Home ফিকহ ও মাসায়েল সাহরী সম্পর্কীয় কয়েকটি মাসআলা

সাহরী সম্পর্কীয় কয়েকটি মাসআলা

।। আল্লামা মুফতি জসিমুদ্দীন ।।

মাসআলা : রোযা রাখার উদ্দেশ্যে শেষ রাতে যা কিছু আহার করা হয়, তারে সাহরী বলা হয় । সাহরী খাওয়া সুন্নাত । ক্ষুধা না থাকলেও অন্তত দু’একটি খোরম বা অন্য কিছু খাবে । কিছু না থাকলে একটু পানি হলেও পান করবে। (সহীহ বুখারী, বাবু বারকাতিস সাহরি, হাদীস নং- ১৯২৩, সহীহ মুসলিম, বাবু ফাযলিস সাহরি- ২৬০৩নং হাদীস)।

মাসআলা : রোযাদার ব্যক্তির জন্যে রাতের শেষভাগে সুবহে সাদিকের পূর্বে সাহরী খাওয়া সুন্নাত এবং বিশেষ বরকতময়। রাতের প্রথমার্ধ অতিক্রান্তের পর যখনই পানাহার করবে সাহরী খাওয়ার সুন্নাত আদায় হয়ে যাবে। কিন্তু রাতের শেষাংশে খাওয়া উত্তম । মুয়াজ্জিন যদি সুবহে সাদিকের পূর্বেই আযান দিয়ে দেয়, তাহলে সুবহে সাদিক পর্যন্ত সাহরী খেতে কোনো প্রকার অসুবিধা নেই। সাহরী খাওয়ার পর রোযার নিয়ত মনে মনে করলেই যথেষ্ট হবে। (আল হিদায়া- ১/১৮৬, জাওয়াহিরুল ফিকহ- ১/৩৮১)।

মাসআলা : সাহরী খাওয়ার সময় কেউ যদি সাহরী না খেয়ে কেবল একটি পান খায়, তাতেও তিনি সাহরীর সাওয়াব পাবেন । (সহীহ বুখারী, বাবু বারকাতিস সাহরি, হাদীস নং- ১৯২৩, সহীহ মুসলিম, বাবু ফাযলিস সাহরি- ২৬০৩নং হাদীস)।

মাসআলা : সাহরী যথাসম্ভব বিলম্বে খাওয়া ভালো। আবার এতটা বিলম্বে করা ঠিক নয় যাতে সুবহে সাদিক হওয়ার আশঙ্কা হয় এবং রোযায় সন্দেহ আসতে পারে । (আল হিদায়া- ১/১৮৬, জাওয়াহিরুল ফিকহ- ১/৩৮১)।

মাসআলা : সাহরী যদি খুব জলদি খায়; কিন্তু তারপর পান, তামাক, চা ও পানি ইত্যাদি অনেক্ষণ পর্যন্ত খেতে থাকে, সুবহে সাদিক হওয়ার সামান্য পূর্বে কুলি করে নেয়, তাহলেও বিলম্বে সাহরী খাওয়ার সাওয়াব পাবে । (সহীহ বুখারী, বাবু বারকাতিস সাহরি, হাদীস নং- ১৯২৩, সহীহ মুসলিম, বাবু ফাযলিস সাহরি- ২৬০৩নং হাদীস, আল বাহরুর রায়েক- ২/২৯২, আল হিদায়া- ১/১৮৬)।

আরও পড়তে পারেন-

মাসআলা : রাতে ঘুম না ভাঙ্গার কারণে সাহরী খেতে না পারলে সাহরী না খেয়ে রোযা রাখবে। সাহরী না খাওয়ার কারণে রোযা ছেড়ে দেয়া কাপুরুষতার লক্ষণ এবং গুনাহর কাজ।

মাসআলা : যতক্ষণ পর্যন্ত সুবহে সাদিক না হয় তথা পূর্বাকাশে সাদা বর্ণ দেখ যায়, সে পর্যন্ত সাহরী খাওয়া জায়েয আছে। সুবহে সাদিক হয়ে গেলে আর কিছুই খেতে পারবে না। (সূরা বাকারাহ, আয়াত নং- ১৮২)।

মাসআলা : কেউ যদি বিলম্বে ঘুম থেকে জেগে ‘এখনো রাত আছে মনে করে’ সাহরী খায়, পরে জানতে পারে যে, তখন রাত অবশিষ্ট ছিলো না, তবে ওই রোযার কাযা আদায় করতে হবে, কাফফারা দিতে হবে না । কিন্তু ওই দিন কিছু খেতে পারবে না । যদি সূর্যাস্ত হয়ে গেছে মনে করে ইফতারী করার পর জানতে পারে যে, তখনো সূর্যাস্ত যায়নি, তারও একই হুকুম তথা ওই রোযার কাযা করতে হবে, কাফফারা দেয়া লাগবে না । (আল হিদায়া- ১/১৮৭)।

মাসআলা : দেরীতে ওঠার পর এমন সন্দেহ হলে ‘হয়তো সুবহে সাদিক হয়েছে’, এ অবস্থায় কিছু পানাহার করা মাকরুহ। তদ্রূপ সন্দেহের সময় কিছু খেলে গুনাহ হবে এবং রোযার কাযা করতে হবে। কিন্তু দৃঢ়ভাবে যদি জানতে পারে যে, সুবহে সাদিক হয়নি, তাহলে কাযা করতে হবে না। তবে যদি ঠিক করতে না পারে, সন্দেহই থেকে যায়, তাহলে কাযা ওয়াজিব হবে না। হ্যাঁ, কাযা আদায় করা ভালো। (আল হিদায়া- ১/১৮৭)।

মাসআলা : সাহরী খেয়ে রোযার নিয়ত করে ঘুমিয়ে পড়ার পর সুবহে সাদিক হওয়ার আগেই আবার জাগ্রত হয়ে কোনো কিছু খেতে চাইলে খেতে পারবে । কারণ, সাহরীর শেষ সময় হলো, সুবহে সাদিক। (আল হিদায়া, কিতাবুস সাওম, ফাসলুন ফী রুইয়াতিল হেলাল)।

মাসআলা : সাহরী খেয়ে ভালোভাবে কুলি করতে হবে। কেননা, যদি দাঁতের মধ্যে কোনো জিনিস আটকে থাকে, পরে তা পেটের ভিতরে চলে গেলে সমস্যা হবে ।

মাসআলা : পান চিবাতে চিবাতে ঘুমিয়ে পড়লে এবং এ অবস্থায় সুবহে সাদিক হয়ে গেলে তার রোযা হবে না।

উত্তর দিয়েছেন- আল্লামা মুফতি জসিমুদ্দীন
মুফতি, মুহাদ্দিস, মুফাসসীর ও সহকারী পরিচালক- জামিয়া আহলিয়া দারুল উলূম মুঈনুল ইসলাম হাটহাজারী মাদ্রাসা, চট্টগ্রাম।

উম্মাহ২৪ডটকম: এমএ

উম্মাহ পড়তে ক্লিক করুন-
https://www.ummah24.com

দেশি-বিদেশি খবরসহ ইসলামী ভাবধারার গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে ‘উম্মাহ’র ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।