Home ইসলাম ইসলামই একমাত্র মনোনীত ধর্ম

ইসলামই একমাত্র মনোনীত ধর্ম

- মাওলানা কবীর আহমদ (দা.বা.)।

।। আল্লামা কবীর আহমদ ।।

মহাসত্য পবিত্র কুরআনে ইরশাদ হয়েছে- إنَّ الدين عند الله الإسلام ‘আল্লাহর কাছে একমাত্র মনোনীত ধর্ম ইসলাম’। (আলে ইমরান- ১৯)।

ইসলামের প্রকৃত অর্থ
ইসলাম এমন একটি শব্দ, যা জাতি, ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সবার কাছে সুপরিচিত। ইসলাম শব্দের প্রকৃত অর্থ হলো, নিজেকে আল্লাহ তাআলার হুকুম-আহকামের কাছে পুরোপুরি সোপর্দ করে দেওয়া, অপর্ণ করে দেওয়া এবং সম্পূর্ণরূপে তাঁর আনুগত্য করা, আজ্ঞাবহ হওয়া।

পূর্ববর্তী নবীগণও মুসলিম ছিলেন
পূর্ববর্তী প্রত্যেক নবী এবং রাসূলের যামানায় যারা নিজ নিজ নবীর উপর ঈমান এনেছেন এবং তাঁদের রাসূলের আনীত বিধি-বিধানের পূর্ণাঙ্গ অনুসরণ করে আজ্ঞাবহ হয়েছেন, তারাও উপর্যুক্ত অর্থে মুসলিম। তাদের দ্বীন ছিল ‘ইসলাম’। এ অর্থেই পূর্ববর্তী অনেক রাসূল (সা.) নিজেদেরকে মুসলিম হিসেবে পরিচয় দিয়েছেন। যেমন, হযরত নূহ (আ.) বলেছেন- و أمرت أن أكون من المسلمين “আর আমি মুসলমানদের অন্তর্ভুক্ত হওয়ার আদিষ্ট হয়েছি”। (সূরা ইউনুস ৭২ আয়াত)।

এভাবে হযরত ইবরাহীম (আ.) নিজেকে এবং নিজের উম্মতকে মুসলিম জাতি বলে সম্বোধন করেছেন। যেমন- رَبنا واجْعَلْنا مُسْلمَيْنِ لكَ و مِنْ ذُرّيتنا أمة مسلمة لكَ

‘হে আমাদের রব, আমাদেরকে আপনার অনুগত করুন এবং আমাদের বংশধরের মধ্য থেকে আপনার অনুগত উম্মত বানান’। (সূরা বাকারা- ১২৮ আয়াত)।

একই অর্থে হযরত ঈসা (আ.)এর হাওয়ারীগণ নিজেদেরকে মুসলমান বলে আখ্যা দিয়েছেন। যেমন- وأشْهَدْ بأنا مُسْلمُوْنَ “আর আপনি সাক্ষী থাকুন যে, আমরা আনুগত্যশীল”। (সূরা আলে ইমরান- ৫২ আয়াত)।

ইসলাম শব্দের দ্বিতীয় ব্যবহার ও আলোচ্য আয়াতের সারমর্ম
অনেক ক্ষেত্রে ইসলাম শব্দটি শুধু সর্বশেষ নবী হযরত মুহাম্মদ (সা.)এর আনীত দ্বীন ও শরীয়তকে বুঝায়। যে দ্বীন এখনো চলমান এবং কিয়ামত পর্যন্ত চলবে। এ অর্থে ইসলাম শব্দটি ব্যবহার হলে তা কেবল দ্বীনে মুহাম্মাদীকে বুঝাবে এবং তা শুধু তাদের জন্যই নির্দিষ্ট হবে। আমাদের আলোচ্য আয়াতে উভয় ব্যবহারকে লক্ষ্য রেখে আয়াতের ব্যাখ্যা করার অবকাশ রয়েছে।

আয়াতটির প্রথম ব্যবহার অনুযায়ী ব্যাখ্যা দাঁড়াবে, একমাত্র আল্লাহ তাআলার কাছে গ্রহণযোগ্য দ্বীন হলো, দ্বীনে ইসলাম। অর্থাৎ নিজেকে আল্লাহ তায়ালার আনুগত্যে সোপর্দ করা এবং প্রত্যেক যুগে যে নবী ও রাসূল এসেছেন এবং তিনি যেসব বিধি-বিধান নিয়ে এসেছেন, সেগুলোর উপর ঈমান আনয়ন করা এবং তার উপর আমল করা।

