Home ধর্মতত্ত্ব ও দর্শন ইসলাহী মাহফিলে আত্মশুদ্ধিমূলক বয়ানে যা বলেছেন আল্লামা মুফতি জসিমুদ্দীন

ইসলাহী মাহফিলে আত্মশুদ্ধিমূলক বয়ানে যা বলেছেন আল্লামা মুফতি জসিমুদ্দীন

দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার অন্যতম বৃহৎ ইসলামী শিক্ষাকেন্দ্র জামিয়া আহলিয়া দারুল উলূম হাটহাজারীর সহকারী পরিচালক, মুফতি, মুহাদ্দিস ও মুফাসসির, মুবাল্লিগে ইসলাম আল্লামা মুফতি জসিমুদ্দীন বলেছেন, দুনিয়াটা হচ্ছে মুমিনদের জন্য পরীক্ষার হল স্বরূপ। এখানে আমরা সমস্ত মানুষ পরীক্ষার্থী। সুতরাং আল্লাহর হুকুম ও রাসূল (সা.)এর তরীকা অনুসরণের মাধ্যমে এই পরীক্ষায় আমাদেরকে সকলকে উত্তীর্ণ হতে সর্বাত্মক প্রচেষ্টা থাকতে হবে। তাহলেই আমাদের পরকালের অফূরন্ত জীবন সফল ও কামিয়াব হবে।

সোমবার (১৬ মে) বাদ ইশা চট্টগ্রাম মহানগরীর এম এম আলী রোড (সাতকানিয়া কলোনী) ওয়াসা মোড়স্থ মারকাযুদ দাওয়া ওয়াল ইরশাদ তালিমুল কুরআন মাদ্রাসার উদ্যোগে মাসিক ইসলাহী মাহফিলে বিশেষ হিদায়াতী বয়ানে আল্লামা মুফতি জসিমুদ্দীন এসব কথা বলেন।

বয়ানে উপস্থিত উলামায়ে কেরাম, মুরীদান, তুলাবা ও মুসল্লীদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, দুনিয়াতে আল্লাহ পাক আমাদেরকে হায়াত আর মৃত্যু দিয়ে পাঠিয়েছেন। যাতে আমরা সুন্দরভাবে আমল করে আল্লাহকে রাজি করে পরকালের অফূরন্ত হায়াতের কামিয়াবী ও সফলতা যাতে অর্জন করতে পারি।

তিনি বলেন, একজন পরীক্ষার্থী যেভাবে পরীক্ষার হলে সফলতার জন্য তার কলমকে সামনের দিকে বাড়াতে গিয়ে খুব চিন্তা করে যে, আমার লেখাটা বা উত্তরটা সঠিক হচ্ছে কিনা চিন্তা করে, তদ্রুপ দুনিয়ার এই পরীক্ষার হলে আমাদের কলমও চিন্তা করে বাড়াতে হবে। আমাদের কলম কি? মুখ আমাদের কলম, চক্ষু আমাদের কলম, হাত আমাদের কলম, পা আমাদের কলম, কান আমাদের কলম। এই মুখকে ব্যবহার করতে আল্লাহর হুকুম ও নবীর তরীকা মতো হচ্ছে কিনা, চোখকে ব্যবহার করতে বা চোখের তাকানোটা আল্লাহর হুকুম ও নবীর তরীকা মতো হচ্ছে কিনা, হাতে ধরতে আল্লাহর হুকুম ও নবীর তরীকা মতো হচ্ছে কিনা, পা দিয়ে চলতে আল্লাহর হুকুম ও নবীর তরীকা মতো হচ্ছে কিনা, কানে শুনতে আল্লাহর হুকুম ও নবীর তরীকা মতো হচ্ছে কিনা খুব সতর্কতার সাথে খেয়াল রাখতে হবে ও দেখতে হবে।

