Home স্বাস্থ্য ও চিকিৎসা ইসি ও জননিরাপত্তা সচিবসহ প্রশাসনে বড় পরিবর্তন

ইসি ও জননিরাপত্তা সচিবসহ প্রশাসনে বড় পরিবর্তন

প্রতিদিন আট গ্লাস পানি পান করা উচিত- আমাদের অনেকেরই এই ধারণা রয়েছে। কিন্তু এটি কি আদৌ সঠিক?

আবার, আমরা সবাই জানি নিয়মিত পানি পান অর্থাৎ হাইড্রেটেড থাকা অবশ্যই ভালো। কিন্তু কেবল একবারে অনেক পরিমাণ পানি পান করলে কী হতে পারে? অথবা ‘বেশি পানি পান করা’ বলতে আদৌ কিছু আছে কি না?

জোসেফ জি. ভারবালিস একজন পিটুইটারি ফাংশন বিশেষজ্ঞ এবং যুক্তরাষ্ট্রের জর্জটাউন ইউনিভার্সিটির এনডক্রিনোলজি অ্যান্ড মেটাবলিজম বিভাগের প্রধান। দ্য ওয়াশিংটন পোস্ট-এ প্রকাশিত একটি লেখায় তিনি জানিয়েছেন আমাদের দৈনিক কী পরিমাণ পানি খাওয়া উচিত এবং কতটুকু পানি ‘মাত্রাতিরিক্ত’ হতে পারে।

বেশি পানি পান করলে কী হয় তা নির্ভর করবে আপনার স্বাস্থ্যের ওপর। আরও নির্ভর করবে আপনার শারীরিক কাজ এবং ‘বেশি পানি’ বলতে কী বোঝাচ্ছেন তার ওপর। সবচেয়ে সম্ভাব্য ফলাফল হবে, অতিরিক্ত পানি পান করলে আপনাকে আরও ঘন ঘন প্রস্রাব করতে হবে!

তবে হ্যাঁ, অনেক ক্ষেত্রে সমস্যা হওয়াটা সম্ভব। একটি সাধারণ কিডনি প্রতি ঘণ্টায় সর্বোচ্চ এক কোয়ার্ট (প্রায় এক লিটারের সমান) তরল পদার্থ ত্যাগ করতে পারে। এর বেশি পান করলে অতিরিক্ত পানি আপনার দেহে থেকে যাবে যার দরুন হাইপোনেট্রেমিয়া হতে পারে যা আপনার স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকারক। মৃদু হাইপোনেট্রেমিয়া অল্পকিছু উপসর্গ দেখালেও, তীব্র হয়ে গেলে (ব্লাড সোডিয়াম লেভেল ১৩০ মিলিকুইভেলেন্ট পার লিটারের কম হয়ে গেলে) মগজ ফুলে যেতে পারে (ব্রেইন সুয়েলিং)। এছাড়াও বর্ধমান কিছু স্নায়বিক উপসর্গ দেখা দিতে পারে যেমন, দ্বিধাগ্রস্ততা, ভ্রান্তি, খিঁচুনি (সিজার), কোমা এমনকি মৃত্যুও ঘটতে পারে।

যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়া অঙ্গরাজ্যে ২০০৭ সালের একটি রেডিও প্রতিযোগিতায় একজন অংশগ্রহণকারীর মৃত্যুর কারণ ছিল এই হাইপোনেট্রেমিয়া। প্রতিযোগিতার নিয়ম ছিল যে ব্যক্তি প্রস্রাবের আগ পর্যন্ত সর্বোচ্চ পরিমাণ পানি পান করতে পারবে পুরস্কারটি তার হাতেই জুটবে। মারা যাওয়া প্রতিযোগীটি দুই ঘণ্টায় দুই গ্যালন (প্রায় নয় লিটার) পানি পান করেছিলেন যেখানে এই নির্দিষ্ট সময়ে তার কিডনির ধারণ ক্ষমতা ছিল অর্ধ গ্যালন অর্থাৎ মোটামুটি আড়াই লিটার পানি।

এর আগে ২০০৫ সালে ক্যালিফোর্নিয়া স্টেট ইউনিভার্সিটির এক ২১ বছর বয়সী ছাত্র হাইপোনেট্রেমিয়ার কারণে মারা যান। তিনি পাঁচ গ্যালন পানি পান করেছিলেন।

তবে মনে রাখতে হবে যে এরূপ পরিস্থিতি সচরাচর মানুষের হয়না। উপরের দুটো অভিজ্ঞতা ব্যতিক্রমধর্মী পরিস্থিতি থেকে উদ্বুদ্ধ।