এ অর্থে যদিও বা দ্বীনে মুহাম্মদীর কথা নির্দিষ্টভাবে উল্লেখ নেই। তবে শব্দের ব্যপকতার মাঝে নবী মুহাম্মদ (সা.)এর আনীত বিধি-বিধানের উপর ঈমান আনয়ন করা এবং সেগুলোর উপর আমল করা ইত্যাদি সবই অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। প্রত্যেক নবী ও রাসূল (সা.)এর যামানায় নিজ নিজ আনীত দ্বীন ও শরীয়ত ছিলো আল্লাহর কাছে প্রিয়, গ্রহণযোগ্য ও পছন্দিদাহ। হযরত নূহ (আ.)এর যামানায় গ্রহণযোগ্য দ্বীন ছিলো ঐ দ্বীন ও শরীয়ত, যা নূহ (আ.) প্রচার করেছিলেন। এমনিরূপে ইবরাহীম (আ.) যে ধর্ম নিয়ে এসেছিলেন, সেটাই ছিল তার যুগের মাকবুল দ্বীন। এভাবে হযরত ঈসা (আ.)এর যুগে ইসলাম ছিল ঐটাই, যা তাঁকে ইঞ্জিল রূপে দেওয়া হয়েছিলো। তবে শেষ নবী হযরত মুহাম্মদ এর আগমনের পর পূর্ববর্তী শরীয়ত রহিত হয়ে গেছে। ফলে এখন সারমর্ম দাঁড়াবে এই-

আর সবশেষ আখেরী নবী হযরত মুহাম্মদ (সা.)এর যুগে ইসলাম বলা হবে ঐ দ্বীন ও শরীয়তকে, যা তাঁর উপর কুরআন এবং সুন্নাহ আকারে অবতীর্ণ হয়েছে।

আরও পড়তে পারেন-

মোটকথা, প্রত্যেক নবীর যুগে তাঁর আনীত দ্বীনই ছিল, দ্বীনে ইসলাম এবং আল্লাহ তাআলার কাছে মকবুল ও গৃহীত ধর্ম। তবে পরবর্তীতে ক্রমান্বয়ে একে একে সবগুলো রহিত হয়ে গেছে। সর্বশেষে বাকী রইল শুধু আখেরী নবীর দ্বীন- দ্বীনে মুহাম্মাদী, দ্বীনে ইসলাম। যা কিয়ামত পর্যন্ত বহাল থাকবে। এ কারণেই বলা হয়ে থাকে, বর্তমানে গ্রহণযোগ্য ও সত্য ধর্ম একমাত্র ইসলাম।

ইসলাম শব্দের দ্বিতীয় ব্যবহার অনুযায়ী আয়াতের ব্যাখ্যা করলে উদ্দেশ্য দাঁড়াবে যে, হযরত মুহাম্মদ (সা.)এর আনীত দ্বীনই একমাত্র আল্লাহর কাছে গ্রহণযোগ্য ও সত্য। বর্তমান যুগে শুধু তার আনীত দ্বীনকেই ইসলাম বলা হবে এবং তাঁর অনুসারী ও তার প্রতি ঈমানগ্রহণকারীকেই শুধু মুসলিম বলা হবে। পূর্ববর্তী নবীদের প্রতি ঈমান গ্রহণ কারীদেরকে যদিও সেই যমানায় মুসলিম বলা হতো, কিন্তু বর্তমান যুগে কেউ সেই পূর্ববর্তী কোনো নবীর উপর ঈমান আনলেও তাকে আর মুসলিম বলা যাবে না। কেননা শেষ নবীর আগমনের মধ্য দিয়ে তা রহিত হয়ে গেছে।

পূর্বোল্লিখিত উভয় বক্তব্যের ফলাফল অভিন্ন। তা হলো, প্রত্যেক পয়গম্বরের যুগে আল্লাহ তাআলার কাছে মনোনীত দ্বীন ছিল ঐ ইসলাম, যা ঐ যুগের নবী (আ.) প্রচার করেছেন। তবে পূর্বের সকল শরীয়তকে রহিত করা হয়েছে শেষ নবী (সা.)এর আগমনের মাধ্যমে। সেই আগের শরীয়তের কোনো অনুসারীকে বর্তমানে মুসলিম আখ্যা দেওয়া হবে না। সুতরাং বর্তমানে তাকেই মুসলিম বলা হবে, কুরআন ও হযরত মুহাম্মদ (সা.)এর প্রতি যে ঈমান এনেছে। কেননা, বর্তমান যুগে শুধু এটাই আল্লাহ তাআলার কাছে গৃহীত। ইসলাম ব্যতীত ভিন্ন কোন ধর্মই মকবুল নয় এবং আখিরাতে মুক্তি লাভের ওসিলাও নয়। আর এ আলোচ্য বিষয় সম্পর্কে কুরআনে বহু আয়াতে কারীমা রয়েছে, তা থেকে একটি আয়াতের ভাষ্য এমন যে- ومن يبتغ غير الإسلام دينا، فلن يقبل منه

