Home ইসলাম ‘সাহাবায়ে কেরামের নমুনায় জীবন গড়তে পারলে যেকোন বিভ্রান্তি থেকে মুক্ত থাকা সহজ...

‘সাহাবায়ে কেরামের নমুনায় জীবন গড়তে পারলে যেকোন বিভ্রান্তি থেকে মুক্ত থাকা সহজ হবে’

জামিয়া আজিজুল উলূম বাবুনগরী মাদ্রাসার মাহফিলে বয়ান করছেন আল্লামা মুফতি জসিমুদ্দীন। ছবি- উম্মাহ।

আল জামিয়াতুল আহলিয়া দারুল উলূম মুঈনুল ইসলাম হাটহাজারী মাদ্রাসার সহকারী পরিচালক আল্লামা মুফতি জসিমুদ্দীন বলেছেন, তাকওয়াভিত্তিক জীবন গঠনের মধ্যেই মুসলিম জীবনের সফলতা নিহিত। আমাদের জীবন-যাপনের প্রতিটি ক্ষেত্রে যদি তাকওয়ার উপস্থিতি থাকে, তাহলে গুনাহ ও অন্যায় কর্মকাণ্ড থেকে যেমন নিজেকে হেফাজত রাখা সহজ হবে, তেমনি ইবাদত-বন্দেগী ও কল্যাণকর কাজে অধিকহারে সম্পৃক্ততায় প্রেরণা পাওয়া যাবে। তাই সবার আগে আমাদের অন্তরে আল্লাহর প্রতি গভীর ভালবাসা, আস্থা ও ভীতি মজবুত করতে হবে। আর এই তাক্বওয়া অর্জনের জন্য রাসূলের প্রতি ভালবাসা ও তাঁর সুন্নাতের পূর্ণ অনুসারী হতে হবে এবং রাসূলের সুন্নাহ অনুযায়ী জীবনকে সাজাতে হবে।

শুক্রবার (১৪ জানুয়ারী) চট্টগ্রামের ফটিকছড়িতে অবস্থিত দেশের প্রাচীনতম ঐতিহ্যবাহী দ্বীনি শিক্ষা কেন্দ্র আল জামিয়া ইসলামিয়া আজিজুল উলূম বাবুনগরের ৯৯তম বার্ষিক মাহফিলের দ্বিতীয় দিন বিশেষ অতিথির বয়ানে আল্লামা মুফতি জসিমুদ্দীন এসব কথা বলেন।

বয়ানে তিনি আরো বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা.)এর সুন্নাহর পূর্ণ অনুসারী হতে হলে আমাদেরকে সাহাবায়ে কেরাম (রাযি.)এর জীবনী জানতে হবে। তাঁদের জীবন-যাপনেই আমরা সুন্নাতের বাস্তবিক নমুনা খুঁজে পাব। কারণ, সাহাবায়ে কেরাম সম্পর্কে আল্লাহর ঘোষণা, আল্লাহ তাআলাও তাঁদের উপর সন্তুষ্ট ছিলেন এবং সাহাবায়ে কেরামও আল্লাহর উপর পূর্ণ সন্তুষ্ট ছিলেন। আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন, والذين اتبعوهم بإحسان رضي الله عنهم ورضوا عنه যেসকল ব্যক্তি তাদের জীবনের সকল ক্ষেত্রে সাহাবায়ে কেরামের অনুসরণ করবে ঈমান ও ইহসানের সাথে, তাদের জন্য আল্লাহর পক্ষ থেকে এই ঘোষণা প্রযোজ্য হবে যে, তাদের উপর আল্লাহ সন্তুষ্ট হয়ে গেছেন এবং তারাও আল্লাহর উপর পূর্ণ সন্তুষ্ট হয়ে গেছেন। এই আয়াতের ঘোষণা পরিপূর্ণ ইসলামের অনুসরণের মাধ্যমে যেসকল তাবেয়ীন সাহাবায়ে কেরামকে দেখেছেন তাদের জন্য যেমন প্রযোজ্য হবে, তেমনি তাফসীর অনুযায়ী কিয়ামত পর্যন্ত যেসকল মুসলমান সাহাবায়ে কেরামকে অনুসরণ করে চলবেন তাদের জন্যও এই আয়াতের ঘোষণা প্রযোজ্য হবে।

আল্লামা মুফতি জসিমুদ্দীন বলেন, তাহলে এবার শুনুন সাহাবায়ে কেরামের জীবন-যাপন কেমন ছিল। এ প্রসঙ্গে আল্লাহ রাব্বুল আলামীন ইরশাদ করেন-

مُحَمَّدٌ رَّسُوۡلُ اللّٰهِ ؕ وَ الَّذِیۡنَ مَعَهٗۤ اَشِدَّآءُ عَلَی الۡکُفَّارِ رُحَمَآءُ بَیۡنَهُمۡ تَرٰىهُمۡ رُکَّعًا سُجَّدًا یَّبۡتَغُوۡنَ فَضۡلًا مِّنَ اللّٰهِ وَ رِضۡوَانًا ۫ سِیۡمَاهُمۡ فِیۡ وُجُوۡهِهِمۡ مِّنۡ اَثَرِ السُّجُوۡدِ ؕ

