Home মহিলাঙ্গন কোন নারীর প্রতি আল্লাহ তাআলা রহমতের দৃষ্টিতে তাকান না

কোন নারীর প্রতি আল্লাহ তাআলা রহমতের দৃষ্টিতে তাকান না

হযরত আব্দুল্লাহ বিন আমর (রাযি.) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেন, আল্লাহ তাআলা ঐ মহিলার দিকে তাকান না, যে মহিলা তার স্বামীর অকৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে, অথচ সে তার প্রতি মুখাপেক্ষী।

হযরত উম্মে সালমা (রাযি.) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেন, ঐ মহিলা সব চেয়ে অভিশপ্ত, যে মহিলা অনুমতিবিহীন ঘর থেকে বের হয়, এমতাবস্থায় সে নিজের স্বামীর বদনাম করে।

হযরত আয়েশা (রাযি.) থেকে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেন, যে স্ত্রী তার স্বামীর ব্যাপারে বলে যে, তোমার কাছ থেকে কোন ভাল ও কল্যাণজনক কিছুই পাইনি; এতে তার আমলের সাওয়াব নষ্ট হয়ে যাবে।

রাসূলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেন, আমি মহিলাদেরকে জাহান্নামে বেশী দেখেছি। কারণ হল, তারা স্বামীর অকৃতজ্ঞতা বেশী করে।

হযরত আবু হুরায়রা (রাযি.) থেকে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেন, যখন স্বামী তার স্ত্রীকে বিছানার প্রতি আহ্বান করবে, আর স্ত্রী যদি এতে সাড়া না দেয় (এবং স্বামীর চাহিদা পুরা না করে), এ স্ত্রীর উপর ফেরেস্তারা অভিশাপ করতে থাকে সকাল হওয়া পর্যন্ত।

হযরত ত্বালাক্ব বিন আলী (রাযি.) থেকে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ (সা.) থেকে বর্ণিত, স্বামী যদি কোন জরুরতে তার স্ত্রীকে ডাকে, তখন স্ত্রীর জন্য জরুরী হচ্ছে, সাথে সাথে সাড়া দেওয়া। যদিও তখন সে উনুনে রান্নায় ব্যতিব্যস্ত থাকে, অর্থাৎ- রান্না নষ্ট হয়ে যাওয়ার আশংকা থাকে।

রাসূলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেন, মহিলারা ঐ পর্যন্ত আল্লাহর হক আদায়কারী হবে না, যে পর্যন্ত স্বামীর হক আদায় না করে। আর স্বামী যদি তাকে আহ্বান করে, তখন সে যদি উটের উপর আরোহণ অবস্থায়ও থাকে, তবুও সে স্বামীর আহ্বান অমান্য করতে পারে না।

হযরত আবু হুরায়রা (রাযি.) হতে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেছেন, যে মহিলা (রাগ করে) তার স্বামী হতে পৃথক বিছানায় রাত্রি যাপন করবে, তার উপর ফেরেস্তারা লা’নত (অভিশাপ) দিতে থাকে; যতক্ষণ না সে স্বামীর কাছে ফিরে আসে।

আরেক হাদীসে রাসূলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেন, যে ব্যক্তি তার স্ত্রীকে বিছানায় আহ্বান করে, আর স্ত্রী এতে সাড়া না দেয়, তখন ফেরেস্তারা খুবই রাগান্বিত অবস্থায় থাকেন, যতক্ষণ পর্যন্ত তার স্বামীকে রাজী না করাবে।

এক হাদীসে আছে, রাসূলুল্লাহ (সা.) মুফসেলার উপর লা’নত করেছেন। মুফসেলা বলে ঐ মহিলাকে, যাকে তার স্বামীর ইচ্ছা পুরা করার নিমিত্তে আহ্বান করে। এমতাবস্থায় সে (মিথ্যা অজুহাত দিয়ে) বলে, আমার হায়েজ (মাসিক স্রাব) হয়েছে।

আরেক হাদীসে আছে, মসুফার উপর আল্লাহর লা’নত। মসুফা বলে ঐ মহিলাকে, যাকে তার স্বামী ইচ্ছা পুরা করার নিমিত্তে ডাকে, আর সে ডাকে সাড়া না দেয়। অথবা পুরা না করার উদ্দেশ্যে বিলম্বে আসে, যাতে স্বামী ঘুমিয়ে পড়ে।

মাসআলাঃ হায়েয ও নিফাস অবস্থায় স্বামী স্ত্রীর দৈহিক মিলন হারাম। তাই সেই অবস্থায় স্বামী যদি কাম বাসনা পূরণ করতে চায়, তখন তাকে বুঝিয়ে বলতে হবে। তখন স্বামীর ঐ কথা মানা যাবে না। আর উপরের উল্লিখিত ধমকী ঐ সময় প্রযোজ্য হবে, যখন স্ত্রীর দ্বীনি বা শারীরিক বিশেষ কোন অসুবিধা না থাকে।

