Home শিক্ষা ও সাহিত্য ঢাকা-উত্তরা ‘জামিয়াতুন নূর আল কাসেমিয়া’র নতুন শিক্ষাবর্ষের দরস শুরু

ঢাকা-উত্তরা ‘জামিয়াতুন নূর আল কাসেমিয়া’র নতুন শিক্ষাবর্ষের দরস শুরু

নূর হোসাইন: রাজধানীর উত্তরায় আল্লামা নাজমুল হাসান কাসেমী প্রতিষ্ঠিত জামিয়াতুন নূর আল কাসেমিয়ার ১৪৪৩-৪৪ হিজরী শিক্ষাবর্ষের ইফতেতাহী দরস ও দোয়া মাহফিল অনুষ্ঠিত হয়েছে।

বুধবার (১৮ মে) বাদ মাগরীব তুরাগস্থ চেয়ারম্যান বাড়ী মোড় স্থায়ী ক্যাম্পাসে এ মাহফিল অনুষ্ঠিত হয়।

মাহফিলে টেলি কনফারেন্সের মাধ্যমে নসিহত পেশ করেন হযরত মাওলানা মাহমুদ হাসান গাঙ্গুহী (রাহ.)এর খলীফা আফ্রিকার শীর্ষ আলেমেদ্বীন আল্লামা ইব্রাহীম আফ্রিকী (দা.বা.)। প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন- প্রবীণ আলেমে-দ্বীন, বহু গ্রন্থ প্রণেতা, শায়খুল হাদীস আল্লামা উবায়দুল্লাহ ফারুক (দা.বা.)। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন আল্লামা নূর হোসাইন কাসেমী (রাহ.)প্রতিষ্ঠিত জামিয়া ছোবহানিয়ার প্রিন্সিপাল ও শায়খুল হাদীস মুফতি মহিউদ্দিন মাসুম (দা.বা.)।

নসিহত মূলক বক্তব্যে আল্লামা ইব্রাহীম আফ্রিকী বলেন, ক্লাসে উস্তাদ যা পড়াবে তা মনোযোগ সহকারে শুনবে এবং বুঝার চেষ্টা করবে। যদি উস্তাদের বুঝের সাথে নিজের বুঝ মিলে যায় তাহলে শুকরিয়া আদায় করবে। আর যদি না মিলে তাহলে উস্তাদের বুঝকেই প্রাধান্য দিবে এবং বেশীবেশী তাকরার করবে।

তিনি বলেন, কিতাব, উস্তাদগণ, যেই মসজিদে নামাজ আদায় করবে সেই মসজিদ, মহল্লার মুরুব্বী ও মা-বাবার আদব রক্ষা করবে। এই আদবগুলো রক্ষা করলে আল্লাহ তা’আলা ইলম দান করবেন।

ইফতেতাহী দরসপূর্ব ছাত্র সমাবেশে দিক-নির্দেশনামূলক বয়ান করছেন জামিয়াতুন নূর আল-কাসেমিয়ার প্রতিষ্ঠাতা পরিচালক আল্লামা হাফেয নাজমুল হাসান কাসেমী। ছবি- উম্মাহ।

আল্লামা ইব্রাহীম আফ্রিকী উস্তাদের সাথে ছাত্রের ভালোবাসা-সম্প্রীতি, ইজ্জত-সম্মান, আদব-ইহতেরাম, সুবিশ্বাস, পরস্পর নির্ভরতা ইত্যাদি পারস্পরিক সম্পর্কের প্রতি যথাযথ খেয়াল রাখার প্রতি গুরুত্বারোপ করেন এবং মা’আসিয়্যাত তথা সব ধরনের গুনাহ থেকে সবাইকে বেঁচে থাকার আহবান করেন।

তিনি খুব গুরুত্বের সাথে বলেন, ইলম হচ্ছে নূর। আর যেখানে মা’আসিয়্যাত থাকে সেখানে ইলমের নূর থাকতে পারে না। এজন্য উস্তাদ-ছাত্র সবাইকে সবধরনের গুনাহ থেকে বেঁচে থাকতে হবে।

প্রধান অতিথির বক্তব্যে আল্লামা উবায়দুল্লাহ ফারুক বলেন, মক্কার জিন্দেগীতে না মোনাসিব পরিবেশে যে সাহাবায়ে কেরাম কোরবানি দিয়েছেন তাদের একজনের বিনিময়ে সারা জাহানের মুসলমানদের কোরবানির রোকন ও হাইসিয়্যাত। কারণ তখন প্রাথমিক অবস্থা ছিলো। জান, মাল, ইজ্জত কোন কিছুরই নিরাপত্তা ছিলো না। ওই নাজুক মুহূর্তে যারা কোরবানি দিয়েছেন তাদের সৌভাগ্য এজন্য যে দ্বীন ইসলামের ফাউন্ডেশনের জন্য আল্লাহ তায়ালা তাদের বাছাই করেছিলেন।

তিনি বলেন, একইভাবে দারুল উলুম দেওবন্দের প্রাথমিক অবস্থায় কোরবানি দেনেওয়ালা যারা, হাজারো দারুল উলুম দেওবন্দের ফুযালা তাদের মাকামে উঠতে পারে না।

