Home প্রবন্ধ-নিবন্ধ পারসোনাল ব্র্যান্ডিং? আপনি যে উপায় অনুসরণ করছেন, তা ঠিক নয়!

পারসোনাল ব্র্যান্ডিং? আপনি যে উপায় অনুসরণ করছেন, তা ঠিক নয়!

বর্তমান যুগে পারসোনাল ব্র্যান্ডিং নিঃসন্দেহে একটি হট টপিক। গুগল ট্রেন্ডে গিয়ে যদি ‘পারসোনাল ব্র্যান্ডিং’ লিখে সার্চ দেন, তাহলে দেখা যাবে গত ৫ বছরে সর্বাধিকবার সার্চ দেওয়া ইস্যুর তালিকায় এটি থাকবে প্রথম সারিতে। তবে পারসোনাল ব্র্যান্ডিং নিয়ে আমরা যত কথাই বলি না কেন, আমাদের অনেকেরই হয়তো এর সম্পর্কে স্পষ্ট ধারণা নেই। খুব কম মানুষই আছেন যারা পারসোনাল ব্র্যান্ডিংকে সঠিকভাবে ব্যাখ্যা করতে পারবেন। আপনি কারো কাছে এটি নিয়ে জানতে চাইলে উপদেশের অভাব হবে না, কিন্তু সেসব উপদেশ আপনাকে কতখানি সাহায্য করবে নাকি বিভ্রান্ত করবে, তা নিয়ে প্রশ্ন থেকেই যায়।

পারসোনাল ব্র্যান্ডিং শব্দদুটিকে যদি আমরা সোজা বাংলায় তর্জমা করতে যাই তাহলে বলতে হয়, এটি নিজেকে বা নিজের প্রতিষ্ঠানকে মানুষের কাছে পরিচিত ও প্রতিষ্ঠিত করে তোলার চেষ্টা। বেশিরভাগ পারসোনাল ব্র্যান্ডিং উপদেষ্টাই হয়তো আপনাকে এই কাজে সফলতার প্রথম ধাপ হিসেবে বলবেন, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে কন্টেন্ট তৈরি করো। প্রায়ই হয়তো শুনে থাকবেন, ‘পারসোনাল ব্র্যান্ডিং করতে চাও? তাহলে লিংকডইনে পোস্ট করা শুরু করো।’ কিন্তু বিভিন্ন দিক বিবেচনায় দেখা গেছে, পারসোনাল ব্র্যান্ডিং প্রক্রিয়ার শেষ ধাপ হওয়া উচিত কন্টেন্ট তৈরি!

শুনে নিশ্চয়ই অবাক হচ্ছেন? পাঠকের মনে প্রশ্ন জাগতেই পারে, তাহলে প্রথম ধাপটা কি? এর উত্তর পাওয়ার আগে শুরু করা যাক ‘পারসোনাল ব্র্যান্ডিং’ শব্দদ্বয়ের সংজ্ঞা দিয়ে।

ইউরোপের শিক্ষাবিদরা বলছেন, পারসোনাল ব্র্যান্ডিং হলো নিজেকে একজন বিশেষজ্ঞ, নেতা বা ইনফ্লুয়েন্সার হিসেবে আপনার ‘টার্গেট অডিয়েন্স’- এর কাছে প্রতিষ্ঠা করার জন্য কিছু অদ্বিতীয় পদ্ধতি ও বৈশিষ্ট্য বেছে নেওয়া।

আপনি লিংকডইন বা অন্য যেকোনো সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে কন্টেন্ট তৈরি করুন কিংবা অফলাইনে বই লিখে বা বক্তব্য দেওয়ার মাধ্যমে নিজেকে পরিচিত করুন; পুরোটাই ‘সেলফ-মার্কেটিং’ বা আত্মপ্রচারণামূলক কৌশল। টার্গেট অডিয়েন্সের মনে নিজের জায়গা করে নেওয়ার জন্যই এত সব কলাকৌশল আপনাকে অবলম্বন করতে হয়। কিন্তু সেই লক্ষ্য অর্জনের আগে আপনাকে যা বুঝতে হবে তা হলো,

প্রথমত, দরকার কিছু ভিন্নধর্মী বৈশিষ্ট্য; যেমন মূল্যবোধ, বিশ্বাস, ব্যক্তিত্ব, অর্জন এবং ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা।

আরও পড়তে পারেন-

দ্বিতীয়ত, ভিন্নধর্মী গল্প; যেমন, আপনার ব্র্যান্ডের পেছনের গল্প এবং কন্টেন্টের মূল ভিত্তি।

দ্বিতীয় ধাপ হচ্ছে নিজের অবস্থান তৈরি করা। যেমন, নজরকাড়া কোনো বিবৃতি বা দৃষ্টিভঙ্গি দাঁড় করানো যার মালিক শুধুই আপনি এবং সময়ের সাথে সাথে যা আপনার নামের সঙ্গেই উচ্চারণ করা হবে। সেলফ-মার্কেটিং এই প্রক্রিয়ার শেষ ধাপ।

