Home ওপিনিয়ন পহেলা বৈশাখ বনাম মঙ্গলশোভাযাত্রা

পহেলা বৈশাখ বনাম মঙ্গলশোভাযাত্রা

।। তারেকুল ইসলাম ।।

বাংলা নববর্ষ বা পহেলা বৈশাখ উদযাপন নিয়ে আপত্তি নয়। আপত্তি হলো, এই উৎসবে ধর্মনিরপেক্ষতা ও সর্বজনীনতার ধুয়া তুলে হিন্দু সম্প্রদায়ের মঙ্গলশোভাযাত্রাকে বাঙালি মুসলমানদের ওপর জোর করে চাপিয়ে দেওয়া হচ্ছে। এটা নিন্দনীয়। এ কারণেই দেশের দায়িত্বশীল আলেম-ওলামা ও বৃহত্তর তৌহিদি জনতা এর বিরুদ্ধে অবস্থান নেন।

আমাদের দেশে হিন্দু সম্প্রদায়ের গণেশপূজা ও শ্রীকৃষ্ণের জন্মাষ্টমী উৎসবে মঙ্গলশোভাযাত্রা হয়ে থাকে। কিন্তু পহেলা বৈশাখে এটাকে ‘সর্বজনীন’ বলে চাপিয়ে দেওয়া হচ্ছে। এ যেন আমাদের মুসলিম জাতিসত্তা ও আত্মচেতনার কেবলাকে হিন্দুয়ানি সংস্কৃতির দিকে ঘুরিয়ে নেয়ার এক মহাযজ্ঞ!

এছাড়া, বাংলা সনের প্রবর্তনকাল ও নববর্ষ উদযাপনের শুরুর সাথে মঙ্গলশোভাযাত্রার কোনো ঐতিহাসিক সম্পর্ক ছিল না। মাত্র তিন দশক আগে মঙ্গলশোভাযাত্রাকে পহেলা বৈশাখে উদযাপন করা শুরু করা হয়। মূলত আশির দশক থেকে তৎকালীন স্বৈরাচার এরশাদবিরোধী আন্দোলনের অংশ হিসেবে পহেলা বৈশাখে মঙ্গলশোভাযাত্রা পালন শুরু হয়। এর পেছনে তথাকথিত ‘হাজার বছরের বাঙালি সংস্কৃতি’র কোনো সম্পর্কও নেই।

মঙ্গলশোভাযাত্রায় যেসব মূর্তি প্রদর্শন করা হয়, সেগুলোর অধিকাংশই হিন্দু ধর্মের বিভিন্ন দেব-দেবীর সাথে সরাসরি সম্পর্কিত। একইসাথে বিভিন্ন রাক্ষস-খোক্ষসের প্রতিকৃতি ও মুখোশও প্রদর্শন করা হয়। রাক্ষস-খোক্ষস নিশ্চয়ই মঙ্গলের প্রতীক হতে পারে না, বরং অশুভ ও অমঙ্গল তথা শয়তানের প্রতীক বলা যেতে পারে। তাহলে কেন এর প্রদর্শনী?

বস্তুতপক্ষে, রাক্ষস-খোক্ষসের প্রতিকৃতি ও মূর্তি নিয়ে এত মাতামাতির প্রচ্ছন্ন অর্থ হচ্ছে, প্রাচীনকালে দেব-দেবতার উপাসনা করার পাশাপাশি শয়তানেরও উপাসনা করা হতো— তাকে সন্তুষ্ট করার জন্য, যাতে করে কোনো কারণে রুষ্ট হয়ে শয়তান অমঙ্গল বা অকল্যাণ না ঘটায়।

মঙ্গলশোভাযাত্রা মানে নতুন বছরে মঙ্গল কামনার উদ্দেশ্যে শোভাযাত্রা করা, এর ফলে অমঙ্গল দূরীভূত হবে বলে আশা করা হয়। অথচ প্রতিবছর দেশব্যাপী অঘটন, দুর্ঘটনা ও অমঙ্গলজনক ঘটনাবলি একের পর এক অব্যাহতভাবে ঘটেই চলছে, কিছুতেই থামছে না। প্রকৃতপক্ষে এভাবে তো অমঙ্গল দূরীভূত হয়না। অন্ততপক্ষে মুসলমানদের ঈমান-আকিদার সাথে এই শোভাযাত্রার সাযুজ্য নেই, বরং মৌলিকভাবে বিরোধী।