আল্লামা মুফতি জসিমুদ্দীন বলেন, মুখকে ৬টা জিনিস থেকে হেফাজত করতে হবে। মিথ্যা বলা থেকে মুখকে হেফাজত রাখতে হবে। لَّعۡنَتَ اللّٰهِ عَلَی الۡکٰذِبِیۡنَ অর্থাৎ- মিথ্যাবাদীদের উপর আল্লাহর লা’নত। গীবত থেকে হেফাজত করতে হবে। কারণ, হাদীসে আছে- الغیبۃ اشد من الزنا অর্থাৎ গীবত ব্যভিচারের চেয়েও জঘন্য। গীবত করা মানে আপন মৃত ভাইয়ের গোস্ত ভক্ষণ করার মতো ঘৃণ্যতর। তদ্রূপ মানুষকে অপবাদ দেওয়া থেকে মুখকে হেফাজতে রাখতে হবে। ছোগলখোরি করা, মানে একজনের কথা আরেকজনকে বলে ফেতনা সৃষ্টি করা থেকে দূরে থাকতে হবে। হাদীসে আছে, لا يدخل الجنة نمّام অর্থাৎ- নিন্দাকারী কখনো জান্নাতে প্রবেশ করবে না।

আরও পড়তে পারেন-

তিনি বলেন, এভাবে হালাল ভক্ষণ করা, হারাম থেকে নিজের মুখকে হেফাজত করা। হারাম না খাওয়া। হারাম বলতে কিছু জিনিস সরাসরি হারাম। যেমন- সুদ, ঘুষ, মদ, মৃত জন্তু হারাম। যেই হালাল জন্তু অপরের নামে জবাই করা হয় সেটা হারাম। আবার এমন কিছু পশু আছে যেগুলো পায়ে শিকার করে সেগুলো হারাম, যেমন- বাঘ, ভল্লুক, সিংহ ইত্যাদি। তদ্রুপ পায়ে শিকারকারী পাখিও হারাম, যেমন- কাক, চিল, শকুন ইত্যাদি। আর কিছু আছে পদ্ধতির কারণে হারাম হয়, যেমন- প্রত্যেক হালাল প্রাণীকে যবাই করার সময় বিসমিল্লাহ বলে যবাই করতে হবে, গলায় চারটি মূল রগের তিনটি কাটা যেতে হবে। কেউ যবাই করার সময় বিসমিল্লাহ পড়লো না, অথবা বিসমিল্লাহ পড়েছে কিন্তু সে মুসলমান নয়। অথবা যবেহকারী মুসলমান এবং বিসমিল্লাহও পড়েছে, কিন্তু যবাই করার নিয়ম মানলো না। সে গলায় যবাই না করে পায়ে বা পেটে ছুরি চালাল। এসব পশু ভক্ষণ হালাল হবে না। এসব হারাম থেকে আমাদের সকলকে বেঁচে থাকতে হবে।

আল্লামা মুফতি জসিমুদ্দীন বলেন, মোট কথা শরীরের প্রতিটি অঙ্গ-প্রত্যঙ্গকে হেফাজত করা এবং জীবনের সকল ক্ষেত্রে আল্লাহর হুকুম ও আল্লাহর রাসূলের তরীকা মতো চলার প্রতি যত্নবান থাকা চাই। আর এটা তখনই হবে, যখন আল্লাহ আমার রব, আল্লাহ আমার খালেক-মালেক এটা আমাদের অন্তরে বদ্ধমূল হবে। এটা আসার জন্য সবসময় আল্লাহর স্মরণ করতে হবে, আল্লাহর যিকির করতে হবে। তাই আমরা সবসময় আল্লাহর যিকির ও ফিকির করি। সবচেয়ে বড় যিকির হলো নামায, সবচেয়ে উত্তম যিকির হলো তিলাওয়াতে কুরআন, আল্লাহর নবী যে জায়গাতে যে দোয়া পড়েছেন সেটাও যিকির। এর সাথে আমরা সকাল বিকাল মাসনূন তাসবীহাত আদায় করি এবং নফি ও ইসবাতের যিকির করি- লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহ, ইল্লাল্লাহ, আল্লাহু আকবার যিকির করার চেষ্টা করি। এভাবে আমরা চলতে পারলে শুধু পরকালের চিরস্থায়ী জীবন নয়, দুনিয়ার ক্ষণস্থায়ী জীবনও আমাদের সম্মান, মর্যাদা ও শান্তির হবে।

উম্মাহ২৪ডটকম: এমএ

উম্মাহ পড়তে ক্লিক করুন-
https://www.ummah24.com

দেশি-বিদেশি খবরসহ ইসলামী ভাবধারার গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে ‘উম্মাহ’র ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।