Home শিক্ষা ও সাহিত্য বহুমুখী দ্বীনি শিক্ষার প্রাণকেন্দ্র ফেনীর জামেয়া রশীদিয়া

বহুমুখী দ্বীনি শিক্ষার প্রাণকেন্দ্র ফেনীর জামেয়া রশীদিয়া

বেলায়েত হুসাইন: বাংলাদেশের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলে অবস্থিত চট্টগ্রাম বিভাগের একটি জেলা ফেনী। গত বিংশ শতাব্দীর শেষ দিকে ফেনীর জেলা সদর উপজেলার কালিদাস পাহালিয়া নদীর তীরে প্রতিষ্ঠিত হয় ‘জামেয়া রশীদিয়া’ নামে একটি বহুমুখী ইসলামী শিক্ষাকেন্দ্র।

ইসলামী আইন বিষয়ক বিখ্যাত গ্রন্থ আহসানুল ফতোয়ার লেখক বিশিষ্ট আলেমে-দ্বিন মুফতি রশিদ আহমাদ লুধিয়ানভী (রহ.)-এর স্নেহধন্য ছাত্র ও বিশিষ্ট খলিফা মুফতি শহিদুল্লাহ (দা.বা.) স্বীয় উস্তাদের পরামর্শে ১৯৯৪ সালে এটি প্রতিষ্ঠা করেন।

মাদ্রাসাটি বেফাকুল মাদারিসিল আরাবিয়া বাংলাদেশের অন্তর্ভুক্ত। ২০২১ সালে মাদ্রাসার ছাত্রসংখ্যা প্রায় ৫০০০ জন। নিয়মিত ছাত্রদের পাশাপাশি সাধারণ শিক্ষায় শিক্ষিতদের জন্য এখানে ‘কুল্লিয়াতে শারইয়্যাই’ এবং স্থানীয় সাধারণ মানুষের ধর্মীয় শিক্ষার জন্য বিশেষ ব্যবস্থা আছে। প্রতিষ্ঠানটিতে প্রায় ১৪০ জন শিক্ষক এবং ২১ জন খাদিম ও কর্মচারী রয়েছে।

মাদরাসাটির সূচনা হয় একটি জীর্ণ মসজিদে অল্প কয়েকজন ছাত্রকে নিয়ে। কিন্তু মাত্র দুই যুগের ব্যাবধানে এটি আজ দেশের বৃহদায়তন ইসলামী শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোর একটিতে রূপান্তরিত হয়েছে।

প্রতিষ্ঠাকাল থেকে আজ অবধি মুফতি শহিদুল্লাহ (দা.বা.)-ই প্রতিষ্ঠানটির পরিচালনার দায়িত্ব পালন করছেন। পুরো মাদরাসা কমপ্লেক্সটি সাত একর জায়গাজুড়ে বিস্তৃত। এটির বিস্তৃতি ও পরিবর্ধনে স্থানীয় দানবীর হাজী মোহাম্মদ আলির অবদান অপরিসীম।

মাদরাসার শিক্ষক মুফতি সালমান ফারসি জানান, তাদের মাদরাসায় ভারতের দারুল উলুম দেওবন্দের শিক্ষাকারিকুল অনুসারে পাঠদান করা হয়। কওমি শিক্ষা সিলেবাসের প্রাথমিক স্তর থেকে জামাতে হেদায়া পর্যন্ত ধারাবাহিক শ্রেণিগুলোর পাশাপাশি এখানে কেরাত, আদব ও ইফতা (ইসলামী আইন গবেষণা) বিভাগও রয়েছে।

সব মিলিয়ে অন্তত পাঁচ হাজার শিক্ষার্থী এ মাদরাসায় ইসলামী জ্ঞান অর্জন করে। এখানের পড়াশোনা ও শিক্ষার্থীদের আদব-আখলাখ খুব সুন্দর ও মার্জিত। সর্বশেষ ১৪৪১,৪২ হিজরি শিক্ষাবর্ষে বেফাকুল মাদারিসিল আরাবিয়া (বেফাক)-এর কেন্দ্রীয় পরিক্ষায় প্রতিষ্ঠানটির সাফল্যও ঈর্ষণীয়।

