Home ফিকহ ও মাসায়েল ইসলামের আলোকে রজব মাসের করণীয় ও বর্জনীয়

ইসলামের আলোকে রজব মাসের করণীয় ও বর্জনীয়

।। মিশকাত বিন আমির হোসেন ।।

‘আল্লাহুম্মা বারাকলানা ফি রাজাবা ওয়া শাবানা ওয়া বাল্লিগনা রামাদান।’ অর্থ : হে আল্লাহ! আপনি রজব ও শাবান মাসকে আমাদের জন্য বরকতময় করুন। এবং আমাদেরকে রমজান মাস পর্যন্ত (হায়াত দিন) পৌঁছে দিন।

আল্লাহতায়ালা ইরশাদ করেন, ‘নিশ্চয় আল্লাহতায়ালার বিধান মতে আল্লাহর নিকট মাসের সংখ্যা বার মাস সেই দিন হতে যেই দিন তিনি আকাশ মণ্ডল এবং পৃথিবী সৃষ্টি করেছেন, তন্মধ্যে চারটি সম্মানিত। রজব ও শাবান মাস হলো রমজান মাসের প্রস্তুতি। এ প্রস্তুতি শারীরিক, মানসিক, আর্থিক অর্থাৎ সার্বিক বা সামগ্রিক। রমজান মাসে যেহেতু ইবাদতের সময়সূচি পরিবর্তন হবে, তাই সে অনুযায়ী প্রস্তুতি নিতে হবে, এবং রমজান মাসের শেষ দশকে অতীব গুরুত্বপূর্ণ আমল ইতিকাফ রয়েছে, তাই আগে থেকেই তার জন্য প্রস্তুতি গ্রহণ করতে হবে।

পবিত্র কোরআনে যে চারটি মাসকে সম্মানিত বলে আখ্যায়িত করা হয়েছে, রজব মাস তার একটি। আরবি সপ্তম মাস রজব। ‘রজব শব্দের অর্থ সম্মানিত’ আর রজব হলো আল্লাহতায়ালার বিশেষ অনুগ্রহের মাস। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘বছরে ১২টি মাস। এরমধ্যে ৪টি মাস সম্মানিত। তিনটি মাস ধারাবাহিক : আর তা হচ্ছে- জিলক্বদ, জিলহজ ও মহররম। আর চতুর্থ মাসটি হল- রজব, যা জমাদিউল উখরা ও শাবান মাসের মর্ধবর্তী মাস।’ (বুখারি)।

আবার এ রজব মাস আসলে ইসলামের নামে বানোয়াট ভিত্তিহীন কুসংস্কার বেদাআত প্রচলিত আছে। এবং ভুয়া যেসব আমল প্রচলিত আছে বেশি, তার ভিতরে এ মাসটি হলো একটি রজব মাস। যার কারণে একজন মুসলমানকে মাসের গুরুত্ব ও তাৎপর্য ও করণীয় পাশাপাশি এ মাস উপলক্ষে কুসংস্কার বর্জনীয় বিষয় গুলি জানা অত্যন্ত জরুরী। রজব মাসের ফজিলত এবং একটিমাত্র বিষয়ে পয়েন্ট আছে, আর তা হলো সম্মানিত চার মাসের এই মাস হল একটি রজব। বিদায় সম্মানিত মাস উপলক্ষে এই মাসের মর্যাদা রয়েছে, এ মাসে যুদ্ধ বিদ্রোহ করা যায় না। আল্লাহ তাআলা বলেছেন — নিজের উপর অবিচার অত্যাচার পাপাচার করা যাবে না, বিদায় গুনাহ ইত্যাদি করা যাবে না। পাপাচার ইত্যাদি না করার ব্যাপারে সচেতন থাকতে হবে। এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ দিকের বাইরে রজবের ফজিলত এবং মর্যাদা কে কেন্দ্র করে কুরআন এবং সুন্নাহ এর বিশুদ্ধ সূত্রে একটি হাদীসে বর্ণিত হয় নাই।

বিধায় মর্যাদার দিকে এ মাস হল সম্মানিত মাস। এই মাস কে কেন্দ্র করে যে সমস্ত ভুল ধারণা আমাদের সমাজে প্রচলিত আছে, তারমধ্যে অনেকেই মনে করে এই মাসটা মেরাজের মাস। এবং এই মাসের ২৭ তারিখে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের মেরাজ হয়েছে। অনেক মুসলমানরা এই ধারণা রাখেন। আমাদের সমাজে রজব মাসের চাঁদ উঠলে পত্র পত্রিকাতে মিডিয়াতে দেখবেন যে পবিত্র রজব মাসের চাঁদ দেখা গিয়েছে অমুক তারিখে শবে মেরাজ অর্থাৎ (সেই হিসাবে ২৭ তারিখে শবে মেরাজ) রজব মাস মানেই হলো মেরাজের মাস।

