Home ইতিহাস ও জীবনী হাটহাজারী মাদ্রাসার শায়খে সানী আল্লামা শোয়াইব জমিরি’র সংক্ষিপ্ত জীবনবৃত্তান্ত

হাটহাজারী মাদ্রাসার শায়খে সানী আল্লামা শোয়াইব জমিরি’র সংক্ষিপ্ত জীবনবৃত্তান্ত

উপমহাদেশের দ্বিতীয় সর্ববৃহৎ দ্বীনি শিক্ষা নিকেতন দারুল উলূম মুঈনুল ইসলাম হাটহাজারী মাদ্রাসার শাইখুল হাদিস (সানী) হযরত আল্লামা হাফেয শোয়াইব জমিরি (হাফি.) ১৯৬২ইং সালে চট্টগ্রামের হাটহাজারী থানার অন্তর্গত ফটিকা গ্রামের এক সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন।

পিতৃকুল ও মাতৃকুল উভয় দিক দিয়ে তিনি সু-উচ্চ বংশীয় সম্ভ্রান্ত ব্যাক্তিত্ব। তার দাদা কুতুবুল আলম হযরত শাইখ জমীর উদ্দিন (রহ.) ছিলেন উপ মহাদেশর দ্বিতীয় বৃহত্তম ইসলামি বিদ্যাপীঠ জামিয়া আহলিয়া দারুল উলূম হাটহাজারী মাদ্রাসার প্রধান প্রতিষ্ঠাতা পৃষ্ঠপোষক।

তিনি ফকিহুল হিন্দ, ইমামে রাব্বানী, কুতুবুল ইরশাদ হযরত আল্লামা রশিদ আহমদ গাঙ্গুহি (রহ.)এর অন্যতম প্রধান খলিফা ছিলেন। বলা হয়ে থাকে, বাংলাদেশের সকল কওমি মাদ্রাসা মুলত: তারই ইশারা ইঙ্গিতে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে।

হযরত মাওলানা হাফেয শোয়াইব জমিরি (হাফি.)’র পিতা ক্বারি মোহাম্মদ মোস্তাফা (রহ.) ছিলেন তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তান বর্তমান বাংলাদেশের বিখ্যাত ক্বারিদের মধ্যে একজন। তাঁর নানা হযরত মাওলানা আব্দুর রহমান (রহ.) ছিলেন ফটিকছড়ি কাজিরহাট মাদ্রাসার প্রতিষ্ঠাতা।

সিলসিলায়ে নসব: হযরত মাওলা হফেয শোয়াইব জমিরি বিন ক্বারি মোস্তাফা বিন কুতুবুল আলম শাইখুল মশায়েখ হযরত মাওলানা জমিরউদ্দীন বিন নুরুদ্দীন বিন ওয়াজ মীর। বলা হয়ে থাকে, ওয়াজ মীর থেকে হযরতের সিলসিলায়ে নসব হযরত আলী (রাযি.)এর সাথে মিলিত হয়েছে।

শিক্ষাজীবন:
পিতৃকুল ও মাতৃকুলের এরূপ পবিত্র রক্তধারার অধিকারী হযরত আল্লামা শোয়াইব জমিরি (হাফি.) শৈশব থেকেই বুদ্ধি ও প্রতিভার আকর হিসাবে নিজেকে প্রকাশ করতে থাকেন। মাত্র দশ বছর বয়সে হযরত আল্লামা শোয়াইব জমিরি (হাফি.) পবিত্র কুরআন হিফজ করেন। এরপরেই দারুল উলূম হাটহাজারী মাদ্রাসায় ইবতেদায়ী থেকে দাওরা হাদিস (মাষ্টার্স)পর্যন্ত অত্যন্ত সুনাম ও সু-খ্যাতির সাথে অধ্যয়ন শেষে ১৯৭৯ সালে শিক্ষা জীবনের দ্বিতীয় ধাপ সমাপ্ত করেন। এরপর দারুল উলূম হাটহাজারীতেই তিনি তাখাসসুস ফী উলুমিল কুরআন ( ডক্টরেট) কৃতিত্বের সাথে শেষ করেন।

আরও পড়তে পারেন-

কর্ম জীবন: শিক্ষাজীবন শেষ করার পর ১৯৮১ সালে কৈয়গ্রাম মাদ্রাসায় শিক্ষকতার মাধ্যমে তার কর্মজীবনের সূচনা হয়। এর পর তিনি নানুপুর মাদ্রাসায় মুহাদ্দিস হিসেবে যোগদান করেন। পরবর্তী তিনি ১৯৯৩ সন থেকে ২০০০ সাল পর্যন্ত নাজিরহাট বড় মাদ্রাসায় শাইখুল হাদিসের সম্মান নিয়ে বোখারী শরীফের দরস দেন। ২০০০ সালে বিখ্যাত আলেমে-দ্বীন শাঈখুল হাদিস আল্লামা আব্দুল আজিজ ( রহ.)এর পরমার্শে এবং হাটহাজারী মাদ্রাসার সাবেক মহাপরিচালক শাইখুল ইসলাম আল্লামা শাহ আহমদ শফী (রহ.)এর অনুরোধে হাটহাজারী মাদ্রাসার সিনিয়র শিক্ষক হিসাবে যোগদান করেন এবং ইলমে ফুনুনাতের প্রধান নিযুক্ত হন। পরবর্তীতে হযরতকে শায়খুল মাকুলাত ওয়াল মানকুলাত উপাধি প্রদান করা হয়।

একজন যোগ্য, দক্ষ, বিজ্ঞ, বিচক্ষণ আদর্শিক শিক্ষক হিসাবে হযরতের তুলনা কেবল তিনি নিজেই। তাঁর সাবলীল কণ্ঠ, গাম্ভীর্য এবং অসাধারণ ব্যক্তিত্ব তাঁর প্রতি ছাত্রদেরকে গভীরভাবে আকৃষ্ট করে। ছাত্রদের কিতাব বুঝানোর এবং তাঁদের মন ও অনুভূতিতে প্রভাব তৈরির দারুণ মোহনীয় ক্ষমতা রয়েছে হযরতের। তাঁর পাঠদান পদ্ধতি ছাত্রদের মনে এননই তীব্র অনুভুতির সৃষ্টি করে যে, তাঁর ক্লাসের সময় ছত্রদের মাঝে নীরব নিস্তব্ধতা বিরাজ করে। শিক্ষকতায় অসাধারণ পান্ডিত্যের জন্যে তিনি ছাত্রদের মাঝে ব্যাপক জনপ্রিয়তা অর্জন করতে সক্ষম হয়েছেন।

ইতিপূর্বে হযরত আল্লামা শোয়াইব জমিরী (হাফি.) দারুল উলূম হাটহাজারী মাদ্রাসায় হাদিসের কিতাব মিশকাত শরীফ, নাসায়ী শরীফ, তিরমিযী শরীফের মত গুরুত্বপূর্ণ হাদিসের কিতাব পড়িয়েছেন অত্যন্ত দক্ষতার সাথে। বর্তমানে হাদিসের সর্বোচ্চ কিতাব বুখারী শরিফ পড়াচ্ছেন। জামিয়া আহলিয়া দারুল উলূম হাটহাজারীর মজলিশে শূরা ও জামিয়া কর্তৃপক্ষ সম্প্রতি হযরতকে জামিয়ার ‘শাইখে সানী’ উপাধিতে ভূষিত করেন।

তার লিখিত কিতাবসমূহঃ একজন ক্ষুরধার লেখক হিসাবেও হযরত আল্লামা শোয়াইব জমিরী (হাফি.) অসাধারণ প্রতিভার সাক্ষর রেখেছেন। তাঁর লিখিত ছুল্লুমুল উলূমের শরাহ (ব্যাখ্যাগ্রন্থ) মিফতাহুল উলূম প্রকাশিত হওয়ার পর এটি বাংলাদেশ, ভারত, পাকিস্তান সহ সমগ্র এশিয়া মহাদেশের মাদ্রাসা ছাত্রদের মাঝে ব্যাপক সাড়া জাগিয়েছে এবং বিখ্যাত আলেমগণ, মোধাবী জ্ঞান পিপাসু ছাত্রদের ব্যাপক প্রশংসা কুড়িয়েছে এই ব্যাখ্যা গ্রন্থটি।

এছাড়াও তাঁর শরহে আকায়েদের শরাহ ( ব্যাখ্যাগ্রন্থ) “জমীরুল আক্বায়েদ” আরেকটি গ্রন্থ খুব শিগগিরই প্রকাশিত হবে।

খেলাফত লাভ: শায়খুল হাদিস হযরত আল্লামা আব্দুল আজীজ সাহেব (রহ.) থেকে তিনি খেলাফত প্রাপ্ত হন।

মহান আল্লাহ হযরত আল্লামা হাফেয শোয়াইব জমিরী (হাফি.)কে সুস্থতা ও দীর্ঘ জীবন দান করুন এবং তাঁর হৃদয়ের গভীর হতে উত্থিত ইলমুল ওয়াহীর জ্ঞান এবং রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের পবিত্র হাদিসের আলোকরস্মি দ্বারা তাঁর ছাত্রদের সকলকে দীর্ঘ থেকে দীর্ঘ যুগ ধরে উপকৃত করুন। মহান আল্লাহ হযরতের সম্মান এবং মর্যাদাকে উত্তরোত্তর বৃদ্ধি করুন। আমিন।

উম্মাহ২৪ডটকম: এমএ

উম্মাহ পড়তে ক্লিক করুন-
https://www.ummah24.com

দেশি-বিদেশি খবরসহ ইসলামী ভাবধারার গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে ‘উম্মাহ’র ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।