Home সম্পাদকীয় বিদেশিদের প্রেমের টানে বাংলাদেশে আসার প্রবণতা বৃদ্ধি নতুন সামাজিক সঙ্কট তৈরি করতে...

বিদেশিদের প্রেমের টানে বাংলাদেশে আসার প্রবণতা বৃদ্ধি নতুন সামাজিক সঙ্কট তৈরি করতে পারে

তথ্যপ্রযুক্তির বিস্তার বিশ্বকে গ্লোবাল ভিলেজে পরিনত করেছে। বিশ্বের যাবতীয় তথ্য নিমেষেই হাতের মুঠোফোনে পাওয়া যায়। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে দেশকালের সীমারেখা, ভাষা ও ধর্মীয়-সাংস্কৃতিক বিভাজনের ভেদরেখা মুছে দিয়ে পরস্পরের মধ্যে ভাবের আদান-প্রদান ও লেনদেনের ক্ষেত্রকে করেছে সহজ ও অর্গলমুক্ত। মেইনস্ট্রিম মিডিয়ার সমান্তরালে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম এখন মানুষের আগ্রহ এবং জনমত গঠনের অন্যতম কেন্দ্রে পরিনত হয়েছে। করোনাকালে স্বশরীরে সামাজিক যোগাযোগ অনেকটা বন্ধ হয়ে গেলে ইন্টারনেট ও অনলাইনভিত্তিক সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম হয়ে ওঠে যোগাযোগ ও সামাজিক-অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডের অন্যতম মাধ্যম।

স্কুল-কলেজ বন্ধ থাকায় অনলাইনভিত্তিক পড়াশোনার কারণে বিশেষত কিশোর-তরুণদের হাতে কম্পিউটার, ল্যাপটপ, স্মার্টফোন তুলে দেয়ার কারণে আমাদের পরিবার ও সমাজ এক নতুন সংকটের মুখোমুখি দাঁড়িয়েছে। অনেক শিশু-কিশোর অনলাইন ডিভাইসে আসক্ত হয়ে পড়েছে। ফেসবুক, ইউটিউব ও টিকটকে আসক্তি বড় ধরণের সামাজিক অবক্ষয় ও কিশোর অপরাধের জন্ম দিয়েছে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রেম-পরিণয়ের প্রেক্ষাপটে অনেক মানুষের ঘর-সংসার ভাঙ্গার নতুন বাস্তবতা দেখা দিয়েছে। প্রবাসে কর্মরত লাখ লাখ কর্মীর সাথে দেশে-বিদেশে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাববিনিময়ের প্রভাবে সমাজে ও রাষ্ট্রে এখন এক নতুন সমস্যার উদ্ভব হয়েছে।

সাম্প্রতিক সময়ে ভিনদেশি তরুণ-তরুণীদের প্রেমের টানে বাংলাদেশে চলে আসতে দেখা যাচ্ছে। বিদেশে গিয়ে বিদেশি তরুণী বিয়ে করে ঘরবাঁধার ঘটনা আগেও ঘটেছে। তবে বিশ্বের দুইপ্রান্তে বসবাসরত নর-নারীর প্রেম-পরিনয়ের ঘটনার এমন ব্যাপ্তি আগে কখনো দেখা যায়নি। ফেসবুক বা ইউটিউব-টুইটারের মাধ্যমে ব্যক্তিগত পরিচয় থেকে ভাললাগা-ভালবাসার সম্পর্কে জড়িয়ে সব দূরত্ব ঘুচিয়ে কাছে চলে আসার প্রবণতা বৃদ্ধি পেয়েছে।