“যে ব্যক্তি ইসলাম ছাড়া অন্য কোন ধর্ম তালাশ করবে, কখনোই তার কাছ থেকে তা কবুল করা হবে না, বরং তা হবে পরিত্যক্ত”। (আলে ইমরান- ৫৮)।

‘সব ধর্মই সমান’; এক ভ্রষ্ট চিন্তা
কুরআনুল কারীমের আয়াতে সুস্পষ্টভাবে ঐ সকল ইসলাম বৈরি ও নাস্তিক্য ভ্রান্ত চিন্তা-ভাবনাকে সমূলে খতম করে দেওয়া হয়েছে, যেগুলের মাধ্যমে ইসলামকে উদারতার নামে কুফর-ইসলামকে একাকার করার অপচেষ্টা করা হয় এবং লোক সমাজে এটা বদ্ধমূল করে দেওয়া হয় যে, দুনিয়ার প্রত্যেকটা ধর্ম, চাই তা ইহুদী বা খ্রিস্টান হোক, অথবা প্রতিমা পূজা হোক, সবগুলোই পরকালে মুক্তি লাভের মাধ্যম হবে। শর্ত হলো নেক আমল করতে হবে এবং উত্তম চরিত্রের অধিকারী হতে হবে।

এসব বক্তব্যের মূল উদ্দেশ্য হলো, ইসলামের ভিত্তিকে সমূলে ধ্বংস করে দেওয়া। তাঁদের বক্তব্যের অর্থ দাঁড়ায়, ইসলাম ধর্মের কোন বাস্তবতা নেই, তা কেবল অলীক চিন্তাছাড়া কিছু নয়। নাউযুবিল্লাহ।

কুরআনের ঐ আয়াতসমূহ তাদের এসব অসার উক্তির দাঁতভাঙ্গা জবাব দেয়। যেমনভাবে আলো এবং অন্ধকারকে এক মনে করা হয় না, তেমনিভাবে একথাও বোধগম্যহীন ও অসম্ভব যে, আল্লাহ তাআলার কাছে নাফরমান এবং অবাধ্য বান্দা এমনই পছন্দের ও মহব্বতের পাত্র হবেন, যেমনটা আনুগত্যশীল ফরমাবরদার বান্দারা হয়ে থাকেন।

আসল কথা হলো, যে ব্যক্তি ইসলামের মৌলিক বিষয়াবলী থেকে কোন একটাকে অস্বীকার করবে। তৎক্ষণাৎ সে হয়ে যাবে, আল্লাহ তাআলার অবাধ্য বান্দা এবং রাসূলের দুশমন।

পরকালে মুক্তি এবং নাজাত পাওয়ার একমাত্র রাস্তা হলো, আল্লাহ এবং তাঁর রাসূলের আনুগত্য করা। যার মাঝে থাকবে না, আল্লাহ এবং তাঁর রাসূলের আনুগত্য, তাঁর কোন আমলই আল্লাহ তায়ালার দরবারে গৃহীত হবে না। (মাআরিফুল কুরআন, ১/৩৬)।

বর্তমানে মহান সৃষ্টিকর্তা আল্লাহ তাআলার দরবারে গৃহীত ও মনোনীত দ্বীন ও ধর্ম একমাত্র ইসলাম। বিষয়টি সরল যুক্তির আলোকেও প্রমাণিত। তাই আখিরাতে মুক্তি পেতে হলে একমাত্র ইসলামকেই অনুসরণ করতে হবে। অন্য কোনো ধর্মের অনুসরণে পরকালে মুক্তি অর্জন কখনো সম্ভব নয়। আল্লাহ তাআলা আমাদেরকে আল্লাহ এবং রাসূল (সা.)এর আনুগত্য এবং তাঁর আদেশ-নিষেধ পূর্ণরূপে মেনে চলার তাওফিক দান করুন। আমীন।

লেখক: নাযেমে তালিমাত ও মুহাদ্দিস, জামিয়া আহলিয়া দারুল উলূম মুঈনুল হাটহাজারী, চট্টগ্রাম।

উম্মাহ২৪ডটকম: এমএ

উম্মাহ পড়তে ক্লিক করুন-
https://www.ummah24.com

দেশি-বিদেশি খবরসহ ইসলামী ভাবধারার গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে ‘উম্মাহ’র ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।