Home ধর্মতত্ত্ব ও দর্শন রোগ-ব্যধিমুক্ত সমাজ গড়তে সুন্নাহ মেনে পরিচ্ছন্ন চলতে হবে: জুমার বয়ান

রোগ-ব্যধিমুক্ত সমাজ গড়তে সুন্নাহ মেনে পরিচ্ছন্ন চলতে হবে: জুমার বয়ান

।। আল্লামা হাফেজ নাজমুল হাসান কাসেমী ।।

[রাজধানীর অন্যতম বিখ্যাত দ্বীনি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান জামিয়া মাদানিয়া বারিধারা’র সাবেক ভারপ্রাপ্ত পরিচালক, উত্তরা জামেয়াতুন নূর আল-কাসেমিয়ার প্রতিষ্ঠাতা পরিচালক ও উত্তরা ১২নং সেক্টর বায়তুন নূর জামে মসজিদের খতীব আল্লামা হাফেজ নাজমুল হাসান কাসেমী শুক্রবার (৩ সেপ্টেম্বর) জুমায় মুসল্লীদের উদ্দেশ্যে যে গুরুত্বপূর্ণ বয়ান করেছেন, বিষয়বস্তুর গুরুত্ব বিবেচনা করে বয়ানের হুবহু অনুলিপি উম্মাহ পাঠক সমীপে উপস্থাপন করা হল -সম্পাদক]

الحمد لله وكفى وسلام على عباده الذين اصطفى، أما بعد:

সুপ্রিয় উলামায়ে কেরাম ও মুসল্লিয়ানে ই’যাম, আল্লাহ রব্বুল আলামীন জুমআর নামায আদায়ের জন্য একত্রিত হওয়ার তাওফীক দান করেছেন, সে জন্য শোকরিয়া আদায় করি, আলহামদুলিল্লাহ। কুরআনে কারীমের একটি ছোট আয়াত তেলাওয়াত করছি- ” وما أرسلناك الارحمة للعالمين “। হুজুর (সা.)এর আগমন সমস্ত জগতের জন্য রহমত স্বরূপ। আমাদের সকলের জীবন  তখনই কামিয়াব হবে, যখন আমরা জীবনের সর্বস্তরে রাসূল (সা.)এর শিক্ষা ও আদর্শকে ধারণ করতে সক্ষম হবো। প্রতিটি মুমিনের জীবনে এটা সু-নিশ্চিত করতে হবে।

রাসূলুল্লাহ (সা.)এর শিক্ষা এত ব্যাপক যে, তিনি সামাজিক জীবনে চলার জন্য যে সমস্ত বিধি-নিষেধের কথা বলে গিয়েছেন এবং যে সকল আদর্শের উপর চলতে পথ দেখিয়ে গেছেন, যদি আমরা আমাদের সামাজিক জীবনে, পারিবারিক জীবনে, ব্যক্তি জীবনে, রাষ্ট্রিয় জীবনে এসব বাস্তবায়ন করতে পারি, তাহলে আমাদের দুনিয়া ও আখেরাতের জীবন কামিয়াবীর জন্য নতুন করে কিছু আর শেখার বাকী থাকবে না।

হযরত রাসূলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেছেন-

الله نظيف يحب النظافة، الله جميل يحب الجمال، نظفوا أفنية بيوتكم

অর্থাৎ- ‘আল্লাহ তাআলা সুন্দর, তাই তিনি সৌন্দর্যকে পছন্দ করেন। আল্লাহ তাআলা পরিচ্ছন্ন, তাই তিনি পরিচ্ছন্নতাকেই পছন্দ করেন। তোমরা নিজেদের বাড়ি-ঘর এবং আঙ্গিনা পরিচ্ছন্ন রাখো’।

নবী (সা.) ইরশাদ করেছেন- نظفوا أفنية بيوتكم ‘হে মানব জাতি, তোমাদের বাড়ির আঙ্গিনা পরিষ্কার রাখো’। চৌদ্দশত বছর আগে রাসূলুল্লাহ (সা.) আমাদেরকে এ আদেশ করেছেন যে, বাড়ির আঙ্গিনা, আশপাশ পরিষ্কার রাখর জন্য। নবী (সা.) ইরশাদ করেছেন, ‘ঘুমানোর পূর্বে খাবারের পাত্রগুলো ঢেকে রাখো’।’ নবী সা: আমাদেরকে সরাসরি হাদিসের মাধ্যমে আরো আদেশ করেছেন যে, রাত্রে যখন ঘুমাবে চেরাগ বা বাতি নিভিয়ে ঘুমাবে। বাতি জ্বলিয়ে ঘুমাবে না।

