Home প্রবন্ধ-নিবন্ধ তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করে কেন বড় সহিংস ঘটনা ঘটে?

তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করে কেন বড় সহিংস ঘটনা ঘটে?

তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করে বড় সহিংস ঘটনা ঘটে।

নওগাঁর পত্নীতলা উপজেলায় এক ব্যক্তিকে ‘পাগল’ ডাকাকে কেন্দ্র করে কথা কাটাকাটির জেরে দু’জন নিহত হয়েছেন বলে পুলিশ জানিয়েছে। নিহত ব্যক্তিরা হলেন উপজেলার দক্ষিণপাড়া গ্রামের আছির উদ্দিন ও কৃষ্টরামপুর গ্রামের ফয়জুল ইসলাম ।

নওগাঁর পত্নীতলা সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আফতাব উদ্দিন বলেন, দুজনের অস্বাভাবিক মৃত্যু হয়েছে। ঠিক কী কারণে তাঁদের মৃত্যু হয়েছে, সেটা নিয়ে তদন্ত চলছে।

তবে প্রাতমিক তদন্তে প্রাপ্ত তথ্যের বরাতে পুলিশ বলছে, তারা জানতে পেরেছে রবিবার বিকেলে পাঁচটার দিকে ফয়জুল ইসলাম নালাপুর মোড়ে যান। সেখানে গিয়ে ফয়জুল ইসলামকে দেখে ‘পাগল’ বলে ডাক দেন আছির উদ্দিন।

‘পাগল’ বলায় আছির উদ্দিনের ওপর খেপে যান ফয়জুল। এ নিয়ে তাঁদের দুজনের মধ্যে কথা কাটাকাটি হয়। একপর্যায়ে ফয়জুল কুড়াল দিয়ে আছির উদ্দিনের পিঠে কোপ দেন।

লোকজন আশঙ্কাজনক অবস্থায় আছিরকে দ্রুত পত্নীতলা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করেন। সেখানে প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়ার পর রাজশাহী মেডিকেল কলেজে হাসপাতালে নেওয়ার পথে সন্ধ্যা সাতটার দিকে তাঁর মৃত্যু হয়।

এ ঘটনার পর স্থানীয় জনতা ফয়জুলকে নালাপুর মোড়ে একটি গাছের সঙ্গে বেঁধে মারধর করেন।

মারধরের একপর্যায়ে ফয়জুল অজ্ঞান হয়ে পড়েন। খবর পেয়ে রাত নয়টার দিকে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে মুমূর্ষু অবস্থায় ফয়জুলকে উদ্ধার করে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাঁকে মৃত ঘোষণা করেন।

এর আগেও এমন তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করে সহিংস ঘটনায় রূপ নেয়ার নজির রয়েছে।

গত বিশ্বকাপ শুরু হওয়ার পর থেকে বাংলাদেশের বেশ কয়েকটি জায়গায় সহিংসতার ঘটনা ঘটেছ ব্রাজিল ও আর্জেন্টিনা সমর্থকদের মধ্যে।

রাজশাহী, নীলফামারি বা ব্রাক্ষণবাড়িয়ায় ঘটনার মাত্রা ছোটখাটো হলেও, খুলনায় এক দম্পতিকে ধারালো অস্ত্র দিয়ে কোপানোর ঘটনা ঘটেছে বলে জানান সেসময়ের খুলনার দৌলতপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা কাজী মোস্তাক আহমেদ। এছাড়া কোপা আমেরিকায় ফাইনাল খেলা ঘিরে সহিংসতা এড়াতে হাজারের বেশি পুলিশ মোতায়েন করা হয় শহরটিতে।

এমন সব ঘটনা যা খুব সহজেই এড়ানো যায় সেসব ঘটনাকে কেন্দ্র করে বড় বড় সহিংস ঘটনা হয়ে ওঠার পিছনে কিছু মনস্তাত্ত্বিক কারণ রয়েছে বলে মনে করছেন সমাজবিজ্ঞানী এবং অপরাধ প্রবণতা নিয়ে যারা কাজ করেন তারা।

হঠাৎ ক্ষোভ

নওগাঁর ঘটনার জের ধরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অপরাধ বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষক অধ্যাপক খন্দকার ফারজানা রহমান বলেন এক্ষেত্রে মানুষের মধ্যে ‘সাডেন প্রোভোকেশন’ ঘটে।

তিনি বলেন, মানুষ এই সময় হিতাহিত জ্ঞানশূন্য হয়ে পড়ে।

অধ্যাপক রহমান বলেন, “যখন একটা মানুষকে মানসিক ভারসাম্যহীন বলে ডাকা হয় তখন তার মধ্যে হঠাৎ ক্ষোভের সৃষ্টি হতে পারে। তিনি তখন যে পদক্ষেপটা নেন তার ধারাবাহিকতায় কী হতে পারে সেটা চিন্তা করতে পারেন না”।

