Home ইসলাম শাবান মাস রমজানের প্রস্তুতির তাগিদ নিয়ে আসে

শাবান মাস রমজানের প্রস্তুতির তাগিদ নিয়ে আসে

।। শামসুল ইসলাম ।।

মহিমান্বিত শাবান মাস রমজানের আগাম প্রস্তুতির তাগিদ নিয়ে আসে। এ মাসকে নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম শাবানু শাহরি অর্থাৎ শাবান আমার মাস নামে আখ্যায়িত করেছেন। তিনি রজব ও শাবান জুড়েই রমজানের অধীর অপেক্ষায় থাকতেন। তবে শাবান শুরু হলে রমজানের জন্য ব্যাকুল হয়ে দিনক্ষণ গণনা করতেন। আজ জুমার খুৎবা পূর্ব বয়ানে পেশ ইমাম এসব কথা বলেন।

মিরপুরের বাইতুল আমান কেন্দ্রীয় জামে মসজিদের খতিব মুফতি আবদুল্লাহ ফিরোজী আজ জুমার খুৎবা পূর্ব বয়ানে বলেন, হিজরী বছরের গুরুত্বপূর্ণ মাস শাবান দরজায় কড়া নাড়ছে। শাবানের শুরুতেই শাবানের মাহাত্ম্য ও তাৎপর্য সম্পর্কে আমাদের জানা প্রয়োজন। ভোরের কুয়াশা যেমনিভাবে শীতের আগমনী বার্তা দেয় ঠিক তেমনই শাবান মাস রমজানের আগমনী বার্তা দেয়। মহিমান্বিত শাবান মাস রমজানের আগাম প্রস্তুতির তাগিদ নিয়ে আসে। এ মাসকে নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম শাবানু শাহরি অর্থাৎ শাবান আমার মাস নামে আখ্যায়িত করেছেন।

তিনি রজব ও শাবান জুড়েই রমজানের অধীর অপেক্ষায় থাকতেন। তবে শাবান শুরু হলে রমজানের জন্য ব্যাকুল হয়ে দিনক্ষণ গণনা করতেন। উম্মুল মুমিনীন হযরত আয়েশা সিদ্দীকা (রা.) বলেন, নবী কারীম (সা.) শাবানের (দিন তারিখের হিসাবের) প্রতি এতো অধিক লক্ষ্য রাখতেন, যা অন্য মাসের ক্ষেত্রে রাখতেন না। (সুনান আবু দাউদ: ২৩২৫)। তিনি এ মাসে রমজানের প্রাক প্রস্তুতিমূলক অধিক পরিমাণে নফল রোজা রাখতেন। হযরত উম্মে সালামা (রা.) বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ (সা.) কে শাবান ও রমজান ছাড়া অন্য কোন দুইমাস একাধারে রোজা রাখতে দেখিনি। (সুনান আবু দাউদ: ২৩৩৬)। হযরত আয়েশা (রা.) বলেন, আমি নবীজী (সা.) কে শাবান মাসের মতো এত অধিক (নফল) রোজা রাখতে অন্য কোন মাসে দেখিনি। এ মাসের কয়েকদিন ছাড়া সারা মাসই তিনি রোজা রাখতেন। (সুনান তিরমিজি: ৭৩৭)। অতএব মুমিনের উচিত রজব মাসে ইবাদতের মাধ্যমে হৃদয় জমিন কর্ষণ করে শাবান মাসে আরও বেশি ইবাদতের মাধ্যমে সেই জমিতে বীজ বপন করা এবং রমজানে সর্বাধিক ইবাদত-বন্দেগির মাধ্যমে সফলতার ফসল ঘরে তোলা।

