Home শিক্ষা ও সাহিত্য ছাত্রজীবনে আত্মশুদ্ধি ও মা’মুলাত আদায়ের গুরুত্ব

ছাত্রজীবনে আত্মশুদ্ধি ও মা’মুলাত আদায়ের গুরুত্ব

।। আল্লামা হাফেজ নাজমুল হাসান কাসেমী ।।

আমাদের পূর্বসুরী আকাবিরদের যামানায় ছাত্ররা যাতে বুযুর্গদের খিদমতে উপস্থিত হতে পারে এবং তাঁদের সোহবতে থেকে নিজেদের সংশোধন করতে পারে, এই জন্যই ছুটি দেয়া হতো। এই জন্য খুব চিন্তা-ভাবনা করে মাদরাসা ছুটি দেয়া হত। ছুটি হতো চল্লিশ দিনের- পূর্ণ রমযান মাস এবং তার পূর্বাপরে পাঁচদিন করে দশদিন, মোট চল্লিশ দিন। এই ছুটির মাঝে ছাত্র-শিক্ষক সকলেই নিজের ইসলাহ্ এবং তাযকিয়ার জন্য বুযুর্গদের খানকায় চিল্লা লাগাতেন। অন্যান্য প্রয়োজন অন্য ছুটি তথা ঈদুল আযহা ইত্যাদির ছুটিতে পূরণ করতেন।

তখন ছুটিকে শুধুমাত্র আনন্দ বিনোদনের বিষয় মনে করা হতো না। বর্তমানে তো ছুটিকে আনন্দের বস্তু মনে করা হয়। এটা আমানতের খেয়ানত। অপারগতা অন্য বিষয়। নিজেদের আত্মশূদ্ধির প্রয়োজন রয়েছে। তাই পূর্বসুরীদের মতো রমযানের ছুটিতে ইসলাহের উদ্দেশ্যে কোন বুযূর্গের সোহবতে থাকার বিষয়টি গুরুত্ব দেওয়া জরুরি।

মা’মুলাত আদায়ের গুরুত্ব

মা’মুলাতের পাবন্দী উন্নতির একটি সিঁড়ি। যিকিরের দ্বারা কাজের মধ্যে বরকত হয়। এটা চিন্তা করা যে, পড়া-পড়ানো এবং অন্যান্য ব্যস্ততার মাঝে মা’মুলাত পুরা করা যায় না। যিকির, ফিকির এবং আত্মশূদ্ধির সময়ও পাওয়া যাচ্ছে না। এটা নফসের ধোঁকা বৈ কিছুই নয়। সাহস করে মা’মুলাতকে পুরা করতে হবে।

একটি ঘটনা: এক যুবক ছিল। তার অন্তরে রোযগার করার চিন্তা আসলো। সে বনের ধারে অবস্থিত এক কারখানায় গেল। সেখানকার ম্যানেজারের সাথে দেখা করে কাজ করতে ইচ্ছা প্রকাশ করলে, তাকে গাছ কাটতে বলা হল। সে খুব পরিশ্রম করল এবং প্রথমদিন বিশটি গাছ কাটল। তার কাজ দেখে ম্যানেজার খুব খুশি হল। ঐযুবকটি দ্বিতীয় দিনও পূর্বের ন্যায় খুব পরিশ্রম করল। কিন্তু ঐদিন আঠারোটির বেশি গাছ কাটতে পারল না। তারপর প্রতিদিন এমন করে সংখ্যা কমতে লাগল। এমনকি কমতে কমতে এই পর্যন্ত আসল যে, দৈনিক মাত্র দু’টি করে গাছ সে কাটতে পারছে। ম্যানেজার তাকে জিজ্ঞাসা করলেন যে, কি খবর- প্রথম প্রথম তুমি বেশি বেশি গাছ কাটতে। এখন দৈনিক মাত্র দু’টি করে গাছ কাটছ! সে উত্তর দিল যে, স্যার! আমি আমার পরিশ্রমের মাঝে কোন কমতি করিনি।

প্রথম প্রথম যতটুকু করতাম, এখনও ঠিক তাই করি। আগে যতটুকু সময় দিতাম, এখনও তাই দেই। কিন্তু এত কষ্ট করার পরেও জানি না, দৈনিক মাত্র দু’টির বেশি গাছ কাটতে পারছি না কেন। ম্যানেজার জিজ্ঞাসা করলেন- গাছ কী দিয়ে কাট? সে বলল কুঠার দিয়ে। ম্যানেজার বললেন, সেটা একটু আমাকে দেখাও তো? সে কুঠারটি নিয়ে আসল। ম্যানেজার দেখলেন যে তা একেবারে ভোঁতা হয়ে গেছে। তার ধার একটুও নেই। তখন ম্যানেজার যুবককে বললেন, তুমি ঠিকই বলেছ। তোমার কোন ভুল নেই, ভুল কুঠারের।