বেফাকে গোটা দেশে জামাতে শরহে বেকায়াতে এ প্রতিষ্ঠানটির এক শিক্ষার্থী প্রথম স্থান অধিকার করার গৌরব অর্জন করেছে। দ্বিনি শিক্ষার পাশাপাশি জামেয়া রশীদিয়ার শিক্ষার্থীদের পার্থিব বিষয়েও যুগপযোগী বিশেষ ধারণা দেওয়া হয়। তা ছাড়া এখানে জেনারেল শিক্ষিতদের জন্য কুল্লিয়াতে শারইয়্যাহ এবং স্থানীয় সাধারণ মানুষের দ্বিনি শিক্ষাদানেরও বিশেষ ব্যবস্থা আছে।

এখানের সব ধরণের শিক্ষার্থীদের শিক্ষাদানের জন্য রয়েছে ১৪০ জন শিক্ষক এবং অন্যান্য কাজকর্মের জন্য রয়েছেন আরো অন্তত ২১ জন খাদেম ও কর্মচারী। ‘বেফাকুল মাদারিসিল আরাবিয়া বাংলাদেশ’ শিক্ষাবোর্ডের আওতাধীন এ মাদরাসার শিক্ষার্থীরা বাংলা ছাড়াও আরবি, উর্দু, ইংরেজি ও ফারসি ভাষা শেখার সুযোগ পায়।

আরও পড়তে পারেন-

এখানে আবাসিক ব্যবস্থাপনায় এতিম ও দরিদ্র শিক্ষার্থীদের বিনামূল্যে অথবা স্বল্প খরচে শিক্ষাগ্রহণের বিশেষ সুবিধা আছে। শুধু মাদরাসার মধ্যেই প্রতিষ্ঠানটির দ্বিনি কার্যক্রম সীমাবদ্ধ নয়, প্রতি রমজানে দেশের বিভিন্ন প্রান্তের অন্তত ৫০০ টিরও বেশি মসজিদে জামেয়া রশীদিয়া থেকে হাফেজে কোরআন সরবরাহ করা হয়। এসব হাফেযগণ বিনা পারিশ্রমিকে মসজিদগুলোতে গোটা রমজান মাসে খতম তারাবির নামাজের ইমামতি করেন।

মাদরাসা কর্তৃপক্ষ সামাজিক সেবামূলক কাজে অংশগ্রহণেও বেশ অগ্রসর। সামাজিক কাজের সুবিধার্থে তারা প্রতিষ্ঠা করেছে ‘ইসলাহী ফাউন্ডেশন’। সমাজের অধিকারবঞ্চিত, শিক্ষাবহেলিত ও বিপদগ্রস্থ মানুষের পাশে দাঁড়ানো এর মূল কাজ। পাশাপাশি জামেয়ার সকল ছাত্রকে ( নতুন, পুরাতন ও ফারেগীন) এক প্ল্যাটফর্মে নিয়ে আসার লক্ষ্যে ইসলাহী ফাউন্ডেশন কাজ করে যাচ্ছে। তা ছাড়া এই ফাউন্ডেশন কর্তৃক মাদ্রাসার গরীব, অসহায়দের সাহায্য করা হয়ে থাকে এবং সোশ্যাল মিডিয়াতে মাদরাসা পরিচালকের নিয়মিত ইসলাহী বয়ান প্রকাশ হয়ে থাকে।

পরিবেশ সংরক্ষণে জামেয়া রশীদিয়া দেশের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোর জন্য আদর্শ, ফলজ ও বৃক্ষ রোপণ ক্ষেত্রে কৃষি মন্ত্রণালয় থেকে ২০০৯ সালের জাতীয় পর্যায়ে প্রথম স্থান অধিকার করে পুরষ্কৃত হয়েছে। এখনো সামনের দিনগুলোতে মাদরাসাকে একটি আধুনিক ও যুগপযোগী আদর্শ ইসলামী শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে রূপ দিতে কতৃপক্ষ দিন-রাত পরিশ্রম করে যাচ্ছে। মাদরাসার ৯ হাজার স্বেচ্ছাসেবী উন্নয়ন সদস্য রয়েছে। যারা মাদরাসার উন্নতি-অগ্রগতির জন্য নিয়মিত দান-অনুদান করেন। মাদরাসা কতৃপক্ষ স্বপ্ন দেখেন, একদিন জামেয়া রশীদিয়া দেশের অন্যতম ইসলামী শিক্ষাকেন্দ্র রূপে সর্বমহলে প্রশংসিত হবে।

উম্মাহ২৪ডটকম: এমএ

উম্মাহ পড়তে ক্লিক করুন-
https://www.ummah24.com

দেশি-বিদেশি খবরসহ ইসলামী ভাবধারার গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে ‘উম্মাহ’র ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।