আরও পড়তে পারেন-

খতিব আরও বলেন, শাবান মাস কিবলা পরিবর্তনের মাস। আল বিদায়াহ ওয়ান নিহায়ার সূত্র মতে, হিজরতের ১৮ মাসের মাথায় শাবানের মধ্যভাগে কিবলা পরিবর্তন হয়। এ মাস বিশ্বনবীর (সা.) প্রতি অগাধ ভক্তি, প্রেম ভালোবাসা ও শ্রদ্ধা প্রদর্শনের মাস। কারণ এ মাসেই দরুদ পাঠের বিধান সম্বলিত সূরা আহযাবের ৫৬ নং আয়াত অবতীর্ণ হয়। সুতরাং শরীয়ত নির্দেশিত পন্থায় বেশি বেশি দরুদ শরীফ পাঠ করাও এ মাসের গুরুত্বপূর্ণ একটি আমল। শবে বরাত অর্থ মুক্তির রাত। শবে বরাতের আরবি হলো ‘লাইলাতুল বারাআত’ তথা মুক্তির রজনী। হাদীস শরীফে যাকে “লাইলাতুন নিসফি মিন শাবান” বা শাবানের মধ্য রজনী বলা হয়েছে। এ রাতে ইবাদত করা ও পরের দিন রোজা রাখা সুন্নত। হযরত মুয়াজ ইবনে জাবাল (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, শাবান মাসের মধ্যরাত্রিতে মহান আল্লাহ তাঁর রহমতের ভা-ার নিয়ে সব সৃষ্টির প্রতি এক বিশেষ ভূমিকায় অবতীর্ণ হন এবং ওই রাতে মুশরিক অথবা হিংসুক ব্যক্তি ছাড়া সবাইকেই ক্ষমা করে দেন।

(তবারানী)। নবীজী (সা.) আরও বলেছেন, শাবান হচ্ছে আমার মাস। যে কেউ এ মাসে আমাকে সাহায্য করবে, আল্লাহ তায়ালা তার ওপর বিশেষ রহমত ও বরকত নাযিল করবেন। আর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে সাহায্য করা বলে তাঁর সুন্নতের ওপর আমল করাকেই বুঝানো হয়েছে। তাই যাদের গাফিলতি আছে তারা সর্বদা সুন্নতের উপর চলার ফিকির ও আমল এ মাসেই শুরু করে দেই। মহান আল্লাহ তায়ালা আমাদেরকে আমল করার তৌফিক দান করুন। আমীন। গুলিস্থান ফুলবাড়িয়া রেলওয়ে জামে মসজিদের খতিব মাওলানা মুহিউদ্দীন রাব্বানী জুম্মার বয়ানে বলেন, মুসলিম হবার পর সর্বপ্রথম যে কাজটি করা একজন মানুষের উপর ফরজ বা অবশ্য কর্তব্য হয়ে দাঁড়ায়, তা হলো নামাজ।

কোরআনুল কারীমে নামাজের ব্যাপারে সর্বাধিক গুরুত্বারোপ করা হয়েছে। প্রায় ৮৩টি জায়গায় নামাজের আলোচনা এসেছে। নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম শতাধিক হাদিসে যথাযথভাবে নামাজ পড়ার তাগিদ দিয়েছেন। নামাজ হচ্ছে দ্বীনের খুঁটি বা স্তম্ভ। ইসলাম দাঁড়িয়ে আছে যে কটি মৌলিক আমলের উপর, তার মধ্যে নামাজ সর্বাগ্রে। নামাজ বা সালাত হল ইসলাম ধর্মের প্রধান উপাসনাকর্ম। প্রতিদিন নির্দিষ্ট নামাজের নির্দিষ্ট সময়ে ৫ ওয়াক্ত নামাজ আদায় করা প্রত্যেক মুসলিমের জন্য আবশ্যক বা ফরজ। নামাজ ইসলামের পঞ্চস্তম্ভের একটি। ঈমান বা বিশ্বাসের পর নামাজই ইসলামের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ স্তম্ভ। নামায শব্দটি ফার্সি ভাষা থেকে উদ্ভূত এবং বাংলা ভাষায় পরিগৃহীত একটি শব্দ যা আরবি ভাষার সালাত শব্দের প্রতিশব্দ।

বাংলা ভাষায় ‘সালাত’-এর পরিবর্তে সচরাচর ‘নামাজ’ শব্দটিই ব্যবহৃত হয়। ফার্সি, উর্দু, হিন্দি, তুর্কী এবং বাংলা ভাষায় একে নামাজ বলা হয় কিন্তু এর মূল আরবি নাম সালাত। “সালাত”এর আভিধানিক অর্থ দোয়া, রহমত, ক্ষমা প্রার্থনা করা ইত্যাদি। পারিভাষিক অর্থ: ‘শরী‘আত নির্দেশিত ক্রিয়া-পদ্ধতির মাধ্যমে আল্লাহর নিকটে বান্দার ক্ষমা ভিক্ষা ও প্রার্থনা নিবেদনের শ্রেষ্ঠতম ইবাদতকে ‘সালাত’ বলা হয়, যা তাকবীরে তাহরীমা দ্বারা শুরু হয় ও সালাম দ্বারা শেষ হয়’।