আমাদের শরীর পান করা পানি খুব সাবধানে নিয়ন্ত্রণ করে

আমাদের দৈনন্দিন জীবনে কেন এরকমটা সচরাচর হয়না তা বুঝতে হলে আমরা আমাদের দেহে কীভাবে পানি নিয়ন্ত্রণ করি তা জানতে হবে। দেহে পানি ভারসাম্যের নিয়ন্ত্রণ দুইভাবে হয়ে থাকে।

এক. তৃষ্ণা এবং দুই. পিটুইটারি গ্রন্থি থেকে আরজিনাইন ভ্যাসোপ্রেসিন নামক হরমোনের নিঃসরণ যেটিকে সংক্ষেপে এভিপি এবং অ্যান্টি-ডায়ারেটিক হরমোনও বলা হয়।

গ্রীষ্মের কাঠফাটা রোদের একটি দিনে বের হলে ঘামের কারণে ক্রমাগত পানিশূণ্যতার সৃষ্টি হয়। আমাদের ব্রেইন রক্তের ঘনত্বে পরিবর্তন (এক্ষেত্রে প্রধানত বৃদ্ধিপ্রাপ্ত সোডিয়াম) চিহ্নিত করতে পারে এবং অ্যান্টি-ডায়ারেটিক হরমোন বা এভিপি নিঃসরণ করে থাকে। এই হরমোনগুলো কিডনিগুলোতে গিয়ে পানি সঞ্চয় করার সংকেত দেয় যার ফলে খুব অল্প প্রস্রাব নির্গত হয় এবং এসময় প্রস্রাব খুব ঘনরূপ ও গাঢ় হলুদ রঙ ধারণ করে।

তবে একটি নির্দিষ্ট সময়ের পর পানিশূ্ন্যতা প্রতিরোধে প্রস্রাব ঘনীকরণ আর পর্যাপ্ত থাকেনা। এই সময়েই আমাদের ব্রেইনের উচ্চতর কেন্দ্রগুলি তৃষ্ণা উদ্দীপিত করতে সচল হয়। ফলে আমাদের তেষ্টা পায়।

অন্যদিকে, পানিশূন্যতা না থাকা অবস্থায় অতিরিক্ত পানি পান করলে সোডিয়ামের হ্রাস ঘটে। তখনো আমদের ব্রেইন রক্তের ঘনত্বের এই পরিবর্তন বুঝতে পারে। তখন এভিপি নিঃসরণ বাধাপ্রাপ্ত হয়ে কিডনিগুলোতে পানি খালাস করার সংকেত প্রেরিত হয়। যার ফলে অতিরিক্ত পানি দূরীকরণে বিপুল পরিমাণ প্রস্রাব নির্গত হয়। এ প্রস্রাব লঘু এবং ফ্যাকাশে রঙের হয়ে থাকে।

দেহ থেকে অতিরিক্ত পানি বের হয়ে যাওয়ার এমন প্রয়োজনীয় সময়ে সাধারণত তেষ্টা পায়না। কিন্তু আমাদের দেহের এই আচরণ কিংবা কাজ খুব একটা সহায়ক নয়। এর কারণ হলো, আমরা সাধারণত তৃষ্ণার কারণে পান করিনা। প্রকৃতপক্ষে, আমাদের পান করার অভ্যাস ফ্লেভার দ্বারা প্রভাবিত হয় (যেমন আমাদের অনেকের নির্দিষ্ট কোমল পানীয়ের প্রতি প্রেম)। এছাড়াও সলিড খাবার খাওয়ার পর আমাদের পানীয় খাওয়ার চাহিদার কারণে অথবা কিছু পানীয়ের (যেমন, কফি) পার্শ্ব-প্রতিক্রিয়া পেতেও আমরা পান করি।

আমাদের কিডনিগুলো কতটুকু প্রস্রাব নিঃসরণ করতে পারে এবং হাইপোনেট্রেমিয়ার শিকার হওয়ার আশঙ্কা কতটুকু তা আমাদের স্বাস্থ্যের অবস্থা এবং ক্রিয়াকলাপের ওপর নির্ভর করে।

স্বাস্থ্য অবস্থার মধ্যে রয়েছে অসঙ্গত অ্যান্টি-ডায়ারেটিক নিঃসরণ সিন্ড্রোম, ডায়ারেটিকস (মূত্রবর্ধক) ও অ্যান্টিডিপ্রেসেন্টের ওষুধগ্রহণ এবং বমি বমি ভাব। ক্রিয়াকলাপের মধ্যে রয়েছে শারীরিক কসরত যেমন ব্যায়াম অথবা ম্যারাথন।

