Home ইসলাম ট্রাফিক আইন অমান্য করা গুনাহ

ট্রাফিক আইন অমান্য করা গুনাহ

মুফতি মাহমুদ হাসান: আমাদের অন্য দৈনন্দিন বিষয়াদির মতো এ বিষয়ও একটি অবহেলিত অধ্যায়, যাকে আমরা দ্বীনবহির্ভূত বিষয় ধরে রেখেছি। ফলে ট্রাফিক আইন অমান্য করে কেউ এ কথা কল্পনাও করে না যে সে গুনাহের কাজ করেছে। যত্রতত্র গাড়ি পার্কিং, পরিমাণের চেয়ে দ্রুতগতিতে গাড়ি চালানো, উল্টো লেনে চলা, ট্রাফিক সংকেত অমান্য করা, নিষিদ্ধ জায়গায় ওভারটেকিং ইত্যাদি কাজ শুধু আইন লঙ্ঘনই নয়; বরং গুনাহের কাজও।

ট্রাফিক আইন অমান্য করা শরয়ি বিধানের লঙ্ঘন ট্রাফিক আইন অমান্য করায় তিনটি শরয়ি বিধানের স্পষ্ট লঙ্ঘন হয়ে থাকে :

এক. যাবতীয় ট্রাফিক আইন সব মানুষের কল্যাণেই করা হয়েছে, আর সরকার যেসব আইন জনসাধারণের কল্যাণে করে থাকে, সেগুলো মেনে চলা শরিয়তের দৃষ্টিতে ওয়াজিব। এগুলো লঙ্ঘন করা গুনাহ। কোরআনে কারিমে ইরশাদ হয়েছে, ‘তোমরা আনুগত্য করো আল্লাহ ও তাঁর রাসুলের এবং আনুগত্য করো তোমাদের কার্যনির্বাহী ও দায়িত্বশীলদের।’ (সুরা নিসা, আয়াত : ৫৯)

এখানে আনুগত্যের দ্বারা উদ্দেশ্য হলো, শরিয়তপরিপন্থী না হলে জনসাধারণের কল্যাণে শাসকদের আরোপিত বিধিবিধান যথাযথভাবে মেনে চলা। আল্লাহ ও রাসুলের নির্দেশ মানার আদেশের সঙ্গে শাসক ও দায়িত্বশীলদের নির্দেশ মানার কথা বলে বোঝানো হয়েছে, এ আইন মেনে চলাও শরিয়তমতে জরুরি।

আরও পড়তে পারেন-

দুই. কোনো ব্যক্তি গাড়ি চালানোর লাইসেন্স গ্রহণ করার অর্থই হলো, সে সরকারের সঙ্গে লিখিত বা মৌখিক ওয়াদাবদ্ধ হয় যে সে গাড়ি চালানোর সময় যাবতীয় ট্রাফিক আইন মেনে চলবে। এরপর যদি সে কোনো ট্রাফিক আইন লঙ্ঘন করে, তাহলে সে প্রতিশ্রুতি ভঙ্গের গুনাহ করল। হাদিস শরিফে নবী করিম (সা.) ইরশাদ করেন, ‘মুনাফিকের তিনটি আলামতের একটি হলো, প্রতিশ্রুতি করার পর তা ভঙ্গ করা।’ (বুখারি : ৩৩)

তিন. আইন অমান্য করার দ্বারা কোনো না কোনো মানুষের কিছু না কিছু কষ্ট অবশ্যই হয়ে থাকে। এমনকি এর ফলে বড় দুর্ঘটনাও ঘটে এবং এতে নিরপরাধ ব্যক্তির প্রাণহানি বা কোনো ব্যক্তির দৈহিক ক্ষতিও হয়। অন্তত এটুকু তো অবশ্যই হয় যে কারো আইন অমান্য করা অন্যের মানসিক কষ্টের কারণ হয়।

আর অন্যায়ভাবে কাউকে কষ্ট দেওয়া এত মারাত্মক গুনাহ, যা ওই ব্যক্তি ক্ষমা না করা পর্যন্ত শুধু তওবার দ্বারা মাফ হয় না। একজন মুসলমান কখনো অন্য মুসলমানকে অন্যায়ভাবে কষ্ট দিতে পারে না। নবী করিম (সা.) ইরশাদ করেন, ‘প্রকৃত মুসলিম ওই ব্যক্তি, যার কথা ও কর্মের অনিষ্ট থেকে অপর মুসলিম নিরাপদ থাকে।’ (বুখারি, হাদিস : ১০)

ইসলামী ফিকহের গ্রন্থগুলোতে সাধারণ রাস্তায় নিজে চলা ও কোনো যানবাহন চালানোরও নির্দিষ্ট মূলনীতি আছে। তা হলো, নিজেকে এমন সব ধরনের কর্ম পরিহার করে চলতে হবে, যা অন্যের কোনো ধরনের কষ্টের কারণ হয়। তা না হলে সরকারি বা যৌথ মালিকানাধীন রাস্তা ব্যবহার করা জায়েজ নয়। কারো অসতর্কতার দরুন যদি অন্যের জান-মালের কোনো ক্ষতি হয়, তবে শরিয়তমতে জরিমানা তাকেই বহন করতে হবে।

কেউ সিগন্যাল অমান্য করে গাড়ি সামনে বাড়িয়ে দিল অথবা নিষিদ্ধ স্থানে ওভারটেকিং করল; স্বাভাবিকভাবে তো সে একটা মামুলি অনিয়ম করল; কিন্তু এই সাধারণ কাজটিই অনেক বড় ধরনের গুনাহের সমষ্টি, যা আমরা অনায়াসে সঙ্গে নিয়েই চলছি।

কখনো কখনো কোনো একজন বা নির্দিষ্ট কিছু মানুষের অনিয়মের কারণে হাজার হাজার মানুষের পথ বন্ধ হয়ে যায়। কোনো কারণে কিছুক্ষণের জন্য রাস্তার এক পাশ থেকে গাড়ি চলা বন্ধ হলে তাতে অধৈর্য হয়ে কেউ কেউ অন্য পাশ দিয়ে বিপরীত দিকে চলতে থাকে, ফলে উভয় দিকেরই গাড়ি চলার পথ বন্ধ হয়ে যায়। হাজার হাজার মানুষকে কষ্টে ফেলার সব গুনাহ ওই ব্যক্তির ওপর বর্তায়, যার সামান্য অনিয়মের কারণে এ পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়। অনেকে রাস্তায় খেলাধুলা করে, কেউ কেউ রাস্তাঘাটে অবৈধভাবে দোকানপাট বসায়, এতে মানুষের চলাচলে অসুবিধা হয়। ইসলামে এসব কঠোরভাবে নিষিদ্ধ।

লেখক : শিক্ষক, ইসলামিক রিসার্চ সেন্টার বসুন্ধ

উম্মাহ২৪ডটকম: এসএএম

উম্মাহ পড়তে ক্লিক করুন-
https://www.ummah24.com

দেশি-বিদেশি খবরসহ ইসলামী ভাবধারার গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে ‘উম্মাহ’র ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।