নামাজের প্রভাব সর্বজন স্বীকৃত। নামাজ মূলত খোদাপ্রদত্ত এক মহান নিয়ামত এবং প্রভুর সাথে কথা বলার মাধ্যম। রাব্বুল আলামীনের এক বিশেষ উপহার, যা বান্দাকে সকল প্রকার অশ্লীলতা, পাপাচার, প্রবৃত্তিপূজা, ক্ষণস্থায়ী ভোগ বিলাসের অন্ধ মোহ থেকে মুক্ত করে পূত পবিত্র ও উন্নত এক আদর্শ জীবনের অধিকারী বানিয়ে দেয়। বিকশিত করে তোলে তার ভেতরের সকল সুকুমারবৃত্তি। তার জন্য খুলে দেয় চিরস্থায়ী জান্নাতের সুপ্রশস্ত দুয়ার। আল্লাহ কোরআনুল কারিমে ইরশাদ করেন, নিশ্চয়ই সালাত অন্যায় ও অশ্লীল কাজ থেকে বিরত রাখে। সূরা আনকাবূত, আয়াত নং ৪৫। নামাজ হচ্ছে হিকমাহপূর্ণ এক অলৌকিক তরবিয়ত ব্যবস্থা।

সালাতের মাধ্যমেই ইখলাস, আত্মশুদ্ধি, পবিত্রতা ও আত্মবিলোপের মহৎ গুণাবলির পরিপূর্ণ বিকাশ ঘটে, যা বান্দাকে পৌঁছে দেয় আল্লাহর সান্নিধ্যের স্বর্ণশিখরে। তাছাড়া নামাজের মাধ্যমে যেমম আত্মশুদ্ধিমূলক উপকার হয় তেমনি বিজ্ঞান সম্মতভাবে শারীরিক উপকারও হয়। আসুন, আমরা যথাযথভাবে নামাজ আদায় করার চেষ্টা করি, যে ভাবে আল্লাহ তায়ালা আদেশ করেছেন এবং নবী করীম (সা.) সাহাবায়ে কেরামগনকে শিক্ষা দিয়েছেন। আল্লাহ আমাদেরকে এবং দেশ জাতি ও মুসলিম উম্মাহকে সঠিক পথে পরিচালিত এবং করোনা মহামারি ও অমিক্রণের ভাইরাস থেকে হেফাজত করুন, আমিন।

দিনাজপুর গোর এ শহীদ কেন্দ্রীয় জামে মসজিদের খতিব মাওলানা রেজাউল করিম আজ জুমা পূর্ব খুৎবার বয়ানে বলেন, আল্লাহর রাসূল (সা.) ইরশাদ করেন, শাবান আমার মাস। আর রমজান আল্লাহর মাস। এ মাসে একটি গুরুত্বপূর্ণ রজনী রয়েছে যাকে আমরা শবে বরাত বলে থাকি। অর্থাৎ পবিত্র রজনী । কোরআনে কারিম এ আল্লাহ তায়ালা বলেন, হা মিম শপথ সুস্পষ্ট কিতাবের। আমি একে নাযিল করেছি এক বরকতময় রাতে ।

নিশ্চয়ই আমি সতর্ককারী এতে প্রত্যেক প্রজ্ঞাপূর্ণ বিষয় আমার পক্ষ থেকে করা হয়। সূরা দুখান ১ থেকে ৪ নাম্বার আয়াত। যদিও এ আয়াত শবে কদর সম্পর্কে অধিকাংশদের মতামত । তবে অনেকেই এই বরকতময় রজনী সম্পর্কে শবে বরাত কি উল্লেখ করেছেন । তার কিছু সমাধান তারা দিয়েছেন । এ মাস থেকেই আমাদের রমজানের প্রস্তুতি নিতে হবে। আল্লাহর রাসূল এবং সাহাবায়ে কেরাম শাবান মাস থেকেই রমজানের প্রস্তুতি পূর্ণরুপে গ্রহণ করতেন। আল্লাহপাক আমাদেরকে তৌফিক দান করুন। আমিন।

উম্মাহ২৪ডটকম: এসএএম

উম্মাহ পড়তে ক্লিক করুন-
https://www.ummah24.com

দেশি-বিদেশি খবরসহ ইসলামী ভাবধারার গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে ‘উম্মাহ’র ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।