মুসলমানরা একমাত্র আল্লাহ তা’য়ালার কাছেই মঙ্গল কামনা করে এবং অমঙ্গল দূরীকরণের জন্য তারা আল্লাহ’র কাছেই পানাহ চান। এর ব্যত্যয় ঘটলে তা অবশ্যই শিরক।

পহেলা বৈশাখ বা বাংলা নববর্ষের বিষয়টি নিশ্চয়ই আমাদের দেশজ সংস্কৃতির অংশ। আর বাংলা সন মুসলমানদেরই সৃষ্টি। সুতরাং মুসলমানরা বাংলা নববর্ষ পালনের বিরোধী, এমনটা বলার কোনো সুযোগ নেই।

কিন্তু গত তিন দশক ধরে এটাকে উদযাপন করা হচ্ছে হিন্দুদের পৌত্তলিক আচার তথা মঙ্গলশোভাযাত্রাকে অবলম্বন করে, যা আমাদের এখানকার সংখ্যাগরিষ্ঠ নাগরিকদের তৌহিদি ভাব ও চেতনার পরিপন্থী।

আরও পড়তে পারেন-

সাম্প্রতিককালে শহুরে পরিসরে এক শ্রেণীর সেকুলার এলিটদের উদ্যোগে হিন্দু ধর্মানুসারে গণেশ দেবতার মূর্তি এবং শক্তি ও মঙ্গলের প্রতীক বিভিন্ন দেবদেবীর বাহনের মূর্তি যেমন- কার্তিকের বাহন ময়ূর, মা স্বরস্বতীর বাহন হাঁস, মা লক্ষ্মীর বাহন পেঁচা এবং আরো বিভিন্ন রাক্ষস-খোক্ষস ও জীবজন্তুর বিশাল বিশাল মূর্তি নিয়ে মঙ্গলশোভাযাত্রাকে কেন্দ্র করে পহেলা বৈশাখ উদযাপন করা হচ্ছে। আর একে ধর্মনিরপেক্ষতা ও সর্বজনীনতার নামে দেয়া হচ্ছে জাতীয় প্রলেপ— যা সর্বৈব রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত।

বস্তুতপক্ষে, পহেলা বৈশাখের এই ভুতূড়ে মঙ্গলশোভাযাত্রা একটি সেকুলার কুসংস্কার হয়ে উঠেছে। ভণ্ড সেকুলার প্রগতিবাজরা সেকুলারিজম ও সর্বজনীনতার নাম দিয়ে এই ধর্মীয় রিচুয়ালকে হিন্দুদের কাছ থেকে ছিনতাই করেছে। তারা নিজেদের বিজ্ঞানমনস্ক দাবি করলেও মঙ্গলশোভাযাত্রা কিভাবে বিজ্ঞানসম্মত হয় তা নিয়ে যৌক্তিক প্রশ্ন রয়েছে, যার কোনো সদুত্তর তাদের কাছে নেই।

এছাড়া, ‘সর্বজনীন বাঙালি উৎসব’, ‘হাজার বছরের বাঙালি সংস্কৃতি’, ‘ধর্ম যার যার, উৎসব সবার’ ইত্যাদি স্লোগান হচ্ছে মন-মগজে বিজাতীয় সংস্কৃতি ও পৌত্তলিকতার চর্চার বীজ ঢুকিয়ে এদেশের গণমানুষের তৌহিদি ভাব ও চেতনা এবং ইসলামের প্রভাবকে সঙ্কুচিত করার রাজনৈতিক দুরভিসন্ধি মাত্র।

তাই, মুসলমানদের উচিত পহেলা বৈশাখে বাঙালি মুসলমানের ওপর চাপিয়ে দেওয়া এই পৌত্তলিক শোভাযাত্রা বর্জন করা। তবে বাঙালি মুসলমান তার নিজস্ব মূল্যবোধ ও সংস্কৃতির আদলে পহেলা বৈশাখ উদযাপন করতে পারে।

লেখক: রাজনৈতিক বিশ্লেষক।

উম্মাহ২৪ডটকম: এমএ

উম্মাহ পড়তে ক্লিক করুন-
https://www.ummah24.com

দেশি-বিদেশি খবরসহ ইসলামী ভাবধারার গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে ‘উম্মাহ’র ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।