Home ইতিহাস ও জীবনী আল্লামা আব্দুল হালিম বুখারী (রহ.)এর সংক্ষিপ্ত জীবনী

আল্লামা আব্দুল হালিম বুখারী (রহ.)এর সংক্ষিপ্ত জীবনী

বিশ্ববাসীর হিদায়াতের জন্য আল্লাহ তাআলা যুগে যুগে অনেক নবী রাসূল পাঠিয়েছেন। সর্বশেষ পাঠিয়েছেন মানবতার মুক্তি দূত হযরত মুহাম্মদ (সা.)কে। তাঁর পরে আর কোন নবী আসবেন না।

নবুওয়াতের এই বিরাট দায়িত্ব আঞ্জাম দেওয়ার জন্য এক শক্তিশালী কর্মদক্ষ জামাআতের প্রয়োজন। এজন্য রাসূল (সা.) নির্বাচন করেছেন উলামায়ে কেরামের জামাতকে। যারা নবীর পরে নবুওয়াতের সমস্ত কাজ আঞ্জাম দিবেন। এজন্য রাসূল (সা.)বলেছেন- العلماء هم ورثة الأنبياء অর্থাৎ- ‘নিশ্চয়ই উলামায়ে কেরাম নবীগণের ওয়ারিস’। (সহীহ বুখারী)

মৃত্যু এক অনিবার্য সত্য। বলা হয়ে থাকে- ‘আলেমের মৃত্যু মানে জগতের মৃত্যু।’ সবাইকে মৃত্যুর ধারাবাহিকতা গ্রহণ করতে হবে। আজ চলে গেলেন এমনই একজন হক্কানি বুজুর্গ যিনি মানুষকে আলোর পথ দেখিয়েছেন। সমাজে শান্তির বানী প্রচার করেছেন। সেই মহান বুজুর্গের সংক্ষিপ্ত জীবনী পাঠকদের সামনে তুলে ধরছেন উম্মাহ২৪ ডটকমের নিজস্ব প্রতিনিধি- মুহাম্মদ নূর হোসাইন

নাম ও জন্মঃ নাম- আব্দুল হালিম বুখারী। উপাধি- হাকিমুল মিল্লাত। পিতার নাম- আব্দুল গণী বুখারী৷ তিনি ১৯৪৫ সালে চট্টগ্রামের লোহাগড়া উপজেলার রাজঘাটা নামক গ্রামে এক সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন।

শিক্ষাজীবনঃ নিজ গ্রামের হোসাইনিয়া আজিজুল উলুম মাদরাসায় প্রাথমিক ও মাধ্যমিক শিক্ষা সমাপ্ত করে আল জামিয়া আল ইসলামিয়া পটিয়ায় ভর্তি হন। ১৯৬৪ সালে দাওরায়ে হাদিস (মাস্টার্স) সমাপ্ত করেন এবং ১৯৬৫ সালে একই মাদরাসার উচ্চতর বাংলা সাহিত্য ও গবেষণা বিভাগে পড়াশোনা করেন। এছাড়াও তিনি টাঙ্গাইল কাগমারী কলেজ থেকে এইচএসসি ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক পাশ করেন এবং টাঙ্গাইল আলিয়া মাদ্রাসা থেকে আলিম ও কামিল, গোপালপুর মাদ্রাসা থেকে ফাজিল ১ম বিভাগে উত্তীর্ণ হন। পাশাপাশি লাহোর ডন হোমিওপ্যাথিক কলেজে বায়োক্যামিকের উপর ২ বছর মেয়াদী কোর্স সম্পন্ন করেন।

কর্মজীবনঃ শিক্ষকতার মাধ্যমে তাঁর কর্মজীবন শুরু হয়। ১৯৬৭ থেকে ১৯৬৮ পর্যন্ত তিনি টাঙ্গাইল দারুল উলুম আলিয়া মাদ্রাসার আরবি প্রভাষকের দায়িত্ব পালন করেন। এরপর সাতকানিয়া মাহমুদুল উলুম আলিয়া মাদ্রাসায় যোগদান করেন। ১৯৭২ সালে পুনরায় টাঙ্গাইল দারুল উলুম আলিয়া মাদরাসায় চলে যান। ১৯৭২ থেকে ১৯৮২ সাল পর্যন্ত সেখানে মুহাদ্দিস ও শায়খুল হাদিসের দায়িত্ব পালন করেন।

