Home ইসলাম ইতিহাসের গৌরবোজ্জ্বল অধ্যায় বদর যুদ্ধ

ইতিহাসের গৌরবোজ্জ্বল অধ্যায় বদর যুদ্ধ

।।নমীর মো. গোলাম মোস্তফা ।।

ইসলামের ইতিহাসে গৌরবোজ্জ্বল এক অধ্যায় বদর যুদ্ধ। দ্বিতীয় হিজরির ১৭ রমজান ঐতিহাসিক বদর প্রান্তরে সংঘটিত এই যুদ্ধটি মানবজাতির ইতিহাসে অনন্য এক ঘটনা। এটি ছিল অসত্যের বিরুদ্ধে সত্যের লড়াই। দাম্ভিকতার বিরুদ্ধে একনিষ্ঠতার লড়াই।

অবিশ্বাসের বিরুদ্ধে বিশ্বাসের লড়াই। মহান আল্লাহ পবিত্র কোরআনে এই দিনটির বিভিন্ন তাৎপর্য তুলে ধরেছেন। তিনি কোরআনে উভয়পক্ষের শক্তির পার্থক্য, মুসলিম উম্মাহর প্রতি তার অনুগ্রহ এবং কম্পমান একটি অবস্থা থেকে মুসলিম বাহিনীর ঘুরে দাঁড়ানোর চিত্র তুলে ধরেছেন। সাহসিকতা এই সত্য ও মিথ্যার মাঝে পার্থক্যকারী দিন হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছেন।

পবিত্র কোরআনের সুরা আলে ইমরান ও সুরা আনফালে বদর যুদ্ধের সবিস্তার বর্ণনা এসেছে। আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.)-এর মতে, সুরা আনফাল বদর যুদ্ধ সম্পর্কে অবতীর্ণ হয়েছে। এ সুরায় যুদ্ধলব্ধ সম্পদ, যুদ্ধবন্দি, ফেরেশতাদের অংশগ্রহণসহ সংশ্লিষ্ট বিষয়সমূহের আলোচনা রয়েছে। আর সুরা আলে ইমরানে মুসলমানদের অবস্থা, আল্লাহর সাহায্য ও তার উদ্দেশ্য সম্পর্কে আলোচনা করা হয়েছে। এ সুরায় আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে ভবিষ্যতেও সাহায্যের ধারা অব্যাহত রাখার ঘোষণা দিয়েছেন। বদর যুদ্ধের অবস্থা তুলে ধরে মহান আল্লাহ বলেছেন, ‘আল্লাহ তোমাদের বদরে সাহায্য করেছেন। অথচ তোমরা ক্ষীণশক্তি। ’ (সুরা আলে ইমরান, আয়াত : ১২৩)

আরও পড়তে পারেন-

উল্লেখ্য, মহান আল্লাহ কোরাইশদের অস্ত্রে সজ্জিত এক হাজার সৈন্যের বিপরীতে মুসলমানদের মাত্র ৩১৩ জনের নিরস্ত্র সৈন্য বাহিনীকে বিজয় দান করেছিলেন। সেদিন পবিত্র কোরআনের আয়াত নাজিলের মাধ্যমে তিনি মুসলিম বাহিনীর মনোবল বৃদ্ধি করে দিয়েছিলেন এবং সাহায্য করার সুসংবাদ দিয়েছিলেন। ইরশাদ হয়েছে, ‘আর আল্লাহ এটা করেছেন, তোমাদের সুসংবাদ দেওয়ার জন্য এবং যাতে এর দ্বারা তোমাদের অন্তর প্রশান্ত হয়। সাহায্য শুধু মহাপরাক্রমশালী আল্লাহর পক্ষ থেকে। ’ (সুরা আলে ইমরান, আয়াত : ১২৬)