ম্যারাথনের ক্ষেত্রে অনেক সময় হাইপোনেট্রেমিয়ার ঘটনা দেখা যায়। প্রাথমিকভাবে এটাকে ঘামের মাধ্যমে দেহ থেকে সোডিয়াম হ্রাসের কারণে হয় বলে মনে করা হলেও পরবর্তীতে গবেষণায় প্রমাণিত হয় যে এটি বরং ম্যারাথনের সময় অতিরিক্ত পানি পানের কারণেই ঘটে।

ব্যায়ামের সময় আমরা সচরাচর ঘণ্টায় এক কোয়ার্টের (প্রায় এক লিটারের সমান) বেশি পানীয় গ্রহণ করিনা। তবে ব্যায়াম এভিপি নিঃসরণ করতে পারে বলে এসময় আমাদের ‘স্বাভাবিক’ পরিমাণ পানি পানও হাইপোনেট্রেমিয়া হতে সাহায্য করতে পারে। এভিপি নিঃসরণে বমিভাবেরও একই প্রভাব রয়েছে।

আরও পড়তে পারেন-

সুতরাং সহজ কথায়, শারীরিক অনুশীলনের সময় অথবা বমিবোধ করলে আপনি অন্যান্য স্বাভাবিক সময়ের মত শরীর থেকে পানি নিঃসরণ করতে পারবেন না।

তাহলে আমাদের কী পরিমাণ পানি পান করা উচিত?

শারীরিক কসরত করেন কিংবা বিশ্রামে থাকেন- যেভাবেই থাকুন না কেন বরং তৃষ্ণা অনুযায়ীই আপনার পানি পান করা উচিত, স্বেচ্ছায় দৈনিক নির্ধারিত পরিমাণ পানি নয়।

‘কী পরিমাণ পানি পান করা উচিৎ’ – তা বিভিন্ন ফ্যাক্টরের জন্য ব্যক্তিভেদে ভিন্ন হয়।

কিছু মেডিক্যাল কন্ডিশনে বেশি পানীয় সুপারিশ করা হয়। যেমন, কিডনি স্টোন গঠিত হওয়ার আশঙ্কা থাকলে পানি বেশি করে খেতে বলা হয়।

আবার, পানি পানের ক্ষেত্রে বয়োবৃদ্ধদের বিশেষ চাহিদা থাকে। কারণ তাদের কম তেষ্টা পেলেও পানিশূন্যতা ঘটেনা। তবে মাত্রাতিরিক্ত তরল নির্গমনের ক্ষেত্রে (গরমের সময় ঘাম বের হওয়া অথবা ডায়েরিয়ায় আক্রান্ত অবস্থায়) তৃষ্ণার্ত না হলেও তাদের বেশি পরিমাণ পানীয় খেতে উৎসাহিত করা হয়।

কিন্তু বেশিরভাগ মানুষের জন্য পানি ভারসাম্য রক্ষায় প্রয়োজনাতিরিক্ত পানি পান দরকারি তো নয় বটে, এটি মেডিক্যালিও কার্যকরী নয়। প্রকৃতপক্ষে, প্রতিদিন আট গ্লাস পানি খাওয়ার যে পোক্ত ধারণা আমাদের রয়েছে সেটিকে প্রমাণিত তথ্য কিংবা শরীরবৃত্তীয় নীতিমালা- কোনোটাই সমর্থন করেনা।

উপসংহার

মোদ্দাকথা হলো, আপনি যদি তৃষ্ণার্ত না হয়ে পড়েন, তার মানে আপনি হাইড্রেটেড আছেন। তবে যদি তৃষ্ণা অনুভূত হয়, তৃষ্ণা না মিটানো পর্যন্ত প্রয়োজনীয় পানি খান।

এটি কেবল দেহে পানির ভারসাম্য রক্ষার জন্য সর্বোত্তম মেডিক্যাল পরামর্শই নয়, এটি একটি সাধারণ জ্ঞান যা আমাদের মনুষ্য জাতিকে হাজার বছর ধরে বাঁচিয়ে রাখতে সক্ষম করেছে। এরকম সফল একটি কৌশলকে আমাদের এখনি পরিত্যাগ করা উচিত নয়।

উম্মাহ২৪ডটকম: এমএ

উম্মাহ পড়তে ক্লিক করুন-
https://www.ummah24.com

দেশি-বিদেশি খবরসহ ইসলামী ভাবধারার গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে ‘উম্মাহ’র ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।