Home ইসলাম জাকাত ব্যবস্থা যেভাবে মুসলিম সমাজে সেতুবন্ধন তৈরি করে

জাকাত ব্যবস্থা যেভাবে মুসলিম সমাজে সেতুবন্ধন তৈরি করে

জাকাত শুধু দরিদ্র জনগোষ্ঠী নয়; বরং ধনিক শ্রেণির জন্যও অনেক কল্যাণ বয়ে আনে। জাকাত অর্থনীতির চাকাকে সচল ও ভারসাম্যপূর্ণ রাখতে সহায়তা করে। এ জাকাতের মাধ্যমে চাহিদা, উৎপাদন, বিনিয়োগ ও কমসংস্থান সৃষ্টির মাধ্যমে অর্থনৈতিক প্রবৃত্তি সাধিত হয়।

জাকাত কী?

জাকাত আবরি শব্দ। এর আভিধানিক অর্থ কোনো বস্তুকে পরিশুদ্ধ করা, পবিত্র করা, বৃদ্ধি পাওয়া ইত্যাদি। ইসলামী পরিভাষায় জাকাত বলা হয়, নিসাব পরিমাণ সম্পদের মালিক হলে সম্পদের নির্দিষ্ট একটি অংশ আল্লাহর সন্তুষ্টির আশায় ইসলামের দৃষ্টিতে জাকাত গ্রহণের উপযুক্ত ব্যক্তিদের মাঝে বণ্টন করা। (আলফিকহু আলা মাজাহিবিল আরবাআহ : ২/৫৯০)

আরও পড়তে পারেন-

কোরআন-হাদিসে জাকাত

আল কোরআনে ৩২টি স্থানে জাকাতের কথা উল্লেখ করা হয়েছে। তন্মধ্যে ২৭টি স্থানে সালাত ও জাকাতের কথা একত্রে উল্লেখ করা হয়েছে। মক্কি সুরার আটটি স্থানে জাকাতের আলোচনা এসেছে। আর বাকি আলোচনা এসেছে মাদানি সুরায়। (আল মুজামুল মাফাহরাস লিআলফজিল কুরআনিল কারিম)

বিভিন্ন হাদিসের গ্রন্থসমূহে কিতাবুজ জাকাত তথা জাকাতের অধ্যায় নামে স্বতন্ত্র অধ্যায় রয়েছে। এতে জাকাতের গুরুত্ব ও বিধি-বিধান, জাকাত আদায়ের পদ্ধতি এবং জাকাত আদায় না করার পরিণামসহ জাকাতের পুঙ্খানুপুঙ্খ বিবরণ রয়েছে। এবং বিভিন্ন হাদিসে সালাতের পাশাপাশি জাকাতের আলোচনাও এসেছে।

জাকাত ইসলামের সেতুবন্ধ

এ পৃথিবীতে মানুষ আল্লাহ তাআলার খলিফা বা প্রতিনিধি। মানুষ আল্লাহ তাআলার প্রতিনিধি হিসেবে তাঁর প্রদত্ত সব নিয়ামত ভোগ করে চলছে। মানুষের জীবন-জীবিকার তারতম্যের কথা ইসলাম স্বীকার করে। মানুষের দৈহিক ও মানসিক শক্তি-সামর্থ্য এবং যোগ্যতা ও প্রতিভার পার্থক্য আল্লাহ তাআলার আমোঘ বিধানেরই অংশ। ‘দরিদ্র ব্যক্তি আল্লাহর পোষ্য। আর ধনীরা আল্লাহর ভাণ্ডার। কারণ তাদের হাতে যে অর্থ আছে তা আল্লাহর সম্পদ, তারা এই সম্পদের রক্ষক মাত্র। ইসলাম সুষমভাবে অর্থ-সম্পদ বণ্টনের জন্য জাকাত নির্ধারণ করেছে। এতে ধনীর প্রচেষ্টা এবং দরিদ্রের অধিকারের প্রতি লক্ষ্য রেখেছে। এ ক্ষেত্রে ইসলাম ধনীকে নির্মূল করেনি, আবার দরিদ্রের অভাবও উপেক্ষা করেনি। ’ (মুশকিলাতুল ফাকর ওয়া কাইফা আলাজাহা ইসলাম, ড. ইউসুফ কারাজাভি)

