Home ইতিহাস ও জীবনী হযরত আবু বকর সিদ্দিক (রাযি.)এর রাসূল প্রেম

হযরত আবু বকর সিদ্দিক (রাযি.)এর রাসূল প্রেম

।। জুনাইদ আহমদ ।।

মুমিনের জীবনে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের প্রতি মুহব্বতের গুরুত্ব অপরিসীম। রাসূল (সা.) এর মুহাব্বত ছাড়া ঈমানের পূর্ণতা আসে না। হুব্বে রাসূল বা রাসূল (সা.) এর মুহাব্বত পরিপূর্ণ মুমিন হওয়ার জন্য পূর্বশর্ত।

হযরত আনাস (রাযি.) থেকে বর্নিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, তোমাদের কেউ ততক্ষণ পর্যন্ত মুমিন হতে পারবে না, যতক্ষণ না আমি তার নিকট তার পিতা-মাতা, সন্তান-সন্ততি ও সমস্ত মানুষ থেকে প্রিয় হব। (সহীহ বুখারী, হাদীস ১৫)

সাহাবায়ে কেরামগণ রাসূল (সা.) কে নিজেদের প্রাণের চাইতেও অধিক মুহাব্বত করতেন। যুদ্ধের ময়দানে রাসূল (সা.) কে রক্ষার জন্য চতুর দিক বেষ্টনী তৈরি করে শত্রুপক্ষের তীরের সামনে নিজেদের বুককে ঢাল হিসেবে পেতে দিতেন। রাসূল প্রেমের যেই উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত সাহাবায়ে কেরামগণ রেখে গেছেন ইতিহাসে এর জুরি নেই।

হযরত আয়েশা রাদিআল্লাহু তাআ’লা আনহা থেকে বর্ণিত আছে,রাসূল (সা.) এর দাওয়াত পেয়ে ইসলাম গ্রহণকারী সাহাবায়ে কেরাম এর সংখ্যা যখন আটত্রিশ হলো তখন হযরত আবু বকর সিদ্দিক (রাযি.) প্রকাশ্যে ইসলামের দাওয়াত দেয়ার জন্য রাসূল (সা.) নিকট আবেদন করলেন। রাসূল (সা.) বললেন” ইয়া আবা বাকর, ইন্না ক্বলিল অর্থাৎ হে আবু বকর! আমরা সংখ্যায় এখনো কম।এখনি প্রকাশ্যে ইসলামের দাওয়াত দেয়ার সময় হয়নি৷ হযরত আবু বকর সিদ্দিক (রাযি.) এ ব্যাপারে রাসূল (সা.) কে পীড়াপীড়ি করতে থাকেন। এরই মধ্যে আল্লাহ তায়া’লা প্রকাশ্যে দাওয়াত দেওয়ার আদেশ দেন। এরপর রাসূল (সা.) জনসম্মুখে ইসলামের দাওয়াত দেন। রাসূল (সা.) কাবা প্রাঙ্গণে বসে যান এবং আবু বকর সিদ্দিক (রাযি.) দাঁড়িয়ে ভাষন দেন।

মক্কার মুশরিকরা প্রকাশ্যে ইসলামের দাওয়াত এবং কাবা প্রাঙ্গণে আবু বকর সিদ্দিক (রাযি.) এর ভাষণকে সহ্য করতে পারেলো না। তারা ক্ষোভে ফেটে পড়লো। আবু বকর সিদ্দিক (রাদি.) কে নির্মমভাবে প্রহার করলো। উতবা বিন রবীআ আবু বকর সিদ্দিক (রাযি.) এর পেটের উপর বসে বেদম ভাবে চেহারায় প্রহার করলো। চেহারা এতো বেশি ক্ষত হলো যে, চেহারা দেখে আবু বকর সিদ্দিক (রাদি.) কে চেনাই যাচ্ছিল না।

বনু তাইম খবর পেয়ে ছুটে আসলো। মুশরিকদের কবল থেকে আবু বকর সিদ্দিক (রাযি.) কে রক্ষা করলো। নির্যাতনের ফলে অবস্থা এতটাই গুরুতর ছিলো যে, একটি কাপড়ে পেছিয়ে ঘরে নিয়ে এলো। নির্যাতনের চিত্র দেখে বনু তাইম প্রায় নিশ্চিত ছিলো যে, আবু বকর সিদ্দিক (রাদি.) মারা গেছেন। আবু বকর সিদ্দিক (রাযি.)এর পিতা আবু কুহাফা গোত্রের লোকদের নিয়ে জ্ঞান ফেরানোর চেষ্টা করতে লাগলেন। দিনশেষে জ্ঞান ফিরে এলো। জ্ঞান ফিরে আসা মাত্রই হযরত আবু বকর সিদ্দিক (রাযি.) জিজ্ঞাসা করলেন- রাসুলুল্লাহ (সা.) এর কী অবস্থা? এ কথা শোনে বনু তাইম রেগে চলে গেলো।

হযরত আবু বকর সিদ্দিক (রাযি.) এর মা উম্মে খায়র আসলেন। আবু বকর সিদ্দিক (রাযি.) পুনরায় জিজ্ঞাসা করলেন- রাসূল (সা.) এর কী খবর? উম্মে খায়র উত্তর দিলেন, তার ব্যাপারে আমার জানা নেই। আবু বকর সিদ্দিক (রাযি.) মাকে অনুরোধ করে বললেন, তিনি যেন উম্মে জামীল বিনতে খাত্তাবের নিকট গিয়ে রাসূল (সা.) এর খবর জিজ্ঞাসা করে আসেন। উম্মে খায়র উম্মে জামীল বিনতে খাত্তাবের নিকট গেলেন।

