Home ইসলাম বালা-মুসিবতে আক্রান্ত হলে করণীয়

বালা-মুসিবতে আক্রান্ত হলে করণীয়

মাওলানা সাখাওয়াত উল্লাহ: আক্রান্ত ও বালা-মুসিবত থেকে বাঁচার অপার্থিব কিছু পদ্ধতি আছে। সেগুলো অনুসরণ করলে বালা-মুসিবত দূর হবে, ইনশাআল্লাহ। তবে মনে রাখতে হবে যে দোয়া ও দাওয়া দুটিই জরুরি। অপার্থিব পদ্ধতিগুলো অনুসরণ করার পাশাপাশি পার্থিব উপায়-অবলম্বন গ্রহণ করাও ইসলামের বিধান। নিম্নে বালা-মুসিবত থেকে বাঁচার অপার্থিব পদ্ধতি নিয়ে আলোচনা করা হলো—

বেশি বেশি ইবাদত করা : বিপদ এলে বেশি বেশি ইবাদত-বন্দেগি করা উচিত, যাতে আল্লাহর রহমত নাজিল হয় এবং তিনি দয়াপরবশ হয়ে আপতিত বিপদ থেকে রক্ষা করেন। রাসুল (সা.) বলেন, ‘সূর্য ও চন্দ্র আল্লাহর নিদর্শনসমূহের দুটি নিদর্শন। কারো মৃত্যু বা জন্মের কারণে সূর্যগ্রহণ ও চন্দ্রগ্রহণ হয় না। কাজেই যখন তোমরা তা দেখবে, তখন তোমরা আল্লাহর কাছে দোয়া করবে। তাঁর মহত্ত্ব ঘোষণা করবে এবং সালাত আদায় করবে ও সদকা করবে।’ (বুখারি, হাদিস : ১০৪৪)

আরও পড়তে পারেন-

তাহাজ্জুদ সালাত আদায় করা : আবু উমামা (রা.) বর্ণনা করেছেন, রাসুল (সা.) ইরশাদ করেছেন, তোমরা অবশ্যই রাতের ইবাদত করবে। কেননা তা তোমাদের পূর্ববর্তী সত্কর্মপরায়ণগণের অভ্যাস, আল্লাহর সান্নিধ্য অর্জনের উপায়, গুনাহসমূহের কাফফারা এবং পাপ কর্মের প্রতিবন্ধক। (তিরমিজি, হাদিস : ৩৫৪৯)

রাসুল (সা.) বলেন, আমাদের রব প্রত্যেক রাতেই নিকটবর্তী আকাশে (প্রথম আকাশে) অবতীর্ণ হন, যখন রাতের শেষ তৃতীয় ভাগ অবশিষ্ট থাকে এবং বলতে থাকেন, কে আছে যে আমাকে ডাকবে আমি তার ডাকে সাড়া দেব। কে আছে যে আমার নিকট কিছু চাইবে, আমি তাকে তা দান করব এবং কে আছে যে আমার নিকট ক্ষমা চাইবে, আমি তাকে ক্ষমা করব। (বুখারি, হাদিস : ১১৪৫; মুসলিম, হাদিস : ৭৫৮)

সুতরাং এ সময়ে তাহাজ্জুদ সালাত আদায় করে আল্লাহর কাছে বালা-মুসিবত থেকে আশ্রয় প্রার্থনা করলে তিনি তা থেকে মুক্তি দেবেন।

সদকা করা : জান-মালের ওপরে বিপদাপদ ও আল্লাহর অসন্তোষ থেকে পরিত্রাণের অন্যতম উপায় হচ্ছে দান-সদকা করা। আর অন্যের প্রতি অনুগ্রহ করা। আল্লাহ বলেন, ‘নিশ্চয়ই আল্লাহর রহমত সত্কর্মশীলদের অতীব নিকটবর্তী।’ সুরা : আরাফ : ৭/৫৬

তিনি আরো বলেন, ‘বস্তুত সত্কর্মশীলদের বিরুদ্ধে কোনোরূপ অভিযোগ নেই। আর আল্লাহ ক্ষমাশীল ও দয়াবান।’ (সুরা : তাওবা, আয়াত : ৯১)

আল্লাহর কাছে বিনীতভাবে দোয়া করা : আজাব-গজব ও বিপদাপদ থেকে রক্ষার অন্যতম উপায় হচ্ছে আল্লাহর কাছে বিনীতভাবে দোয়া করা। কাকুতি-মিনতি সহকারে তাঁর কাছে পাপ থেকে ক্ষমা চাওয়া এবং তাঁর সন্তোষ কামনা করা। তাহলে আল্লাহ দোয়া কবুল করবেন এবং পাপীদের ধ্বংস করবেন না। আল্লাহ বলেন, ‘আমরা তোমার আগের সম্প্রদায়সমূহের কাছে রাসুল পাঠিয়েছিলাম।