অর্থাৎ- মুহাম্মদ আল্লাহর রাসূল এবং তার সাথে যারা আছে তারা কাফিরদের প্রতি অত্যন্ত কঠোর; পরস্পরের প্রতি সদয়, তুমি তাদেরকে রুকূকারী, সিজদাকারী অবস্থায় দেখতে পাবে। তারা আল্লাহর করুণা ও সন্তুষ্টি অনুসন্ধান করছে। তাদের আলামত হচ্ছে, তাদের চেহারায় সিজদার চি‎হ্ন থাকে।

আরও পড়তে পারেন-

আল্লামা মুফতি জসিমুদ্দীন বলেন, হযরত ওমর (রাযি.)এর জীবনী দেখুন, তিনি ঈমান গ্রহণের পূর্বে ইসলামের বিরুদ্ধে যেমন কঠোর ছিলেন, ঈমান গ্রহণের পর তেমনি কাফিরদের বিরুদ্ধে আরো বহুগুণে কঠোর হয়ে যান। আল্লাহর নবীর সাথে কোন কাফির যদি সামান্যতমও বেয়াদবি করতে উদ্যত হতেন, তখনই ওমর (রাযি.) অনুমতি প্রার্থনা করতেন যে, আমি এখনই তার গর্দান উড়িয়ে দিব। আল্লাহর নবী (সা.) উমরকে শান্ত করে বলতেন থাম, আমি হিদায়াতের আলো ছড়াতে দুনিয়াতে এসেছি, প্রতিশোধপরায়ণতার প্রদর্শন করতে নয়। এভাবে সাহাবায়ে কেরাম (রাযি.)ও আল্লাহ ও আল্লাহর নবীর প্রতি দৃঢ় ভালবাসা প্রদর্শন করেছেন এবং নবী (সা.)ও তাঁদেরকে ইসলামের নমুনা হিসেবে উত্তম আদর্শ দিয়ে গড়ে তুলেছেন।

তিনি বলেন, বর্তমানে মুসলমানদের মাঝে বিভ্রান্তি তৈরি করে ঈমানহারা করার জন্য বহুমুখী ষড়যন্ত্র চলছে। এসকল ষড়যন্ত্র ও বিভ্রান্তি থেকে মুক্ত থেকে নিজেদের ঈমান-আমলকে সহজে হেফাজত করতে চাইলে সাহাবায়ে কেরামের জীবনী পড়তে ও জানতে হবে। সাহাবায়ে কেরামের নমুনা অনুযায়ী জীবন গঠন করতে হবে। সাহাবায়ে কেরামের জীবনী জানা থাকলে কেউ বিভ্রান্ত করে ঈমানহারা ও মুসলমানদের ঐক্য বিনষ্ট করতে পারবে না।

আল জামিয়া ইসলামিয়া আজিজুল উলূম বাবুনগর মাদ্রাসার পরিচালক ও হেফাজতে ইসলামের আমির আল্লামা মুহিব্বুল্লাহ বাবুনগরীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত মাহফিলে আরো বক্তব্য রাখেন, দারুল উলূম হাটহাজারী মাদ্রাসার মুহতামিম আল্লামা মুহাম্মদ ইয়াহইয়া, শায়খুল হাদীস আল্লামা শেখ আহমদ, নাজিরহাট বড় মাদ্রাসার মহাপরিচালক মুফতি হাবিবুর রহমান কাসেমী, বাবুনগর মাদ্রাসার শায়খুল হাদীস মুফতি মাহমুদ হাসান, মিয়াখাননগর মাদ্রাসার মহাপরিচালক মাওলানা লোকমান হাকিম, আল্লামা আজিজুল হক আল মাদানী, ফতেহপুর মাদ্রাসার মুহতামিম মাহমুদুল হাসান ফতেহপুরী, পটিয়া মাদ্রাসার সহকারী পরিচালক মাওলানা ওবায়দুল্লাহ হামজাহ, মুহাদ্দিস জাকারিয়া আল আযহারী, মাওলানা খুরশিদ আলম কাসেমী, আব্দুল হক হক্কানী, মাওলানা ইলিয়াস হামিদী, মাওলানা মুফতি রিজওয়ান রফিকী, মাওলানা হাবিবুল্লাহ মাহমুদ কাসেমী, আল্লামা মোস্তফা নূরী, মুফতি খালেদ নানুপুরী, মাওলানা ইসমাইল খান, কারী আবু সাঈদ প্রমুখ।

শুক্রবার আসরের নামাজের পর বাবুনগর মাদ্রাসার সহকারী পরিচালক আইয়ুব বাবুনগরীর দোয়া ও মোনাজাতের মধ্যদিয়ে দুই দিনব্যাপী এই ইসলামী মহাসম্মেলনে সমাপ্তি ঘটে। এর আগে জুমার নামাজে দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে আগত হাজার হাজার ধর্মপ্রাণ মুসল্লি অংশগ্রহণ করেন।

উম্মাহ২৪ডটকম: এমএ

উম্মাহ পড়তে ক্লিক করুন-
https://www.ummah24.com

দেশি-বিদেশি খবরসহ ইসলামী ভাবধারার গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে ‘উম্মাহ’র ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।