিকে যখন একটি রোগের প্রাদুর্ভাব নির্দিষ্ট ভৌগোলিক সীমা পেরিয়ে বেশ কয়েকটি দেশ বা মহাদেশকে আক্রান্ত করে ফেলে, তখন সেটি মহামারী (Pandemic)। মূলত, কোনো মারী আন্তর্জাতিক পর্যায়ের মাথাব্যথার কারণ হয়ে দাঁড়ালে মহামারীর আওতায় ফেলা হয় সেটিকে। মহামারীর ভৌগোলিক বিস্তৃতি তাই মারীর চেয়ে অনেক বেশি। প্রশ্ন আসতে পারে মারী কখন ঘটে? ধরা যাক, কোনো এলাকায় আগে থেকেই নির্দিষ্ট ব্যাকটেরিয়া, ভাইরাস, ছত্রাক ইত্যাদির কোনো সংক্রমণ হরহামেশা দেখা যেত। কিন্তু সেটি এতই নগণ্য ছিল যে আলাদা করে গুরুত্ব দেওয়ার কোনো দরকার পড়ছিল না। আবার অনেক ক্ষেত্রে দেখা যায় সে রোগের কোনো ইতিহাসই ছিল না সে এলাকায়। কিন্তু নতুন নতুন উপসর্গ নিয়ে সংক্রামক এজেন্টের (ব্যাকটেরিয়া, ভাইরাস ও ছত্রাক) আক্রমণে মানুষ অসুস্থ হয়ে পড়ছে। হুট করে সেই সংক্রমণের প্রাদুর্ভাব বেড়ে গেলে সেটি মারীর পর্যায়ে ফেলা হয়। উদাহরণ হিসেবে বলা যায় হাম, পোলিও, টাইফয়েড ও ইয়েলো ফিভার। অন্যদিকে মহামারী স্থানীয় ভৌগোলিক ব্যাপ্তি ছাপিয়ে অন্যান্য অঞ্চলে দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা মহামারীর বিস্তৃতিকে ছয়টি ভিন্ন ভিন্ন পর্যায়ে ভাগ করেছে

আরও পড়তে পারেন-

 কোনো অঞ্চলের এক বা একাধিক প্রাণীর মধ্যে রোগ সৃষ্টিকারী জীবাণু (প্যাথোজেন) হঠাৎ করে ছড়িয়ে পড়তে থাকে। এমনও হতে পারে রোগের বাহক হিসেবে সে প্রাণীটির কথা হয়তো মানুষ জানেই না।

 প্রাণীর শরীরে জীবাণুটি শনাক্ত করা হয়।

 পারস্পরিক সংস্পর্শের মাধ্যমে প্রাণী থেকে মানুষের মধ্যে ছড়িয়ে পড়ে সে রোগ ধীরে ধীরে ছড়িয়ে পড়তে থাকে।

 পরের ধাপে মানুষের সঙ্গে মানুষের সংস্পর্শের মাধ্যমে স্থানীয় লোকরা সংক্রমিত হওয়া শুরু হয়। (এ ক্ষেত্রে মানুষ হয়ে দাঁড়ায় জীবাণুর বাহক।)

 স্থানীয় মানুষদের পারস্পরিক সংস্পর্শ পুরো জনগোষ্ঠীকে ঝুঁকির মুখে ফেলে দেয়। একই ভৌগোলিক অঞ্চলে অবস্থিত কমপক্ষে দুটো দেশের মানুষের মধ্যে সংক্রমণ ছড়িয়ে।

 ভিন্ন একটি অঞ্চলের অন্য কোনো দেশে মানুষের শরীরে জীবাণুটি শনাক্ত করা হয়। এতে বোঝা যায় একটি মহামারী ঘটতে যাচ্ছে।

