Home ইতিহাস ও জীবনী আল্লামা জুনায়েদ বাবুনগরী (রহ.): একজন সৎসাহসী রাহবার এবং অনন্ত অনুপ্রেরণার উৎস

আল্লামা জুনায়েদ বাবুনগরী (রহ.): একজন সৎসাহসী রাহবার এবং অনন্ত অনুপ্রেরণার উৎস

।। মুহাম্মদ এমদাদুল্লাহ আল-হাবিবী ।।

আমরা সবাই এ সুন্দর পৃথিবীতে বাঁচতে চাই। কেউই এ পৃথিবী ছেড়ে যেতে চাই না। কিন্তু মৃত্যুর শ্বাশত বিধানকে কেউ অতিক্রম করতে পারেনি। এমন একজন আলেম সম্পর্কে লিখছি, যার সম্পর্কে এতো তাড়াতাড়ি চোখের পানি ফেলতে ফেলতে কলম ধরতে হবে তা ভাবিনি। তিনি হলেন আল্লামা জুনায়েদ বাবুনগরী রহ. স্ত্রী, পাঁচ মেয়ে, একজন ছেলে আর হাজার হাজার শিষ্য এবং অগণিত ভক্ত শুভানুধ্যায়ীকে কাঁদিয়ে চির নিদ্রায় শায়িত হলেন জ্ঞান-বিজ্ঞানের সাগর এ গুণী ব্যক্তিত্ব। তাঁর বর্ণাঢ্য জীবনের কোন্ দিকটি নিয়ে এ ক্ষুদ্র লেখায় আলোকপাত করবো, তা ভেবে সিদ্ধান্ত নিতে পারছি না। তিনি এমন একজন বড় মাপের ও মহান ব্যক্তিত্বের আলেম ছিলেন যে, তাঁর জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে কিছু না কিছু অবদান রেখে গেছেন যা খুবই তাৎপর্যপূর্ণ।

এ ক্ষণজন্মা আধ্যাত্মিক মহাপুরুষ ১৯৫৩ সালের ৮ ই অক্টোবর চট্টগ্রামের ফটিকছড়ি থানার প্রসিদ্ধ গ্রাম বাবুনগরে এক ধার্মিক সম্ভ্রান্ত পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। মায়ের দিক থেকে তার বংশ পরম্পরা হযরত আবূ বকর সিদ্দীক রাযি. পৌঁছে। শৈশব থেকেই মহান আল্লাহ তাআলা হযরত বাবনু গরী রহ. কে অসাধারণ যোগ্যতা দান করেছিলেন। শৈশবেই পবিত্র কুরআনের হিফজ সম্পন্ন করে তার ওস্তায হাফেজ আযহারুল ইসলাম সাহেবের কাছে এক বৈঠকে শুনিয়েছিলেন।

তিনি প্রাথমিক শিক্ষা লাভ করার পর দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া উপমহাদেশের সর্ববহৎ আরবী বিশ্ববিদ্যালয় দারুল উলূম মুঈনুল ইসলাম হাটহাজারীতে ভর্তি হয়ে ১৯৭৬ সালে দাওরায়ে হাদীস সমাপ্ত করেন। এরপর তিনি ১৯৭৬ সালে হাদীসের সর্বোচ্চ সনদ লাভের জন্য পাকিস্তানে সফর করেন এবং জগদ্বিখ্যাত হাদীস বিশারদ আল্লামা ইউসুফ বান্নুরী রহ. এর শিষ্যত্ব গ্রহণ করেন। দুই বছর হাদীসের উপর পড়াশোনা করে তাঁর কাছ থেকে হাদীসের পিএইচডি ডিগ্রী নিয়ে দেশে ফিরেন।

সচেতন মানুষ এবং মনস্তত্ত্ববিদগণ অবগত আছে, শুধু কিতাব বা গ্রন্থ পাঠের মাধ্যমে মানুষের মানসিক পরিবর্তন সাধন করা যায় না। মানসিক পরিবর্তনের জন্য বিশেষ প্রশিক্ষণের দরকার হয়। বুজুর্গদের সংস্পর্শে আত্মিক পরিশুদ্ধির ব্যবস্থা পূর্ববর্তী লোকদের মধ্যে বিদ্যমান ছিল। কেননা এ পদ্ধতিতে ইলম ও মারেফাতের যে নিগূঢ় তত্ত্ব অর্জর করা যায়, বাহ্যিক শিক্ষায় সেটা সম্ভবপর নয়।