তৎকালীন যামানায় আরবে বর্তমানের মতো বৈদ্যুতিক বাতি ছিল না। ছিল যাইতুনের তেলে জ্বালানো কুপি-বাতি। আমরা যেটাকে বলি, চেরাগ, কুপি, শলাকা ইত্যাদি বলি। একধরনের ছোট্ট একটি ডিব্বার ভেতরে তেল দিয়ে, ভিতরে একটা সালতা ডুবিয়ে, সালতার মাথাটা একটু বের করে তার মাথায় আগুন দেওয়া হতো। এতে আস্তে আস্তে তেল উপরে উঠতো ও আগুনে শিখা আলোকিত করতো। আমাদের দেশে সচরাচর মানুষ কেরাসিনের তেল দিয়ে বাতি জ্বলায়। আগেকার যুগে কেউ কেউ আবার সরিষার তেল দিয়েও বাতি জ্বালাত।

হাদীসে বলা হয়েছে, রাতে যখন ঘুমাবে বাতিটা নিভিয়ে ঘুমাও, জ্বালিয়ে রেখে ঘুমিয়ো না। পেয়ারে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কীভাবে পরিচ্ছন্নতা, পবিত্র ও স্মার্ট থাকতে হয়, তা সাড়ে চৌদ্দশত বছর আগে শিখিয়ে গেছেন। আল্লাহ পাক কুরআন শরীফে ইরশাদ করেছেন, إن الله يحب المتطهرين। এখানে যারা আলেম ও মাদ্রাসা ছাত্র রয়েছেন তারা জানেন, একটা হল مُطهرين, আরেকটা হল, طاهرين আরেকটা হল متطهرين। পবিত্রতা এই তিন শব্দে প্রকাশ করা যায়।

আয়াতে আল্লাহ তাআলা যদি বলেতেন, ان الله يحب الطاهرين ‘আল্লাহ সাধারণ পবিত্রতাকারীকে পছন্দ করেন’ এবং সেটা না বলে যদি বলতেন ان الله يحب المطهرين বাবে তাফয়ীলের মাসদার থেকে, তাহলে এর মর্ম হত আল্লাহ পাক জৌলুসময় পবিত্রতাকে পছন্দ করেন। কিন্তু তা বলেননি। বরং শব্দে বর্ণ আরেকটা বাড়িয়ে আল্লাহ পাক বলেছেন, ان الله يحب المتطهرين।

আরবি ভাষার ব্যাকরণে একটা নিয়ম আছে, বর্ণ যদি বেড়ে যায়, অর্থের মধ্যে ব্যাপকতা ও পূর্ণতা আসে। এই আয়াতের মর্ম হলো, আল্লাহ পাক অতি অতি পবিত্রতাকে পছন্দ করেন। নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের যুগে মসজিদে কুবা-র পাশে মুনাফেকরা ‘মসজিদে যেরার’ যখন প্রতিষ্ঠা করে, মুনাফিকরা রাসুলের নিকট দাওয়াত নিয়ে আসলো, “ইয়া রাসূলাল্লাহ, বৃষ্টি-বাদলে, অন্ধকারে মসজিদে কুবায় আসা যায় না। তাই আমরা আরেকটা মসজিদ নির্মাণ করেছি। আপনি যদি গিয়ে মসজিদটা উদ্বোধন করে দিয়ে আসতেন, কতই না উত্তম  হতো।