কভিড-১৯

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ২০২০ সালের ১১ মার্চ করোনাভাইরাসের সংকটকে মহামারী হিসেবে ঘোষণা করে। চলমান বৈশ্বিক সংক্রমণের মধ্য দিয়ে ২০২১ সালের ২৮ আগস্ট পর্যন্ত ৪৫ লাখ ৬ হাজার ৮৪ জন মারা গেছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ১৮৮টিরও বেশি দেশ ও অঞ্চলে ২১ কোটি ৬৫ লাখ ৬০ হাজার ১৮২টি কভিড কেস রিপোর্ট করেছে। অথচ ২০১৯ সালের ডিসেম্বরে চীনের উহানে ভাইরাসের বিস্তার শুরু হওয়ার আগ পর্যন্ত এটি সম্পর্কে তেমন কিছুই জানতেন না গবেষক ও বিজ্ঞানীরা। কভিড-১৯-এর সাধারণ লক্ষণগুলোর মধ্যে রয়েছে জ্বর, শুকনো কাশি ও ক্লান্তি। এ ছাড়া ব্যথা, কনজাংটিভাইটিস, মাথাব্যথা, স্বাদ-গন্ধ হ্রাস, গলাব্যথা, ডায়রিয়া, ত্বকে ফুসকুড়ি বা আঙুলের বিবর্ণতার মতো উপসর্গগুলোও দেখা যায়। এ ছাড়া লক্ষণহীন ব্যক্তিরা এখনো সক্রিয় বাহক হিসেবে কাজ করছেন। ভাইরাসটি ৩ ঘণ্টা বাতাসে সক্রিয় থাকে। বেশির ভাগ মানুষই বিশেষ চিকিৎসা ছাড়াই সুস্থ হয়ে উঠছেন। বয়স্ক ও কার্ডিওভাস্কুলার রোগী, ডায়াবেটিস ও ক্যানসারের মতো রোগে আক্রান্ত ব্যক্তিদের ক্ষেত্রে কভিড সংক্রমণ গুরুত্ব শারীরিক সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে। হাঁচি, কাশি বা সংক্রমিত রোগীর কাছাকাছি থেকে কথা বলার সময় ক্ষুদ্রতম লালার ফোঁটা বাতাসে উড়ে যায়। সেই ক্ষুদ্রতম প্রতিটি ফোঁটায় কোটি কোটি ভাইরাস থাকতে পারে। সামাজিক দূরত্ব, হাত ধোয়া, মাস্ক পরার মতো ব্যক্তিগত সতর্কতা মানুষকে ভাইরাস থেকে দূরে রাখতে পারে। কভিড-১৯ টিকার মাধ্যমে ভাইরাসের ক্ষতিকর প্রভাব এড়ানো সম্ভব। একশ বছর আগের স্প্যানিশ ফ্লুর পরে বৈশ্বিক ইতিহাসে কভিড-১৯-এর মতো ভয়াবহ মহামারী আর আসেনি।

লক্ষণ : জ্বর, ঠাণ্ডা, পেশিব্যথা, মাথাব্যথা, গলাব্যথা ও স্বাদ বা গন্ধ হ্রাস

ক্ষতিগ্রস্ত দেশ : বিশ্বব্যাপী

সময়কাল : ১ বছর ১০ মাস (২০১৯-বর্তমান)

কারণ : নভেল করোনাভাইরাস

রাশিয়ান ফ্লু

ইনফ্লুয়েঞ্জা বেশ কয়েকটি মারী ও মহামারীর সৃষ্টি করেছে। তবে সবচেয়ে খারাপ ইনফ্লুয়েঞ্জা মহামারীর একটি ছিল রাশিয়ান ফ্লু। রাশিয়ায় প্রথম এই ফ্লুয়ের রোগী ধরা পড়ে, যার কারণে এই মহামারীর নামকরণ করা হয় রাশিয়ান ফ্লু। রাশিয়ান ফ্লুকে এশিয়াটিক ফ্লুও বলা হয়। ইনফ্লুয়েঞ্জা এ ভাইরাসের সাবটাইপ এইচ৩এন৮-এর কারণে এই রোগের উৎপত্তি হয়। সংক্রমিত ব্যক্তির উপসর্গগুলো ১ থেকে ৪ দিনের মাথায় প্রকাশ পায়। এ রোগের প্রধান উপসর্গগুলো ছিল জ্বর, মাথাব্যথা ও সর্দি-কাশি।

ঊনবিংশ শতাব্দীতে জনসংখ্যার দ্রুত বৃদ্ধির কারণে এটি মাত্র ৪ মাসের ভেতরে রাশিয়া ছাড়িয়ে অন্যান্য মহাদেশে ছড়িয়ে পড়ে। ১৮৮৯ সালের নভেম্বর বা ডিসেম্বর মাসের দিকে প্রাচ্যের দেশগুলো হয়ে খুব সহজেই ইউরোপে পৌঁছে যায় রাশিয়ান ফ্লু। ১০ লাখের বেশি মানুষের মৃত্যুর কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছিল এই মহামারী। কম রোগী প্রতিরোধ ক্ষমতাসম্পন্ন ব্যক্তি বিশেষত শিশুরা সবচেয়ে ঝুঁকির মধ্যে ছিল। যে শিশুদের হৃদ্রোগ ও ফুসফুসের সমস্যা ও অন্যান্য দীর্ঘস্থায়ী রোগ রয়েছে তারা ছিল চরম ঝুঁকিপূর্ণ। রাশিয়ান ফ্লুয়ের কারণে মাল্টায় প্রথমবারের মতো কোনো ইনফ্লুয়েঞ্জাকে খুব গুরুত্ব দিয়ে দেখা শুরু হয়। বিজ্ঞানীরা অনেক বছর ধরে ইনফ্লুয়েঞ্জার অন্যান্য সাবটাইপ শনাক্ত করার চেষ্টা করছিলেন। কিন্তু কিছুতেই কিছু হচ্ছিল না। ১৮৮৯-১৮৯০, ১৮৯৮-১৯০০ ও ১৯১৮ সালের মহামারীর জন্য দায়ী ছিল এই রাশিয়ান ফ্লু। প্রতি মহামারী বা মহামারী শুরু হলেই সেটি ঘিরে বিতর্ক তৈরি হয়। রাশিয়ান ফ্লুও তার ব্যতিক্রম ছিল না। রোগটি সংক্রামক কি না তা নিয়ে মহামারী শুরু থেকেই বিতর্ক শুরু হয়। তারপর প্রতিটি দেশের জলবায়ু ও ভূখণ্ডের সমস্ত বিতর্কের অবসান ঘটিয়ে যখন পৃথিবীব্যাপী এই রোগ ছড়িয়ে পড়ল, তখন স্পষ্ট বোঝা যায় এটি খুবই সংক্রামক।

লক্ষণ : জ্বর, ঠাণ্ডা ও মাথাব্যথা

ক্ষতিগ্রস্ত দেশ : তুর্কিস্তান, গ্রিনল্যান্ড ও কানাডা

সময়কাল : ১ বছর (১৮৮৯-১৮৯০)

কারণ : এইচ৩এন৮

কলেরার তৃতীয় মহামারী

মহামারীর নাম শুনেই চমকে যাওয়া স্বাভাবিক। ইতিহাসে সাতবার কলেরার প্রাদুর্ভাব দেখা যায়। এর মধ্যে একটি শুরু হয় ভারতে। সেখান থেকে এশিয়া, উত্তর আমেরিকা, ইউরোপ ও আফ্রিকার মতো অন্যান্য দেশে ছড়িয়ে পড়েছিল। ১৮৫৪ সালে গ্রেট ব্রিটেনে কলেরা আক্রান্ত হয়ে ২৩ হাজার লোক মারা যায়। এর মধ্যে প্রায় ১০ হাজার লোকই ছিল কেবল লন্ডনের বাসিন্দা। ভিব্রিও কলেরা নামের ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমণে এই রোগের উৎপত্তি। এর সঙ্গে দূষিত পানি বা খাবার গ্রহণ কলেরার সম্ভাবনা অনেকখানি বাড়িয়ে তোলে। আক্রান্ত হওয়ার ১২ ঘণ্টা থেকে পাঁচ দিন সময়ের ভেতরে এই রোগের লক্ষণ প্রকাশ পায়। শিশুরা ছাড়াও প্রাপ্তবয়স্করা আক্রান্ত হতে পারেন এই রোগে। আক্রান্ত হওয়ার পর রোগ নির্ণয় ও চিকিৎসা করা না হলে কয়েক ঘণ্টার ভেতরে আক্রান্ত রোগী মারা যেতে পারেন। তবে মজার বিষয় হচ্ছে শতকরা ৮০ ভাগ মানুষের ক্ষেত্রেই এই রোগ কোনো উপসর্গ দেখায় না। গুরুতর সংক্রমণের ক্ষেত্রে তীব্র ডায়রিয়া, বমি ও পায়ের খিঁচুনির মতো লক্ষণ দেখা দেয়। সে ক্ষেত্রে পানিশূন্যতা, সেপটিক শক এবং ক্ষেত্রবিশেষে মৃত্যুবরণ করতে পারে রোগী। পানিশূন্যতায় বেশি বেশি তরল খাবার ও অ্যান্টিবায়োটিকের মাধ্যমে চিকিৎসা দিয়ে এই ভয়াবহ মহামারীর কবল থেকে রক্ষা পায় মানুষ। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে, বর্তমানে কলেরার টিকা ৬৫ শতাংশ সুরক্ষা দিতে সক্ষম।

