Home ফিকহ ও মাসায়েল ইমাম আযম (রাহ.)-এর হাদীস শাস্ত্রের উস্তাদগণ

ইমাম আযম (রাহ.)-এর হাদীস শাস্ত্রের উস্তাদগণ

।। আল্লামা হাফেয নাজমুল হাসান কাসেমী ।।

ইমাম আযম আবু হানিফা (রাহ.) হযরত আমের ইব্নে শরাহিল থেকে হাদীসের জ্ঞান লাভ করেন। হাফেয যাহাবী (রাহ.) লিখেন “হুয়া আকবারু শুয়ূখী আবি হানিফা (রাহ.)” বা তিনি আবু হানিফা (রাহ.)-এর হাদীস শাস্ত্রের উস্তাদগণের মধ্যে শ্রেষ্ঠতম। ইমাম আমের সা’আবী (রাহ.) ৫০০ (পাঁচশত) সাহাবী থেকে হাদীসের জ্ঞানার্জন করেন। তার স্মরণশক্তির এতই প্রাচুর্য ছিল যে তা সত্যিই বিস্ময়কর। তিনি একটি হাদীসও স্বহস্তে লিপিবদ্ধ করে মুখস্ত করেন নি।

হাদীস বিশারদ ইমাম সাআবী (রাহ.) বলেন, আরবী কবিতার সাথে আমার তেমন কোন সম্পর্ক নেই। তবুও আমি অভিলাষ করলে মাস কে মাস শুধু আরবী কবিতা পড়তে পারবো। একদা তিনি এক লোকালয়ে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের যুদ্ধ সম্পর্কে বর্ণনা দিচ্ছিলেন। এমতাবস্থায় হযরত আবদুল্লাহ ইব্নে উমর (রাযি.) সেখান দিয়ে পথ অতিক্রম করেন। তিনি ইমাম সাআবী (রাহ.)এর আলোচনা শুনতে পেয়ে বলেন, আমি নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সাথে রণক্ষেত্রে যোদ্ধাদের অন্তর্ভুক্ত ছিলাম বটে, কিন্তু রণাঙ্গন সম্বন্ধে ইমাম সাআবী (রাহ.)এর জ্ঞান আমার চেয়ে অনেক বেশী।

খতীবে বাগদাদ হযরত আলী ইব্নুল মাদানী থেকে উদ্ধৃত করেন যে, হযরত ইব্নে মাসঊদ (রাযি.)এর জ্ঞান-বিজ্ঞান সমাপ্ত ঘটেছে আলকামা, আসওয়াদ, হারেস, আমর, ওবায়দা ইব্নে কায়েস পর্যন্ত পৌঁছে। আর এই পাঁচজন মহামনীষীর জ্ঞান-বিজ্ঞান দু’ব্যক্তির মধ্যেই স্থান লাভ করেছে। একজন হলেন ইবরাহীম নখয়ী (রাহ.) আর দ্বিতীয় জন হলেন আমের সাআবী (রাহ.)। এ দু’জন হযরত আবু হানিফা (রাহ.)এর শিক্ষক ছিলেন।

প্রথম অংশ পড়ুন- ‘হাদীসশাস্ত্রে ইমাম আযম আবু হানিফা (রাহ.)’

দ্বিতীয় অংশ পড়ুন- ‘হাদীসশাস্ত্রে ইমাম আযম আবু হানিফা (রাহ.)’

ইমাম আযম (রাহ.)এর দ্বিতীয় শিক্ষাগুরু ছিলেন হযরত হাম্মাদ ইব্নে সুলাইমান (রাহ.) যিনি সমস্ত ঐতিহাসিকদের মতে তৎকালীন একজন হাদীস ও ফিকাহ বিশারদ ইমাম ছিলেন। তিনি ছিলেন ইলম তথা জ্ঞানের দিকদিয়ে দ্বিতীয় আবদুল্লাহ ইব্নে মাসঊদ (রাযি.)। সহীহ মুসলিম, আবু দাঊদ ও তিরমিযীতে তাঁর রিওয়ায়াত বিদ্যমান। তিনি হযরত আনাস, যায়েদ ইব্নে আওহাব, সাঈদ ইবনুল মাসায়্যেব, ইকরামা, আবু ওয়ায়েল, ইবরাহীম নখয়ী এবং আবদুল্লাহ ইব্নে বুরায়দা (রাযি.) থেকে শিক্ষালাভ করেন। ইমাম আবু হানিফা (রাহ.) তাঁর থেকে ২,০০০ (দুই হাজার) হাদীস বর্ণনা করেন। ইমাম আবু হানিফা (রাহ.) তাঁকে এত অধিক শ্রদ্ধা করতেন যে, কখনো তিনি হযরত হাম্মাদের আসনের দিকে পা মেলে বিশ্রাম করেননি।

ইমাম আযম (রাহ.)এর তৃতীয় শিক্ষক ছিলেন, আবু ইসহাক সাবিয়ী (রাহ.) তিনি ৩৮ (আটত্রিশ) জন সাহাবী থেকে জ্ঞানার্জন করেন। তিনি বুখারী, মুসলিম, আবু দাঊদ, তিরমিযী, নাসাঈ, ইব্নে মাযাহ’র বিশিষ্ট রাবী। (দরসে তিরমিযী-১/৯৩-৯৪)।