আল্লামা জুনায়েদ বাবুনগরী রহ. শিক্ষাজীবন সমাপ্ত করে কিছুদিন আধ্যাত্মিক সাধনা করেন। তিনি আব্দুল আজীয রায়পুরীর খানকায় কিছুদিন অবস্থান করে তার হাতে বাইয়াত গহ্র ণ করেন এবং তার থেকে রুহানী ফয়েজ লাভ করেন। এবং তিনি আব্দুস সাত্তার ফতেয়াবাদী , শায়খুল ইসলাম আল্লামা আহমদ শফী রহ. এবং আল্লামা সুলতান যওক নদভীর কাছ থেকে খেলাফত লাভ করেন। এরা সবাই হযরতের যোগ্যতা, তাকওয়া এবং উচ্চ মর্যাদা সম্পর্কে বিশেষভাবে অবগত ছিলেন।

আদর্শ শিক্ষক

তিনি একজন সফল শিক্ষক হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করার পাশাপাশি আকাবিরদের আদর্শকে মনেপ্রাণে লালন করতেন। এবং তার জন্য যে কোনো পক্র ার ত্যাগ স্বীকার করতে কুণ্ঠিত হোননি। শিক্ষাদান কাজে তাঁর খ্যাতি দূর- দুরান্তে বিস্তার লাভ করেছিল। হযরত বাবুনগরী রহ. নিয়মিত দরস (ক্লাস) নেওয়ার জন্য নিরলস পরিশ্রম করা এবং দরসে পাঠদানে তাঁর চমৎকার উপস্থাপন সকল ছাত্রকে মুগ্ধ করতো। এতে হযরতের দরসের সকল ছাত্ররা পূর্ণ আগ্রহ-উদ্দীপনা নিয়ে উপস্থিত থাকতো। তাঁর জীবনের শেষ দরসগুলোতেও ছাত্রদের উপস্থিতির কমতি দেখা যায়নি।

আল্লামা জুনায়েদ বাবুনগরী রহ. এর রচিত গ্রন্থ সংখ্যা প্রায় ত্রিশটি। এর মধ্যে ছোট ছোট পুস্তিকা এবং বড় বড় প্রবন্ধ রয়েছে। যার মধ্যে এমন তথ্য সন্নিবেশিত হয়েছে যে, যেসব তথ্যাবলী অনেক বড় বড় গ্রন্থেও পাওয়া যায় না। সমসাময়িক অনেক সমস্যা এবং তার সমাধান তাঁর রচিত গ্রন্থে পাওয়া যায়। তাঁর গ্রন্থাবলীর ভাষা ও প্রকাশভঙ্গি ছিলো অত্যন্ত সাবলীল।

আল্লামা জুনায়েদ বাবুনগরী রহ. আরবী সাহিত্যের প্রতি বিশেষ আগ্রহী ছিলেন। তাঁর আরবী লেখা ছিলো উচ্চমানের সাহিত্যগুণ সমৃদ্ধ। বহির্বিশে^র বহু পত্রিকায় হযরতের আরবী পব্র ন্ধসমহূ প্রকাশিত হয়েছে। যে ছাত্রের মধ্যে আরবী সাহিত্যের যোগ্যতার প্রকাশ লক্ষ্য করতেন, তাকে নিয়মিত উৎসাহ দিতেন। বাংলাদেশের মাতৃভাষা উর্দূ না হলেও হযরত বাবুনগরী রহ. উর্দূ বাক্যরীতি ও ব্যকরণসমৃদ্ধ উর্দূ ভাষা উপস্থাপনে বিরল পারদর্শী ছিলেন। পাঠদানকালে উর্দূ কবিতাসমূহ অত্যন্ত চমৎকার ভঙ্গিমায় পড়ে শোনাতেন। বাবুনগরী রহ. এর উর্দূ লেখাও আরবীর মতো সাহিত্যমান সমৃদ্ধ ছিলো। হযরত রহ. এর একাধিক গ্রন্থ উর্দূ ভাষায় রচিত। পাকিস্তান ও ভারতের খ্যাতনাম উর্দূ পত্রিকাসমূহে হযরতের একাধিক উর্দূ প্রবন্ধ প্রকাশিত হয়েছে।

কাদিয়ানী ফেতনা মসু লমানদের দ্বীন ও ইসলামের উপর সুস্পষ্ট আঘাত হেনেছে। আল্লামা জুনায়েদ বাবুনগরী রহ. কাদিয়ানী ফেতনার বিরুদ্ধে আজীবন লড়াই করেছেন। লেখার ও বক্তৃতার মাধ্যমে দেশব্যাপী কাদিয়ানী ফেতনার ফলপ্রসূ মোকাবেলা করেছেন। কুফুরী মতবাদ পোষণকারী কাদিয়ানীদেরকে সরকারীভাবে কাফের ঘোষণা করার জন্য হযরত রহ. সরকারের কাছে বারবার জোড় দাবী জানিয়েছেন।