১৯৮২ সালে তিনি আল জামিয়া আল ইসলামিয়া পটিয়ায় শিক্ষকতা শুরু করেন। ২০০৩ থেকে ২০০৮ সাল পর্যন্ত জামিয়ার সহকারী পরিচালকের দায়িত্ব পালনের পর ২০০৮ সালে আল জামিয়া আল ইসলামিয়া পটিয়ার মহাপরিচালক দায়িত্ব পান এবং মৃত্যু পর্যন্ত অত্যন্ত দক্ষতা ও সুনামের সাথে দায়িত্ব আঞ্জাম দেন।

আরও পড়তে পারেন-

১৯৮২ থেকে পটিয়া জামিয়ার মুখপাত্র মাসিক আত তাওহীদের প্রধান সম্পাদক হিসেবে নিয়োজিত ছিলেন। ১৯৮৩ থেকে দেশের অন্যতম কওমি মাদরাসা শিক্ষা বোর্ড আঞ্জুমানে ইত্তেহাদুল মাদারিস বাংলাদেশের মহাসচিবের দায়িত্ব পালন করেন। জামিয়া পটিয়ার অধীনে পরিচালিত বাংলাদেশ তাহফীজুল কুরআন সংস্থার সভাপতিরও দায়িত্ব পালন করেন তিনি।

১৯৮৬ সালে সারাদেশে ইসলামী সম্মেলন আয়োজনের লক্ষ্যে প্রতিষ্ঠিত ‘ইসলামী সম্মেলন সংস্থা বাংলাদেশে’র প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেন এবং ২০১৫ সালে মুফতি আবদুর রহমান (রাহ.)এর ইন্তেকালের পর সভাপতির দায়িত্ব পান। ২০১৮ সালে আঞ্জুমানে ইত্তেহাদুল মাদারিস বাংলাদেশের মহাসচিব হওয়ায় পদাধিকার বলে হাইআতুল উলয়ার স্থায়ী কমিটির সদস্য মনোনীত হন।

২০২০ সালের ১৫ নভেম্বর হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের কেন্দ্রীয় সম্মেলনে তাঁকে উপদেষ্টা মন্ডলীর সদস্য নির্বাচিত করা হয়। এছাড়াও শাহজালাল ইসলামী ব্যাংক লিমিটেডের শরীয়াহ সুপারভাইজার কমিটির সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন তিনি।

আধ্যাত্মিক জীবনঃ মাওলানা আব্দুল হালিম বুখারী শায়খুল হাদিস শাহ মুহাম্মদ ইসহাকের নিকট বায়’আত গ্রহণ এবং খেলাফত লাভ করেন।

লিখিত গ্রন্থঃ মাওলানা আব্দুল হালিম বুখারী বহু গ্রন্থ রচনা করেছেন। তারমধ্যে উল্লেখযোগ্য ১. তাসহিলুত ত্বহাভি। ২. তাসহিলুল উসুল। ৩. তাসহিলুত তুরমিজী ইত্যাদি।

ইন্তেকালঃ দীর্ঘদিন ধরে হার্টের সমস্যা, ডায়াবেটিস, শ্বাসকষ্ট ও উচ্চ রক্তচাপে ভোগেন ভুগছিলেন।অসুস্থতাজনিত কারণে শারীরিক অবস্থার অবনতি ঘটলে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। মঙ্গলবার ২১জুন ২০২২ সকাল ১০:১০ মিনিটে চট্টগ্রাম সিএসসিআর হসপিটালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি ইন্তেকাল করেছেন তিনি।

আল্লাহ তায়ালা তাঁকে জান্নাতুল ফেরদৌসের উঁচু মাকাম দান করুন এবং শোকসন্তপ্ত পরিবারকে ধৈর্য ধারণ করার তাওফিক দান করুন। আমিন।

তথ্যসূত্র- উইকিপিডিয়া।

উম্মাহ২৪ডটকম: এসএএম

উম্মাহ পড়তে ক্লিক করুন-
https://www.ummah24.com

দেশি-বিদেশি খবরসহ ইসলামী ভাবধারার গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে ‘উম্মাহ’র ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন