Home মহিলাঙ্গন সন্তান জন্মদান পরবর্তী ঋতুবতী নারীর নামায ও রোযার বিধান

সন্তান জন্মদান পরবর্তী ঋতুবতী নারীর নামায ও রোযার বিধান

।। আল্লামা মুফতি জসিমুদ্দীন ।।

নিফাস বলা হয় ঐ রক্তকে, যা বাচ্চা প্রসব হওয়ার পর মায়ের প্রস্রাবের রাস্তা দিয়ে নির্গত হয়। বাচ্চা অর্ধেকের চেয়ে বেশী বের হওয়ার পর যেই রক্ত বের হবে, তা নেফাস হিসেবে গন্য।

নেফাসের সর্বোচ্চ সময় সীমা চল্লিশ দিন সর্ব নিম্নের কোন সীমা নাই ১ ঘন্টাও হতে পারে, ৫/৭/১০/১৫/২০/৩০ দিনের যে কোনটিও হতে পারে এবং নিফাস একেবারে নাও হতে পারে। নেফাসওয়ালী মহিলার নামাযও হায়েযওয়ালী মহিলার ন্যায়, অর্থাৎ নামায মাফ। রোযা ক্বাযা করবে।

কোন মহিলার প্রসব শুরু হয়েছে এই দিকে নামাযের ওয়াক্তও শুরু হয়েছে, তখন ঐ অবস্থায় নামায পড়ে নিবে। এমন কি, এখনও সন্তান অর্ধেক বা তার অধিক বের হয়েছে, এই অবস্থায় নামাযের ওয়াক্ত হলে নামায আদায় করবে। নামায আদায়ে একান্ত অপারগ হলে পরে ক্বাযা করবে।

কিছু নামাযের ওয়াক্ত বাকী থাকতে যদি কারো নিফাস আসে, তাহলে ঐ ওয়াক্তের নামায পড়তে হবে না। নেফাসের সময় তিলাওয়াত, কোরআন মজিদ স্পর্শ করা, মসজিদে প্রবেশ ইত্যাদি জায়েয হবে না।

হায়েয ও নিফাস অবস্থায় রোযার হুকুম

সুস্থ বালেগ পুরুষের জন্য যেভাবে রোযা ফরয সুস্থ বালেগ মহিলার জন্যও রোযা ফরয। আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেন- “ইয়া আইয়ুহাল্লাযীনা আমানূ কুতিবা আ’লাইকুমুচ্ছিয়ামু কামা কুতিবা আলাল্লাযীনা মিন ক্বাবলিকুম লাআ’ল্লাকুম তাত্তাক্বূন”। অর্থাৎ- হে ঈমানদারগণ! তোমাদের উপর রোযা ফরয করা হয়েছে যেরূপ ফরয করা হয়েছিল তোমাদের পূর্ববর্তীগণের উপর, যেন তোমরা পরহেযগারী অর্জন করতে পার।

রোযা বলা হয় রোযার নিয়্যাতে সুবহে সাদিক থেকে নিয়ে সূর্যাস্ত পর্যন্ত পানাহার, স্বামী-স্ত্রী মিলন ও ইচ্ছাকৃতভাবে বীর্যপাত করা থেকে বিরত থাকা। রমযান মাসের রোযা ফরয। অন্য মাসে ওয়াজিব, সুন্নাত, নফল, অথবা ফরযের ক্বাযা আদায় করবে।

হায়েয অবস্থায় রোযা রাখা হারাম। রোযা রাখলেও আদায় হবে না। হায়েয ও নেফাসওয়ালী মহিলারা রমযানের রোযাসমূহ পরে ক্বাযা করে নিবে।

কোন মহিলা সকাল থেকে রোযা রাখছে, কিন্তু দিনের বেলায় কোন এক সময় তার হায়েয শুরু হয়ে গেলে অথবা বাচ্চা প্রসব হয়ে নেফাস শুরু হয়ে গেলে তার ঐ দিনের রোযার ক্বাযা করতে হবে।

