Home রাজনীতি সমাজ, উম্মাহ ও দেশের কল্যাণে কাজ করতে হবে: হাটহাজারীতে আল্লামা উবায়দুল্লাহ ফারুক

সমাজ, উম্মাহ ও দেশের কল্যাণে কাজ করতে হবে: হাটহাজারীতে আল্লামা উবায়দুল্লাহ ফারুক

শতবর্ষ প্রাচীন ইসলামী রাজনৈতিক দল জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশ-এর সিনিয়র সহসভাপতি আল্লামা উবাইদুল্লাহ ফারুক বলেছেন, জমিয়ত দারুল উলূম দেওবন্দের আকাবিরগণের পবিত্র আমানত। দ্বীনের দাওয়াত তথা প্রসার-প্রসার, সঠিক পদ্দতিতে দ্বীনি ইলমের বিস্তার এবং সুন্নাত যিন্দা, আত্মশুদ্ধি ও বাতিলের মোকাবেলার ক্ষেত্রে যেমনিভাবে আমরা দারুল উলূম দেওবন্দকে অনুসরণ করি, তেমনিভাবে দেশ ও সমাজ গঠনসহ রাজনৈতিক ক্ষেত্রেও জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশ দারুল উলূম দেবওন্দের পবিত্র আমানত হিসেবে দেওবন্দী আকাবিরগণের অনুসরণ অনুকরণ করে থাকে। এই  আমানতকে যথাযথভাবে হেফাজত করা এবং পরিচালনা করা আমাদের ঈমানী দায়িত্ব।

সোমবার (৩১ জানুয়ারী) হাটহাজারীতে চট্টগ্রাম উত্তর জেলা এবং হাটহাজারী ও ফটিকছড়ি জমিয়ত, যুব জমিয়ত ও ছাত্র জমিয়তের এক যৌথ বৈঠকে প্রধান অতিথির বক্তব্যে আল্লামা উবায়দুল্লাহ ফারুক এসব কথা বলেন।

জমিয়ত কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য ও হাটহাজারী উপজেলা জমিয়তের সভাপতি মুহাদ্দিস মাওলানা জাফর আহমদের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত বৈঠকে বিশেষ অতিথি ছিলেন জমিয়তে উলামায়ে ইসলামের কেন্দ্রীয় অর্থসম্পাদক মুফতি জাকির হোসাইন কাসেমী।

সভায় আল্লামা উবায়দুল্লাহ ফারুক আরো বলেন, আজকে আমাদের অনেক ইসলামী রাজনৈতিক পার্টি ও নেতা দারুল উলূম দেওবন্দের মহান নীতি আদর্শ থেকে দূরে গেছেন। ইসলামী রাজনীতির ময়দানে সফলতার জন্য এটা বড় ঘাটতি। তাই রাজনীতির লাইনে কাজ করার জন্য উলামায়ে কেরামকে অবশ্যই দারুল উলূম দেওবন্দের নীতি-আদর্শের আওতায় থেকে কাজ করতে হবে। আর এই নীতি আদর্শের আওতায় কাজ করতে হলে অবশ্যই জমিয়তের পতাকা তলে সকলকে সমবেত হতে হবে।

তিনি বলেন, জমিয়ত দারুল উলূম দেওবন্দের আকাবিরগণের নীতি-আদর্শ ও দর্শনকে সমাজে প্রতিষ্ঠিত করতে চেষ্টা করে যাচ্ছে। দেওবন্দের উসূলের বাইরে গিয়ে সমাজে ইসলাম কায়েম করা অনেক কঠিন। কারণ, আমাদের আকাবিরগণ অনেক কঠিন থেকে কঠিনতর সময়ে সমাজে ইসলাম কায়েমের জন্য লড়াই করে, সংগ্রাম করে আমাদের জন্য উৎকৃষ্ট উদাহরণ তৈরি করে রেখে গেছেন।

আরও পড়তে পারেন-

তিনি বলেন, দলের সকল নেতা-কর্মীর মধ্যে ত্যাগের সর্বোচ্চ মানসিকতা থাকতে হবে। জমিয়তকে আরো এগিয়ে নিয়ে যেতে আমরা সকলে এই শপথ নেব যে, ব্যক্তি স্বার্থের ঊর্ধ্বে গিয়ে যে কোন মূল্যে আমরা জমিয়তকে এগিয়ে নিতে সর্বোচ্চ ত্যাগ স্বীকার করবো। আমাদের কর্মস্পৃহা বাড়াতে হবে, আমাদেরকে মাঠ পর্যায়ে সমাজ, উম্মাহ ও দেশের কল্যাণে কাজ করতে হবে।