নবী (সা:) – عالم الغيب ছিলেন না। ওয়াদা দিলেন, আগামী ওমুক তারিখে আমি তোমাদের মসজিদে গিয়ে উদ্বোধন করবো। তোমরা প্রস্তুতি নিয়ো। মুনাফিকরা চলেগেলো। বাস্তবে মসজিদটি এই উদ্দেশ্যে বানানো হয়নি যা হুজুর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে প্রকাশ করা হয়েছে। মসজিদটি নির্মাণ করেছিল মুনাফিকরা তাদের শলাপরামর্শ ও কূটচাল প্রণয়নের গোপন ঘাঁটি হিসেবে ব্যবহার করার জন্য। রোমের বাদশাহর সঙ্গে গোপন আঁতাতে এটা নির্মাণ করা হয়। রোমকরা ও মদীনার মুনাফিরা অন্যান্য অধিবাসিকে রাসূলুল্লাহ (সা.)এর বিরুদ্ধে ক্ষেপিয়ে তুলে আক্রমণ করার অসৎ পরিকল্পনা করছিল। আর তাদের মিশনের ঘাঁটি হিসেবে ব্যবহার করার জন্য কথিত এই মসজিদটি নির্মাণ করেছিল। রোম থেকে লোকজন আসবে, এই মসজিদে থাকবে। এবং শলা-পরামর্শ চলবে, কীভাবে মদিনায় আক্রমণ করে মুসলমানদের পরাজিত করা যায়। হুযূর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের গায়েবের ইলম না থাকায় তিনি ওয়াদা করেছিলেন যে, আমি তোমাদের মসজিদে যাবো।

একমাত্র আল্লাহ হলেন, علم الغيب و الشهادةতথা গায়েব বা অদৃশ্যের খবর সম্পর্কে অবগত। কাজের আল্লাহ পাক মুনাফিকদের গোপন দুরভিসন্ধি জানতেন। তাই ওরা চলে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে জিব্‌রাইল আমিনকে রাসূল (সা.)এর কাছে পাঠালেন- ‘খবরদার! لا تقم فيه أبدا হে নবী! আপনি কখনোই সেই মসজিদে যাবেন না। সেটা বানানো হয়েছে আল্লাহ এবং আল্লাহর রাসুলের বিরূদ্ধে যুদ্ধের পরিকল্পনার জন্য। আপনি সেই মসজিদে যাবেন না। বরং আপনি যাবেন ঐ মসজিদে যে মসজিদের ভিত্তি হচ্ছে তাকওয়া এবং ইখলাসের উপর। মসজিদে কুবার যে মুসল্লীরা আছে তাদের দিল ও শরীর পরিষ্কার। পবিত্রতার ব্যাপারে তারা অত্যন্ত সতর্ক অবস্থা অবলম্বন করে। فيه رجال يحبون ان يتطهروا ঐ মসজিদের মুসল্লীরা অতি পবিত্রতাকে পছন্দ করেন।

মসজিদে কুবার মুসল্লীরা পছন্দ করে বেশি বেশি পবিত্রতা অর্জন করতে। আপনি সেই মসজিদে যান। নবী (সা.) এই সংবাদ সম্পর্কে অবগত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে হযরত আলী ইবনে আবু তালিব (রাযি.)কে একদল সাহাবী দিয়ে পাঠালেন, ‘যাও মসজিদে যেরার গুঁড়িয়ে দাও। মসজিদে যেরার জ্বালিয়ে দেওয়া হলো। আর মসজিদে কুবায় রাসুল (সা.) ঐ তারিখে তাশরিফ নিলেন। তখন থেকে নিয়ে মদিনায় যতদিন ছিলেন, সপ্তাহে একদিন মসজিদে কুবায় গিয়ে দুই রাকাত শুকরিয়ার নামায আদায় করতেন। এই আমল কখনো বন্ধ হয়নি। এই জন্য হাজি সাহেবগণ এখনো মাদিনায় যিয়ারতে গেলে মসজিদে কুবায় গিয়ে সুন্নাত হিসেবে দুই রাকাত নামায আদায় করেন।

রাসূল (সা.) জিজ্ঞাসা করলেন, মসজিদে কুবার মুসল্লিগণ কি বিশেষ পবিত্রতা অর্জন করে, যে কারণে আল্লাহ তাআলা তাদের পবিত্রতা অর্জনকারী হিসেবে ঘোষণা করেছেন? উত্তরে তারা জানালেন, আমরা তো নতুন কিছু করি বলে জানি না। স্বাভাবিকভাবে নামাযের জন্য যেভাবে অজু করতে হয় সেভাবে অজু করি, শরীর অপবিত্র হলে গোসল করতে হয়, আমরা গোসল করি। এইতো এগুলো করি। নবী সা: বললেন, না এ ছাড়া আর কি কর? তারা বললেন- হ্যাঁ আমরা দুইটা বস্তুর দ্বারা পবিত্রতা অর্জন করি ইস্তিঞ্জার পরে। আরব হচ্ছে পানি সঙ্কটের দেশ। পানি কম এই জন্য অধিকাংশ মানুষ শুধু ঢিলা ব্যবহার করতো। শুধু ঢিলা-কুলুব ব্যবহার জায়েয আছে। ভালভাবে যদি কেউ সুন্নাত মোতাবেক ঢিলা ব্যবহার করে বড় ইস্তিঞ্জার জন্য তিনটি, ছোট ইস্তিঞ্জার জন্য একটি, খুব ভাল করে ব্যবহার করে, তাহলে পবিত্রতা অর্জন হয়ে যাবে। অথবা কেউ যদি শুধু পানির দ্বারা ইস্তিঞ্জা করে তাহলেও পবিত্রতা অর্জন হয়ে যাবে। কিন্তু কুবাবাসি বললেন, আমরা ইসস্তিঞ্জায় পানি ও ঢিলা উভয়টি ব্যবহার করে থাকি। নবী (সা.) বললেন, তোমাদের পবিত্রতার এই সতর্কতার জন্যই আল্লাহ তোমাদের পবিত্রতার কথা কুরআনে উল্লেখ করেছেন। কাজেই তোমরা এই দুই জিনিসকে আঁকড়ে ধর।