আরও পড়তে পারেন-

স্মৃতিচারণ করে আল্লামা উবায়দুল্লাহ ফারুক বলেন- আমাদের বারিধারা মাদরাসায়ও শুরুর যামানায় থাকাখাওয়ার যায়গা ছিলো না। একবছর কষ্ট করার পরেতো ছাত্ররা মহানগরীর সুবিধাজনক কোন মাদরাসায় ভর্তি হবে কিন্তু আল্লাহর ইচ্ছায় ওই ভাঙ্গা যায়গায় যেখানে থাকাখাওয়ার ব্যবস্থা নাই পরের বছরও ছাত্ররা সেখানেই ভর্তি হলো। এই ধারাবাহিকতা অনেক বছর পর্যন্ত ছিলো। কাসেমী সাহেবের বাসায়ও কোন খাবার ছিলো না। পরিবারের সদস্যরা কি জীবিত না মৃত এর খোঁজখবরও তিনি নেন নাই। ছাত্রদের সাথে ওই ভাঙ্গা ঘরেই ছিলেন তিনি। আর ছাত্ররাও এখান থেকে যেত না কারণ আল্লাহ তা’আলা তাদেরকে ইফতেদায়ী এক মাকতাবে ফিকিরের জন্য কবুল করেছিলেন।

মহানগরীর অনেক মাদরাসার উলামায়ে কেরাম বহু বছর যাবৎ মাদরাসা পরিচালনা করছেন। চতুর্দিকে জায়গা তালাশ করছেন কিন্তু যায়গার ব্যবস্থা নাই। আল্লাহর ইচ্ছায় এই কঠিন জামানায় আমাদের নাজমুল হাসান বারিধারা থেকে আলাদা হইলেন এক বছরের মধ্যেই আল্লাহ তা’আলা জায়গার ব্যবস্থা করে দিলেন।

এলাকাবাসীর উদ্দেশ্যে আল্লামা উবায়দুল্লাহ ফারুক বলেন, আপনারা জানেন- আশপাশে অনেক গার্মেন্টস, ফ্যাক্টরি রয়েছে। এসব ফ্যাক্টরির মালিক যেদিন ইন্তেকাল করবে সেদিন তার মালিকানা শেষ। রেডিমেট একজন তার মালিক হবে আর আসল মালিক কেয়ামতের দিন ঋণ ও লোনের লাঞ্ছনা ভোগ করবে। এটাও একটা ফ্যাক্টরি, এখানে বস্তু তৈরী হয়না। এখানে শরীফ ইনসান আর মানবতা তৈরি হয়। এই ফ্যাক্টরির মালিক ইন্তেকালের পরও পৃথিবী যদি কয়েক হাজার বছর থাকে তখনও এর মালিকানা বহাল থাকবে। আর যতজন এই ফ্যাক্টরিতে অনুদান দিয়ে আগ বাড়াবে তাদেরও মালিকানা শেষ হবে না। এই ফ্যাক্টরির একদিনের আয় গোটা পৃথিবীর ১০০ বছরের আয়ের থেকেও বেশি। প্রত্যেকের একাউন্টে প্রতিদিন এর সোওয়াব জমা হতে থাকবে।

শিক্ষকদের উদ্দেশ্যে ফারুক বলেন- শুধুমাত্র আসাতিজা কিংবা ত্বলাবার নাম মাদরাসা নয়; এই দুয়ে মিলে মাদরাসা। এই মাদরাসায় উস্তাদদের যেভাবে অংশীদারিত্ব রয়েছে ছাত্রদেরও অংশীদারিত্ব রয়েছে। চাকরিজীবী কিংবা মেহমান হিসেবে এখানে জিন্দেগি পার করবেন না। এই মাদরাসায় পরিবারের সদস্য হিসেবে মালিকানার মনোভাব নিয়ে থাকবেন।

ছাত্রদের উদ্দেশ্যে আল্লামা ওবায়দুল্লাহ ফারুক বলেন- তোমাদেরকে আল্লাহ কবুল করেছেন এক মাকতাবে ফিকিরের ভিত্তি স্থাপনের জন্য। এখানে ভর্তি হলাম আর আগামী বছর আরো সুন্দর জায়গা থাকলে সেখানে ভর্তি হবো। এই নিয়ত না করে, আমি এখানের মেম্বার, এই ফ্যামিলির সদস্য, জিন্দেগীর উন্নতির রাস্তা এখান থেকেই গড়বো এই নিয়ত করা দরকার। তাহলে আল্লাহ তা’আলা তোমাদের জীবনকে চমকাবে।

উস্তাদ-শাগরেদদের মাধ্যমে আল্লাহ তায়ালা এই রুহানি এদারাকে আকাশচুম্বী তরক্কি দান করুন, আমিন।

সভাপতির বক্তব্যে আল্লামা নাজমুল হাসান কাসেমী বলেন, বান্দার পথটা যখন কণ্টকাকীর্ণ, মাজবুর, প্রতিকূল, শারাফাত ও মানবতার খেলাফ হয়ে যায় তখন যদি বান্দা সেখান থেকে বিরত থাকে আর ধৈর্যের পথ অবলম্বন করে; তাহলে আল্লাহ তায়ালা আরো সমৃদ্ধ, সুন্দর ও পরিপূর্ণ রাস্তা দেখাবেন। আজকের জামিয়াতুন নূর আল কাসেমিয়া তারই এক বাস্তব নমুনা।

জামিয়ার শিক্ষাপরিচালক মুফতী হাবিবুর রহমান কাসেমীর সঞ্চালনায় মাদরাসার সকল ছাত্র-শিক্ষক ও স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ উপস্থিত ছিলেন। সবশেষ আল্লামা ইব্রাহীম আফ্রিকী (দা.বা.)এর বিশেষ মুনাজাতের মাধ্যমে মাহফিল সমাপ্ত হয়।

উম্মাহ২৪ডটকম: এসএএম

উম্মাহ পড়তে ক্লিক করুন-
https://www.ummah24.com

দেশি-বিদেশি খবরসহ ইসলামী ভাবধারার গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে ‘উম্মাহ’র ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।