ব্রিটিশ চিকিৎসক জন স্নো কলেরার কেসস্টাডি বিশ্লেষণ করছিলেন। তিনিই আবিষ্কার করেন, দূষিত পানির মাধ্যমে এই ব্যাকটেরিয়া মানুষকে সংক্রমিত করে। এই আবিষ্কার তাৎক্ষণিকভাবে সে সময়ে হাজার হাজার লোকের জীবন রক্ষা করে। কলেরা প্রতিরোধের জন্য নজরদারি, স্যানিটেশন, স্বাস্থ্যবিধি, ঠিকঠাক দূষণমুক্ত পানি পান, সামাজিক সতর্কতা, চিকিৎসা ও কলেরা টিকার মাধ্যমে দীর্ঘদিনের কলেরা মহামারীর হাত থেকে মুক্তি পায় বিশ্ববাসী।

লক্ষণ : বমি, ঠাণ্ডা ত্বক, ডায়রিয়া ও পেশিব্যথা

ক্ষতিগ্রস্ত দেশ : এশিয়া, আফ্রিকা, ইউরোপ ও উত্তর আমেরিকা

সময়কাল : ১৪ বছর (১৮৪৬-১৮৬০)

কারণ : ভিব্রিও কলেরা

গুটিবসন্ত

ইতিহাসের স্মরণীয় মহামারীর মধ্যে গুটিবসন্ত উল্লেখযোগ্য। শুরুতে এশিয়া, ইউরোপ ও সৌদি আরবে মহামারী আকারে বিস্তার লাভ করে রোগটি। সংক্রমণের হার তখন এতই বেশি ছিল যে প্রতি ১০ জনের ৩ লোক গুটিবসন্তে আক্রান্ত হয়। রোগের মূল কারণ ভ্যারিওলা ভাইরাস। আক্রান্ত ইউরোপিয়ান অভিযাত্রীদের মাধ্যমে অন্যান্য অঞ্চলে দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে এই ভাইরাস। মেক্সিকো ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মৃত্যুহার ছিল সবচেয়ে বেশি।

গুটিবসন্ত তীব্র ছোঁয়াচে রোগ। আক্রান্ত ব্যক্তির নাক-মুখের জলীয় অংশ ও ফুসকুড়ির মাধ্যমে এই রোগ একজন থেকে অন্যজনে ছড়িয়ে পড়ে। গুটিবসন্তের প্রাথমিক লক্ষণ জ্বর, ত্বকে ফুসকুড়ি, বমি বমি ভাব, মাথাব্যথা, শরীরের পেছন ভাগে ব্যথা। জ্বর আসার পর আক্রান্ত ব্যক্তির শরীরে ২ থেকে ৪ দিনের ভেতরে শরীরে গুটি গুটি ফুসকুড়ি দেখা দেয়। সংক্রমণের গুরুতর পর্যায়ে ৩ থেকে ৪ সপ্তাহের ভেতরে হাত ও পায়ের তালুসহ শরীরের সব স্থানে ফুসকুড়ি ওঠে এবং গভীর-স্থায়ী ক্ষত দেখা দেয়। অনেক ক্ষেত্রে রোগী অন্ধও হয়ে যেতে পারে। মানুষ ছাড়া অন্য কোনো প্রাণী বা পোকামাকড় এই রোগের বাহক নয়। এই ভাইরাসের সর্বগ্রাসী আগ্রাসন বন্ধ করা সম্ভব হয় গুটিবসন্তের টিকা আবিষ্কারের মধ্য দিয়ে। ১৯৮০ সালের এক ঘোষণায় বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা জানায়, সে বছর থেকে গুটিবসন্ত পৃথিবীর বুক থেকে চিরতরে মুছে গেছে।

