Home ওপিনিয়ন খাদ্য সংকট সবচেয়ে বড় ‘রাজনৈতিক হাতিয়ার’

খাদ্য সংকট সবচেয়ে বড় ‘রাজনৈতিক হাতিয়ার’

।। মনোয়ারুল হক ।।

বাংলাদেশ তথা পৃথিবীর সকল দেশের জন্য আজ এক চরম উদ্বেগের কথা প্রকাশ করেছে ব্যাঙ্ক অভ ইংল্যান্ডের গভর্নর। সেই উদ্বেগের কারণ হচ্ছে চলমান ইউক্রেন রাশিয়ার যুদ্ধের পরিণতিতে বিশ্ববাজারের খাদ্যে পরিস্থিতিতে অবনতির মতো মারাত্মক ঘটনা ঘটবে। বাংলাদেশসহ যে দেশগুলো খাদ্য আমদানির ওপর নির্ভরশীল তাদের জন্য এটি ভয়াবহ দুঃসংবাদ। ব্যাংক অভ ইংল্যান্ডের গভর্নর অ্যান্ড্রু বেইলি নিজ দেশের সরকারকে বিষয়টি অবহিত করেছেন এবং যথাযথ পদক্ষেপ নিতে বলেছেন। কারণ হিসেবে আরও রয়েছে- বিপর্যয়ের মধ্যে পৌঁছানো সামুদ্রিক পরিবহন ব্যবস্থা। চাষাবাদেও মারাত্মক সঙ্কট সৃষ্টি হয়েছে। বিশেষ করে, যুদ্ধের কারণে গম উৎপাদনে ইউক্রেন ও রাশিয়াও উল্লেখযোগ্যভাবে পিছিয়ে পড়েছে। তার একটি ব্যাপক প্রতিক্রিয়া আমরা সম্প্রতি ভারতের রপ্তানির ক্ষেত্রে দেখতে পেয়েছি।

সাম্প্রতিককালের ইতিহাসে এই প্রথম ভারত গম রপ্তানির ওপর নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে। গত দুদিন আমাদের বৈদেশিক মুদ্রার স্থানীয় বাজারে মারাত্মক সংকট সৃষ্টি হয়েছে। গতকাল স্থানীয় বাজারের বৈদেশিক মুদ্রার বিশেষত বিশ্ববাণিজ্যের প্রধানতম বাহক- মার্কিন ডলারের মান আকাশচুম্বী হয়েছে। এর আগে খোলা মুদ্রাবাজার বা কার্ব মার্কেটে প্রায় ৯৭/৯৮ টাকায় লেনদেন হয়েছে ডলার। মঙ্গলবার (১৭ মে) খোলাবাজারে ১০৩.৫৯ টাকা দরে ডলার বিক্রির খবর প্রকাশিত হয়েছে গণমাধ্যমে। ফলে আমাদের বৈদেশিক আয়ের অন্যতম খাত রেমিটেন্সে বিঘ্ন সৃষ্টি হবে। বিদেশে কর্মরত মানুষজন যারা নিয়মিত দেশে অর্থ পাঠান তারা অর্থ সংরক্ষণ করবেন নিজ হাতে। এই মূল্যবৃদ্ধির পরিণতিতে দেশে বৈদেশিক মুদ্রার প্রবাহ কমে যাওয়ার ঝুঁকিও ব্যাপক।

আরও পড়তে পারেন-

ব্যাংকিং খাতে কোন কোন ব্যাংক নিয়মনীতি ভঙ্গ করে বৈদেশিক মুদ্রা সংরক্ষণ করছে কিংবা বৈদেশিক মুদ্রাকে বাড়তি মূল্যে বিক্রি করছে আমদানিকারকদের কাছে। আমদানি পণ্যের বাজার নিয়ন্ত্রণে বাংলাদেশ ব্যাংকের বাণিজ্যিক ব্যাংকের এই কার্যক্রমগুলোকে সরাসরি নজরদারিতে আনা জরুরি।

দেশের প্রায় সকল পণ্যই আমদানি করে বেসরকারি প্রতিষ্ঠান। তাদের ওপর এক ধরনের বৈষম্য সৃষ্টি হয়েছে বৈদেশিক মুদ্রাবাজারে। আর তাই ব্যাংক অভ ইংল্যান্ডের গভর্নরের মন্তব্য হালকাভাবে নেওয়ার সুযোগ নেই।

বাংলাদেশের রাষ্ট্র, রাজনীতি যেভাবে বিভক্তির মোড়ে পৌঁছেছে তাও একটি মারাত্মক সংকট সৃষ্টি করতে পারে। দেশের সকল নাগরিককে বাস্তবতা অনুধাবন করতে হবে। সমাজের নানান বিষয়কে সামনে রেখে সমাজ যেভাবে বিভক্ত হয়ে আছে; তাতে এই বাস্তবতা হয়তো অনেকের কাছে গ্রহণযোগ্য হবে না- কারণ ইতিমধ্যে আমরা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে নানান বিষযয়ে তার প্রতিফলন দেখতে পাই। গত কয়েকদিন আগে আলেমদের নিয়ে একটি ভুল রিপোর্ট আসে। এ রিপোর্টকে নিয়ে আবার নতুন বিভাজন সৃষ্টি হয়েছে। সামাজিকভাবে বিভক্ত সমাজকে নতুনভাবে বিভক্তির দিকে ঠেলে দেয়- এমন কোন কাজ এই মুহূর্তে করা ঠিক হবে না; কারণ আগামী কয়েক মাস বিশেষত যতক্ষণ পর্যন্ত না ইউক্রেন যুদ্ধ বন্ধ হয়, ততক্ষণ পর্যন্ত এই সরবরাহ ব্যবস্থায় সংকটের কোনো উন্নতিও হয়তো দেখা যাবে না।

সমাধান হিসেবে সরকারকে খুব দ্রুত কৃষি ভাবনাকে ঢেলে সাজাতে হবে। কৃষি ভাবনার নয়া বিন্যাসে যত বেশি সম্ভব কৃষিপণ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ হওয়ার লক্ষ্য রাখতে হবে। খাদ্য সঙ্কট বর্তমান দুনিয়ায় সবচেয়ে বড় ‘রাজনৈতিক হাতিয়ার’ আমরা যা দেখতে পেলাম সাম্প্রতিককালের শ্রীলঙ্কায়। প্রকৃত স্বয়ংসম্পূর্ণ হওয়ার রাস্তায় আমাদের নতুন নতুন পরিকল্পনা নিতে হবে। প্রচলিত খাদ্যাভ্যাসকে পরিবর্তন করার সুযোগ স্বাভাবিকভাবেই নেই। কাজেই কোনো খাদ্য সঙ্কট যাতে সৃষ্টি না হয়- সেদিকে লক্ষ্য রাখতে হবে। আমরা অস্থিতিশীলতার আরেকটি উদাহরণ সৃষ্টির উৎস হতে চাই না। রাষ্ট্রের সকল পর্যায়ের নাগরিকদেরও সতর্ক হয়ে এগোতে হবে। কিন্তু দেশের সামগ্রিক শিক্ষা ও রাজনৈতিক বিভাজন আমাদের কোথায় নিয়ে যায়- তাই উদ্বেগের বিষয় হিসেবে রয়েই যাচ্ছে।

লেখক: রাজনৈতিক বিশ্লেষক।

উম্মাহ২৪ডটকম: এমএ

উম্মাহ পড়তে ক্লিক করুন-
https://www.ummah24.com

দেশি-বিদেশি খবরসহ ইসলামী ভাবধারার গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে ‘উম্মাহ’র ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।