তাই জাকাত বণ্টনের খাতসমূহ পর্যালোচনা করলে প্রতীয়মান হয় যে ইসলাম এ জাকাত ব্যবস্থার মাধ্যমে সমাজ থেকে দারিদ্র্য বিমোচনের প্রতি বেশ গুরুত্বারোপ করেছে। সম্পদ শুধু ধনীদের হাতেই কুক্ষিগত থাকবে আর গরিবরা উপেক্ষিত থাকবে—এটি ইসলামের উদ্দেশ্য নয়; বরং ধনীদের কাছ থেকে জাকাত সংগ্রহের মাধ্যমে সমাজ থেকে দারিদ্র্য বিমোচনের টেকসই কর্মপন্থা গ্রহণই ইসলামের উদ্দেশ্য।

জাকাতের নানাবিধ ইতিবাচক উদ্দেশ্য ও তাৎপর্য রয়েছে। সেসবের মধ্যে ধর্মীয়, নৈতিক প্রসঙ্গ থাকলেও জাকাতের অর্থনৈতিক ও সমাজিক উদ্দেশ্য বিশেষ গুরুত্ববহ। তার মধ্যে অন্যতম উদ্দেশ্য হচ্ছে মুষ্টিমেয় ব্যক্তির হাতে সম্পদ কেন্দ্রীভূত হতে না দেওয়া; বরং ইসলাম তা দূরীভূত একটি সুন্দর আদর্শ সমাজ বিনির্মাণের কথা বলে।

দারিদ্র্য একটি মারাত্মক সমস্যা। এটি একটি রাষ্ট্র, সমাজ ও মানবতার জন্য জটিল ও তীব্র সমস্যা। এর ফলে সমাজে হতাশা ও বঞ্চনার অনুভূতি সৃষ্টি হয়। সমাজে অপরাধের মাত্রা বাড়ে। ক্ষেত্রবিশেষে এই দারিদ্র্য কুফরি পর্যন্ত নিয়ে যায়। ইসলাম এ বিষয়টি খুব গুরুত্বের সহিত আমলে নিয়েছে। আর ইসলাম এ সমস্যা মোকাবেলা করার জন্য জাকাতকে অন্যতম হাতিয়ার হিসেবে আখ্যায়িত করেছে। জাকাতের মাধ্যমে সমাজের দরিদ্র ও অভাবি ব্যক্তির মাঝে সম্পদের সুষম বণ্টন হয়। এর মাধ্যমে সমাজে অর্থনৈতিক সুবিচার যেমন প্রতিষ্ঠিত, তেমনি অর্থনৈতিক কার্যক্রম গতিশীল হয়।

সমাজে শ্রেণি-বৈষম্য ইসলাম কখনো সমর্থন করে না। ইসলাম এ শ্রেণি-বৈষম্যের বিরুদ্ধে খুব সোচ্চার। ইসলাম এ বৈষম্য দূরীভূত করার কথা বলে। একটি আদর্শ সমাজ বিনির্মাণের কথা বলে। যেখানে ধনীরা গরিবদের পাশে থাকবে। তাদের সাহায্য-সহযোগিতা করবে। ইসলাম বলে ধনীদের সম্পদে রয়েছে অভাবি ও গরিবদের হক। ধনীর সম্পদে দরিদ্রের অধিকার প্রতিষ্ঠা করেছে ইসলাম। এ জাকাত শুধু দরিদ্র জনগোষ্ঠী নয়; বরং ধনী শ্রেণির জন্যও অনেক কল্যাণ বয়ে আনে। এ জন্য জাকাতকে বলা হয় ধনী-দরিদ্রের মাঝে সেতুবন্ধ রচনাকারী এবং সমাজের রোগ নিরাময়কারী অন্যতম প্রতিষেধক।

উম্মাহ২৪ডটকম: এমএ

উম্মাহ পড়তে ক্লিক করুন-
https://www.ummah24.com

দেশি-বিদেশি খবরসহ ইসলামী ভাবধারার গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে ‘উম্মাহ’র ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।