হযরত ইবনে উমর (রাযি.) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি রাসূল (সা.) থেকে এ কথা বলতে শুনেছি যে, যে মহিলা স্বামীর অসন্তুষ্টি অবস্থায় ঘর থেকে বের হয়, তখন আসমানের সমস্ত ফেরেস্তা এবং যে পথ দিয়ে সে যায়, সে পথের সবকিছু অর্থাৎ- জ্বিন-ইনসান ছাড়া সবাই তাকে অভিশাপ দিতে থাকে ঘরে ফিরে আসা পর্যন্ত।

আরেক হাদীসে আছে, আসমানের ফেরেস্তা, রহমতের ফেরেস্তা, আযাবের ফেরেস্তা তাকে লা’নত করতে থাকে ফিরে আসা পর্যন্ত।

রাসূলুল্লাহ (সা.) তিন ব্যক্তির উপর লাআনত করেছেন- (১) ঐ ব্যক্তি, যে জনগণের নেতৃত্ব দেয়, অথচ মানুষ তার উপর অসন্তুষ্ট। (২) ঐ মহিলা, যে রাত্রি অতিবাহিত করে এমতাবস্থায়, যখন তার স্বামী তার উপর অসন্তুষ্ট। (৩) আর ঐ ব্যক্তি, যে “হাইয়্যা আলাল ফালাহ্” শুনে, কিন্তু সে এ আওয়াযের প্রতি সাড়া দেয় না, অর্থাৎ নামাযে আসে না।

মাসআলাঃ ইমামের উপর নারাজিটা গ্রহণযোগ্য ও শরীয়ত মোতাবেক হতে হবে এবং অধিকাংশের অসন্তুষ্টিই ধর্তব্য হবে।

গর্ভধারণের ফযীলত

হযরত আনাস (রাযি.) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেন, তোমাদের মহিলাদের মধ্যে কেউ এ কথার উপর খুশি নয় কি? কোন মহিলা তার স্বামী কর্তৃক গর্ভবতী হবে এ অবস্থায় যে, স্বামী তার উপর সন্তুষ্ট, তখন তার এত সাওয়াব হবে, যেমন- ঐ রোযাদার, যে আল্লাহর রাস্তায় জিহাদ করছে রোযা রাখা অবস্থায়। আর যখন তার প্রসবের ব্যাথা শুরু হয়, তখন না আসমান ওয়ালাদের না জমিন ওয়ালাদের জানা আছে, তার চোখ ঠান্ডার (প্রশান্তির) জন্য কি লূকিয়ে রাখা আছে। যখন বাচ্চা জন্ম হয়ে যায়, এখনও দুধের কোন ফোটা বের হয়নি, আর তার সদ্যজাত সন্তান এখনও একবার দুধ পান করেনি। কিন্তু তার প্রত্যেক ফোটার উপর একটি করে নেকী পাওয়া যায়। যদি কোন রাত সে বাচ্চার জন্য জাগ্রত থাকে, তখন (তার পরিবর্তে) সত্তর জন সুস্থ্য গোলাম আল্লাহর রাস্তায় আযাদ করার সাওয়াব পায়। সুভাগ্য ঐ মহিলাদের জন্য, যারা নেক্কার হয়, স্বামীর কথা মেনে চলে এবং নিজ স্বামীর প্রতি অকৃতজ্ঞতা প্রকাশ না করে।

হযরত ইবনে উমর (রাযি.) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেছেন, মহিলাদের গর্ভধারণ হতে সন্তান প্রসব পর্যন্ত এত সাওয়াব হয় যে, যেভাবে আল্লাহর রাস্তার সীমান্ত এলাকায় পাহারা দেওয়া অবস্থায় যদি সে মারা যায়, শহীদের সাওয়াব পাওয়া যায়।

অধিক সন্তান প্রসবকারী নারীদের ফযীলত

হযরত মাকল ইবনে ইয়াসার থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেছেন, তোমাদের মহিলাদের মধ্যে সব চেয়ে উত্তম হল- যে স্বামীকে বেশী মুহাব্বত করে এবং বেশী সন্তান গর্ভধারীনী।

হযরত হারমেলা ইবনে নোমান (রাযি.) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেন, সুন্দরী মহিলা থেকে ঐসব বাচ্চা প্রসবকারী মহিলা আল্লাহর নিকট বেশী পছন্দনীয়, যাদের বেশী সন্তান হওয়ার কারণে অন্য উম্মতের উপর আমি গর্ব করব।

