Home প্রবন্ধ-নিবন্ধ কথিত ‘ভালবাসা দিবস’: ঈমান বিধ্বংসী সাংস্কৃতিক আগ্রাসন

কথিত ‘ভালবাসা দিবস’: ঈমান বিধ্বংসী সাংস্কৃতিক আগ্রাসন

।। মাওলানা শফিকুল ইসলাম আমিনী ।।

ভ্যালেন্টাইন’স ডে বর্তমানে ঈমান ধ্বংসের অন্যতম নব হাতিয়ার। যেখানে পাশ্চাত্যের পাশাপাশি অনেক মুসলিম দেশের তরুণ-তরুণী,যুবক-যুবতী এমনকি বৃদ্ধ-বৃদ্ধারাও সস্তা ভালবাসা প্রকাশের খাতিরে হুমড়ি খেয়ে পড়ে। বিকিয়ে দেয় তাদের বহু শতাব্দি ধরে লালিত ইসলামী তামাদ্দুন ও স্বকীয়তা। নিজের অজান্তে খুইয়ে বসে ঈমানের ফল্গুধারা। ইতিহাসের দিকে তাকালে দেখা যায় এটি শুধু খ্রীস্টান পাদ্রী-সাধুর স্মরণ বৈ কিছুই নয়।

২৬৯ সালে সেন্ট ভ্যালেন্টাইন নামের একজনখ্রিস্টান পাদ্রী ও চিকিৎসক রোমান সম্রাট দ্বিতীয় ক্লাডিয়াস কর্তৃক বন্দী হয়,খ্রিস্টান ধর্ম প্রচারের অভিযোগে। তিনি বন্দী অবস্থায় দৃষ্টিহীন একটি মেয়েকে চিকিৎসার মাধ্যমে সুস্থ করে তোলেন । তখন তার জনপ্রিয়তা বেড়ে যাওয়ায় রাজা তাকে মৃত্যুদন্ড দেন। সে দিনটি ছিলো ১৪ই ফেব্রুয়ারি। অতঃপর ৪৯৬ সালে পোপ সেন্ট জেলাসিও ১ম জুলিয়াস ভ্যালেন্টাইন ’স স্মরণে ১৪ই ফেব্রুয়ারিকে ভালবাসা দিবস হিসেবে ঘোষণা করে। কোনো কোনো ইতিহাসে পাওয়া যায় যে,উক্ত সম্রাট তার সেনাবাহিনীতে বিবাহিত পুরুষদের ভর্তিহার কম দেখে পুরুষদের বিবাহ নিষিদ্ধ করেন। কিন্তু সে পাদ্রী গোপনে বিয়ে করলে তাকে মৃত্যুদণ্ড দেয়া হয়।ফাসিঁর দিনটি ছিলো ১৪ ফেব্রুয়ারি। তখন থেকেই পালন হয়ে আসছে ‘ভ্যালেন্টাইন ডে’ বা বিশ্ব ভালবাসা দিবস।

বাংলাদেশে এ দিবসটি পালন শুরু হয় ১৯৯৩ সালে। তখন থেকেই এর ব্যাপক প্রচার ও প্রসার শুরু হয় । স্বার্থান্বেষী কিছু মহলের প্ররোচণায় ও ব্যবসায়িক মুনাফা অর্জনের জন্য মিডিয়া তা ফলাও করে প্রচার করে। শুরু হয় ভালবাসা দিবস নামক এই বিষবাস্প। রাস্তা-ঘাটে, পার্কে-উদ্যানে, বিশ্ববিদ্যালয়-কলেজে, স্কুল–ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে এমনকি অফিস- আদালত ও কর্মস্থলে শুরু হয় ভালবাসা আদান প্রদানের নগ্ন প্রতিযোগিতা। বেসামাল হয়ে পড়ে সব প্রেমিক প্রেমিকারা। কার চেয়ে কে বেশি বেহায়াপনার মাধ্যমে তাদের ভালবাসাকে জাহির করতে পারে তার স্বাক্ষর রাখে এই ১৪ই ফেব্রুয়ারিতে। সকাল থেকে গভীর রাত অবধি চলে তাদের উদযাপন। বেগানা ছেলে মেয়েরা তাদের রুপ সৈান্দর্য দেখিয়ে বেড়ায় তাদের পছন্দের মানুষটিকে। অথচ এটি একটি মুসলিম দেশ।

মুসলমানদের রয়েছে নিজস্ব আত্মসম্মানবোধ। তাদের উচিত বিজাতীয় এই সংস্কৃতিকে না বলা । কারণ যারা বিজাতীয় কালচারকে উদযাপন করবে তাদের জন্য রয়েছে মারাত্মক পরিণাম। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, যে ব্যক্তি যে জাতির অনুকরণ করবে সে ব্যক্তি সে জাতিরই একজন বলে গণ্য হবে। (আবু দাউদ হাদীস-৪০৩১)।

আরও পড়তে পারেন-

আল্লাহ তায়ালা বলেন-যারা মুমিনদের মধ্যে অশ্লীলতার প্রসার কামনা করে তাদের জন্য আছে দুনিয়া ও আখিরাতে যন্ত্রনাদায়ক শাস্তি। (সূরা আল- নূর, ১৯ আয়াত)।

বর্তমানে ভালবাসা দিবসের প্রসারতার কারণে নির্লজ্জতা বৃদ্ধি পাচ্ছে। বাড়ছে বেহায়াপনা, যিনা-ব্যভিচার ও সস্তা ভোগের প্রতারণা। পৃথিবীতে যখন ভালবাসা দিবসের অস্তিত্ব ছিলো না, তখন কি ভালবাসা ছিলো না? মানুষের মাঝে কি ছিলো না মায়া-মমতা ও আত্মার বন্ধন? সবই ছিলো। তবে তা ছিলো অন্দর মহলে, অন্তর কাননে ও সুভাসিত হয়ে ! নিজ নিজ ধর্ম ও সংস্কৃতিকে আকঁড়ে ধরে। আসলে, যখন মানুষের ঘরের মধ্যে ভালবাসা না থাকে, সেখানে বিরাজ করে অশান্তির কালো ছায়া, তখনই মানুষ ভালবাসার ভান ধরে। ভিতরের ক্ষতকে ঢাকতে বাহ্যিকভাবে ভালবাসার অভিনয় করে। যখনই তা প্রকাশের কোনো উপলক্ষ পায় তখন বাছ-বিচার না করে তা লুফে নেয়। যা হয়েছে ভালবাসা দিবসকে ঘিরে।

এ ভালবাসা দিবস ঈমান বিধ্বংসী, ঈমান খোয়ানোর পথ, মুসলিম জাতিকে পাশ্চাত্যের ভাবধারায় টেনে নেয়ার গভীর ষড়যন্ত্র। আমাদের কোমলমতি তরুণ-তরুণীরা তাদের ধর্মকে ভুলতে বসেছে। হারাচ্ছে তাদের সম্ভ্রম । মানসিকতা বিগড়ে যাচ্ছে। তাদের আবেগকে কিনে নিচ্ছে এ দিবসকে পালনের মধ্য দিয়ে। বিগত কয়েক বছর ধরে দেখা যাচ্ছে এই ভালবাসা দিবসকে সার্বজনীন রূপ দেয়ার চেষ্টা করা হচ্ছে। এ দিনটিকে ঘিরে উন্মাদনা ও উত্তেজনা বিরাজ করে ব্যবসায়ী থেকে শুরু করে রেস্তোরা,হোটেল- মোটেল ও ফুল ব্যবসায়ীদের মাঝে ।

এ দিবসের জন্য তারা বিশেষ অফার, আয়োজন, অনুষ্ঠানের পসরা সাজিয়ে বসে। ফেরি করে বেড়ায় ভালবাসার সামান। উদ্দেশ্য নিজেদের ব্যবসায় মুনাফা অর্জন। হোক না আমাদের তরুণ প্রজন্মকে ধূলিস্যাৎ করে। তাতে কার কী আসে যায়! এজন্য এখনই সতর্ক হওয়ার সময়, এ সমস্ত পশ্চিমা সংস্কৃতিকে পায়ে ঠেলে ইসলামি জীবনাচারকে চর্চা করার। আমাদের প্রত্যেক পরিবারের কর্তাব্যক্তিকে সামলাতে হবে পরিবারের সদস্যদের, যাতে সবাই এহেন ঘৃণ্য ঈমান ধ্বংসের উদযাপন থেকে বিরত থাকে।

-মাওলানা শফিকুল ইসলাম আমিনী, শিক্ষক- জামিয়া আহলিয়া দারুল উলূম হাটহাজারী এবং সহকারী সম্পাদক- মাসিক মুঈনুল ইসলাম।

উম্মাহ২৪ডটকম: এমএ

উম্মাহ পড়তে ক্লিক করুন-
https://www.ummah24.com

দেশি-বিদেশি খবরসহ ইসলামী ভাবধারার গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে ‘উম্মাহ’র ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।