আর এই কারণে সহিংস হয়ে ওঠে। এই ঘটনার পর তাকেও যে পাল্টা আক্রমণের শিকার হতে পারেন সেটা চিন্তা করার ক্ষমতায় থাকে না, বলেন অধ্যাপক রহমান।

সমাজবিজ্ঞানী মাহবুবা নাসরিন বলেন, “অনেক ক্ষেত্রে মানুষের ব্যক্তিগত কোন ক্ষোভ থাকতে পারে সেটা একেবারেই ভিন্ন কোন বিষয়ে। কিন্তু দেখা যাচ্ছে যে সময়ে তাকে মানসিক ভারসাম্য বললে হয়ত তিনি প্রতিক্রিয়া দেখাতেন না কিন্তু ঐ সময় ব্যক্তিগত ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশ হিসেবে তিনি দুর্ঘটনা ঘটিয়ে ফেলতে পারেন”।

তবে কোন ব্যক্তিরই ফৌজদারি কোন অপরাধ করার অধিকার নেই। এক্ষেত্রে ক্ষোভ প্রশমন ও বিচার চাইবার জন্য আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সাহায্য নেয়াটা শ্রেয়।

‘আমার লাভ আছে কি না’

বিশেষজ্ঞদের বক্তব্য, তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করে সহিংস আচরণ করার ক্ষেত্রে মানুষের মনে আরেকটা জিনিস কাজ করে সেটা হল ‘আমার লাভ আছে কিনা’ এই মনোভাব।

ফারজানা খন্দকার বলেন, “দেখেন যখন মানসিক ভারসাম্যহীন ব্যক্তিটি একজনে কুপিয়ে হত্যা করলো তখন একদম সাধারণ মানুষ গিয়ে তার উপর আক্রমণ করলো। এক্ষেত্রে যেটা হয় তাদের মধ্যে কাজ করে এই লোকটা একটা মানুষকে হত্যা করেছে, সুতরাং আমাদের উপর হামলা করতে পারে। সেই আশঙ্কা থেকে তারা আগে থেকেই সহিংসতায় লিপ্ত হয়। এবং যখন একাধিক মানুষ অংশ নেয় বাকিরা এটাকে আর অপরাধ মনে করে না। তারাও মনে করে এতে বরং তাদের লাভ আছে”।

আরও পড়তে পারেন-

এই মন-মানসিকতায় একেবারেই ভয়ংকর বলে মনে করেন মাহবুবা নাসরিন।

তিনি বলেন, “দেখবেন এই যে রাস্তায় গণপিটুনি দিয়ে মানুষ মেরে ফেলে, যারা মারে তারা অনেক সময় নিজেরাও জানে না যাকে মারছে সে অপরাধটা কি করেছে। সেই সময় তারা ব্যয় করতে চায় না। ঘটনা ঘটে খুব তড়িৎ গতিতে। তারা মনে করে এত মানুষ যখন মারছে তখন নিশ্চয় অপরাধ করেছে”।

কিন্তু যে অপরাধ হোক না কেন সেটা মানুষ বিচার করার এখতিয়ার সাধারণ মানুষকে দেয়া হয়নি।

আধিপত্য বিস্তার

খেলার সময় দুই দলকে সমর্থন করা নিয়ে যখন সহিংসতা হয় সেটাকে একেবারে সাদা চোখে দেখছেন না সমাজবিজ্ঞানীরা। তারা বলছেন এর মধ্যে সূক্ষ্মভাবে আধিপত্য বিস্তারের একটা প্রবণতা আছে।

মাহবুবা নাসরিন বলেন, “অনেক সময় দেখা গেছে মানুষ একটা সুযোগ খুঁজতে থাকে অপরপক্ষকে হেনস্তা করার। তখন ছোটখাটো কারণ ধরে তারা এগিয়ে যায়। সেটা হতে পারে দুই দলের খেলাকে কেন্দ্র করে কথা কাটাকাটি এবং পরে সহিংস ঘটনা”।

নিজেদের স্বত্বা হারিয়ে ফেলা

এগারো বছর আগে ঢাকার কাছে আমিনবাজারে ৬ ছাত্রকে ডাকাত সন্দেহে পিটিয়ে মারে একদল এলাকাবাসী।

হত্যাকাণ্ডের পরে জানা গেল তারা ডাকাত নয়, শবে বরাতের রাতে বন্ধুরা মিলে সেখানে ঘুরতে গিয়েছিল। এসব ঘটনাকে সমাজবিজ্ঞানীদের কাছে মব হিসেবে পরিচিত।

তারা বলছেন এই মবে যারা যায় তারা নিজের স্বাভাবিক স্বত্বা হারিয়ে ফেলেন। অন্যরা যা করছেন সেটাতেই সে নিজেকে জড়িয়ে ফেলে।

সূত্র- বিবিসি বাংলা।

উম্মাহ২৪ডটকম: এমএ

উম্মাহ পড়তে ক্লিক করুন-
https://www.ummah24.com

দেশি-বিদেশি খবরসহ ইসলামী ভাবধারার গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে ‘উম্মাহ’র ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।