আরও পড়তে পারেন-

হযরত আব্দুল্লাহ (রাযি.) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেন, সুন্দর বন্ধ্যা মহিলাকে ছেড়ে কৃষ্ণকায় অধিক বাচ্চা প্রসবকারীকে বিবাহ কর। কারণ, ক্বিয়ামতের দিন তোমরা বেশী হওয়ার কারণে অন্য উম্মতের উপর আমি গর্ব করব।

হযরত আনাস (রাযি.) থেকে বর্ণিত, সুন্দরী বন্ধ্যা নারীকে ছেড়ে অধিক বাচ্চা প্রসবকারী মহিলাকে তোমরা গ্রহণ (বিবাহ) কর, যদিও সে কাল হয়।

সন্তান লালন-পালনের সাওয়াব

হযরত আবু উমামা বাহলী (রাযি.) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেছেন, গর্ভধারণকারীনী, প্রসবের কষ্টকে সহ্যকারীনী, নিজ সন্তানের উপর দয়ামায়া কারীনী যদি স্বামীর অকৃতজ্ঞতা প্রকাশ না করে, তাহলে সে জান্নাতে প্রবেশ করবে।

হযরত আয়েশা সিদ্দিকা (রাযি.) বলেন, এক মহিলা আমার কাছে আসল, আর তার সাথে দু’টি কন্যা সন্তান ছিল, সে আমার কাছে প্রশ্ন করল, অর্থাৎ- কিছু চাইল। আমি তাকে একটি খেজুর ব্যতীত দেওয়ার জন্য কিছু পাইনি। আমি তাকে সেই খেজুর দিয়েছি। সে ঐ খেজুর নিয়ে দুই টুকরা করে দুই মেয়েকে দিয়ে দেয়, তারপর চলে যায়। রাসূলুল্লাহ (সা.) আগমন করার পর আমি ঘটনা বললাম, রাসূলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেন, তাকে ঐ মেয়ে দিয়ে পরীক্ষা করা হয়েছে, সে তাদের সাথে ভাল ব্যবহার করেছে। অর্থাৎ- সুন্দরভাবে লালন পালন করেছে। সেটা তার জাহান্নাম থেকে মুক্তি পাওয়ার মাধ্যম হবে।

রাসূলুল্লাহ (সা.)এর পূর্বে যে মহিলা জান্নাতে যাবে

হযরত আবু হুরায়রা (রাযি.) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেন, সব চেয়ে প্রথমে জান্নাতের দরজা আমি খুলব। কিন্তু এক মহিলাকে আমি দেখব, সে আমার পূর্বে জান্নাতে প্রবেশ করছে। আমি তাকে জিজ্ঞাসা করব, কি কারণে তুমি এ মর্যাদা পেয়েছ? তুমি কে? সে বলবে, আমি ঐ মহিলা, যে স্বামীর মৃত্যুর পর এতীম সন্তানের লালন-পালনের জন্য পুনরায় বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হয়নি।

মাসআলাঃ এ ফযীলত ঐ মহিলার জন্য, যে স্বামীর মৃত্যুর পর ফরয-ওয়াজিব-সুন্নাত আদায় করে, নিজে পাক-পবিত্র থেকে সন্তানের লালনপালনের স্বার্থে বিবাহ না বসে।

এতীম সন্তান লালন-পালনের ফযীলত

হযরত আউফ বিন মালেক (রাযি.) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেছেন, আমি এবং ঐ মহিলা যার মুুখ ভেঙ্গে গেছে, বিধবা হয়ে গেছে। সে সন্তানের লালন-পালনের জন্য বিবাহ না করে ধৈর্য ধারণ করেছে, জান্নাতের মধ্যে এমন পাশাপাশি হব, যেভাবে আমার হাতের দুই আঙ্গুলী (এক সাথে লাগানো)।

মাসআলাঃ এ সমস্ত ফযীলত অর্জন করার জন্য ফরয, ওয়াজিব, সুন্নাত ইত্যাদি সঠিকভাবে আদায় করে ধৈর্যধারণকারী হতে হবে।

লেখক: প্রখ্যাত আলেম, মুফতি, মুবাল্লিগে ইসলাম এবং সহকারী পরিচালক- আল জামিয়াতুল আহলিয়া দারুল উলূম মুঈনুল ইসলাম, হাটহাজারী, চট্টগ্রাম।

উম্মাহ২৪ডটকম: এসএএম

উম্মাহ পড়তে ক্লিক করুন-
https://www.ummah24.com

দেশি-বিদেশি খবরসহ ইসলামী ভাবধারার গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে ‘উম্মাহ’র ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।