কোন নফল বা ক্বাযা রোযা রাখার সময় হায়েয এসে গেলে তার রোযা ভেঙ্গে যাবে এবং পরবর্তিতে ক্বাযা দিতে হবে।

হায়েয ও নেফাসওয়ালী দিনের বেলায়ও খেতে পারবে, কোন অসুবিধা নাই। তবে প্রকাশ্যে খাবে না। কোন মহিলার দিনের বেলায় রোযা রাখা অবস্থায় হায়েয এসে গেলে তার রোযা ভেঙ্গে যাবে। অবশিষ্ট দিন পানাহার করতে পারবে, তবে প্রকাশ্যে নয়।

যে মহিলা রোযা রাখা অবস্থায় প্রথম হায়েযের মাধ্যমে বালেগ হয়েছে, তার রোযা ভেঙ্গে যাবে, কিন্তু ঐ রোযা ক্বাযা দিতে হবে না।

কোন মহিলার সুবহে সাদেকের ১ মিনিট পূর্বে যদি হায়েয বন্ধ হয়ে যায়, সে ঐ দিনের রোযা রাখবে।

কোন মহিলা যদি রমযান মাসে হায়েয না হওয়ার জন্য ঔষুধ ব্যবহার করে থাকে, যার কারণে তার হায়েয হয় নাই, তার রোযা সহী হয়ে যাবে।

কোন মহিলা লাগাতার ২ মাস কাফ্ফারার রোযা রাখছে, অথবা ১০/১২ দিন লাগাতার রোযা রাখার মান্নত করে থাকে, যদি ঐ কাফফারা বা মান্নতের রোযা পালনের মাঝখানে হায়েয এসে যায়, তবে হায়েয বন্ধ হওয়ার সাথে সাথে আবার অবশিষ্ট রোযা রাখা শুরু করলে তবে কোন রোযা ক্বাযা দিতে হবে না। আর যদি হায়েয বন্ধ হওয়ার পর মাঝখানে ১/২ দিন পরে রোযা রাখা শুরু করে, তবে কাফ্ফারা বা মান্নতের রোযা পুণরায় রাখতে হবে।

যেই মহিলার রাত্রে হায়েয বন্ধ হওয়ার পর গোসল না করে রোযা রাখে, তার রোযা হয়ে যাবে, কিন্তু গোসল না করার কারণে এবং ওয়াক্ত অনুযায়ী নামায না পড়ার কারণে গুনাহ্গার হবে।

হায়েয ও নিফাস অবস্থায় ইতিকাফের হুকুম

হায়েয ও নেফাস অবস্থায় ইতিকাফ শুদ্ধ হয় না।

কোন মহিলার যদি ইতিকাফ বসার পর হায়েয বা নেফাস শুরু হয়, তাহলে তার ইতিকাফ ভঙ্গ হয়ে যাবে, পরবর্তিতে রোযা সহকারে একদিনের ইতিকাফ থাকবে।

মহিলারা মসজিদে ইতিকাফ থাকবে না বরং ঘরের ছোট এক রুমে অথবা বড় কামরার এক কোনায় কাপড় ইত্যাদি টাঙ্গিয়ে রুমের মত করে সেই নির্ধারিত স্থানে ইতিকাফ থাকবে।

যে জায়গায় ইতিকাফ বসছে, সেই জায়গায় থেকে কথাবার্তা বলতে পারবে। ঐ জায়গা থেকে বের হয়ে কথা বললে ইতিকাফ ভঙ্গ হয়ে যাবে।

লেখক: মুফতি, মুহাদ্দিস, মুফাসসীর ও সহকারী পরিচালক- জামিয়া আহলিয়া দারুল উলূম মুঈনুল ইসলাম হাটহাজারী মাদ্রাসা, চট্টগ্রাম।

উম্মাহ২৪ডটকম: এসএএম

উম্মাহ পড়তে ক্লিক করুন-
https://www.ummah24.com

দেশি-বিদেশি খবরসহ ইসলামী ভাবধারার গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে ‘উম্মাহ’র ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।