Home মহিলাঙ্গন ড. আফিয়া সিদ্দিকী: জাতির উদ্দেশ্যে নতুন আহ্বান

ড. আফিয়া সিদ্দিকী: জাতির উদ্দেশ্যে নতুন আহ্বান

ছবি- রয়টার্স।

।। বিনতে জাহাঙ্গীর ।।

ড. আফিয়া সিদ্দিকী। বিশ্বের অনেক মুসলিমের কাছেই পরিচিত এক নাম। পাকিস্তানের এক প্রতিভাবান উজ্জ্বল নক্ষত্র। গত বিশ বছরে আমরা তাকে ভুলতে বসেছি। তাই নতুন করে তার পরিচয়টা দেয়া প্রয়োজন।

১৯৭২ সালে ২রা মার্চ করাচির সম্ভ্রান্ত পরিবারে জন্ম হয় তার। তিন ভাইবোনের মধ্যে তিনি ছিলেন সবার ছোট। বাবা মায়ের অনেক আদরের সন্তান ছিলেন। কুরআনের হাফেজা ও আলেমা ছিলেন তিনি। ইন্টারমিডিয়েট পাসের পর আমেরিকায় পড়াশোনা করেন আফিয়া সিদ্দিকী। নিউরো সাইন্সে আমেরিকার সর্বোচ্চ ডিগ্রি অর্জন করেন তিনি। এছাড়াও বিভিন্ন বিষয়ে তাঁর প্রায় ১৪০টির মত সার্টিফিকেট ছিল। বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে শিক্ষকতার পাশাপাশি আমেরিকাতেই তিনি ২০০২ সাল পর্যন্ত তিন সন্তান সহ অবস্থান করেন। ২০০২ সালে তিনি মাতৃভূমি পাকিস্তানে ফিরে আসেন।

ইসলামের জন্য তিনি ছিলেন এক নিবেদিতপ্রাণ ব্যাক্তিত্ব। যা তার বোনের বর্ণিত একটি ছোট্ট ঘটনা হতে বোঝা যায়। তিনি যখন পড়াশোনার জন্য আমেরিকা অবস্থান করছেন, তখন মাঝেমধ্যেই তিনি বিভিন্ন সাইন্টিস্ট গবেষণাগুলো কুরআনের বিভিন্ন আয়াতের রেফারেন্সসমৃদ্ধ থিথিস বোনের কাছে মেইল করতেন। তার বোন ড. ফাওজিয়া একদিন বলেছিলেন, তোমার সাবজেক্ট তো ইসলাম নয়, তাহলে কিভাবে তুমি তা করছ? উত্তরে ড. আফিয়া সিদ্দিকী এমন এক উত্তর করেছিলেন, যা তার বোনকে আজও ভাবায়। আফিয়া সিদ্দিকী বলেছিলেন, ‘Islam is not a subject, Islam is the way of life’ (ইসলাম কোন সাবজেক্ট বা শাস্ত্র নয়, ইসলাম তো জীবন যাপনের পথ)।

আর তার এ ইসলামি চেতনা সহ্য হয়নি ইসলামবিদ্বেষীদের। (আল কায়েদার সাথে সম্পৃক্ততার মিথ্যা অভিযোগে) ২০০৩সালে তিন সন্তান সহ ইসলামাবাদ যাবার পথে তিনি আমেরিকান গোয়েন্দা সংস্থা কর্তৃক অপহৃত হন (ধারণা করা হয় পাক সরকারেরও এক্ষেত্রে সহযোগিতা ছিল) । আইনের বিপরীতে আফগানিস্তান সামরিক ঘাটিতে তাকে আটক রাখা হয়। পরবর্তীতে আফিয়ার বড় দু’সন্তানকে (আহমাদ, মারইয়াম) ছেড়ে দেয়া হয়। ছোট শিশু সন্তান সুলায়মানকে শহীদ করে দেয় নরপিশাচ সেনারা। নিউইয়র্কে স্থানান্তর করা হয় ড. আফিয়া সিদ্দিীকিকে। সেখানে আরো বিভিন্ন অপবাদ আরোপ করে তাকে ৮৬বছরের কারাদণ্ড দেয়া হয়।

আরও পড়তে পারেন-

আমেরিকান আদালতে তাকে যখন জর্জ সাহেব ৮৬বছরের কারাদণ্ডের রায় ঘোষণা করেন এবং এ ব্যাপারে আফিয়ার কোন ওপেনিয়ান আছে কিনা জানতে চান? তিনি নিশ্চুপ ছিলেন। পুনরায় জিজ্ঞেস করা হলে আফিয়া সিদ্দিীকি যে উত্তরটি দিয়েছিলেন, তা কেবলমাত্র একজন সত্যিকারের মুমিনা নারীই বলতে পারেন! তিনি বলেছিনÑ ‘এ ব্যাপারে আমি তোমার মত এক জর্জের কাছে কোন ওপেনিয়ান পেশ করতে চাইনা, যার সৈন্যরা অন্য দেশের এক নারীকে ধরে এনে ধর্ষণ করে; আর সে তাদের কোন বিচার সে করেনা। আমি যার কাছে অভিযোগ করার (আল্লহর কাছে) তা করেছি। আমাকে বরং আমার দেশে ফিরতে দিন। আমি দেশে যেতে চাই।