ছাত্র জমিয়তের নেতা-কর্মীদের উদ্দেশ্যে কঠোর অধ্যবসায়ের মাধ্যমে যোগ্য আলেম হয়ে গড়ে ওঠার প্রতি গুরুত্বারোপ করে আল্লামা উবায়দুল্লাহ ফারুক বলেন, ছাত্ররাই সামাজিক ও জাতীয় পর্যায়ে ইনসাফ, সুশাসন ও সুবিচার প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে আগামী দিনে দেশের নেতৃত্ব দিবে। পাশাপাশি সাধারণ মুসলমানদেরকে বিভ্রান্ত ও ঈমানহারা করার মিশনে নিয়োজিত বিভিন্ন বাতিল ফিরকার মোকাবেলা করতে হবে আপনাদেরকে। বিশেষ করে এনজিও ও খ্রীস্টান মিশনারী কর্তৃক মুসলমানদেরকে ঈমানহারা করার সুগভীর চক্রান্তের জাল থেকে জাতিকে উদ্ধার করতে ছাত্র জমিয়তকে বিশেষ ভূমিকা রাখতে হবে। শক্তিশালী বাংলাদেশ গড়া এবং রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে লুটপাট, দমন-পীড়ন ও অর্থপাচার বন্ধ করে সুশাসন ও ইনসাফ প্রতিষ্ঠার মহৎ উদ্দেশ্যকে সামনে রেখে তৃণমূল পর্যায় থেকে কাজ করতে হবে আপনাদেরকে। এসব গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করার কাজে দুর্বল ইলম ও উপযুক্ত প্রশিক্ষণ ছাড়া জাতিকে সঠিকভাবে নেতৃত্ব দিতে পারবেন না।

তিনি বলেন, পড়াশোনার পাশাপাশি ব্যক্তিগত জীবনেও আপনারা সুশৃঙ্খল ও আদব বজায় রেখে চলাফেরা ও কথাবর্তা বলবেন। পারস্পরিক সৌহার্দপূর্ণ আচরণ করবেন। এমনভাবে জীবন গড়বেন, যেন আপনাদেরকে দেখে সাধারণ মানুষ ইসলামের প্রতি এবং জমিয়তের রাজনীতির প্রতি আকৃষ্ট হয়। মনে রাখবেন, জমিয়ত ক্ষমতার জন্য বা পার্থিব স্বার্থসিদ্ধির জন্য রাজনীতি করে না। জমিয়তের রাজনীতি হলো আল্লাহ ও আল্লাহর রাসূলের সন্তুষ্টির মধ্য দিয়ে রাষ্ট্রে ও সমাজে ইনসাফ প্রতিষ্ঠা করা।

সভায় বিশেষ অতিথির বক্তব্যে মুফতি জাকির হোসাইন কাসেমী বলেন, জনদাবী আদায়ে আদর্শবান ছাত্র রাজনীতির ভূমিকা অনস্বীর্কায। অন্য কোনো শ্রেণি বা পেশার মানুষ ততটা সংগঠিত হতে পারে না যতটা হতে পারে ছাত্ররা। ছাত্ররা সমাজের সবচেয়ে বড় সচেতন গোষ্ঠী। রাজনৈতিক নেতৃত্ব বিপথগামী হতে শুরু করলে ছাত্ররাই প্রথমে ফুঁসে উঠে তার প্রতিবাদ জানায়। এজন্যই সুশৃংখল এবং সুসংগঠিত ছাত্র রাজনীতি যেকোনো দেশের সার্বিক ইতিবাচক বিষয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে।

তরুণ ছাত্রদেরকে আগামীর নেতা ও দেশ গড়ার কারিগর উল্লেখ করে তিনি আরো বলেন, কঠোর অধ্যাবসায়ের মাধ্যমে পড়াশোনার পাশাপাশি এখন থেকেই ন্যয়-নীতি ও ইনসাফপূর্ণ দেশ ও সমাজ গঠনের প্রশিক্ষণ নিয়ে মাঠ পর্যায়ে কাজ করার প্রশিক্ষণ নিতে হবে। মনে রাখবেন, সমাজ ও রাষ্ট্রের সকল স্তরে ন্যায় নীতি প্রতিষ্ঠিত করতে হলে ইসলামী শাসন ব্যবস্থার বিকল্প নেই৷

বৈঠকে অন্যান্যদের মধ্যে আরো উপস্থিত ছিলেন জমিয়ত কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য ও হাটহাজারী উপজেলা জমিয়তের সাধারণ সম্পাদক সদ্য কারামুক্ত মাওলানা এমরান শিকদার, ছাত্র জমিয়ত বাংলাদেশ-এর কেন্দ্রীয় কমিটির সহ সাংগঠনিক সম্পাদক ইব্রাহীম খলিলুল্লাহ, ছাত্র জমিয়ত নেতা মুনশি সোহাইল মাহবুব, ছাত্র জমিয়ত চট্টগ্রাম উত্তর জেলা শাখার আহ্বায়ক সাব্বির বিন ফজলুর, উত্তর জেলার সদস্য সচিব আঃ হান্নান, ছাত্র জমিয়ত হাটহাজারী উপজেলা শাখার সভাপতি ফোরকান আলী, সেক্রেটারি সাইফুল ইসলাম ও সাংগঠনিক সম্পাদক মাহমুদ এবং ছাত্র জমিয়ত ফটিকছড়ি উপজেলা শাখার সভাপতি মাওলানা আজিজ, সেক্রেটারি লোকমান, সাংগঠনিক সম্পাদক শাহাদাত হোসাইন প্রমুখ।

উম্মাহ২৪ডটকম: এমএ

উম্মাহ পড়তে ক্লিক করুন-
https://www.ummah24.com

দেশি-বিদেশি খবরসহ ইসলামী ভাবধারার গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে ‘উম্মাহ’র ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।