প্রচলিত ফেতনাসমূহের মধ্যে ‘আহলে হাদীস মতবাদ’ অন্যতম। তারা হাদীস অনুসরণের নাম দিয়ে মুসলিম উম্মাহর মাঝে বিভ্রান্ত ছড়াচ্ছে। বাংলাদেশে মাযহাব মানার বিরুদ্ধে পক্র াশ্য ষড়যন্ত্র শুরু হয়েছে। বিভিন্নভাবে মাযহাব বিরোধী আন্দোলনকারীরা সক্রিয় ভূমিকা পালন করে যাচ্ছে। মাযহাব মান্নকারী সমগ্র বিশ্বের মুসলমানকে ভ্রান্ত বলে দাবী করেছে। অথচ ইমাম চতুষ্ঠয় প্রবর্তিত মাযহাব এর কোনো একটি মান্য করে চলা দলীল প্রমাণসহ ওয়াজিব বলে সাব্যস্ত হয়েছে। মাযহাব না মানা প্রবৃত্তি পূঁজার নামান্তর বলে প্রমাণিত হয়েছে।

আল্লামা জুনায়েদ বাবুনগরী রহ. প্রচলিত আহলে হাদীস ফেতনার বিরুদ্ধে ছিলেন সদা সচেতন। তিনি কুরআন হাদীসের আলোকে ছাত্রদের সামনে আহলে হাদীস ফেতনার মুখোশ উন্মোচন করতেন। তাদের বিভ্রান্তিকর প্রশ্ন ও সংশয়সমূহের দাঁতভাঙ্গা জবাব প্রদান করতেন। একাধিক প্রবন্ধ লিখে শিক্ষিত মহলকে আহলে হাদীস ফেতনা সম্পর্কে সতর্ক করেছেন। বক্তব্যের মাধ্যমে সর্বসাধারণের কাছে আহলে হাদীসের ফেতনাগুলো তুলে ধরার প্রয়াস চালাতেন।

সাইয়্যেদ আবূল আ’লা মওদূদী নবী, রাসূল, সাহাবী, তাবেয়ী, সালফে সালেহীন ও আলেমদের বিরুদ্ধে ধ্বংসাত্মক সমালোচনা করে মসু লিম সমাজে ফেতনার দার উন্মক্ত করেছেন। তার রচিত গ্রন্থ যেমন ‘খেলাফত ও মুলূকিয়্যাত, তাজদীদ ও এহইয়ায়ে দ্বীন ইত্যাদী পড়লে বুঝা যায় যে, কী পরিমাণ ফেতনা এসবের মাধ্যমে ছড়িয়েছে। এসব কথা আমি কারো অনুভূতিতে আঘাত দেওয়ার জন্য বলি না বরং উম্মতকে জাগ্রত করার লক্ষ্যে বলি। হযরত জুনায়েদ বাবুনগরী রহ. লিখনী ও বক্তব্যের মাধ্যমে মওদূদী সাহেবের ত্রুটি-বিচ্যুতি লোচনা করতেন। মওদূদী সাহেবের ক্রুটি-বিচ্যুতিগুলো থেকে একটি হলো, দাঁড়ি সম্পর্কে মওদূদী সাহেব বলেন যে, দাঁড়ি একমুষ্টি পরিমাণ রাখার প্রমাণ নেই। আল্লামা জুনায়েদ বাবুনগরী রহ. দাঁড়ি ও ইসলাম নামক গ্রন্থ রচনা করে মওদূদী সাহেবের এই ভ্রান্ত মতের দাঁতভাঙ্গা জবাব দিয়েছেন।

হাদীস হলো কুরআনের পর দ্বিতীয় গুরুত্বপূর্ণ মূল উৎস। এ ব্যাপারে সমস্ত উম্মত ঐক্যমত পোষণ করেন। প্রথম শতাব্দি পর্যন্ত সবধরণের সহীহ হাদীসকে দলীল হিসেবে গ্রহণ করা হয়। প্রথম শতাব্দির পর হাদীস অস্বীকারের ফেতনা প্রকাশ পায়। এই ফেতনাবাজেরা বানিজ্যিক সুদকে হালাল ফতোয়া দিয়েছে। পর্দার বিধান অস্বীকার করেছে। নবী সা. এর মো’জেযাগুলোকে অস্বীকার করেছে এবং বহু পাশ্চাত্য মতবাদকে বৈধতার সার্টিফিকেট দিয়েছে। আল্লামা জুনায়েদ বাবুনগরী রহ. এই ফেতনার বিরুদ্ধে দরসদানকালে বুকভরা মুহাব্বাত নিয়ে প্রিয় নবীর হাদীসের কথা বলতেন। এবং তাদের এই ভ্রান্ত মতবাদকে জোরালো ভাবে খন্ডন করতেন। আর হাদীস দলীল হওয়া প্রমাণ করতেন।

আরও পড়তে পারেন-

সকল ক্ষেত্রে ইসলাম ধর্মের নিজস্ব রীতি-নীতি ও স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট রয়েছে। কিন্তু কিছু মানুষ যখন অজ্ঞতাবশত কিংবা পার্থিব কোনো স্বার্থে বিজাতীয় সংস্কতির অনুসরণ করে, তখন তা কুসংস্কারে রূপ নেয়। ইসলাম ধর্মে অনুপ্রবেশ করা এজাতীয় ভিন্ন ধর্মীয় রীতি-নীতি ও নব উদ্ভাবিত বিষয়কে বেদআত বলে অবিহিত করা হয়। আধ্যাত্মিকতার নামে মুসলিম সমাজে অনেক বেদআতের প্রচলন রয়েছে। হযরত বাবুনগরী রহ. সর্বপ্রকার বেদআত-কুসংস্কারের ব্যাপারে অত্যন্ত কঠোর ছিলেন।

দুনিয়া বিমুখতা ও তাকওয়া

অর্থনৈতিক স্বাচ্ছন্দ তেমন ছিলো না। অথচ নীতি, আদর্শ ও বিসর্জন তাঁর জীবন অভিধানে ছিল পূর্ণরূপে। আমার দেখা ঘটনা-

হযরত রহ. কারাবরণ করার পর কিছুদিন অতিবাহিত হলে হযরতের শারীরিক অবনতি হয়, ফলে চট্টগ্রাম প্রাইভেট হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়। আমরা কয়েকজন হুজুরকে দেখতে গেলাম। তখন বোরকা পরিহিতা একজন মেয়ে হাতে পাঁচশত টাকার একটি বান্ডিল হযরতকে দিতে চাইলো। হযরত রহ. তার পরিচয় জিজ্ঞাসা করলেন। এবং তার স্বামী সম্পর্কে জানতে চাইলে মেয়েটি জানালো যে, তার স্বামী মৃত্যুবরণ করেছে। তার স্বামীর রেখে যাওয়া কিছু নিজস্ব দোকান রয়েছে। উক্ত দোকানসমূহের ভাড়া দিয়ে সংসার চলে। সে হযরত রহ. কে বললো, আমি আপনার চিকিৎসার জন্য কিছু টাকা নিয়ে এসেছি। হযরত রহ. টাকাগুলো নিতে অসম্মতি প্রকাশ করলেন। এভাবে বারবার অনুরোধ করা সত্ত্বেও হযরত রহ. টাকা গ্রহণ করতে সম্মত হোননি। তারপর মেয়েটি সেই টাকাগুলো হযরতের বিছানায় রেখে চলে যেতে চাইলে, হযরত রহ. টাকাগুলো ছঁড়ে ফেলে দেন।

আদর্শিক বিশ্বাস

হযরত রহ. এর আদর্শিক বিশ্বাস, অঙ্গিকার এবং আমানতদারী এত সুদৃঢ় ছিলো, যা নিয়ে কারো প্রশ্ন তোলার সুযোগ নেই। আমি হযরত রহ. কে একাধিকবার বলতে শুনেছি, সদা-সর্বদা একটি নীতি ও আদর্শের উপর অবিচল থাকতে হবে। আরো বলতে শুনেছি যে, মানুষ আলেম-ওলামাদেরকে বিশ্বস্ত মনে করে। আর বিশ্বাস করে যে, তারা কখনও খেয়ানত বা আত্মসাৎ করবে না।

মোটকথা, আল্লামা জুনায়েদ বাবুনগরী রহ. একজন সফল আলেমে দ্বীন, সফল শিক্ষক বিশেষভাবে হাদীস জগতে তার জ্ঞান ছিলো কিংবদন্তিতুল্য। যা কেবল দৃষ্টান্ত হিসেবে আগামী প্রজন্মের কাছে অধিক সমাদৃত হবে। যখনই আমি একাকী কোনো কিছু কল্পনা করি, সত্যিই আমার প্রিয় পিতৃতুল্য শায়েখের প্রতিকৃতি চোখের সামনে বারংবার উদ্ভাসিত হয়।

লেখক: সিনিয়র শিক্ষক, জামিয়া ইসলামিয়া ওবাইদিয়া নানুপুর, ফটিকছড়ি, চট্টগ্রাম।

উম্মাহ২৪ডটকম: এমএ

উম্মাহ পড়তে ক্লিক করুন-
https://www.ummah24.com

দেশি-বিদেশি খবরসহ ইসলামী ভাবধারার গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে ‘উম্মাহ’র ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।