তার এ বিল পাস হয়নি। আমেরিকান টর্চার সেলের আড়ালে হারিয়ে গেলেন তিনি। তিনি কেমন আছেন, আদৌ কি বেঁেেচ আছেন? ইত্যাকার হাজারো প্রশ্ন অনেক মুসলিমের মনে। স্যোসাল মিডিয়ায়ও একেক রকম নিউজ  দেখা যায়। যাতে বোঝা যায়, তিনি মারা গেছেন।

আর অনেক মুসলিমের মত আমি লিওয়াজহিল্লাহ মহব্বত করি তাঁকে। মাঝে মাঝেই তার আপডেট নিউজ খোঁজ করি। কিন্তু কোন নিউজ দেখা যায়। সপ্তাহখানেক আগে সার্চ করলাম আফিয়া সিদ্দিীকির আাপডেট নিউজ । হঠাৎ এক পাকিস্তান মিডিয়ার নিউজ পেলাম। সেখানে তার বড় বোন ড. ফাওজিয়া সিদ্দিকী দীর্ঘ ২০ বছর পর (২০০৩-২০২৩) আফিয়া সিদ্দীকির সাথে তার সাক্ষাতের সেই ইমোশনাল কাহিনী বলছিলেন সাংবাদিকের কাছে। কয়েকদিন বেশ ঘেটেঘুটে দেখলাম , আসলেই তিনি সাক্ষাৎ করেছেন। আমেরিকান ও পাকিস্তান অনেক মিডিয়ায় ইতোমধ্যে সাড়া পড়ে গেছে।

মনটা বেশ ভালো লাগল যে, তিনি এখনো জীবিত আছেন। অথচ সকলেই জানে তিনি মারা গেছেন। তার বোনের সাক্ষাৎকার শুনে চোখ দিয়ে আমারও দরদর করে অশ্র ঝরেছে। দীর্ঘ ২০ বছর পর ছোট বোনের সাথে সাক্ষাৎ জালিমের কারাগারে। গভীর আগ্রহে আছেন বোন ফাওজিয়া। হঠাৎ শোনা গেল জিঞ্জিরের শব্দ। কাপড়ে চেহারা মুড়িয়ে সামনে আনা হল আফিয়া সিদ্দিকীকে। দুবোনকে হাতও মেলাতে দেয়নি তারা। দুপাশে দুজনকে বসানো হয়েছে। মাঝখানে লোহার এক বেষ্টনি। দুজনের হাতে দুটো ফোন দেয়া হয়, যাতে সব কথোপকথন রেকর্ড করা হয়েছে। তাই বিশ বছরে নিজের উপর চলা অমানুষিক নির্যাতনের তেমন কিছুই বলতে পারেননি আফিয়া সিদ্দিীকি। চোখের ইশারায় বলে গেছেন না বলা অনেক কিছুই। ছোট বোন আফিয়ার চেহারার বর্ণনা দিতে যেয়ে হাউমাউ করে কেঁদে ফেলেন বড় বোন ফাওজিয়া। সব দাঁত ভেঙে ফেলেছে। চেহারা বাঁকা হয়ে গেছে। প্রায় তিন ঘন্টার সাক্ষাৎ ছিল। মা ও নিজ সন্তানদের কথা জিজ্ঞেস করতে ভুলেননি আফিয়া। পাকিস্তান ও মুসলমানদের বর্তমান অবস্থাও জিজ্ঞেস করেন।

কত মজবুত ঈমান! আমি অবাক হলাম যে, নিজের উপর বিশ বছর নির্যাতনের চরম পাশবিকতার পরও আজও বুকে লালন করে আছেন মুসলমানদের ভাবনা! হায় বিলাসিতায় ডুবে থাকা মুসলিম জাতি! কবে বোধদয় হবে আমাদের!! এক মজলুমা মুসলিম নারী কাফেরের কারাপ্রকোষ্ঠে ধুঁকে ধুঁকেও ভেবে চলছে ইসলাম ও মুসলিম জাতির ভাবনা! আর আমরা কিইবা করতে পেরেছি। সেই জালেম পশ্চিমাদের আমদানিকৃত সংস্কৃতির কাছে মুহুর্তে ছুড়ে ফেলছি ইসলাম ও মুসলিম সংস্কৃতি-কানুন!

নিজের ব্যাপারে তার শেষ আরযি শুধু এটুকুই ছিল- ‘পাকিস্তান জনগণ কি আমায় ভুলে গেছে? মুসলমানরা কি নেই? আমাকে এ জাহান্নাম হতে বের করো। আমি দেশে যেতে চাই। মুসলমানদের বলো আওয়াজ তুলতে..’।

উম্মাহ২৪ডটকম: এমএ

উম্মাহ পড়তে ক্লিক করুন-
https://www.ummah24.com

দেশি-বিদেশি খবরসহ ইসলামী ভাবধারার গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে ‘উম্মাহ’র ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।