।। আলতাফ পারভেজ ।।
যুদ্ধ হোক বা আগ্রাসন হোক ইউক্রেনে রাশিয়ার সামরিক অভিযানের রাজনৈতিক লক্ষ্য কী ছিল—এ প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে যেয়ে বিশ্ব ধাঁধাঁয় পড়ে গেছে।
আগ্রাসনের পঞ্চম দিনেও হিসাব মিলছে না পুতিন আসলে কী চেয়েছিলেন, আর কী পেলেন?
রাশিয়ার সামরিক অভিযানের লক্ষ্য ছিল কি ইউক্রেনবাসীকে ভয় দেখানো? দেশটিকে দায়িত্বহীন প্রতিবেশী হিসেবে দেখানো? তাদের প্রেসিডেন্টকে হত্যা করা, কিংবা দেশছাড়া করা? তাদের প্রধান শহরগুলো দখল করে নেয়া? কিয়েভে রাশিয়াপন্থী কোন সরকার প্রতিষ্ঠা? ক্যু ঘটানো? ন্যাটো থেকে ইউক্রেনকে দূরে রাখা? দেশটির মানুষকে সরকারবিরোধী বিক্ষোভে নামানো?
আগামীকাল কী হবে সেটা বলা মুশকিল—তবে আজ পর্যন্ত উপরের তালিকার কোন লক্ষ্য কী রাশিয়ার বাহিনী মোটাদাগে অর্জন করতে পেরেছে?
বরং দেখা যাচ্ছে, ইউক্রেনে আগে অল্প সংখ্যক মানুষ ন্যাটোতে যুক্ত হতে চাইতো–এখন এই হিস্যা বেড়ে গেছে।
ইউক্রেনে এখনও কোন ‘পঞ্চম বাহিনী’ দেখা যাচ্ছে না, বরং দেশটিতে মানুষকে বেশ একতাবদ্ধ দেখা যাচ্ছে।
আরও পড়তে পারেন-
- ঋণ বা ধারকর্য পরিশোধে ইসলামের বিধান
- ইতিহাসে আল্লামা আহমদ শফী
- মেধাবী, আন্তরিক ও নিষ্ঠাবান শিক্ষক ছাড়া শিক্ষার মানোন্নয়ন সম্ভব নয়
- ইগো প্রবলেম নিয়ে যত কথা
- সামাজিক সম্পর্ক সুদৃঢ় রাখতে ইসলামের নির্দেশনা
জাতিগত কোন দাঙ্গাও সেখানে দেখা যায়নি—বরং মনে হচ্ছে নাগরিকরা জাতীয় পরিচয়কে এমুহূর্তে অগ্রাধিকার দিচ্ছে । এরকম অবস্থানের কারণেই আগ্রাসী শক্তির বিরুদ্ধে দেশের বিভিন্ন জায়গায় স্থানীয় প্রতিরোধ দেখা যাচ্ছে– যা এমনকি তাদের প্রেসিডেন্ট খুন হয়ে গেলেও মনে হচ্ছে চালু থাকবে। অর্থাৎ এটা মোটেই ‘২৪ ঘন্টার ম্যাচ’ হয়নি—যেমনটি মনে করা হয়েছিল।
বিপুল সামরিক শ্রেষ্ঠত্বের মিথ সত্ত্বেও ইউক্রেনের সামান্য জায়গাই রুশ সৈনিকদের দখলে গেছে এখন পর্যন্ত। আন্তর্জাতিক ভাবমূর্তির যুদ্ধে রাশিয়ার প্রেসিডেন্টের চেয়ে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্টকে এগিয়ে থাকতে দেখা যাচ্ছে। অথচ কিছুদিন আগেও তার অভ্যন্তরীণ ইমেজ অত ভালো ছিল না। তাঁর বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগও মনে হয় এখন সবাই ভুলে গেছে। দেশটিতে প্রেসিডেন্টর প্রতি সমর্থন বেড়ে গেছে তাঁর সাহসী কথাবার্তার কারণে।
প্রশ্ন হলো, এরকম বিপরীত চিত্র কেন দেখছি আমরা? এর অনেক প্রাজ্ঞ সামরিক ব্যাখ্যা আছে বাজারে। কিন্তু একটা কথা তো মানতেই হবে যে, যদি কোন জনগোষ্ঠী তার আত্মমর্যাদা ও স্বাধীনতাকে মূল্যবান ভাবে এবং সেটা বিসর্জন দিতে না চায় তাহলে কারো পক্ষে (তুলনামূলকভাবে শক্তিশালী হলেও) সেসব চট করে কেড়ে নেয়া কঠিন।
নিজের অধিকার, মর্যাদা ও স্বাধীনতার বিষয়ে একটা দেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ জনতা কতটা সিরিয়াস— সেটাই দীর্ঘমেয়াদে যেকোন যুদ্ধ পরিস্থিতির মূল নিয়ামক। অস্ত্রপাতি নয়, সামরিক বাজেট নয়। [লেখকের ফেসবুক পোস্ট থেকে]
– আলতাফ পারভেজ, দক্ষিণ এশিয়ার ইতিহাস বিষয়ে গবেষক।
উম্মাহ২৪ডটকম: এসএএম