শুধু বদর নয়, বান্দা যদি মহান আল্লাহর ওপর পূর্ণ আস্থা-ভরসা রাখে, তবে ভবিষ্যতেও আল্লাহ আসমানি এই সাহায্যের ধারা অব্যাহত রাখার ঘোষণা দিয়েছেন। পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘বরং তোমরা যদি ধৈর্যধারণ করো, আল্লাহকে ভয় করো এবং তারা দ্রুত গতিতে তোমাদের ওপর আক্রমণ করে, তবে আল্লাহ তাআলা তোমাদের পাঁচ হাজার ফেরেশতার সুবিন্যস্ত বাহিনী দ্বারা সাহায্য করবেন। ’ (সুরা আলে ইমরান, আয়াত : ১২৫)

সুরা আনফালের ৬৬ নম্বর আয়াতে আল্লাহ মুমিনদের অনুরূপ সাহায্যের অঙ্গীকার করেছেন।

সুরা আনফালে আল্লাহ তাআলা বদর প্রান্তে মুসলিম বাহিনীর অবস্থানের প্রশংসা করে বলেছেন, ‘স্মরণ করো, যখন তোমরা ছিলে নিকট প্রান্তে এবং তারা ছিল দূর প্রান্তে। উষ্ট্রারোহী দল ছিল তোমাদের চেয়ে নিম্নভূমিতে। ’ (সুরা আনফাল, আয়াত : ৪২)

এর পরের আয়াতেই আল্লাহ মুমিনদের সাহস জোগানের একটি চিত্র তুলে ধরেছেন। ইরশাদ হয়েছে, ‘স্মরণ করো! যখন আল্লাহ আপনাকে স্বপ্নে দেখিয়েছিলেন, তারা সংখ্যায় অল্প। যদি তিনি তাদের সংখ্যায় বেশি দেখাতেন, তবে তোমরা সাহস হারাতে এবং যুদ্ধের ব্যাপারে নিজেদের মধ্যে মতবিরোধ তৈরি করতে। কিন্তু আল্লাহ রক্ষা করেছেন। নিশ্চয় তিনি অন্তরের খবর জানেন। ’ (সুরা আনফাল, আয়াত : ৪৩)

সুরা আনফালের ৫০ নম্বর আয়াতে আল্লাহ ফেরেশতাদের অংশগ্রহণ সম্পর্কে বলেছেন, ‘যদি তুমি দেখতে ফেরেশতাগণ অবিশ্বাসীদের মুখে ও পিঠে আঘাত করে জীবন কেড়ে নিচ্ছে এবং বলছে, তোমরা দহনযন্ত্রণা ভোগ করো। ’

একই সুরার ৬৭ থেকে ৭১ নম্বর আয়াত পর্যন্ত আল্লাহ তাআলা যুদ্ধবন্দিদের সম্পর্কে আলোচনা করেছেন। এই আয়াতে অর্থের বিনিময়ে বন্দিদের ছেড়ে দেওয়ার সিদ্ধান্তের সমালোচনা করা হয়। তবে পরের আয়াতে এই সিদ্ধান্তের বৈধতাও দেওয়া হয়। যুদ্ধবন্দিদের ব্যাপারে বলা হয়, যদি তাদের উদ্দেশ্য ভালো হয়, তবে আল্লাহ উত্তম প্রতিদান দেবেন। আর যদি তাদের উদ্দেশ্য মন্দ হয়, তবে আল্লাহ মুমিনদের মাধ্যমে তাদের উপযুক্ত শাস্তি দেবেন।

সর্বোপরি বলা যায়, এই দুই সুরায় আল্লাহ তাআলা বদর যুদ্ধের সংক্ষিপ্ত চিত্র তুলে ধরেছেন।

উম্মাহ২৪ডটকম: এসএএম

উম্মাহ পড়তে ক্লিক করুন-
https://www.ummah24.com

দেশি-বিদেশি খবরসহ ইসলামী ভাবধারার গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে ‘উম্মাহ’র ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।