Home ইসলাম ইসলামে প্রতিবন্ধীদের অধিকার

ইসলামে প্রতিবন্ধীদের অধিকার

।।মো. আলী এরশাদ হোসেন আজাদ ।।

জাতিসংঘের একটি অধিবেশনে প্রতিবন্ধীদের ২২টি অধিকার নিশ্চিতকরণের অঙ্গীকার ব্যক্ত হয়েছে। প্রতিবন্ধীর আভিধানিক সংজ্ঞা, ‘প্রতিবন্ধী হচ্ছে দৈহিক শক্তির একান্ত অভাব বা অঙ্গহানি হেতু যারা আশৈশব বাধাপ্রাপ্ত, মূক, বধির, অন্ধ, খঞ্জ ইত্যাদি। ’ (সংসদ বাংলা অভিধান, পৃষ্ঠা ৩৮২)

বর্তমান পৃথিবীর ১০ শতাংশ মানুষ প্রতিবন্ধিত্বে জর্জরিত। সমাজ ও রাষ্ট্রচিন্তার আদি গুরু প্লেটো বলতেন, ‘আদর্শ রাষ্ট্রে কোনো প্রতিবন্ধী থাকবে না।

’ কিন্তু ইসলামের দৃষ্টিতে প্রতিবন্ধীরা সমাজের বোঝা নয়, তারা অসহায়ও নয়। আবদুল্লাহ ইবনে উম্মে মাকতুম (রা.) একজন দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী সাহাবি ছিলেন। কিন্তু তাঁর অন্তর্দৃষ্টি এত প্রখর ছিল যে অন্ধ হয়েও তিনি নবী (সা.)-কে চিনে ঈমান এনেছিলেন। তাঁর দ্বিনি বিষয়ে জানার আগ্রহের কারণে তাঁর মর্যাদা বাড়িয়ে পবিত্র কোরআনের সুরা আবাসার ১ থেকে ১০ নম্বর আয়াত অবতীর্ণ হওয়ার পরিপ্রেক্ষিতে নবী (সা.) তাঁকে এত ভালোবাসতেন যে মদিনার বাইরে সফরে গেলে আবদুল্লাহ ইবনে উম্মে মাকতুম (রা.)-কে মদিনার অস্থায়ী শাসক নিয়োগ করে যেতেন।

খলিফা ওমর বিন আবদুল আজিজ (রহ.) প্রথমবারের মতো প্রতিবন্ধী শুমারির আদেশ প্রদান করেন। খলিফা ওয়ালিদ বিন আব্দুল মালিক সর্বপ্রথম কুষ্ঠ রোগের হাসপাতাল নির্মাণ করেন। ইমাম আবু হানিফা (রহ.) বিচারক থাকাকালীন বায়তুল মাল থেকে প্রতিবন্ধীদের ভাতা দেওয়ার আইনি নির্দেশনা প্রদান করেন।

খলিফা মামুন বাগদাদসহ অন্য শহরে অন্ধ আলয় এবং দুর্বল অপারগ নারীদের জন্য মহিলালয় বা বৃদ্ধাশ্রম নির্মাণ করেন। কোনো কোনো সুলতান প্রতিবন্ধীদের জন্য ‘বিমারিস্তান’ বা ‘অসুস্থ নিবাস’ নির্মাণ করেছিলেন।

অন্ধ প্রতিবন্ধীদের শিক্ষার উদ্দেশ্যে মুসলমান বিজ্ঞানীরা আবিষ্কার করেছিলেন স্পষ্ট হস্তলিপি, যা ব্রেইল পদ্ধতির বহু আগের আবিষ্কার। মুহাম্মদ বিন সিরিন (রহ.) শ্রবণপ্রতিবন্ধী হওয়ার পরও একজন বিশিষ্ট স্বপ্নের তাবিরবিদ (ব্যাখ্যাকারী) ও হাদিস বর্ণনাকারী ছিলেন। সৌদি গ্র্যান্ড মুফতি শাইখ আব্দুল আজিজ বিন বাজ (রহ.) অন্ধ ছিলেন। সৌদি আরবের বর্তমান গ্র্যান্ড মুফতিও দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী।