অতঃপর (তাদের অবিশ্বাসের কারণে) আমরা তাদের অভাব-অনটন ও রোগব্যাধি দ্বারা পাকড়াও করেছিলাম, যাতে কাকুতি-মিনতিসহ আল্লাহর প্রতি বিনীত হয়। যখন তাদের কাছে আমাদের শাস্তি এসে গেল, তখন কেন তারা বিনীত হলো না? বরং তাদের অন্তরসমূহ শক্ত হয়ে গেল এবং শয়তান তাদের কাজগুলোকে তাদের কাছে সুশোভিত করে দেখাল।’ (সুরা : আনআম, আয়াত : ৪২-৪৩)

তিনি আরো বলেন, ‘কোনো জনপদে যখন আমরা কোনো নবী পাঠাই, তখন সেখানকার অধিবাসীদের (পরীক্ষা করার জন্য) নানা রকম কষ্ট ও বিপদে আক্রান্ত করি, যাতে তারা অনুগত হয়।’ (সুরা : আরাফ, আয়াত : ৯৪)

বালা-মুসিবত থেকে পরিত্রাণের দোয়া

ক. দোয়া ইউনুস পড়া : রাসুল (সা.) বলেন, আমি তোমাদের এমন কোনো বিষয়ের সংবাদ দেব যে তোমাদের কারো ওপর যখন দুনিয়াবি কোনো কষ্ট-ক্লেশ অথবা বালা-মুসিবত নাজিল হয়, তখন তার মাধ্যমে দোয়া করলে তা দূরীভূত হয়। তা হলো ইউনুস (আ.)-এর দোয়া—‘লা ইলা-হা ইল্লা আনতা সুবহানাকা ইন্নি কুনতু মিনাজ জলেমিন।’ (সহিহুল জামে, হাদিস : ২৬০৫)

খ. আউজু বিকালিমা-তিল্লা-হিত তাম্মা-তি মিন শাররি মা খলাক্ব। অর্থাৎ আমি আল্লাহর পরিপূর্ণ কলেমাসমূহের মাধ্যমে তাঁর সৃষ্টির যাবতীয় অনিষ্টকারিতা থেকে পানাহ চাচ্ছি। (মুসলিম, হাদিস : ২৭০৮)

আল্লাহর ভয়ে ক্রন্দন করা : আল্লাহর ভয়ে ক্রন্দন করলে আল্লাহ খুশি হন এবং ক্রন্দনকারীকে রক্ষা করেন। যারা আল্লাহর ভয়ে কাঁদে, তাদের প্রশংসায় আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘আর তারা কাঁদতে কাঁদতে মাটিতে লুটিয়ে পড়ে এবং তাদের বিনয়চিত্ততা আরো বৃদ্ধি পায়।’ (সুরা : ইসরা/বনি ইসরাঈল, আয়াত : ১০৯)

তাওবা ও ইস্তিগফার করা : পরীক্ষা ও বিপদে পতিত হওয়া গুনাহ থেকে মুক্ত হওয়ার মাধ্যম। তবে শর্ত হলো, ওই পরীক্ষা ও বিপদে ধৈর্য ধারণ করতে হবে এবং তার জন্য সওয়াবের আশা পোষণ করতে হবে। সেই সঙ্গে আল্লাহর দিকে প্রত্যাবর্তন করতে হবে এবং তাঁর কাছে তাওবা করতে হবে। কেননা কোরআন-হাদিস প্রমাণ করে যে মানুষের গুনাহর কারণেই বিপদ-মুসিবত আপতিত হয় এবং তাওবা ছাড়া তা দূরীভূত হয় না।

রাসুল (সা.) আরো বলেন, যে ব্যক্তি সর্বদা ক্ষমা চায়, আল্লাহ তাআলা তার জন্য প্রত্যেক সংকীর্ণতা থেকে একটি পথ বের করে দেন এবং প্রত্যেক চিন্তা থেকে তাকে মুক্তি দেন। আর তাকে রিজিক দান করেন এমন স্থান থেকে, যা সে কখনো কল্পনা করে না। (আবু দাউদ ও ইবনে মাজাহ)

উম্মাহ২৪ডটকম: এসএএম

উম্মাহ পড়তে ক্লিক করুন-
https://www.ummah24.com

দেশি-বিদেশি খবরসহ ইসলামী ভাবধারার গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে ‘উম্মাহ’র ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।