Home শিক্ষা ও সাহিত্য ‘উম্মাহর পথপ্রদর্শক ও নেতৃত্ব দিতে গভীর অধ্যাবসায়ে ইলম অর্জন করতে হবে’

‘উম্মাহর পথপ্রদর্শক ও নেতৃত্ব দিতে গভীর অধ্যাবসায়ে ইলম অর্জন করতে হবে’

দক্ষিণ এশিয়ার অন্যতম বৃহৎ ইসলামী শিক্ষাকেন্দ্র আল জামিয়াতুল আহলিয়া দারুল উলূম মুঈনুল ইসলাম হাটহাজারী’র প্রধান মসজিদ জামে বায়তুল কারীমে সাপ্তাহিক তরবিয়তী মজলিসে শিক্ষার্থীদের উদ্দেশ্যে জামিয়ার সিনিয়র উস্তাদ মুফতি রাশেদুল ইসলাম দিক-নির্দেশনামূলক গুরুত্বপূর্ণ বয়ান পেশ করেন। বয়ানের সারসংক্ষেপ তরুণ ও শিক্ষার্থী পাঠকদের উদ্দেশ্যে নিম্নে উপস্থাপন করা হল-

মাসনুন খুতবার পর উপস্থিত ছাত্রদের উদ্দেশ্যে দ্বীনি ইলমের গুরুত্ব ও ফযীলত বর্ণনা করতে গিয়ে মুফতি রাশেদুল ইসলাম বলেন, “প্রিয় ছাত্র ভাইয়েরা! আমরা দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চল হতে এশিয়া খ্যাত এই উম্মুল মাদারিসে এমন এক ইলম অর্জনের জন্য উপস্থিত হয়েছি যে, ইলম বান্দা আর আল্লাহর মাঝে সম্পর্ক স্থাপন করে দেয়। যে ইলমের মাধ্যমে সিরাতে মুস্তাকিমের পরিচয় ও তার উপর চলা সম্ভব হয়। যে ইলম আপনার আমার চিন্তা-চেতনা আদত-অভ্যাস ও চাল-চলন দুরস্ত করে দেয়। যে ইলম তার ধারক বাহককে সম্মানের সর্বোচ্চ চূড়ায় পোঁছে দেয়। হযরত আদম (আ.) ইলমের সুবাদে সকল ফেরেস্তার “মাসজুদ” হয়েছেন। আর হযরত সুলাইমান (আ.) হয়েছিলেন তৎকালীন সমগ্র পৃথিবীর প্রতাপশালী বাদশা, যাকে আল্লাহ তা’আলা সকল প্রাণীর ভাষা বোঝার জ্ঞান দান করেছিলেন।

দারুল উলূম হাটহাজারী মাদ্রাসার প্রধান মসজিদ জামে বায়তুল কারীমে ছাত্রদের সমাবেশে বয়ান করছেন মুফতি রাশেদুল ইসলাম। ছবি- উম্মাহ।

হযরত ইউসুফ (আ.) অন্যায়ের শিকার হয়ে গোলামি ও অন্ধকার প্রকোষ্টের কারা জিন্দেগি থেকে মুক্তি লাভ করে মিশরের সর্বোচ্চ সম্মানের আসনে আসীন হয়েছিলেন ইলমের বদৌলতে। পরিশেষে বিশ্বনবী হযরত মুহাম্মদ (সা.) ইমামুল আউয়ালীন ওয়াল আখিরিন’র মত নজিরবিহীন মর্যাদা লাভ করেছেন এই ইলমের কারণে। কেননা, হাদীসে এসেছে-

أعطيت علم الأولين و الآخرين

এই দ্বীনি ইলম অন্বেষণে যারা ছুটে বেড়ায় তাদের পিছনে আল্লাহর সাজানো জান্নাত ছুটে বেড়ায়।

যেমন, হযরত আবদুল্লাহ ইবনে ওমর (রাযি.) বলেন-

من كان في طلب العلم كانت الجنة في طلبه

এই ইলমের ধারক-বাহক ও অন্বেষনকারীরাই হলো আল্লাহর পছন্দনীয় ও নির্বাচিত বান্দা, যারা নবীগণের সরাসরি উত্তরসূরী হয়ে থাকেন।