কয়েক দিন আগে পত্রিকায় প্রকাশিত একটি বিশেষ প্রতিবেদনে এ সম্পর্কিত বেশকিছু কেস স্টাডি উঠে এসেছে। ভাষা ও ধর্মের বিভাজন ভুলে প্রেমের টানে বিদেশি তরুণ বা তরুণীর বাংলাদেশে চলে আসা এবং বিয়ে করে এ দেশে থেকে যাওয়া বা সাথে করে বিদেশে নিয়ে যাওয়ার ঘটনা প্রায়শ ঘটতে দেখা যায়। তবে এভাবে ঘটে যাওয়া কিছু কিছু সম্পর্ক টিকে গেলেও মোহ কেটে যাওয়ার পর অধিকাংশ সম্পর্কই ভেঙ্গে যাচ্ছে। মিথ্যা তথ্য দিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে পরিচয় ও সম্পর্ক গড়ে তোলার পর মোহগ্রস্ত প্রেমিক-প্রেমিকা এক দেশ থেকে আরেক দেশে সংসার করার প্রত্যাশা নিয়ে এসে স্বপ্ন ও বাস্তবতার দুস্তর ব্যবধান দেখতে পেয়ে হতাশ হয়ে পড়ে। এতে একদিকে মেয়েটি যেমন তার পরিবার থেকে শুরু করে সামাজিকভাবে নানা সমস্যার মুখে পড়ে, তেমনি ছেলেটিও মেয়ের অসত্য তথ্য দেয়ার কারণে স্বপ্নভাঙ্গার মুখোমুখি হয়। উভয়েই প্রতারণার শিকার হয়ে বিপর্যস্ত হয়ে পড়ে।

আরও পড়তে পারেন-

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে পরিচয়ের মধ্য দিয়ে এমন সম্পর্ক এবং ভাঙ্গনকে দেশের সমাজ বিজ্ঞানীরা একটি নতুন সামাজিক সংকট হিসেবে চিহ্নিত করেছেন। বিদেশি তরুণ-তরুণীদের সাথে দেশীয় তরুণ-তরুণীদের এমন সম্পর্কের ঘটনার চেয়ে দেশের সমাজ বাস্তবতায় অবাস্তব ও অসামাজিক সম্পর্কের সংখ্যা অনেক বেশি। বিশেষত প্রবাসি কর্মীদের দাম্পত্য সম্পর্কে পরকীয়ার জটিল সমীকরণ হানা দিয়ে সংসারে অশান্তি ও ভাঙ্গনের প্রবণতা বৃদ্ধি পাচ্ছে।

প্রযুক্তি নির্ভর যোগাযোগ সামাজিক অপরাধের ক্ষেত্রেও নতুন মাত্রা যুক্ত হচ্ছে। দেশে আইসিটি আইন থাকলেও সেসব আইনে এমন সমস্যার সমাধান নেই বললেই চলে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রেমের ফাঁদ পেতে বিয়ে করে নিয়ে যাওয়ার অভিনব কৌশলের সাথে মানব পাচারকারী চক্রও সক্রিয় থাকতে পারে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।

বিদেশের কারাগারে বা পতিতালয়ে বিক্রি হয়ে যাওয়া তরুণীদের অনেকেই এমন প্রেমের ফাঁদে পা দেয়ার ঘটনার কথা জানিয়েছে। এ ধরনের সামাজিক সমস্যা ও অবক্ষয় দূর করতে আইনের সুরক্ষা দরকার। সমাজবিদরা এ সংক্রান্ত নতুন আইনের প্রয়োজনীয়তার কথা বলেছেন। স্পেশাল ম্যারিজ অ্যাক্টের পুরনো নিয়ম নতুনভাবে সংশোধন করা প্রয়োজন বলে তারা মনে করছেন।

ট্যুরিস্ট ভিসায় বাংলাদেশে এসে বাংলাদেশি তরুণ বা তরুণীকে বিয়ে করে কয়েকদিন সংসার করে চলে যাওয়ার সুযোগ অবারিত রাখা সমীচিন নয়। সরকার এবং আইন প্রণেতাদের এ বিষয়ে ভাবতে হবে। প্রতিটি পরিবারের মা-বাবা ও অভিভাবকদের তাদের সন্তানদের ব্যাপারে সচেতন হতে হবে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহারে সবাইকে আরো সতর্ক হতে হবে।

উম্মাহ২৪ডটকম: এমএ

উম্মাহ পড়তে ক্লিক করুন-
https://www.ummah24.com

দেশি-বিদেশি খবরসহ ইসলামী ভাবধারার গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে ‘উম্মাহ’র ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।