শুরুর দিকে তার মাঝে ধার বেশি ছিল, তাই গাছ বেশি করে কাটতে পারতে। এখন ধার কমে গেছে, তাই এখন গাছ কম কাটতে পার। যাও! এটা ধার দিয়ে পুণরায় কাজ শুরু কর। সেই যুবকটি সেদিন ধার দেয়ার পর থেকে আবার বিশটি করে গাছ কাটতে লাগল।

আরও পড়তে পারেন-

তো যেমনিভাবে গাছ কাটতে কাটতে কুঠারের ধার কমে যায় এবং পুণরায় ধার দিলে তার ধার ঠিক থাকে, তেমনিভাবে সারাদিন কাজ করতে করতে পরিবেশের প্রভাবে অন্তরের ধার তথা ঈমানী আলো কমে যায়। যিকির, আত্মশূদ্ধি ও মা’মুলাত আদায়ের মাধ্যমে অন্তরের সেই ধারকে শাণিত রাখা দরকার। মা’মুলাতের পাবন্দীর চিন্তা করা উচিত। মা’মুলাতের মাঝে অলসতা করা এবং অমনোযোগী হলে কাজের অগ্রগতি কমে যাবে। এই জন্য প্রকৃতপক্ষেই মা’মুলাতকে গুরুত্ব সহকারে আদায় করা দরকার।

মুফতী আহমদ সাহেব খানপুরী (রাহ.) এই ব্যপারে একটি সুন্দর দৃষ্টান্ত পেশ করেন। যখন কারো নতুন বিয়ে হয়, তখন প্রথম প্রথম স্ত্রী তার স্বামীর দিকে পরিপূর্ণ খেয়াল রাখে। সর্বদা তাকে সন্তুষ্ট রাখার চিন্তায় মগ্ন থাকে। কিন্তু যখন সন্তান হয়, তখন স্ত্রীর বেশি খেয়াল চলে যায় সন্তানের প্রতি। আর স্বামির প্রতি লক্ষ্য রাখা খানিকটা কমে যায়। তারপর যখন এই দম্পতি দ্বিতীয় সন্তানের মুখ দেখে, তখন স্বামীর প্রতি স্ত্রীর খেয়াল একেবারেই কমে যায়। তখন স্বামী স্ত্রীকে বলে, ‘কি ব্যাপার? আমার প্রতি আপনার কোন খেয়ালই নেই!’ স্ত্রী বলে, ‘সন্তান তো আপনারই। তাদের থেকে ছাড়া না পেলে আমি কী করব?’ স্বামী বলেন, ‘ঠিক আছে। কিন্তু কিছু মনোযোগ তো আমার দিকেও দেয়া চাই। আমারও তো কিছু প্রয়োজন রয়েছে।’

যেমনিভাবে সন্তানের তা’লীম-তরবীয়ত স্বামীর জন্যই হয়। কিন্তু তারপরও স্বামী স্ত্রী’র পক্ষ থেকে তার প্রতি এমন বেখেয়ালী পছন্দ করেন না, ঠিক তেমনিভাবে এটাও বুঝা উচিত যে, দরস-তাদরীস যদিও আল্লাহর জন্য তারপরও আল্লাহ তায়ালার আপন সত্ত্বার জন্য কিছু সময় ব্যয় করা চাই। এই জন্যই দরস-তাদরীসের সাথে যিকির-আযকার এবং গুরুত্বের সাথে দৈনন্দিন মা’মুলাত আদায় করা প্রয়োজন।

– আল্লামা হাফেয নাজমুল হাসান, প্রতিষ্ঠাতা পরিচালক- জামিয়াতুন নূর আল কাসেমিয়া-উত্তরা, ঢাকা, সাংগঠনিক সম্পাদক- জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশ, প্রতিষ্ঠাতা পরিচালক- উত্তরা রওজাতুস সালিহাত মহিলা মাদ্রাসা, খতীব-  উত্তরা ১২নং সেক্টর বায়তুন নূর জামে মসজিদ এবং উপদেষ্টা- উম্মাহ ২৪ ডট কম।

উম্মাহ২৪ডটকম: এমএ

উম্মাহ পড়তে ক্লিক করুন-
https://www.ummah24.com

দেশি-বিদেশি খবরসহ ইসলামী ভাবধারার গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে ‘উম্মাহ’র ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।