আরও পড়তে পারেন-

ছাত্র ভাইয়েরা! এই আসমানী ও দ্বীনি ইলম হাসিলে কোনো অবস্থাতেই অলসতা অমনোযোগী এবং হীনমন্যতার শিকার হওয়া যাবে না। বরং গভীর অধ্যবসায়ী ও কঠোর মেহনতী হয়ে সময়ের সঠিক মূল্যায়নের মাধ্যমে এই ইলম আত্মস্থ ও হৃদয়ঙ্গম করতে হবে। যেহেনী কমজোরী ও ধীশক্তির দুর্বলতার বাহানা দিয়ে ইলম অন্বেষণের পথ থেকে ছিটকে পড়লে হবে না। বরং মজবুত মনোবল ও দৃঢ় প্রত্যয়ে মেহনত-মুজাহাদা জারি রেখে লক্ষ্য অর্জনে সম্মুখ পানে অবিচল গতিতে এগিয়ে যেতে হবে।

আকাবিরদের জিবনীর মধ্যে বহু মনিষীর জীবনীতে এমন অবাক করা তথ্য পাওয়া যায়, যারা জেহেনী দুর্বলতার কারণে পড়ালেখা বন্ধ করে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন; কিন্তু পরক্ষণে চিন্তা করে দেখলেন যে, না! আমাদের কাজ হল চেষ্টা করে যাওয়া। সুফল দেওয়া এবং যোগ্য করে তোলা আল্লাহর কাজ। যেমন, বলা হয়- السعي منا والإتمام من الله  এরই ভিত্তিতে তারা আল্লাহর উপর ভরসা করে পুরোদমে মেহনত, তাকরার, মোতালায়া শুরু করে দিলেন, যার ফলশ্রুতিতে পরবর্তীতে তারাই জগত বিখ্যাত অনুসরণীয় ব্যক্তিত্ব হয়েছেন।

যেমন,  ইমামুল মুহাদ্দিসীন আল্লামা ইবনে শিহাব জুহরী (রাহ.) ও সা’য়াদ উদ্দীন তাফতাজানী (রাহ.) পাঠ্য জীবনের শুরু লগ্নে যেহেনি দূর্বলতার দরুণ পড়া লেখা হতে হাত গুটিয়ে নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন; কিন্তু পরবর্তীতে সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করে পূর্ণ মনোযোগের সাথে কঠোর মেহনতের মাধ্যমে পড়া লিখায় মশগুল হয়ে পড়েন। পরবর্তীতে তাদের বহুমুখী খেদমত ও মাকাম যা হওয়ার তা সকলের কাছে সুস্পষ্ট। পরমাণুবোমার প্রথম জনক ও আবিষ্কারক বিজ্ঞানী আইনষ্টাইন বলেন, যার মেধা একভাগ; আর চেষ্টা -মেহনত  নিরানব্বই ভাগ, তাহলে তার ফলাফল হবে শতভাগ সফলতার।

ছাত্র ভাইয়েরা! চলমান সময়ের নাজুকতা ও ইসলামবিরোধী বহুমুখী ষড়যন্ত্রের কঠিন অবস্থা সামনে রেখে আমাদেরকে আকাবির-আসলাফের মাকামে উত্তীর্ণ হতে হবে। আকাবিরদের নীতি-নৈতিকতা, আদর্শ-আখলাক, ইলমী জযবা ও গভীরতায় আমাদেরকে উজ্জীবিত হয়ে সময়ের ত্রাণকর্তা ও ইসলামবিরোধী ষড়যন্ত্রের প্রতিরোধক হতে হবে। ষড়যন্ত্র ও ফেতনা যত বড় হয়; তার প্রতিবাদ ও  প্রতিরোধে অগ্রণী ভূমিকা পালনকারীও তত বড় বিদ্বান ও মহান হতে হয়। সুতরাং উম্মাহর সঠিক নেতৃত্ব ও পথপ্রদর্শকের গুরু দায়িত্ব পালন করতে হলে গভীর অধ্যাবসায়ের সাথে ইলম অর্জনে মনোযোগী হতে হবে।

আল্লাহ তাআলা আমাদের সকলকে পাঠ্য জীবনে অন্য সব কিছু থেকে বিমূখ হয়ে কিতাবমুখী হয়ে এই আসমানী ইলম অর্জনের তাওফীক দান করুন। আমিন।”

– মুফতি রাশেদুল ইসলাম, সিনিয়র শিক্ষক ও সহকারী নাযেমে দারুল ইক্বামাহ, আল জামিয়াতুল আহলিয়া দারুল উলূম মুঈনুল ইসলাম, হাটহাজারী, চট্টগ্রাম।

উম্মাহ২৪ডটকম: এমএ

উম্মাহ পড়তে ক্লিক করুন-
https://www.ummah24.com

দেশি-বিদেশি খবরসহ ইসলামী ভাবধারার গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে ‘উম্মাহ’র ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।