যখন আপনি নিজের ‘পারসোনাল ব্র্যান্ড’ কি তা না বুঝেই কন্টেন্ট তৈরিতে নেমে পড়েন, তখন আপনার কাজ অসাড় হয়ে ওঠে। অর্থাৎ, হয় আপনার মধ্যে রাইটার’স ব্লক তৈরি হয় কিংবা মানুষের সাথে আশানুরূপ সংশ্লিষ্টতা গড়ে ওঠে না। এর কারণ এই নয় যে আপনার কন্টেন্ট মানসম্মত হয়নি কিংবা আপনার অডিয়েন্সের আগ্রহ নেই; বরং এই ব্যর্থতার কারণ হচ্ছে আপনি যথাযথ কৌশল প্রয়োগ না করে শুধু ‘স্প্রে অ্যান্ড প্রে’ পন্থা বেছে নিয়েছেন।

নিজেকে সমৃদ্ধ করতে একটি পারসোনাল ব্র্যান্ডিং এজেন্সির সাহায্য নিতে পারেন এবং দ্বিতীয় ধাপ ‘ব্র্যান্ড পজিশনিং’-এর ক্ষেত্রে নিজস্ব মূল্যবোধ নিয়ে আসতে পারেন। আবার আপনি চাইলে এই ধাপকে পুরোপুরি বাদ দিয়ে প্রথম ধাপের গভীরে মনোনিবেশ করতে পারেন। যদি তাই করেন, তাহলে আপনি ব্র্যান্ড তৈরির প্রক্রিয়ায় বাকিদের চাইতে এগিয়ে যাবেন, যারা কিনা সাতপাঁচ না ভেবেই কন্টেন্ট তৈরিতে ঝাঁপিয়ে পড়েছে।

পারসোনাল ব্র্যান্ডিংয়ের ক্ষেত্রে নিজের অন্তর্দৃষ্টি তৈরি করতে একটি শর্টলিস্ট মেনে চলতে পারেন। তবে মনে রাখতে হবে, যেকোনো কৌশল অবলম্বনের আগে তার গভীরে গিয়ে চিন্তা করুন, প্রতিটি বিষয় মূল্যায়নের জন্য সময় নিন এবং পুরো প্যাটার্নের দিকে একবার চোখ বুলিয়ে দেখুন যে আপনার ব্র্যান্ড পজিশনিং শেষ পর্যন্ত কি দাঁড়ায়।

শর্টলিস্টের শুরুতেই আছে-

লাইফলাইন
আপনার জীবনের উত্থান-পতনের গল্প এবং সেই থেকে নেওয়া শিক্ষার কথা তুলে ধরুন।

কেন ব্র্যান্ড গড়ে তুলতে চান?
একজন উদ্যোক্তা হিসেবে এবং ব্যক্তিসত্ত্বা হিসেবেও কেন আপনি ব্র্যান্ড গড়ে তুলতে চান তা মানুষকে জানান।

মূল মূল্যবোধ
না, ব্যবসায়ের নয়; আপনার নিজস্ব মূল্যবোধ তুলে ধরতে হবে সবার সামনে।

ব্র্যান্ডের বর্ণনা
আপনি আপনার ব্র্যান্ডকে কি রূপে দেখাতে চান এবং বর্ণনা করতে চান তা নির্ধারণ করতে হবে।

এছাড়াও আপনার ব্যক্তিত্ব ও চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য মানুষের সামনে তুলে ধরার জন্য যা প্রয়োজন-

থট লিডার বা যাদেরকে চিন্তাধারাকে আপনি আদর্শ মানেন; এরাই হতে পারে ব্র্যান্ড পজিশনিংয়ের ক্ষেত্রে আপনার পথ প্রদর্শক।

টার্গেট অডিয়েন্স; শুধুমাত্র সম্ভাব্য ক্রেতা বা কর্মীদেরই নয়, আপনাকে একটি গোষ্ঠীর প্রতি মনোযোগ দিতে হবে যাদের আপনি অনুপ্রাণিত করতে চান।

কন্টেন্টের মূল ভিত্তি; অর্থাৎ যেসব বিষয় নিয়ে আপনি মূলত কাজ করতে চান।

পারসোনাল ব্র্যান্ডিংয়ের আদ্যোপান্ত তো জানা হলো। এবার কাজে নেমে পড়ার আগে বর্তমানের সবচেয়ে প্রভাবশালী চিন্তাবিদ জেরোন ডি ফ্লান্ডারের একটি উক্তি মনে রাখুন,

“আপনি সবার কাছে সবকিছু হয়ে উঠতে পারবেন না। আপনি যদি উত্তর দিকে যেতে চান, একই সাথে দক্ষিণে যেতে পারবেন না।”

তাহলে এবার নিজেই ঠিক করুন, আপনার পারসোনাল ব্র্যান্ডিংকে আপনি কোন পথে নিয়ে যাবেন?

সূত্র: এন্টারপ্রেনার এশিয়া প্যাসিফিক।

উম্মাহ২৪ডটকম: এসএএম

উম্মাহ পড়তে ক্লিক করুন-
https://www.ummah24.com

দেশি-বিদেশি খবরসহ ইসলামী ভাবধারার গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে ‘উম্মাহ’র ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।