আরও পড়তে পারেন-

এর মূল প্রতিপাদ্য হলো মেরাজের মাস। এ মাসের ফজিলত এবং মর্যাদা আছে বলেই অনেকেই ধারণা রাখে, অথচ এ মাসের কোরআন এবং সুন্নাহর নূন্যতম কোন কিছুই নেই। হাদীস শাস্ত্রের একজন সবচাইতে বড় মাপের হাদীস বিশারদ হাফেজ ইবনে হাজার আসকালানী রহিমাহুল্লাহ তিনি বলেন : কোন কোন গল্পবাজ বক্তা বা লেখক তারা মানুষদের জানাই যে নবী করিম মেরাজের ঘটনা নাকি রজব মাসের ২৭ হয়েছে। তিনি বলেন যে, ২৭ তারিখে হয়েছে এটা মিথ্যাচার। নবী করিম এর মেরাজ ২৭ তারিখে হয়েছে এরকম কোনো গ্রহণযোগ্য বর্ণনা পাওয়া যায়নি।

নবী করিম সাঃ এর মেরাজ হয়েছে এটা ঠিক, কোরআন দ্বারাই প্রমাণিত, এটাকে অস্বীকার করলে ঈমান থাকবেনা। এটি আরেক বিষয় কিন্তু রজব মাসে হয়েছে রজব মাসের ২৭ তারিখে হয়েছে এটার কোনো গ্রহণযোগ্য ভিত্তি কুরআন এবং সুন্নাহ পাওয়া যায় না। মেরাজ টা ঠিক কোন মাসে হয়েছে কোন দিনে হয়েছে কোন সময় হয়েছে এই প্রসঙ্গে ‘ইমাম ইবনে তাইমিয়া রহিমাহুল্লাহ বলেছেন যে বিশুদ্ধ কোন বর্ণনা দাঁড়াই বিশুদ্ধভাবে কোথাও পাওয়া যায় না, কোন দিনের কথা জানা যায় না, কোন সময়ের কোন তারিখের কথা জানা যায় না, যে অমুক তারিখে অমুক দিনে অমুক মাসে মেরাজ হয়েছে। মেরাজ হয়েছে সেটাই নিশ্চিত কিন্তু তারিখটা সংরক্ষিত নয়। এ বিষয়ে যত গুলো বর্ণনা পাওয়া যায় কোনটির গ্রহণযোগ্য নয়।

এ মাসকে মেরাজের মাস ২৭ তারিখ’কে শবে মেরাজ মনে করে ২৭ তারিখ রাতে বিশেষ কোন আমল করা রুটি হালুয়ার আয়োজন করা, সারারাত্র নামাজ তাসবিহ তাহলিল ইত্যাদি সম্পূর্ণ বেদা’আত। হাদিস পাঠে জানা যায়, যখন রজব মাস শুরু হত, তখন মহানবী (সা.) দুই হাত তুলে এ দোয়া পাঠ করতেন এবং সাহাবাদের পড়তে বলতেন, ‘আল্লাহুম্মা বারিক লানা ফি রজবাও ওয়া শাবানা ওয়া বাল্লিগনা ইলা শাহরির রমাদান’ (মসনদে আহমদ)।

রজব মাস আগমণ করার পর আমাদের’কে প্রস্তুতি গ্রহণ করতে হবে, যেমনিভাবে আমাদের স্কুল কলেজের পরীক্ষা আসলে দুই-চার মাস পূর্বে থেকেই প্রস্তুতি গ্রহণ করি।
সম্মানিত ভাই ও বন্ধুগণ আমরা সেই আমলটি করব সওয়াব এর উদ্দেশ্যে কোরআনে এবং হুযুর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের হাদীসে বর্ণিত হয়েছে বাইরের কোনো কিছুর আমরা যদি করি সেটি বেদাত হবে। রজব মাস কে কেন্দ্র করে মেরাজ উদযাপন করা শবে মেরাজ উদযাপন করলে এইগুলো সব গুলো বিদাআত হবে। সবগুলো পরিত্যাজ্য হবে। আল্লাহ তাআলা আমাদেরকে বোঝার আমল করার তৌফিক দান করুন।

উম্মাহ২৪ডটকম: এমএ

উম্মাহ পড়তে ক্লিক করুন-
https://www.ummah24.com

দেশি-বিদেশি খবরসহ ইসলামী ভাবধারার গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে ‘উম্মাহ’র ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।