Home কবিতা তেঁতুলিয়ার তীরে

তেঁতুলিয়ার তীরে

॥ মালেকা ফেরদৌস ॥

আজও মনে পড়ে এখানে
এখানে এই তেঁতুলিয়া নদীটির তীরে
যেখানে কেটেছে তোমার আমার
অনেক সকাল অনেক সন্ধ্যা।

এখানে তোমার মামার বাড়ি
বেড়াতে আসতে তুমি,
কোলাহলময় শহরের চেয়ে
বেশি ভালোবাসতে এই নির্জন নদী তীর,
এখানে বসে আমাকে বলা
তোমার অনেক গল্প অনেক কথা
ঢেউয়ের মতো মিলিয়ে যেত দূরে-
অনেক দূরে।

কথাগুলো যেন ফুল হয়ে যেত
ছড়ানো পাপড়ির মত কেবলি
বাতাসে উড়ত- উড়ত, আর
আমি ছোট্ট মেয়ের মতই যেন সে সব কুড়াতাম-
বাতাসের কাছ থেকে তুলে নিতাম
একটি একটি করে!
ঢেউগুলো সব আছড়ে পড়ত তোমার পায়ের কাছে
কখনো আনমনা হয়ে যেতে তুমি
না বলা কত কথা,
আমাদের ঢেউ হয়ে যেত।
তুমি হাত ধরে বলতে- ‘আবার দেখা হবে,
তুমি ভালো থেকো’।

আজ কেবল জানতে ইচ্ছে হয় কেমন আছ তুমি?
আমি তো ভালোই আছি।
মনে পড়ে- এক শরৎ বিকেলের কথা?
তুলোর মত শাদা শাদা মেঘ
আকাশে ছিল অনেক,
শুভ্র তরঙ্গে নবোঢ়া কাশফুল দুলছিল
প্রশান্ত ছিলে তুমি,
কুলে উপচেপড়া ঢেউয়ের মতই
কিছুটা অস্থিরতাও ছিল তোমার মধ্যে-
বললে- আজ যেন সব কথা বলেছ,
এই আকাশ, এই নদী সব।
ঘরে ফিরছে পাখিরা, সব ঘরে।
মনে পড়ে- বলেছিলে তুমি?
কাছে অনেক কাছে ছিলাম আমি তোমার
তবু তুমি ছিলে যেন দূরের কেউ।
সমুদ্র গভীর চোখে ছিল তোমার
নীল স্বপ্নের ছোঁয়া।

তারপর;
শহরে ফিরে যাবার দিনটি
মনে কি পড়ে অনু তোমার?
বিদায় চাওয়া সেই শিউলীতলার স্মৃতি
যেখানে হাতে হাত রেখে বলেছিলে
আসব, আবার আসব।

কত ঋতুই তো গত হল, কত শরৎ
কত গ্রীষ্ম গেল, ফের কত বসন্ত এলো
আজও তুমি এলে না,
আর এলে না কোন দিন!
এখনও সব তেমনি আছে
শুমশাম স্থির।
নদী, কাশ আর পাখিদের ওড়াউড়ি
সেই নির্জন নদী তীর সব আছে
শুধু তুমি আর আমি নেই
নেই তুমি।