আরও পড়তে পারেন-

উম্মে জামীল বিনতে খাত্তাব বললেন- আপনি রাজি থাকলে আমি আপনার ছেলে কাছে যেতে চাই। উম্মে খায়র সাথে করে উম্মে জামীল বিনতে খাত্তাবকে নিয়ে এলেন। উম্মে জামীল এসে দেখলেন আবু বকর সিদ্দিক (রাযি.) মারাত্মক আহত অবস্থায় নির্জীব হয়ে পড়ে আছেন।

আবু বকর সিদ্দিক (রাযি.) উম্মে জামীলকে জিজ্ঞাসা করলেন রাসূল (সা.) এর কী অবস্থা, তিনি কেমন আছেন এবং কোথায় আছেন ? উম্মে জামীল বললেন- রাসূল (সা.) এর অবস্থা ভালো। তিনি ভালো আছেন এবং দ্বারে আরকমে আশ্রয়ে আছেন৷ হযরত আবু বকর সিদ্দিক (রাযি.) বললেন- আল্লাহর কসম, রাসুলুল্লাহ (সা.) কে দেখার আগ পর্যন্ত আমি কোন পানাহার গ্রহণ করবো না।

আবু বকর সিদ্দিক (রাযি.) এর মা উম্মে খায়র, এবং উম্মে জামীল বিনতে খাত্তাব রাত হওয়ার অপেক্ষায় রইলেন। যাতে মানুষের চলাচল বন্ধ হলে আবু বকর সিদ্দিক (রাযি.) কে নিয়ে রাসূল (সা.) এর কাছে যেতে পারেন। রাত গভীর হওয়ার পর তারা রওয়ানা হলেন। আবু বকর সিদ্দিক (রাদি.) এতটাই দূর্বল ছিলেন যে দু’জনের ঘাড়ে ভর করে চলতেও কষ্ট হচ্ছিল।এভাবে তারা রাসূল (সা.) এর খেদমতে পৌছলেন।

আবু বকর সিদ্দিক (রাযি.)কে দেখে রাসূল (সা.) খুশী হলেন, চুম্বন করলেন। কিন্তু মুশরিকদের নির্যাতনের কারণে ল এমন দূরবস্থা দেখে রাসূল (সা.) ভীষণ বেদনার্ত হলেন। রাসূল (সা.)এর বিষন্নতা দেখে হযরত আবু বকর সিদ্দিক (রাদি.) বললেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ (সা.) আমার পিতা- মাতা আপনার উপর কুরবান হোক, আপনার চেহারা দেখার পর আমার আর কোন কষ্টই বাকি নেই। আপনার চেহারা দেখে আমি সমস্ত কষ্ট ভুলে গেছি। (সীরাতে নববিয়্যাহ- ইবনে কাসীর- ১০৫-১০৬)।

হযরত আনাস (রাযি.) থেকে বর্নিত, তিনি বলেন- একবার কাফেররা রাসূল (সা.) এর উপর এতো বেশি নির্যাতন করলো যে, রাসূল (সা.) বেহুঁশ হয়ে গেলেন।আবু বকর সিদ্দিক (রাযি.) তাঁকে বাঁচাতে অগ্রসর হলেন এবং উচ্চ স্বরে বলেন-ধ্বংস হও তোমরা! তোমরা কি এমন একজন ব্যক্তিকে হত্যা করতে চাচ্ছো যিনি বলেন – আমার রব আল্লাহ। কথা শুনে কাফেররা নবীজী (সা.) কে ছেড়ে দিয়ে আবু বকর সিদ্দিক (রাযি.) এর উপর নির্যাতন চালায়।

মুশরিকদের নির্যাতন সহ্য করতে না পেরে বেহুঁশ হওয়ার পরও হুঁশ ফিরে আসা মাত্রই রাসূল (সা.) এর অবস্থা জানার জন্য এতটা ব্যাকুল হওয়া প্রমাণ করে আবু বকর সিদ্দিক (রাযি.) কে কতটা মুহাব্বত করতেন। রাসূল (সা.) এর প্রতি এতো অধিক পরিমাণে মুহাব্বত থাকা সত্বেও আবু বকর সিদ্দিক (রাযি.) সহ অন্যান্য সাহাবায়ে কেরাম রাসূল (সা.) এর জন্ম উপলক্ষে রবিউল আওয়াল মাসে কুরআন-সুন্নাহ বিরোধী ঈদে মীলাদুন্নবী নামে কোন খুশী উদযাপন করেননি।

আমাদের জন্য রাসূল (সা.) কে মুহাব্বত করার মাপকাঠি হলো সাহাবায়ে কেরামের মুহাব্বত। সাহাবায়ে কেরাম রাসূল (সা.) যেভাবে মুহাব্বত করতেন আমাদেরকেও সেই মাপকাঠি অনুযায়ী মুহাব্বত করতে হবে। অতি মুহাব্বত দেখাতে গিয়ে সাহাবায়ে কেরামের রাসূল প্রেমের মাপকাঠিকে বাদ দিয়ে নিজেদের পক্ষ থেকে কোন আবিস্কার করলে তা হবে পরিত্যাজ্য।

– জুনাইদ আহমদ, শিক্ষার্থী, উচ্চতর ইসলামি আইন গবেষণা বিভাগ, দারুল উলুম হাটহাজারী, চট্টগ্রাম।

উম্মাহ২৪ডটকম: এমএ

উম্মাহ পড়তে ক্লিক করুন-
https://www.ummah24.com

দেশি-বিদেশি খবরসহ ইসলামী ভাবধারার গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে ‘উম্মাহ’র ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।