ইমাম আযম (রাহ.)এর শিষ্যগণঃ ইমাম আযম আবু হানিফা (রাহ.) যাদের নিকট হাদীস অধ্যয়ন করেছেন, তাদের পরিচয় আমরা পেয়েছি। এখন আমরা দেখব তিনি যাদেরকে হাদীস শিক্ষা দিয়েছেন তাঁরা কিরূপ লোকছিলেন। তাঁর শিষ্যগণের প্রতি লক্ষ্য করুন।

ইয়াহইয়া ইব্নে সাঈদ আল কাত্তান, তিনি জরহ ও তা’দীলের ইমাম ছিলেন। আবদুর রায্যাক ইব্নে হুমাম, জামে কবীর গ্রন্থের প্রণেতা। ইমাম বুখারী (রাহ.) তাঁর গ্রন্থ হতে যথেষ্ট উপকৃত হয়েছেন। ইয়াযীদ ইব্নে হারুন। তিনি ইমাম আহ্মদ ইব্নে হাম্বলের উস্তাদ ছিলেন। ওকী ইবনুল জারাহ। ইমাম আহমদ ইব্নে হাম্বল বলতেন, সনদ ও রিওয়ায়াত মুখস্থ রাখার ব্যাপারে আমি ওকীর মত লোক দেখিনি। আবদুল্লাহ ইব্নে মুবারক, হাদীস শাস্ত্রে তাঁকে আমীরুল মু’মিনীন উপাধি দেয়া হয়েছিল।

ইয়াহইয়া ইব্নে আবি যায়েদা, ইমাম বুখারীর উস্তাদ আলী ইবনুল মাদানী তাঁকে জ্ঞানের সাগর বলতেন। এঁরা শুধু নামে মাত্র ইমাম সাহেবের শিষ্য ছিলেন তাই নয় বরং বৎসরের পর বৎসর ধরে তাঁরা ইমাম আযমের স্নেহ-ছায়ায় প্রতিপালিত হয়ে শিক্ষা উপদেশ পেয়েছেন। তাঁরা ইমাম সাহেবের ছাত্রভুক্ত হতে পেরছেন বিধায় গর্ব অনুভব করতেন।

আবদুল্লাহ ইব্নে মুবারক বলতেন, যদি আল্লাহ পাক আমাকে ইমাম আবু হানিফা (রাহ.) ও সুফয়ান সাওরী (রাহ.) দ্বারা সাহায্য না করতেন তাহলে আজ আমাকে একজন সাধারণ লোক হিসেবে থাকতে হত। ওকী এবং ইয়াহইয়া ইব্নে আবী যায়েদা এত দীর্ঘকাল ইমাম আযম (রাহ.)এর সাহচর্যে ছিলেন যে, শেষ পর্যন্ত লোকেরা তাঁদেরকে ইমাম আযম (রাহ.)এর ছেলে বলে অভিহিত করত। ইমাম আযম আবু হানিফা (রাহ.) জীবনের এতটি বৎসর হাদীস শিক্ষালাভে ও অন্যান্যকে শিক্ষাদানে অতিবাহিত করে গেছেন। হাদীস শাস্ত্রে তাঁর কিরূপ অগাধ জ্ঞান থাকতে পারে তা সহজেই অনুমেয়। আর তিনি যাঁদের নিকট হাদীস শিক্ষা পেয়েছেন আর যাঁদেরকে শিক্ষা দিয়েছেন তাদের ব্যক্তিত্ব, জ্ঞানের গভীরতা ইত্যাদির বিচার করলেও তিনি হাদীস শাস্ত্রে কিরূপ দক্ষতা লাভ করেছিলেন তা বুঝতে কষ্ট হওয়ার কথা নয়। (ইমাম আযম আবু হানিফা- ২০৯-২১১ পৃষ্ঠা)।

ইমাম আযম (রাহ.)-এর ছাত্রদের সংখ্যা ছিল অসংখ্য। তন্মধ্যে তিনি বিশিষ্ট চল্লিশ জনকে নিয়ে একটি পরামর্শ সভা গঠন করেন। নিম্নে তাঁদের কয়েকজনের নাম উল্লেখ করা হলো। হযরত ইয়াহইয়া ইব্নে যাকারিয়া ইব্নে আবী মায়েদা, ইয়াহইয়া ইব্নে সাঈদ আল কাত্তান, আবদুল্লাহ ইব্নে মুবারক, দাঊদ তায়ী, ওকী ইব্নে জারাহ, কাজী আবু ইউসুফ, ইমাম মুহাম্মদ, ইমাম জাফর প্রমুখ।

উপরোল্লিখিত বুযুর্গগণ ছাড়াও, ফযল ইব্নে ওকীম, হামজা ইব্নে হাবীবে যাইয়্যাত, ইবরাহীম ইব্নে তুমহান, সাঈদ ইব্নে আউর, উমর ইব্নে মায়মুনা এবং আফযল ইব্নে মুসা প্রমুখের নাম উল্লেখযোগ্য।

লেখক: প্রতিষ্ঠাতা প্রিন্সিপাল ও শায়খুল হাদীস, জামিয়াতুন নূর আল কাসেমিয়া, উত্তরা, ঢাকা, প্রতিষ্ঠাতা প্রিন্সিপাল- ঢাকা উত্তরা রওজাতুস সালিহাত মহিলা মাদ্রাসা, খতীব-উত্তরা ১২নং সেক্টর বায়তুন নূর জামে মসজিদ, উপদেষ্টা- উম্মাহ ২৪ ডটকম এবং সাংগঠনিক সম্পাদক- জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশ।

আরও পড়তে পারেন- ‘মহিলা মাদ্রাসা শিক্ষা নিয়ে হাফেয মাওলানা নাজমুল হাসানের বিশেষ সাক্ষাৎকার’