লক্ষণ : প্রবল জ্বর, ঠাণ্ডা, পেটব্যথা, মাথাব্যথা, তীব্র পিঠে ব্যথা, বমি

ক্ষতিগ্রস্ত দেশ : চীন, কোরিয়া, স্পেন, পর্তুগাল, ইউরোপ, ভারত, পশ্চিম আফ্রিকা, আমেরিকা ও অস্ট্রেলিয়া

সময়কাল : ১৫২০অজানা

কারণ : ভ্যারিওলা মেজর, ভ্যারিওলা মাইনর ভাইরাস

এইচআইভিএইডস

মানব ইতিহাসের সবচেয়ে বিধ্বংসী মহামারীগুলোর ভেতরে এইডস অন্যতম। ১৯৮০ সালে হিউম্যান ইমিউনো ডেফিসিয়েন্সি ভাইরাস (এইচআইভি) এবং একই সঙ্গে ভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার ফলে ইমিউনো ডেফিসিয়েন্সি সিনড্রোম (এইডস) আবিষ্কার করেন। ধারণা করা হয়, ৩ কোটি ৫০ হাজার লোক মৃত্যুর কারণ এই ভাইরাস। মধ্য ও পশ্চিম আফ্রিকার শিম্পাঞ্জি থেকে এই রোগ মানুষের মধ্যে বিস্তার লাভ করে। মানুষের রক্ত, যৌনরস ও মায়ের দুধের মাধ্যমে এ রোগ ছড়িয়ে পড়ে। রোগের লক্ষণসমূহ জ্বর, নিউমোনিয়া, ডায়রিয়া, দ্রুত ওজন কমে যাওয়া ও গলাব্যথা। এইচআইভির ওষুধ খুবই কার্যকর। বিশ্বজুড়ে বিভিন্ন দেশ বিচ্ছিন্নভাবে এই রোগ মোকাবিলা করে যাচ্ছে। এখনো সমাপ্ত না হওয়া মহামারীর ভেতরে এটি অন্যতম। ঠিক কবে এই মহামারীকে সমাপ্ত ঘোষণা করা যাবে সেটিও কেউ জানে না। যেহেতু টিকা আবিষ্কার হয়নি, তাই সামাজিক সচেতনতা ও প্রতিরোধ ব্যবস্থাই এই রোগ থেকে মানুষকে মুক্ত রাখতে পারে। যুক্তরাষ্ট্রের সরকারি তথ্য মতে, আমেরিকায় ১০ লাখ এইচআইভি রোগী আছে এবং প্রতি বছর নতুন করে ৩৮ হাজার মানুষ এই রোগে আক্রান্ত হচ্ছেন। সরকারি তথ্য অনুযায়ী, বাংলাদেশে ১১ হাজার এইচআইভি রোগী রয়েছে।

লক্ষণ : জ্বর, নিউমোনিয়া, ডায়রিয়া, দ্রুত ওজন কমে যাওয়া ও রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থা ভেঙে পড়া