মনে রাখতে হবে, প্রতিবন্ধিত্ব ভাগ্যের লিখন বিশেষ। তাই মহান আল্লাহ সতর্ক করে দিচ্ছেন, ‘হে ঈমানদাররা! (তোমাদের) কোনো মুমিন যেন অন্য কোনো মুমিনকে উপহাস না করে; কেননা, যাদের উপহাস করা হচ্ছে তারা উপহাসকারীদের চেয়ে উত্তম হতে পারে এবং নারীরা যেন অন্য নারীদের উপহাস না করে; কেননা, যাদের উপহাস করা হচ্ছে তারা উপহাসকারিণীদের চেয়ে উত্তম হতে পারে। আর তোমরা একে অন্যের প্রতি দোষারোপ কোরো না এবং তোমরা একে অন্যকে মন্দ নামে ডেকো না; ঈমানের পর মন্দ নাম অতি নিকৃষ্ট। আর যারা (এসব কাজ করার পর) তওবা করে না তারাই তো জালিম। ’ (সুরা হুজরাত, আয়াত : ১১)

আরও পড়তে পারেন-

ইসলামের দৃষ্টিতে প্রতিবন্ধীর মর্যাদা একটুও কম নয়।

আল্লাহর কাছে মানুষের কর্ম গ্রহণযোগ্য, মানুষের দৈহিক গঠন, অর্থ-সম্পদ কিংবা সৌন্দর্য বিবেচ্য নয়। আবু হুরাইরা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুল (সা.) বলেন, ‘আল্লাহ তোমাদের অবয়ব দেখেন না। তোমাদের আকার-আকৃতিও দেখেন না। তবে তিনি তোমাদের অন্তর ও কর্মগুলো দেখেন। ’ (মুসলিম, হাদিস : ২৫৬৪)

প্রতিবন্ধীদের ইসলামের বিধান পালনের ক্ষেত্রে বিশেষ ছাড় দিয়েছে ইসলাম। পবিত্র কোরআনে এসেছে, ‘আল্লাহ কাউকে তার সাধ্যাতীত কোনো কাজের ভার দেন না। ’ (সুরা বাকারা, আয়াত : ২৮৬)

ইসলাম প্রতিবন্ধীদের সামাজিক সম্মান ও স্বীকৃতির নিশ্চয়তা দেয়। প্রাচীন যুগে অনেকে প্রতিবন্ধীদের উপেক্ষা করত, এখনো সমাজে কিছু কিছু ক্ষেত্রে তা দেখা যায়। যার ফলে বর্তমানে আন্তর্জাতিকভাবে আইন তৈরি করে তাদের অধিকার দেওয়ার চেষ্টা করা হচ্ছে। কিন্তু প্রতিবন্ধীদের জন্য ইসলামে রয়েছে সহনশীল বিধানের সুব্যবস্থা। এগুলো হলো মহান আল্লাহর অনুগ্রহ বিশেষ। পবিত্র কোরআনের বিঘোষিত নীতি হলো, ‘অন্ধ, খোঁড়া ও রোগীর কোনো দোষ নেই তার…।’ (কাব্যানুবাদ, সুরা নুর, আয়াত : ৬১)

আসুন, আমরা মহান আল্লাহর আদেশ ও প্রিয় নবী (সা.)-এর আদর্শকে সমুন্নত রাখি। মহান আল্লাহ সব প্রতিবন্ধীর কষ্ট লাঘব করুন, আমাদের মধ্যে যারা সুস্থ-সক্ষম তাদের প্রতিবন্ধিতা থেকে নিরাপদ রাখুন। আমিন।

লেখক : বিভাগীয় প্রধান

ইসলামিক স্টাডিজ

কাপাসিয়া ডিগ্রি কলেজ, গাজীপুর

উম্মাহ২৪ডটকম: এসএ

উম্মাহ পড়তে ক্লিক করুন-
https://www.ummah24.com

দেশি-বিদেশি খবরসহ ইসলামী ভাবধারার গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে ‘উম্মাহ’র ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।