সুপ্রিয় মুসল্লীয়ানে কেরাম, যত বেশি আপনাদের পবিত্রতা অর্জন হবে, ইবাদত ততবেশি আল্লাহর নিকট গ্রহণযোগ্য হবে। একদা নবী (সা.) এক কবরের সন্নিকট দিয়ে যাচ্ছিলেন। তখন তিনি দাঁড়িয়ে গেলেন এবং সুরা ফাতিহাসহ কিছু দোয়া পাঠ করলেন। আল্লাহ পাক তাঁর দোয়ার বরকতে কবরের আযাব মাফ করে দিলেন।

আরও পড়তে পারেন-

নবী (সা.) উপস্থিত সাহাবীদের উদ্দেশ্যে বললেন, দেখ, তার কবরের আযাব বড় কোন কারণে হচ্ছে না। তার যিনা, অপবাদ, শরাব পান ইত্যাদির কোন গুনাহ্‌ নাই। বরং তার সামান্য একটি অবহেলা ছিল। সে যখন পাহাড়ে বা মাঠে উট চরাতে যেত, তখন দুধ দোহনের সময় অনেক উঁচু থেকে উটের পেশাব পাথরের উপর পড়ায় তার ছিঁটা তার গায়ে লাগত। কিন্তু সে এগুলো খেয়াল করত না। অনেক সময় দেখা যেত পাহাড়ের পাথর ভিজা, সে সেই ভিজা পাথরের উপরে বসে পড়তো। তার চিনন্তা করা উচিত ছিলো, এই মরুভূমিতে পানি আসলো কোথা থেকে? কিন্তু এটা যে উটের পেশাব সেটা সে খেয়াল করত না। তো এই অসতর্কতার কারণে তার কাপড়ে পেশাবের ছিঁটা, লেদ এইগুলো লেগে যেত। আর মরুভূমিতে পানির সংকটের কারণে সে শুধু অযু করেই নামায আদায় করে নিতো। পবিত্র থাকায় সামান্য এই অসতর্কতার কারণে তার কবরে আযাব হচ্ছিল।

সুতরাং আমাদের অনেকে পরিচ্ছন্নতার ব্যাপারে উদাসীন থাকি। এই সামান্য অবহেলার কারণে আমার ইবাদাত নষ্ট হয়। আর এই অপবিত্রতার দিকে খেয়াল না করার কারণে অপরিচ্ছন্নতায় আমরা ডুবে থাকি। যার পরিণামে আমাকে সাময়িকভাবে ভোগ করতে হয়। যখন সাময়িক পরিণামের জন্য কোন মহামারি আসে তখন সতর্কতা বেড়ে যায়। স্কুল কলেজ বন্ধ কেন? বলে, মহামারী বেড়ে গেছে। আল্লাহ বলেন, ظهرالفساد فى البر والبحر بما كسبت أيدي الناس ‘জল-স্থলের বিপদগুলো মানুষের হাতের কামাই।’ 

বিভিন্ন খাবার দোকানের পাশে চিপসের প্যাকেট বা ময়লার স্তুপ হয়ে থাকে। আমরা বাড়ী পরিচ্ছন্ন রাখার জন্য ময়লাগুলো রাস্তায় ফেলি। দেখা যায়, আমাদের অনেকে গাড়িতে বসে খাওয়া-দাওয়া করে সেই খাবারের প্যাকেট রাস্তায় ছুঁড়ে ফেলি। আমি মনে করি, আমার বাড়ি তো অনেক দূর; এতে আমার আর কী হবে! আরেক জন যখন আমার বাড়ির সামনে দিয়ে যাওয়ার সময়ও ময়লা ফেলে সেও মনে করে আমার বাড়ি অনেক দূরে, এখানে তো নয়। যখন আমার বাসার সামনে ময়লা দেখি তখন আমি প্রতিবেশিকে বলি, দেখেন ভাই কেমন কমনসেন্স তার! অথচ আমি কিন্তু ১০ কি.মি. দূরে ঠিক এই কাজটাই করে এসেছি।

হাদিসের মধ্যে আসছে ঈমানের ادنى (সর্বনিম্ন) একটি শাখা হল, إماطة الأذى عن الطريق ‘রাস্তা থেকে কষ্টদায়ক বস্তু সরানো’। যদি এটি ঈমানের অংশ হয়ে থাকে তাহলে আমরা এই أدنى অংশটা করতে রাজি আছি কিনা? কিন্তু আমরা কি করি? উল্টাটা করি। ময়লা ফেলতে রাস্তার মাঝ বরাবর ফেলি। এরপরে আমরা কি করি আমাদের বাসায় কিছু পরিত্যক্তি জায়গা থাকে, আমরা সেখানে ময়লা ফেলি। সেই ময়লার মধ্যে বৃষ্টির পানি পড়ে মশার জন্ম হয়। ফলে এখন আমাদের দিনের বেলায়ও ঘুমাতে মশারি টানাতে হয়। অথচ আমরা সকলে যদি যার যার দায়িত্ব ও কর্তব্যবোধের জায়গা থেকে পরিচ্ছন্ন থাকতাম, তাহলে ডেঙ্গুর বিপদ হয়তো আসতো না।

আল্লাহ পাক নবী (সা.)কে দুই জাহানের রহমত স্বরূপ পাঠিয়েছেন। এই পর্যন্ত কত পত্রিকায় আসছে যে, গ্যাসের চুলা জ্বালানো ছিল, তার উপরে রশিতে কাপড় ঝুলানো শুকানোর জন্য। যখন কাপড়টা শুকিয়ে হালকা হয়ে গেছে, বাতাসে কাপড়টা চুলার উপরে পড়ে আগুন লেগে গেছে। পরে এতজন মারা গেছে। চৌদ্দশত বছর পূর্বে নবী সা: বলে গিয়েছেন, দরজাটা বন্ধ করছো কিনা, খাবারের পাত্র ঢাকছো কিনা, বাতি নিভিয়েছো কিনা! যদি নবী (সা.)এর এই আদেশগুলো মানতাম, তাহলে এই অনাকাঙ্খিত দূর্ঘটনা ও রোগবালাইয়ের শিকার হতে হতো না।

হাদিসের মধ্যে এসেছে, তোমরা খাবারের আগে ও পরে হাত ধৌত কর। হাদিসে পাকে আছে, অযুতে হাত ধোয়া, মুখ ধোয়া, মাথা মাসেহ করা, পা ধোয়ার ফরযের পূর্বে আগে নবী (সা:) দ্বীনে মুহাম্মাদ দ্বীনে হানিফ আমলের মধ্যে সুন্নাত। আরে ভাই পাগলেন মত সুন্নাত আদায় করা দরকার অযুর আগে হাতটা তিনবার ধৌত করো, অযুর আগে যেটা দিয়ে তুমি পবিত্রতা অর্জন করবে সেটা আগে ধুয়ে নেও। তারপর তুমি কুলি করার জন্য মুখে পানি দাও। মিসওয়াক কর, মিসওয়াক দাঁত পরিষ্কার করে। তাহলে তুমি এক রাকাতে ২৭ রাকাতের সওয়াব পাবে। নাকের ভিতরে আঙ্গুল প্রবেশ করে ভালভাবে পরিষ্কার কর। নাক পরিষ্কারে ডান হাত ব্যবহার করো না। অযুতে গুনাহগুলো ধুয়ে মুছে সাফ হয়ে যাবে।

