Home ইসলাম বখতিয়ারের আগে ভারতবর্ষের সঙ্গে আরববিশ্বের সম্পর্ক

বখতিয়ারের আগে ভারতবর্ষের সঙ্গে আরববিশ্বের সম্পর্ক

ড. মোহাম্মাদ হাননান: প্রকৃতপক্ষে প্রাচীন বাংলায় মুসলিমদের প্রথম আগমন এবং ইসলামের প্রচার-প্রসারের বিষয়ে সময়-তারিখ নির্ধারণে ইতিহাসবিদদের মধ্যে আন্ত বিভ্রান্তি ও মতানৈক্যের প্রধান উপাদান হলো ‘শাসক মুসলিম’ ও ‘প্রচারক মুসলিম’দের একই কাতারে দাঁড় করানোর প্রবণতা। বাংলায় তুর্কি সেনাপতি বখতিয়ার খলজির আগমন দিয়ে শুরু হয় বাংলায় প্রথম ‘শাসক মুসলিম’-এর যাত্রা।

অথচ বখতিয়ারের অনেক আগেই ‘প্রচারক মুসলিম’রা বাংলায় প্রবেশ করেছিলেন। এই ঘটনাটা এক বা দুই বছর আগেও নয়, কমপক্ষে ৫০০ বছর আগে। বলা চলে, মুহাম্মদ (সা.)-এর জীবিত থাকাকালেই ভারত ও বাংলায় মুসলিম আগমন ঘটেছিল।

ভারতীয় উপমহাদেশের প্রেক্ষাপটে বিষয়টি বিবেচনা করলে ঘটনাগুলো অনুধাবন করা আরো সহজ হয়। প্রকৃতপক্ষে ভারতীয় উপমহাদেশ ও আরব জাহানের মধ্যকার আন্ত সম্পর্ক অতি প্রাচীনকালের। সম্পর্কটির ভিত প্রথমে বাণিজ্যিক হলেও যুগপরিক্রমায় এই সম্পর্ক সামাজিক ও সাংস্কৃতিক পর্যায়ে বিস্তৃত ছিল। ইসলামের আবির্ভাবের পর এই সম্পর্ক আত্মিক রূপ লাভ করে।

আরও পড়তে পারেন-

ইতিহাসবিদরা মনে করেন, উপমহাদেশের সঙ্গে বৃহত্তর আরবভূমির সম্পর্ক বনি-ইসরাঈলের নবী (আ.)-দের আমল থেকেই। তাঁরা এ ব্যাপারে বিশেষ করে নবী হজরত ইউসুফ (আ.)-এর নাম উল্লেখ করেন। ঐতিহাসিক এলফিনস্টোন এ সম্পর্কে বলেছেন, ‘হজরত ইউসুফ (আ.)-এর সময় থেকেই ভারতের সঙ্গে আরবদের বাণিজ্যিক সম্পর্ক ছিল চমৎকার।’

[ইতিহাসবিদ এলফিনস্টোনের ‘History of India’ গ্রন্থ থেকে এ উদ্ধৃতি ব্যবহার করেছেন মোহাম্মদ আবদুল মান্নান : ‘বাংলা ও বাঙালি; মুক্তিসংগ্রামের মূলধারা’ গ্রন্থে এবং এ কে এম আবদুল মান্নান : ‘বাংলায় ইসলামের আবির্ভাব’ (ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় পত্রিকা, অক্টোবর ২০০৭)]

ইতিহাসবিদরা আবিষ্কার করেছেন ইসলাম আগমনের আগেই উপমহাদেশে প্রচুর আরব কলোনি গড়ে উঠেছিল আবার আরবেও ছিল ভারতীয় অনেক উপনিবেশ। এর কার্যকারণ ও ভিতটা ছিল ব্যবসা ও বাণিজ্য। মিসর-সিরিয়া হয়ে ভারতীয় পণ্য ইউরোপের বাজারকে সমৃদ্ধ করে তুলেছিল। আরবে ভারতীয়দের আবাসস্থল Arz-ul-Hind নামে পরিচিত ছিল।

চট্টগ্রাম-আরাকানে একটি ‘আরব-রাষ্ট্র’ গঠিত হয়েছিল এবং সেখানে আরবরা বসবাস শুরু করেছিল। এতে যুগপৎ বিয়েশাদির মতো সামাজিক সম্পর্ক থেকে সাংস্কৃতিক সম্পর্কও স্থাপিত হয়েছিল। প্রাচীন ভারতীয় ভাষা, এমনকি সংস্কৃতিজাত অনেক শব্দও আরব ভাষায় বেশ ভালোভাবেই সম্পৃক্ত হয়ে যায়। পরে পবিত্র কোরআনেও অনেক ভারতীয় শব্দ ব্যবহৃত হয়েছে। যেমন—

Misk (musk), Zanjbil (ginger), Kafur (camphor) ইত্যাদি শব্দ কোরআনে আছে, যা মূলত ভারতীয় ভাষাগুলোর শব্দমালা। উলামা-হজরতরা অবশ্য বলেন, পবিত্র কোরআনে প্রচুর অনারব শব্দ এমনিতেই হয়েছে। যেমন—জিবরাইল, ইসমাইল, ইবরাহিম ইত্যাদি শব্দ আরবি ভাষার নয়।

আরবরা ইসলামের আগে থেকেই ভারতীয় উপমহাদেশের বিভিন্ন রাজার আনুকূল্য পেয়ে আসছিল। ইসলামের আবির্ভাবের পরে আরব মুসলিমরা নানা রকম সামাজিক-প্রশাসনিক কাজেও নিযুক্ত হতে থাকে। এসব ঘটতে থাকে ইসলামের সূচনাকালেই। এ প্রসঙ্গে একটি বিবরণ দেখা যেতে পারে

Dr. Mohammad Zaki সম্পাদিত ‘ Arab Accounts of India’ গ্রন্থে K A Nizami -র ভূমিকায়। Nizami গ্রন্থটির ভূমিকা প্রসঙ্গে জানিয়েছেন : India’s relations with Arab world go back to hoary past. Long before the rise of Islam, there was brisk commercial contact between India and Arabian and the Arab traders carried Indian goods to the European markets by way of Egypt and Syria. Elphinstone has rightly observed that from the days of Marco Polo and Vasco de Gama the Arabs were the Captains of Indian Commerce.

There were large number of Arab Colonies of the western coast of India and many Indian settlements in the Arab countries, Ubulla, for instance, was know as Arz-ul-Hind on account of the large number of Indians who inhabited that region.

When Islam spread and the Arabs got converted to Islam, these Colonies continued to flourish as before ‘The Indian rajas appointed Muslim Judges, known as hunarman, to decide their cases and provided all facilities to them to organize their community life. Commercial contact led to cultural relations and while large number of Arab navigational and other terms were adopted by the Indians, while Indian custom, institutions and practices found their way to Arabia’ philologists have traced three Sanskrit words Misk (musk), Zanjbil (ginger) and Kafur (comphor) in the Quran.

[Dr. Mohammad Zaki (edited), Arab Accounts of India, Delhi, 1981.

এ কে এম আবদুল মান্নান, ‘বাংলায় ইসলামের আবির্ভাব’, (ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় পত্রিকা, অক্টোবর ২০০৭) প্রবন্ধে উদ্ধৃত]

উম্মাহ২৪ডটকম: এসএএম

উম্মাহ পড়তে ক্লিক করুন-
https://www.ummah24.com

দেশি-বিদেশি খবরসহ ইসলামী ভাবধারার গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে ‘উম্মাহ’র ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।