ক্ষতিগ্রস্ত দেশ : বিশ্বব্যাপী

সময়কাল : ১৯৮০চলমান

কারণ : হিউম্যান ইমিউনো ডেফিসিয়েন্সি ভাইরাস

এশিয়ান ফ্লু

বিংশ শতাব্দীতে আরেকটি উল্লেখযোগ্য মহামারী ছিল এশিয়ান ফ্লু। নাম দেখে এশিয়াটিক ফ্লু আর এশিয়ান ফ্লুকে গুলিয়ে ফেলার দরকার নেই। এশিয়াটিক বা রাশিয়ান ফ্লু ঊনবিংশ শতাব্দীর মহামারী। অন্যদিকে এক শতাব্দী পর এসে পৃথিবীতে হানা দেয় এশিয়ান ফ্লু। ১৯৫৭-৫৮ সালের দিকে ইনফ্লুয়েঞ্জা ভাইরাসের সাবটাইপ এইচ২এন২ ছিল এই মহামারীর কারণ। ১৯৫৬ সালের শুরুতে চীনে এশিয়ান ফ্লুর উৎপত্তি। ১৯৫৮ সাল পর্যন্ত সেখানে এ ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব ছিল। বিশ্বব্যাপী ১১ লাখ লোকের মৃত্যুর কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছিল এই ভাইরাস। চীনের দক্ষিণ-পূর্ব অঞ্চল গুইঝো থেকে সিঙ্গাপুর, হংকং হয়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে পৌঁছে যায় এই ভাইরাস। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রেই ১ লাখ ১৬ হাজার লোক মারা যায় এশিয়ান ফ্লুতে। এ রোগের উপসর্গগুলো হচ্ছে জ্বর, শুকনো কাশি, ঠাণ্ডা লাগা, শরীর ব্যথা, দুর্বলতা, শ্বাসকষ্ট ও ক্ষুধামান্দ্য। টিকা আবিষ্কারের পরে মহামারী পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের মধ্যে আসে এবং মৃত্যুহার কমিয়ে নিয়ে আসে। এশিয়ান ফ্লু মহামারীর সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ ছিল শিশুরা। অপেক্ষাকৃত বয়স্ক ব্যক্তি, গর্ভবতী ও আগে থেকেই যাদের হৃদরোগ ও ফুসফুসের সমস্যা ছিল তাদের জন্য এশিয়ান ফ্লু ছিল সাক্ষাৎ যম। এ রোগে সবচেয়ে বেশি মৃত্যুহার ছিল লাতিন আমেরিকায়।

লক্ষণ : কাশি, দুর্বলতা, শরীর ব্যথা, ঠাণ্ডা লাগা, জ্বর ও ক্ষুধামান্দ্য

ক্ষতিগ্রস্ত দেশ : বিশ্বব্যাপী

সময়কাল : ২ বছর (১৯৫৬-১৯৫৮)

কারণ : এইচ২এন২ ভাইরাস

স্প্যানিশ ফ্লু

এক ইনফ্লুয়েঞ্জা ভাইরাসই একের পর সাবটাইপ নিয়ে বিশ্বব্যাপী বেশ কয়েকটি মহামারী ঘটিয়েছে। তবে ইনফ্লুয়েঞ্জা ভাইরাসের একটি মহামারীই সম্প্রদায়ের পর সম্প্রদায় বিলুপ্ত করে দিয়েছে, বদলে দিয়েছে মানব ইতিহাসের গতিপথ সেটির নাম স্প্যানিশ ফ্লু। প্রথম বিশ্বযুদ্ধের সময় সমস্ত পণ্য সরবরাহের রাস্তা বন্ধ হয়ে যাওয়ায় খাদ্যের অভাবে বহু সাধারণ মানুষ, শরণার্থীশিবিরের দুস্থ মানুষ ও যুদ্ধক্ষেত্রের সৈনিক অপুষ্টির শিকার হন। বিশ্বব্যাপী ৫০ কোটি লোক এই ফ্লুয়ের আক্রমণের শিকার হয়। স্প্যানিশ ফ্লু আক্রান্ত হয়ে অসংখ্য আদিবাসী সম্প্রদায় বিলুপ্তির দ্বারপ্রান্তে পৌঁছে গেছে। প্রায় ১ কোটি ৭০ লাখ থেকে ৫ কোটি লোক এই রোগে মৃত্যুবরণ করেন। ২ কোটি ৫০ লাখ মানুষ প্রথম ৬ মাসে মৃত্যুমুখে ঢলে পড়ে। স্প্যানিশ ফ্লু-ই প্রথমবারের মতো সামাজিক দূরত্বের প্রয়োজনীয়তা শিখিয়েছিল মানুষকে। এইচ১এন১ ইনফ্লুয়েঞ্জা এ ভাইরাস এই মহামারী সৃষ্টি করে।