হযরত সালমান ফারসী (রাযি.)এর সামনে একবার হুজুর (সা.) গাছের মরা ডাল ধরে ঝাঁকি মারলেন। ডালের সব পাতা ঝরে পড়ল। তখন নবী (সা.) বললেন, সালমান! কেন এমনটা করলাম জিজ্ঞেস করলা না কেন? তখন তিনি বললেন, কেন এমনটা করলেন- ইয়া রাসূলাল্লাহ! রাসূল (সা.) উত্তরে বললেন, এই মরা ডালের পাতাগুলো যেমন ঝরে পড়ে গেল, এক মুসলমান যখন ইবাদাতের নিয়তে অযু করে তখন ঐ পানিতে গুনাহগুলোও এইভাবে ঝরে পড়ে যায়।

সুপ্রিয় মুসল্লীগণ, দেখুন- এভাবে যদি আমরা দিনে পাঁচবেলা এবং তাহাজ্জুদ ও চাশতের সময় অযু করি, তাহলে আমাদের গুনাহসমূহও এভাবে ঝরে পড়ে পবিত্র হওয়াটা আমরা আশা করতে পারি।

সুতরাং পবিত্রতার ক্ষেত্রে আমাদের মুসলমানদের যেমন অযু আছে, জগতের আর কোন ধর্মীয় মতবাদে এমন ঘোষণা আছে কি? মানুষ যেন মানুষের দ্বারা কষ্ট না পায় এই জন্য পেয়ারে নবী (সা.) বলেছেন, শুক্রবার গোসল করে অমসজিদে এসো। কারণ, এই দিনে মানুষের অনেক ভিড় থাকে, বড় জমায়েত হয়। এতে যেনো তোমার শরীর থেকে গন্ধ ছড়িয়ে অন্যের কষ্টের কারণ না হয়। জুমায় আসার পূর্বে খুশবু ব্যবহার করো। জুমার এই তিনটি সুন্নত- ১) গোসল করা ২) সুন্দর পোষাক পরা ৩) খুশবু লাগানো। এই তিনটি সুন্নাত রাখা হয়েছে যাতে আমার দ্বারা অন্যের কোনরূপ কষ্ট না হয়। এটা ইসলামের নববী সুন্নাত।

নবী (সা.) দুইটা জিনিস পছন্দ করতেন- ১. খুশবু, ২. ফুল। নবী (সা.) বলেছেন, ততক্ষণ পর্যন্ত তুমি খাঁটি মুসলমান হতে পারবে না, যতক্ষণ পর্যন্ত তোমার দ্বারা অন্য মুসলমান কোনরূপ কষ্ট পায়। যদি তোমার দ্বারা প্রতিবেশি কষ্ট পায়, তাহলে তোমার ঈমান কামেল নয়। তোমার জানালা দিয়ে থুথু, কাগজ ও ময়লা ফেললে অন্য মুসলমান কষ্ট পেলে তুমি মুমিনে কামেল নয়।

আমার বা আপনার ছাদের পরিত্যক্ত ফুলের টব ও আবর্জনা থেকে যে মশাগুলো তৈরি হল, সেটা দেখা তো সিটি কর্পোরেশনের দায়িত্ব না। সেটা দেখার দায়িত্ব আমার বা আপনার। হ্যাঁ, তবে যে সমস্ত কাজের সাথে সিটি কর্পোরেশনের দায়িত্ব আছে, সেসব কাজে তাদেরকে সজাগ হতে হবে। এইভাবে যদি সমন্বয় করা হয়, তাহলে আমরা দেশটাকে সুন্দরভাবে গড়ে তুলতে পারব। এতে সকলেই উপকৃত হবো, শান্তিপূর্ণ সমাজ গড়তে পারব। সুতরাং আজই আমরা সংকল্প করি, জীবনের সকল ক্ষেত্রে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন ও পবিত্রতার সাথে চলব এবং এমন কোন কাজ করবো না, যা অন্যের জন্য ক্ষতিকর হয়। এতে আমরা নিজেরাও সুস্থ্য ও সুন্দর থাকতে পারব এবং সুন্দর ও আদর্শবান সমাজও গড়ে উঠবে। মহান আল্লাহ আমাদেরকে সকলকে জীবনের সব পর্যায়ে সুন্নাহ অনুযায়ী চলার তাওফীক দান করুন। আমিন।

অনুলিখনে: উমায়ের

উম্মাহ২৪ডটকম: এমএ

উম্মাহ পড়তে ক্লিক করুন-
https://www.ummah24.com

দেশি-বিদেশি খবরসহ ইসলামী ভাবধারার গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে ‘উম্মাহ’র ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।