মজার বিষয় হলো নামে স্প্যানিশ ফ্লু হলেও স্পেনে এই মহামারীর জন্ম হয়নি। প্রশ্ন আসতে পারে তাহলে কীভাবে স্পেন এই মহামারীর সঙ্গে জড়িয়ে গেল? দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের শেষভাগে এই মহামারী ছড়িয়ে পড়তে থাকে। ১৯১৮ সালের মার্চ মাসে যুক্তরাষ্ট্রের ক্যানসাসে এই রোগের সূচনা হয়। এপ্রিল মাসে ফ্রান্স, জার্মানি ও যুক্তরাজ্যে এই রোগ ছড়িয়ে পড়ে। ১৯১৮ সালে বসন্তে স্পেনের রাজধানী মাদ্রিদে এই ফ্লুর প্রাদুর্ভাব শুরু হয়। কিন্তু যুদ্ধকালীন সময়ে যেকোনো খারাপ খবর ধামাচাপা দিয়ে রাখা ছিল যেকোনো সরকারের প্রধান নীতি। সে সময়ে প্রাথমিকভাবে আক্রান্ত কোনো দেশই ফ্লু প্রাদুর্ভাবের কথা স্বীকার করছিল না। বিশ্বযুদ্ধে অংশগ্রহণ না করা নিরপেক্ষ দেশ হিসেবে স্পেনের পত্রিকাগুলো স্বাধীনভাবে মহামারী পরিস্থিতি বিশ্লেষণ করা শুরু করে। বিশ্বযুদ্ধ পরিস্থিতিতে স্পেনের জন্য কাল হয়ে দাঁড়ায় বিষয়টি। নিজের দেশের অবস্থা এড়িয়ে গিয়ে আশপাশের সমস্ত দেশ এই ফ্লুকে স্প্যানিশ ফ্লু হিসেবে ডাকা শুরু করে। অন্যান্য দেশের নামিদামি গণমাধ্যমও ইচ্ছাকৃতভাবে এই মহামারীর দায় স্পেনের ঘাড়েই চাপিয়ে দেয়। মানুষের মুখে মুখে তখন এ ফ্লু মহামারীর নাম হয়ে দাঁড়ায় স্প্যানিশ ফ্লু।  চিকিৎসা কেন্দ্রে অতিরিক্ত ভিড়ের কারণে স্কুল, বেসরকারি বাড়ি ও অন্যান্য ভবনকে অস্থায়ী হাসপাতাল হিসেবে ব্যবহার করা হয়। স্বাস্থ্য কর্মকর্তারা সামাজিক দূরত্ব ও কোয়ারেন্টাইন আরোপ করেন এবং মানুষকে মাস্ক পরার নির্দেশ দেন। ভাইরাসের আগ্রাসন শেষ হওয়ার আগ পর্যন্ত থমকে যায় জনজীবন, ব্যবসা-বাণিজ্য। কভিড-১৯-এর সঙ্গে এর কিছু মিল থাকলেও তৎকালীন বৈশ্বিক অবস্থা ছিল একেবারে ভিন্ন। একদিকে প্রথম বিশ্বযুদ্ধের প্রভাব, অন্যদিকে এই মহামারী। একের পর এক সুস্থ শিশু-কিশোর মারা যাচ্ছে, উজাড় হয়ে যাচ্ছে এক একটি এলাকার জনপদ। শতাব্দীর ভয়াবহ মহামারীর কথা উঠলে নিঃসন্দেহে এটি প্রথম দিকে থাকবে। 

লক্ষণ : স্বাভাবিক ফ্লু’র মতো সব লক্ষণ

ক্ষতিগ্রস্ত দেশ : চীন, আমেরিকা, ইংল্যান্ড ও স্পেন

সময়কাল : ১ বছর (১৯১৮)

কারণ : এইচ১এন১।

উম্মাহ২৪ডটকম: এসএএ

উম্মাহ পড়তে ক্লিক করুন-
https://www.ummah24.com

দেশি-বিদেশি খবরসহ ইসলামী ভাবধারার গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে ‘উম্মাহ’র ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।